এক ধর্ষণ আর হত্যার প্রতিবাদে যে ন্যায়ের জন্য গত ১৭-১৮টা দিন মানুষ রাস্তায়, সে যেই হোক না কেন, তৃণমূলি হোক বাম হোক আলট্রা লেফট থেকে আলট্রা রাইট সব্বাই অন্তত মুখে তো জাস্টিসই চাইছে। সরকারে যিনি বসে আছেন তিনিও জাস্টিস চাইছেন, সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় জাস্টিস চাইছে, পুলিশ থেকে সিবিআই সব্বাই সেই জাস্টিস প্রক্রিয়ার অঙ্গ। তাহলে আটকাচ্ছেটা কে? কোথায় বাধা জাস্টিস পেতে? এক বিরাট সংখ্যক মানুষের মনে হয়েছে যে ন্যায় পাওয়া যাচ্ছে না, ন্যায়ের পথে বেশ কিছু সমস্যা আছে, ন্যায় যাঁরা দেবেন বলছেন তাঁদের মধ্যেই অন্যায় আছে। আর এই মনে হওয়ার থেকেই তো এত আন্দোলন, এত মানুষের ক্ষোভ, রাগ, চিৎকার। এই সেদিন যিনি বলেছিলেন আমি চিৎকার করতে পারি না রে, আমি কুল কুল করে বয়ে যেতে চাই, তিনি গড়ে তোলো ব্যারিকেড বলে পথে। সেইখানে এসে গোটা রাজ্য সমাজ প্রায় আড়াআড়ি এক বিভাজনের চেহারা নিয়েছে। খুব কম মানুষজন আছেন যাঁরা এখনও কোনও পক্ষ নেননি, খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা মনে করেন যে তাঁদের কিছু মাত্র জানার আর কোনও অবকাশও আছে। সব্বাই ডেফিনিট, প্রায় সব্বাই তাঁদের এক সিদ্ধান্তে এসে গেছেন। সেই ছবিতে জাস্টিসটা কোথায়? একদলের জাস্টিস হল মমতার পদত্যাগ, ব্যস আর অন্য কিছুই তাদের ন্যায় এনে দিতে পারে বলে মনেই করেন না। অন্য দিকে সবটাই এক গভীর চক্রান্ত মমতার সরকারের বিরুদ্ধে, অতএব জাস্টিস মানে আর যাই হোক সরকারের গায়ে হাত যেন না পড়ে। কিন্তু এই দুই দল বলছেন উই ওয়ান্ট জাস্টিস।
আচ্ছা কেউ যদি বুঝেই ফেলে কী হয়েছে, কারা করেছে, কে দোষী, কাকে শাস্তি দেওয়া উচিত, তাহলে তিনি ন্যায় চাইবেন কেন? তিনি শাস্তি চাইবেন, পানিশমেন্ট, জাস্টিসের শেষের প্রক্রিয়া। দফা এক দাবি এক হাসিনার পদত্যাগ, মানুন না মানুন এই স্লোগানে দম আছে, এই স্লোগান যাঁরা দিচ্ছিলেন তাঁরা ন্যায় প্রক্রিয়ার সাহায্য তো নেননি, বিচার চাননি, কোনও যুক্তি তর্কেও যাননি। হাসিনা সরকার জনবিরোধী, তারা নির্বাচন পর্যন্ত নিজেদের ইচ্ছেমতো করিয়েছে। তারা পুলিশ দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, কাজেই এখানে তাঁরা ন্যায় বিচার ইত্যাদির দাবি করছিলেন না, তাঁরা পরিষ্কার পরিণতি চাইছিলেন, শাস্তি চাইছিলেন। এখানে দাবিটা ঠিক কী? মহিলা ডাক্তার আমাদের তিলোত্তমার ধর্ষণ আর হত্যার বিচার? দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া? নাকি মমতার পদত্যাগ? যাঁরা এসব দাবি করছেন তাঁদের অনেকেই কিন্তু জানেন ইতিমধ্যেই, মানে যেদিন তিলোত্তমা ধর্ষিতা হয়েছিলেন সেদিন থেকে আজ অবধি এই ২০ দিনের প্রতিদিনে গড়ে ৯০ জন করে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। এবং নিশ্চয়ই বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত মিডিয়া পর্যন্ত পৌঁছয়নি। কিন্তু তারমধ্যেও আরজি করের ধর্ষণ আর হত্যা এক অন্য মাত্রা নিয়েছে, সারা রাজ্যের মানুষ এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেল এবং আড়াআড়ি ভাবে বিভাজিত।
আসুন সেই কারণগুলো দেখি যেখান থেকে এই ধর্ষণ আর হত্যা নিয়ে মানুষের আবেগ সুনামির মতো আছড়ে পড়ছে শহরের রাজপথে। প্রথম ঘটনা একজন ডাক্তার ধর্ষিতা, তাও আবার নিজের কর্মস্থলে, কিন্তু এর আগে কি কর্মস্থলে, নিজের বাড়ি কি পাড়ায়, কি স্কুলে ধর্ষিতা হননি কেউ? হয়েছেন। কিন্তু এরকম আবেগ তো তৈরি হয়নি। ধর্ষণ আর হত্যা এটা জানতে এক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কত সময় লাগতে পারে? যেখানে ডাক্তারের ছড়াছড়ি, সেখানে এটা দু’ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু ওই হাসপাতাল থেকেই একজন মৃতার বাবা-মাকে জানালেন যে আপনারা আসুন আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। হ্যাঁ, মৃতার বাবা-মা ঠিক এটাই বলেছেন। তাঁরা বলেছিলেন পুলিশ বলেছে, পরে জানা গেল পুলিশ নয় একজন স্বাস্থ্যকর্মী এটা বলে থাকতে পারেন, মানে যাঁকে দেওয়া হয়েছিল এই দায়িত্ব তিনি বলেছেন আমি বলিনি, ওদিকে মৃতার মা বাবা বলেছেন বলেছেন। সাতসকালে রাস্তায় ঘাটে, হোটেলে, স্টেশনে নয়, নিজের কর্মস্থলে ধর্ষিতা খুন হয়েছেন এক ডাক্তার, তাঁর বন্ধুরা ঢুকেছেন সেই কনফারেন্স রুমে, কাছাকাছি যাঁরা ছিলেন, ডাক্তারবাবুরা, বিভিন্ন জায়গাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রশাসনিক পদেও আছেন তাঁরাও এসে হাজির, পুলিশও এসেছে, তাঁরাও ঢুকেছেন ওই কনফারেন্স রুমে। আপনার আবাসনে, স্কুলে, আপনার অফিসে খুন হলে যা যা হবে, হুবহু তাই হয়েছে, কিন্তু পুলিশ নাকি ওই মৃতদেহ থেকে ৪০ ফিট পর্যন্ত কর্ডন করেছিল, তার বাইরের ১১ ফিটের একটা ভিডিও বাইরে এসেছে। বাবা-মা বলছেন কর্ডন ছিল না, যখন ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট, সুরতহাল-এর রিপোর্ট তৈরি হচ্ছেন, সেই সময়ে যে ভিডিওগ্রাফি হয়েছে, সেখানে কর্ডন আছে। কিন্তু আর একদলের বক্তব্য হল ওখানে খুনই হয়নি, খুন করে ওইখানে দেহ ফেলে দিয়ে গেছে? কেন? যদি খুন অন্য জায়গাতেই করা হয়ে থাকে, যদি এক বিরাট দুর্নীতির চক্রের খবর জেনে ফেলার জন্য তাকে অন্য কোথাও খুন করা হয়, তাহলে তার দেহ এই কনফারেন্সে রেখে দেওয়া হবে কেন? মণীষা মুখার্জির মতো গায়েব করে দিতে পারত।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কামড়াবেন না, কিন্তু ফোঁস করতে তো বারণ করিনি: মমতা
কেউ বলবেন আসলে তাকে মেরে ওই সঞ্জয়কে পাঠিয়ে ধর্ষণ করিয়ে ব্যাপারটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা। বড্ড খাটনির ব্যাপার হয়ে গেল না? আর এখনও পর্যন্ত পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করার পরেই খুন করা হয়েছে। আর এই তত্ত্বের আরেকটা লুজ পয়েন্ট হল সিসিটিভি, সেখানে তো ধরা পড়ে যাবে, যেমন ধরা পড়েছে ওই সঞ্জয় রায়। এবারে ওই ভিডিওটা যেখানে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু লোকজন আছেন, পুলিশও আছে। কলকাতা পুলিশ থেকে ৪০ ফিট-এর একটা কর্ডনিং এর তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তা যদি থাকেও, তাহলেও যে সেমিনার হলে মেয়েটি ধর্ষিতা আর খুন হল তার মধ্যে অত লোক কেন? অবশ্যই পুলিশের গাফিলতি, কিন্তু এটাও ঠিক যে ৪০ ফিটের কর্ডনিং ছিল, কিন্তু কর্ডনিং না করে যদি সেমিনার রুমটাকেই স্যানিটাইজ করা হত? সেটা করা উচিত ছিল, কিন্তু না করার ফলে কী কী হতে পারে? কেন প্লেস অফ অকারেন্স, অকুস্থলের জায়গাটাকে ঘিরে দেওয়া হয়? হত্যা বা ধর্ষণ হলে রক্ত, হাতের পায়ের ছাপ, দেহের লোম বা চুল, সিগারেট বা অন্য কোনও রাসায়নিকের গুঁড়ো ইত্যাদি পাওয়ার জন্যই তো এটা করা হয়। এবারে ওই ৪০ ফিট যদি কর্ডন না থাকে তাহলে কি এগুলো পাওয়াই সম্ভব নয়? আর যদি পেয়েই থাকে তাহলে পুলিশ পেয়েছে, সিবিআই পেয়েছে। কী কী পেয়েছে, কী কী পায়নি, আমরা কেউ জানি না। এবারে মৃতদেহের ইকোয়েস্ট এবং পোস্ট মর্টেম। ক’দিন আগেই যিনি শ্রেষ্ঠ হাসপাতালের পুরস্কার নিতে উঠেছেন, এক দিন আগে পর্যন্ত যার নামে মিডিয়াতে এক কুঁচোও খারাপ কথা দেখাতে পারবেন না। এই হত্যার আগে আরজি কর হাসপাতালে পোস্টমর্টেম হয় না, বা এই হাসপাতালের পোস্টমর্টেম নিয়ে বিরাট কোনও স্ক্যামের কথা কিন্তু আগে আমরা শুনিনি, তাহলে এই হাসপাতালের এক ডাক্তার, ধর্ষিতা এবং খুন হলেন, তাঁর পোস্টমর্টেম খামোখা অন্য জায়গাতে করা হবে কেন? কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই হাসপাতালের মাথাদের হাত থাকলে সত্যিই তো পোস্টমর্টেম পালটে যেতে পারে। তাহলে এরকম এক আইন দরকার যে যে হাসপাতালে বা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ বা হত্যা হল, সেখানে এই পোস্টমর্টেম করা যাবে না। কিন্তু এখনও সেরকম কোনও আইন নেই।
ওদিকে দেহ গেছে সোদপুরের বাড়িতে, এরকম এক ধর্ষণ হত্যা, পুলিশ শ্মশানে খবর দিয়েছে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিন, সব ক্ষেত্রেই করে থাকে, নেহাত বেওয়ারিশ না হলে এখনও এ ধরনের এক তরুণী ডাক্তার ছাত্রীর ধর্ষণ হত্যার পরে এই সামান্য অনুরোধে কীই বা আলাদা থাকতে পারে, উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় এমএলএ, থাকারই তো কথা, না থাকলেই বরং প্রশ্ন তোলা উচিত। এবার শ্মশান থেকে যে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তা নেওয়ার সময়ে কে সই করেছেন? খুব স্বাভাবিকভাবেই মা-বাবা নন, আপনার পাড়ায় এরকমটা হলে আপনি হাজির থাকবেন না? থাকলে বলবেন না মাসিমাকে বাড়ি নিয়ে যাও আমি সার্টিফিকেটটা নিয়ে আসছি। পাড়ার সেরকম কেউ যিনি সমব্যথী হয়ে এসেছিলেন, এরমধ্যেও রহস্য খোঁজা শুরু হয়ে গেছে। এরপর পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট নিয়ে অজস্র গুজব, অজস্র মিথ্যে কথা, আর একবার কোনও একটা জায়গাতে সংশয় দেখা গেলে কাঁড়ি কাঁড়ি সংশয় জন্ম নেয়, বহু কনস্পিরেসি থিওরি জন্ম নিতে থাকে। এর পরে যেদিন সন্দীপ ঘোষকে পাশের কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ করে পাঠানো হল সেদিন থেকেই বিষয়টাতে হাজারো সংশয় দানা বেঁধেছে। এতদিন বিষয়টা ছিল ধর্ষণ খুন আর আরজি করের দুর্নীতি, এবারে তারসঙ্গে জুড়ে গেল সরকার শাসক দল, মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এরপর থেকেই ঘটনা খুব তাড়াতাড়ি এক বিরাট ষড়যন্ত্র হয়ে উঠল। এই প্রাইজ ট্রান্সফার পোস্টিং যে আসলে এক ধর্ষণ খুন আর দুর্নীতিকে আড়াল করতে তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের এক সম্মতি তৈরি হল, তাঁরা এবারে জাস্টিস চাইতে শুরু করলেন।
তারমানে এই জায়গাটাতে এসে মানুষ যাবতীয় রহস্য উন্মোচন করেই এক দোষীকে চিহ্নিত করেছেন আর যাবতীয় যুক্তি তার বিরুদ্ধে তৈরি হচ্ছে, সুনামির মতো আছড়ে পড়ছে সেসব যুক্তি, এবং আসছে কোথা থেকে? মুরলীধর লেনের বিজেপির দফতর থেকে? আলিমুদ্দিন থেকে? অধীর চৌধুরীর মাথা থেকে? সেখানে যে কিছুই হচ্ছে না তা নয় কিন্তু অভিযোগের এক বিরাট অংশ আসতে শুরু করেছে সমাজ থেকে, এক অরাজনৈতিক সামাজিক স্পেস তৈরি হয়েছে, তাদের কেউ বাম, কেউ তৃণমূল, কেউ বিজেপি, কেউ বা তেমন কোনও দলেই নেই। কিন্তু তারা এর আগের বহু বহু বিষয় হজম করেছেন, বহু আবোল তাবোল বকা শুনেছেন, এবারে রুখে দাঁড়িয়েছেন, রাজনৈতিক কোনও শক্তিকে পাত্তা না দিয়েই এক সামাজিক কণ্ঠস্বর জেগে উঠেছে বহুদিন পরে। এর উদাহরণ স্মরণকালের মধ্যে নেই বলব না, এরকমটা আমরা তো দেখেইছিলাম ওই অপারেশন সূর্যোদয়ের পরের দিন, মানুষের প্লাবন নেমেছিল। কিন্তু সেদিনে সেই বিরোধিতার ফসল কাটার জন্যে তৈরি ছিলেন মমতা, তৃণমূল দল, আর সেদিনে সেটা পেটের ভাত নিয়ে সংশয় তৈরি করেছিল গরিব কৃষকদের মধ্যে। আর এটা সম্ভ্রমের লড়াই, ওটা পেটের লড়াই, এখনও পেট সবাইকে ছাপিয়েই কথা বলে।
এবারের এই সামাজিক কণ্ঠস্বর কিছুটা এলিট, সোশ্যাল মাধ্যম নির্ভর আর এদের আন্দোলনকে অ্যাবজর্ব করতে পারবে এমন কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নেই। বামেরা বিচ্ছিন্ন, বিজেপির কোনও সংগঠনই নেই, ভোট আর সংগঠন দুটো আলাদা জিনিস। কিন্তু এটা গড়ে উঠছিল এক বিরাট মোমেন্টাম তৈরি হয়েছিল ১৪ তারিখেই। তিনটে জিনিস সেই মোমেন্টাম কেড়ে নিল, ১) বিষয়টা আদালতে চলে গেল, কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআই-এর হাতে। সামাজিক কণ্ঠস্বরে বিভাজন সেই মুহূর্তেই, তাহলে জাস্টিস দেবে সিবিআই? ২) এরপর সর্বোচ্চ আদালত নিজে থেকেই দায়িত্ব নিল, তাদের দেখরেখেই হবে সিবিআই তদন্ত, সোশ্যাল ভয়েজ, এক ধর্ষণ খুনই শুধু নয় নারীত্বের অবমাননা আর সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেই সামাজিক কণ্ঠস্বরের এক অংশ এবারে অপেক্ষা করতে রাজি, জাস্টিস দেবেন জাস্টিস চন্দ্রচূড়। ৩) শুভেন্দুর সাফ কথা মমতার পদত্যাগ চাই, বকলমে এক নবান্ন অভিযান আর দলের ডাকে বাংলা বন্ধ, সামাজিক কণ্ঠস্বরকে রাজনীতির আঙিনাতে নিয়ে এসে আছাড় মারল। শুভেন্দুও চান হয় আমি নয় তুমি, মমতাও রাজি, সেই বিজেপি আর তৃণমূলের বাইনারিতে ঢুকে যাচ্ছে গোটা বিষয়টা। কী করবেন বামেরা? তাঁরাও অতএব তাঁদের রাজনৈতিক স্পেস নেওয়ার জন্যই উঠে পড়ে নেমেছেন, নামাটা স্বাভাবিক। সামাজিক সেই কণ্ঠস্বর ক্রমশ তার তীব্রতা হারাচ্ছে। মানুষ দ্রুত ন্যায় চাইছিলেন, অথচ ঘটনার চার দিন পরে আমরা যা জেনেছিলাম তার থেকে এক ইঞ্চি বেশি ইনফরমেশন আমাদের কাছে নেই, আমি গুজব আর কনস্পিরেসি থিওরির কথা বলছি না, আমি ইনফরমেশন, তথ্যের কথা বলছি। আর থাকবেই বা কী করে? মামলা তো সিবিআই-এর হাতে। এই সুযোগে এই বাংলাতেই ক’দিন আগেই কাগজের প্রথম পাতা দখল করা সন্দেশখালির কথা সব্বার মনে পড়ে যাবে, এই বছরের ১১ এপ্রিল সিবিআই একটা ইমেল আইডির কথা জানিয়েছিল। বলেছিল নিজের পরিচয় গোপন রেখে এই আইডিতে মেল করে অভিযোগ জানান, বেশ কিছু মেল এসেছিল নিশ্চয়ই, তার ভিত্তিতে পাঁচজন এবং আরও অজানা কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল। নির্বাচনের বাজারে হটকেক এসব খবর ছিল, সন্দেশখালিতে একটা অস্থায়ী সিবিআই অফিসও তৈরি হয়েছিল। চার মাস, চার মাস কেটে গেছে, সন্দেশখালির সেই মহিলাদের উপরে নির্যাতনের মামলার চার্জশিটও পেশ হয়নি, ট্রায়াল ইত্যাদি তো দূরস্থান, আর মিডিয়া? ভুলে মেরে দিয়েছে। কাজেই সিবিআই-এর উপর মানুষের ভরসা থাকার কথা নয়।