skip to content
Sunday, January 19, 2025
HomeScrollFourth Pillar | বাবরি মসজিদ ভাঙা দল বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য কাঁদছে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বাবরি মসজিদ ভাঙা দল বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য কাঁদছে

আরএসএস বিজেপির প্রাণপুরুষ সাভারকর ব্রিটিশদের কাছে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি চেয়েছিলেন

Follow Us :

চেষ্টা করলে হাঙরেরও দাঁত দেখতে পাবে, কিন্তু যখন মহীনবাবুর ছুরিটা চমকাবে তখন দেখতে পাবে না, পাবে না।
হাঙরেরা ধরলে শিকার কড়মড়িয়ে খায় মহীনবাবুর কারবারটার শব্দ কি কেউ পায়? কেউ শুনতে পাবে না, পাবে না।
দিনেদুপুরে পথেঘাটে পড়ে মানুষের লাশ খুনির নাম কেই বা করে, বাসরে, ওরেব্বাস! কেউ নাম তো করে না, করে না ।
বদ্যিপাড়ার মতিবাবু চিৎপাত ফুটপাথে, বুকে সমূল ছুরি বিঁধে আছে যে তার সাথে, ছুরি কার তা জানেন না, জানেন না।
চেষ্টা করলে হাঙরেরও দাঁত দেখতে পাবে, কিন্তু যখন মহীনবাবুর ছুরিটা চমকাবে তখন দেখতে পাবে না, পাবে না।

তিন পয়সার পালা নাটকের ছড়া, ব্রেখটের লেখা কবিতার ভাবানুবাদ। কিন্তু কী আশ্চর্য, আজকের দিনের সঙ্গে খাপে খাপ পঞ্চুর বাপ। একটা গোটা মসজিদ, প্রাচীন মসজিদ ভেঙে ফেলা হল কখন যখন তা আদালতের আদেশে সুরক্ষিত, যখন যারা সেখানে জমা হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা গুঁড়িয়ে দিল সেই তারাই আদালতে গিয়ে সাফ জানিয়ে এসেছে ওই মসজিদের ক্ষতি করা জন্য আমরা কেউ এখানে আসিনি। কিন্তু অবাক কাণ্ড, এমনকী দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও এই বেআইনি কাজের জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেন না, কাউকে সাজা দেওয়া হল না, হাজার চেষ্টা করেও হাঙরের দাঁত দেখা গেল না। সেই বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনটাকে বিজেপি দ্বিতীয় স্বাধীনতার এক পরম লগ্ন বলেই মনে করে, যার চূড়ান্ত বিজয় রামমন্দির উদ্বোধন। বিজেপি আরএসএস-এর প্রত্যেকেই কমবেশি উগ্র হিন্দুত্বের কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তবে অটল বিহারী বাজপেয়ী বা গোবিন্দাচার্য বা অরুণ জেটলির মতো নেতারা এক ধরনের ভদ্র আচরণের দায়রার মধ্যে থাকতেন, ক্যাডারদের কাছে ভাষণে কিছু বললেও সেটা থাকত ইঙ্গিতে, তাতে উগ্রতা কম থাকত। বাজপেয়ী এমনিতেই তাঁর উইট, মিছরির ছুরির জন্য পরিচিত ছিলেন, সবার কাছেই। কবিতা লিখতেন, ভালো মন্দ খেতেন, নিরামিষ নয়, আমিষ পছন্দ ছিল, কোথাও একটা অন্য মুখও ছিল, যেটা উনি ধরে রাখতে পারতেন। সেখানে আরএসএস-এর অনেক কাছের, হিন্দুত্ব এজেন্ডাকে নিয়ে অনেক বেশি সরব ছিলেন আদবানি, সিংঘল, কাটিয়ার, উমা ভারতী ইত্যাদিরা। কিন্তু এই মুখ আর মুখোশের খুব একটা নীতিগত বিরোধ ছিল না, বরং এই সফট লাইনার, হার্ড লাইনারের মোদ্দা লক্ষ্য ছিল ওই দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই, যা বিজেপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে ওই রামমন্দিরের উদ্বোধনের পরে। ওনারা জানেন ওনারা জয়ের খুব কাছাকাছি, হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন সাকার করার পথে, তাই শেষ লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যেতে খুব খোলাখুলিভাবেই চূড়ান্ত মেরুকরণ চাইছেন, তাই বাবরি মসজিদ ভাঙাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ের কথা প্রকাশ্যেই বলতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। আসুন আজ সেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামটা কেমন সেটা বুঝে নিই।

কেন দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনের লড়াই? কারণ প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের লড়াই শেষ হয়েছে ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭। সহিংস, অহিংস পথে লড়েছে দেশের মানুষ, লড়েছেন গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল, আবুল কালাম আজাদ, কংগ্রেসের নেতারা। লড়েছেন নেতাজি। লড়েছেন সূর্য সেন, বিনয় বাদল দীনেশ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, অরবিন্দ, বারীন্দ্র, ভগৎ সিং, আসফাকুল্লা, চন্দ্রশেখর আজাদ। লড়েছে দেশের কৃষক, শ্রমিক, লড়েছে নৌ বিদ্রোহীরা, প্রাণ দিয়েছে ছাত্ররা। আচ্ছা এই প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধে আরএসএস, হিন্দু মহাসভা কোথায়? তাঁরা কী করছিলেন? মহাফেজখানায় রাখা আছে সেই চিঠি, যেখানে একবার নয়, একটা নয়, পাঁচ পাঁচটা চিঠি, যে চিঠিগুলোতে আরএসএস বিজেপির প্রাণপুরুষ সাভারকর ব্রিটিশদের কাছে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি চেয়েছিলেন, জেল থেকে বের হতে চেয়েছিলেন। জুলাই ১, ১৯০৯, মদনলাল ধিংরা ইন্ডিয়া অফিস, লন্ডনে গুলি করে হত্যা করলেন স্যর উইলিয়াম কার্জনকে। ডিসেম্বর ২৯, ১৯০৯, অনন্ত কানহেরে গুলি করে মারলেন নাসিকের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম জ্যাকসনকে। জ্যাকসন একটা থিয়েটার হলে বসে মারাঠি নাটক ‘সারদা’ দেখছিলেন। দুটো ক্ষেত্রেই অস্ত্র জোগান দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকার। বিচারের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন, দুটো টার্মে ৫০ বছরের জেল এবং কালাপানি পার করে আন্দামানে পাঠানোর সাজা দেওয়া হল। তিনি আন্দামানে পৌঁছলেন ৪ জুলাই ১৯১১। ব্যস, বিপ্লবীয়ানার ইতি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিতে শুরু করলেন। তাঁর চিঠির ভাষা খুব পরিষ্কার, আর কোনওদিনও হবে না, যে কোনও শর্তে আমার মুক্তি চাই। ওই সময়েই জেলে ছিলেন বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, তিনি লিখছেন যে সাভারকর এমনকী ব্রিটিশ জেলারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও শামিল হতেন না। কী লিখলেন তিনি ব্রিটিশদের? “The Mighty alone can afford to be merciful and therefore where else can the prodigal son return but to the parental doors of the Government?” এর বদলে তিনি জানালেন, ব্রিটিশরা যেভাবে চাইবে, সেভাবেই তিনি সাহায্য করবেন। তিনি বললেন, তাঁকে ক্ষমা দেওয়া হলে, “all those misled young men in India and abroad who were once looking up to me as their guide will seek lesson from it.” মানে তিনি তো আত্মসমর্পণ করছেনই, বাকিদের দায়িত্বও নিচ্ছেন। এই সাভারকর গান্ধীহত্যার দায়েও গ্রেফতার হয়েছিলেন, গ্রেফতার হওয়ার পরেই আবার মুচলেকা, ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজিকে হত্যা করা হল ১৭ দিন পরেই সাভারকর বোম্বে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে জানালেন, “I shall refrain from taking part in any communal or political activity for any period the government may require in case I am released on that condition.” আবার মুচলেকা। যখন গডসে কেবল স্বীকার করছেন না, তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলছেন, কেন, কোন কারণে তিনি গান্ধীজিকে হত্যা করলেন, ঠিক তখন, তাঁর মেন্টর মুচলেকা দিয়ে সরে যাচ্ছেন। প্রমাণের অভাবে তিনি ছাড়া পেলেন, কিন্তু জেলের মধ্যে গডসে বা অন্যদের সঙ্গে কথাও বলতেন না। গডসে এইজন্য দুঃখ পেয়েছিলেন, সে কথা বলেওছিলেন। এই হল বিজেপির স্বাধীনতা সংগ্রাম। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আরএসএস সরাসরি তার বিরোধিতা করেছিল, তার সদস্যদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, যাতে তারা ব্রিটিশদের সহযোগিতা করে, আরএসএস-এর সদস্যরা তা করেওছিল। এই বাংলায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ব্রিটিশদের চিঠি লিখে কীভাবে এই আন্দোলন দমন করা যায়, তার উপায় বাতলেছিলেন। তিনি তখন বাংলার মন্ত্রিসভার অন্যতম মন্ত্রী। ওদিকে অটল বিহারী বাজপেয়ী ব্রিটিশদের কাছে মুচলেকা দিয়েছিলেন, জানিয়েছিলেন, যারা আন্দোলনে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দেবেন, সে চিঠিও মহাফেজখানায় রাখা আছে। তো দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই ছিল আরএসএস হিন্দু মহাসভার অবদান। আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার একজনও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেননি, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে যাননি, যিনি গিয়েছিলেন, তিনি জেল থেকে বেরোনোর জন্য মুচলেকা দিয়েছিলেন। সেই আরএসএস-এর রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এটা স্বাধীনতার দ্বিতীয় সংগ্রাম, শুনলে হাসি পায়।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষে ১৯৪৭, ১৫ অগাস্ট দেশ স্বাধীন হল, আমরা কী পেলাম? পেলাম এক সংবিধান, যা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ করেছে, যা প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করেছে। পেয়েছি নিজেদের ভোটে নির্বাচিত সরকার, যেখানে আমাদের প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করছেন, দেশে এক বিরাট কৃষি বিপ্লব হয়েছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে। এগুলো আমাদের স্বাধীনতার প্রাপ্তি। অনেক কিছুই হয়নি, আজও দারিদ্র আছে, চূড়ান্ত দারিদ্র, অশিক্ষা আছে, স্বাস্থ্যের অধিকার এখনও সবার জোটেনি, কিন্তু তার জন্য লড়াইও চলছে, সেটাও স্বাধীনতারই ফসল। যতই খর্ব হোক, রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমাদের অনেক প্রাপ্তির উৎসস্থল। এই সংবিধানই আমাদের ধর্ম, লিঙ্গ, জাত, নির্বিশেষে সমানতার অধিকার এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | চিন্ময়ানন্দ বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতিনিধি নন, হতেই পারেন না

এবার আসুন বিজেপির দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে। প্রথমটাতে আরএসএস-বিজেপি ছিল কোথায়? কী অবদান তাঁদের? বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কী করেছিলেন ১৫ অগাস্ট ১৯৪৭-এর আগে? সে কথা থাক, ওনাদের এই ১৯৯২, ৬ ডিসেম্বরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাপ্তিগুলোর হিসেব নিকেশ করা যাক। তাঁদের এই তথাকথিত স্বাধীনতা সংগ্রামে কারা অংশগ্রহণ করল? ওনাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্লোগান কী ছিল? মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে, কার মন্দির? রামের। কেন ওহি বনায়েঙ্গে? কারণ হল, ওখানেই নাকি রাম জন্মগ্রহণ করেছিল তাই। তার জন্য কী করতে হবে? বাবরি মসজিদ ভাঙতে হবে। তাহলে দাঁড়াল স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের মুসলমান, ক্রিস্টান, শিখ, পারসি, জৈন, বৌদ্ধরা বাদ। কারণ তাঁরা খামোখা রামের মন্দির বানাতে যাবেন কেন? বাদ বৈষ্ণবরাও, কারণ তাঁরাও রামের পূজারী নয়। বাদ নাস্তিকরা স্বাভাবিক কারণেও, বাদ সেইসব হিন্দুরাও যাঁরা ঘরে পুজোপাঠ করেন কিন্তু মন্দির বানানোর জন্য মসজিদ ভাঙতে হবে, এমন আজগুবি অসভ্য ধারণায় বিশ্বাস রাখেন না। তার মানে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বাদ পড়লেন এই সংগ্রাম থেকে। তারপরেও প্রচুর মানুষ, তাঁরা গেলেন, মসজিদ ভাঙা হল, তারপর মন্দিরের ভূমিপূজনও হল, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পারিজাত বৃক্ষ রোপণ করে শুরুয়াত করলেন। বিজেপির ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণতা পেল। বেশ। তারপর, এই তথাকথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে আমরা কী পেলাম? প্রত্যেকের শিক্ষা? স্বাস্থ্য? চাকরি? স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পূর্ণতা পেল, অর্থনীতি ধুঁকছে, বৈষম্য আকাশ ছোঁওয়া, বেকারত্ব তার রেকর্ড চূড়োয়, শিল্পে মন্দা, মুল্যবৃদ্ধি রকেট গতিতে উপরের দিকে। এ কেমন স্বাধীনতার পূর্ণতা? কাদের স্বাধীনতা? প্রতি দিন ৮৭ জনের ধর্ষিতা হওয়ার স্বাধীনতা? কৃষকদের আত্মহত্যা করার স্বাধীনতা? ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের দরজায় তালা পড়ার স্বাধীনতা? ছাঁটাই হওয়ার স্বাধীনতা? কিসের স্বাধীনতা?

আসুন এবার দেখে নিই ওই দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পিছনের ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার কথা। ভি পি সিং-এর সরকার পড়ে গেল, তারপর চন্দ্রশেখরের সরকার, বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থন। সাত মাস পরেই জুন মাসে ৯১-এ কংগ্রেস সমর্থন তুলে নিল। ওদিকে বিজেপি তখন রামমন্দির থেকে ডিভিডেন্ড পাবে বুঝে গেছে, হিন্দু ভোটে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাদের প্রয়োজন আরও বড় মেরুকরণ। ইউপি-তে তখন কল্যাণ সিং-এর সরকার, বিজেপির সরকার। আবার নির্বাচন, নির্বাচনের মধ্যেই নিহত হলেন রাজীব গান্ধী, না হলে বিজেপি সেই তখনই আরও অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠত। কংগ্রেসের সরকার হল, সংখ্যালঘু সরকার, প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও। পণ্ডিত মানুষ, রাজনীতি বোঝেন। বিজেপি করসেবার ডাক দিল। প্রথমে মনে হয়েছিল নরসিমহা রাও দারুণভাবে সামলে নিচ্ছেন। তিনি বিষয়টাকে আদালতের দিকে ঠেলে দিলেন, বিতর্কিত কাঠামোর উপর নতুন করে স্থিতাবস্তা জারি হল। বিজেপি আইনিভাবে পিছিয়ে পড়ল। এদিকে বিজেপির ক্যাডাররা মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে বলে চিল চিৎকার করে চলেছে, নেতারা অস্বস্থিতে। করসেবার ডাক দেওয়া হল। রাও সেটাকেও ঠেলে দিলেন আদালতের দিকে। বিজেপি বুঝল, কল্যাণ সিং সরকারকে ক্ষমতায় রেখে যা করার করে ফেলতে হবে। শুরু হয়ে গেল ষড়যন্ত্র। আদালতে এক কথা, আলোচনায় এক কথা, জনসভায় অন্য কথা। তারা যে কোনও মূল্যে কল্যাণ সিং সরকারকে বাঁচাতে চান, কমিউনিস্ট নেতারা, অর্জুন সিং থেকে সুবোধকান্ত সহায়, প্রত্যেকে রাওকে বলছেন, ওদের বিশ্বাস করা যায় না, ওরা বিতর্কিত কাঠামো ভেঙে ফেলবে। শরদ পওয়ার আরএসএস-এর অভ্যন্তরীণ খবর নিয়েই জানালেন, সেরকম প্রস্তুতিই চলছে। রাও চাল দিলেন, অন্তত ভাবলেন যে চাল দিচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্ট ইউপি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চাইলেন। ২৭ নভেম্বর ১৯৯২ কল্যাণ সিং সরকার সুপ্রিম কোর্টে দুটো এফিডেভিট পাঠাল, বলা হল, ১) কোনওভাবেই মন্দির নির্মাণের কোনও চেষ্টাকে বরদাস্ত করা হবে না। ২) বিতর্কিত কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হলে তা যে কোনও মূল্যে রুখে দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল, The Hon’ble Court decided to appoint a Judicial Officer as an observer for a period of 2 weeks in the first instance to observe and monitor the situation and submit a report to it whenever, in his opinion, developments tending to be detrimental to the effectuation of the Court’s order take place. A Judicial Officer has since been appointed for this purpose and started functioning. মানে সুপ্রিম কোর্ট কল্যাণ সিং সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপরে একজন জুডিসিয়াল অফিসারকে নিযুক্ত করলেন, যিনি ২ সপ্তাহ ধরে আদালতকে রোজ জানাবেন বাস্তব হাল হকিকত। বিচারক তেজ শঙ্কর জানাতে থাকলেন, কোথাও কোনও আইনের উল্লঙ্ঘন হচ্ছে না। আইবি জানাচ্ছে পরিস্থিতি ঘোরালো, কাঠামো ভাঙার সুষ্পষ্ট পরিকল্পনা চলছে। সমস্ত রিপোর্ট বলছে, নেতারা চাইলেও কাঠামো বাঁচানো অসম্ভব। কিন্তু ততদিনে রাও জড়িয়েছেন নিজের জালে, এখন তিনি কল্যাণ সিং সরকারকে বরখাস্ত করে প্রশাসনের দায় নিজের হাতেও নিতে পারছেন না, কারণ সুপ্রিম কোর্ট প্রকারান্তরে করসেবার অনুমতি দিয়েছে। বিনয় কাটিয়ার অশোক সিংঘলরা প্রকাশ্যেই বাবারি মসজিদ ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন। দেশ থেকে লাখ লাখ করসেবক অযোধ্যার দিকে রওনা দিয়েছেন। ৩০ তারিখ লৌহপুরুষ আদবানি বেনারসের জনসভায় বললেন, “আমরা যে কোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত।” ২ ডিসেম্বর আজমগড়ের সভায় বললেন, আমারা কোদাল আর ইট বয়ে নিয়ে যাচ্ছি।‘ গর্জন উঠল, মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে। ৪ ডিসেম্বর লখনউতে বিজেপির উদারবাদী মুখ অটল বিহারী বাজপেয়ী সবচেয়ে বড় ইঙ্গিতটা দিলেন। তিনি বললেন, অন্য কারও নয়, আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ নিয়েই করসেবা করতে যাচ্ছি, সেখানে ভজন কীর্তন হবে, এবার ভজন কীর্তনের আসর তো সমান করতে হবে তাই না? গেরুয়া ফেট্টি পরা হাজার মানুষ মুহূর্তে বুঝে গেলেন, স্লোগান উঠল, মন্দির ওহি বনায়েঙ্গে।

তার আগেই নরসিমহা রাওয়ের কাছে বিভিন্ন এজেন্সির খবর পৌঁছে গেছে, তিনি বৈঠকে বসলেন আরএসএস-এর রজ্জু ভাইয়ার সঙ্গে, তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর ভৈরো সিং শেখাওতকে ডেকে আনা হল, তিনি তখন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী। তিন দফা বৈঠকের পর সুস্পষ্ট আশ্বাস দিলেন তাঁরা, মন্দির নির্মাণের চেষ্টা হবে না, বিতর্কিত কাঠামোর ক্ষতি হবে না।

এরপর ৬ ডিসেম্বর সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার সাকসেসফুল অপারেশন, বাবরি মসজিদ ভেঙে চুরমার। দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলন ছিল এক বিরাট ধাপ্পাবাজি। বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা, সংবিধানের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে। আসলে আরএসএস আর সঙ্ঘ পরিবার জন্মমুহূর্ত থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করা ছাড়া অন্য কিছুই করেনি। তারা স্বাধীনতা চায় মধ্যযুগীয় শাসন ফিরিয়ে আনতে, তারা দেশকে ধর্মের নামে ভাগ করতে চায়। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ ছিল বিশ্বাসঘাতকতা, এক কলঙ্কজনক অধ্যায়, যাকে বিজেপি স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

স্বাধীনতা আনতে ষড়যন্ত্রের দরকার হয়নি, স্বাধীনতা আনতে ভূরি ভূরি মিথ্যে বলার দরকার হয়নি। সেই শহীদদের কথা স্মরণ করুন, যাঁরা ফাসিকাঠে প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা জেলে গেছেন, মার খেয়েছেন, কিন্তু লড়েছেন মুখোমুখি ব্রিটিশদের সঙ্গে, তাদের প্রকাশ্য দাবি ছিল একটাই, দেশের স্বাধীনতা, সে ঘোষণা তাঁরা লুকিয়ে করেননি। স্বাধীনতা এসেছে, না পাওয়ার তালিকা অনেক বড়, তার জন্যে লড়াই করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে, প্রয়োজনে জেলেও যেতে হবে। কিন্তু আজ যে সরকার এসেছে, যে দল আমাদের রাষ্ট্র সমাজকে বিষিয়ে দিতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটাই আজ হয়ে উঠেছে প্রধান কাজ, সেটাই হবে আর এক স্বাধীনতার আন্দোলন, আজাদি, ভুখমরি সে আজাদি, মনুবাদ সে আজাদি, পুঁজিবাদ সে আজাদি, জান সে পেয়ারি আজাদি, বিনা ডর কে আজাদি, সামন্তবাদ সে আজাদি, গরিবি সে আজাদি। সে লড়াইয়ের মধ্যেই আজ আমরা অবাক হয়ে দেখছি সেই সরকার, সেই আরএসএস বিজেপির নেতারা, শুভেন্দু অধিকারী থেকে সুকান্ত মজুমদার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবরে কেঁদে আকুল, যাঁরা এদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কের মধ্যে রেখেছেন, যাঁরা এদেশের সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর স্বপ্ন দেখেন, সেই তাঁরা পড়শি দেশের সংখ্যালঘুদের অত্যাচার নিয়ে যখন কাঁদেন তখন প্রত্যেককে, জনে জনে ডেকে বলতে হবে এই ৬ ডিসেম্বরের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, আরএসএস-বিজেপির হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করার গোপন ষড়যন্ত্রের কথা, সেটাই আজ সবথেকে জরুরি কাজ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
00:00
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সাজা ঘোষণা, সারাদিন প্রেসিডেন্সির ৬ নম্বর সেলে কী করে কাটালেন সঞ্জয়? দেখে নিন প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | কী কারণে মহাকুম্ভে অ*গ্নিকাণ্ড? ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
00:00
Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
11:46:50
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
02:30
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
03:14
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
11:38