Thursday, July 17, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ভারত বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ভারত বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়

হেঁ হেঁ করে জড়িয়ে ধরে যে কূটনীতি হয় না, সেটা মোদিজি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন

Follow Us :

আগে শুনতাম বিভিন্ন ইসলামিক দেশের মোল্লারা ফতোয়া দিত, এমনকী তাদের নিজেদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও জানিয়ে দিত কী করা যাবে, কী করতে হবে আর কী করা যাবে না। এখন সেই গুরুদায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছেন আমেরিকার জোকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম মার্কিন কংগ্রেসে বিল পেশ করেছিলেন আগেই। মঙ্গলবার সেই বিলকে সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বিলে বলা হয়েছে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোনও দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখে, তবে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ৫০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এই শুল্ককে ট্রাম্প প্রশাসন এক ধরনের ‘অর্থনৈতিক বাঙ্কার বাস্টার’ বলেই দেখাচ্ছে। মানে এই শুল্ক বসালে ভারত, চীনের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। লক্ষ্য একটাই— যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক সস্তায় তেল কিনছে, তাদের উপর এত বেশি শুল্ক বসানো হবে যাতে তারা আর রাশিয়ার তেল না কেনে। আর তাতে পুতিনের যুদ্ধ চালানোর খরচ উঠে যাবে না, অর্থনীতি ভেঙে পড়বে— এই হল যুক্তি। ভারত আর চীন মিলে রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল কেনে, সেটা মোট রাশিয়ান তেল রফতানির প্রায় ৭০ শতাংশ। এই তেল বিক্রির টাকাই এখন রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর বড় উৎস। তাই আমেরিকা যদি ঠিক করে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশের উপরে ৫০০ শতাংশ শুল্ক বসাবে, তাহলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে ভারত আর চীন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবে নিলে চীন আর ভারতের অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। কারণ দু’টো দেশই সস্তা দামে রাশিয়ার অপরিশোধিত, কাঁচা তেল কিনে নিজেদের জ্বালানির খরচ বাঁচাচ্ছে। শুধু ভারত ২০২৪ সালেই এই তেলের জন্য প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বাঁচিয়েছে। এখন যদি ৫০০ শতাংশ শুল্ক বসে, তাহলে এই সুবিধা আর থাকবে না।

ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরও জটিল। কারণ শুধু তেল না, আমেরিকায় ভারতের যেসব পণ্য রফতানি হয়— যেমন ওষুধ (১২ শতাংশ), কাপড়চোপড় (১৫ শতাংশ) আর রত্ন-গহনা (১০ শতাংশ)— সবকিছুই ধাক্কা খাবে। এপ্রিল থেকে জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে একা আমেরিকাতেই ভারতের রফতানি প্রায় ৩৭.৭ বিলিয়ন ডলার। এই শুল্কের জেরে সেই পুরো টাকাটাই ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এই শুল্ক ভারতের আমদানি খরচ ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। এখনই যখন মূল্যবৃদ্ধির হার (সিপিআই) ৬ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে, তখন এটা ভারতের উপর একেবারে বাড়তি চাপ। এই সময়টাই আবার ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের জন্য বেশ সংবেদনশীল। দুই দেশের মধ্যে একটা বড় বাণিজ্য চুক্তি হতে চলেছে, কিন্তু কিছু কৃষি বিষয় নিয়ে মতভেদ হওয়ায় সেটা আটকে আছে। এখন এই ধরনের শুল্ক দিলে সেটা শুধু ব্যবসার ক্ষতি করবে না, কূটনৈতিক সম্পর্কেও টান পড়বে। ভারত কীভাবে দেখবে জানা নেই কিন্তু চীন এই শুল্ক চাপানোকে নিজেদের স্বাধীন বাণিজ্য সিদ্ধান্তের উপর এক রকম শাস্তি হিসেবেই দেখছে, তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে তারাও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

প্রথম পদক্ষেপ, আমেরিকার পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসানো। চীন আগেও ট্রাম্পের আমলে আমেরিকান সয়াবিন, গাড়ি, হুইস্কি, ও কৃষিজ পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছিল। এবারও তারা আমেরিকার কিছু নির্দিষ্ট রফতানির ওপর ১০০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক চাপাতে পারে। এতে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকার কৃষকরা, কারণ চীন হল বৃহত্তম সয়াবিন আমদানিকারক দেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে গাড়ি নির্মাতা সংস্থা বা যারা বিক্রি করে হাই ভ্যালু লাক্সারি গুডস, উচ্চমূল্যের বিলাস দ্রব্য যেমন আইফোন, ল্যাপটপ, মদ ইত্যাদি। দ্বিতীয় পদক্ষেপ আমেরিকান সংস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা। চীন সরকার চাইলে Apple, Tesla, Qualcomm-এর মতো বড় বড় মার্কিন কোম্পানির উপর কর বাড়াতে পারে, উৎপাদন লাইসেন্স কড়াকড়ি করতে পারে, নতুন বিনিয়োগে বাধা দিতে পারে, তথ্য নিরাপত্তা ও সাইবার আইন প্রয়োগ করে মার্কিন সংস্থাকে চাপে ফেলতে পারে। তিন নম্বর পদক্ষেপ হিসেবে চীন বিপুল মার্কিন বন্ড বিক্রি করে দিতে পারে, চীনের হাতে ৮০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মার্কিন ট্রেজারি বন্ড আছে। চীন যদি এর কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়, ডলার দুর্বল হবে, মার্কিন ঋণের উপর সুদের হার বেড়ে যাবে, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বাড়বে। তবে চীন নিজেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই এটা শেষ অস্ত্র হিসেবে রেখে দিতে পারে। চার নম্বর পদক্ষেপ নিজস্ব কারেন্সি (ইউয়ান) ব্যবহার বাড়ানো, চীন চাইছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ান ব্যবহার বাড়াতে। ভারতের সঙ্গেও চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ইউয়ান ব্যবহারের কথা বলেছে। ব্রিকস দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ডলারের আধিপত্য কমাতে চেষ্টা করছে। পাঁচ নম্বর পদক্ষেও হিসেবে জোর দিতেই পারে বিকল্প বাণিজ্য জোট গঠন আর তাকে শক্তিশালী করে তুলতে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বাংলায় কথা বলো? বাংলাদেশে যাও

চীন ইতিমধ্যেই অনেক আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির নেতৃত্বে রয়েছে, RCEP, রিজিওনাল কমপ্রিহেন্সিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ, ভারত, নিউজিল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া আছে, আমেরিকা নেই। BRICS+ কে জোরদার করার কাজ শুরু করেছে। আর BRI (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) তো চলছে।

চীন চাইছে, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত WTO বা IMF-এর বাইরে একটা আলাদা বিশ্ব অর্থনৈতিক গোষ্ঠী তৈরি করতে। সব মিলিয়ে ভারত যেখানে চুপ করে বসে আছে, সেখানে চীন কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ের কথা জানিয়েই রেখেছে। ভারত এই সময়ে মাথা তুলে স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে পারত, কিন্তু আমাদের দেশের বিদেশমন্ত্রীকে দেখুন, এত বড় বড় কথা বলার পরে, কোয়াড সম্মেলনে গিয়ে উগ্রপন্থা বিপদ ইত্যাদি যাবতীয় কথা বলার মধ্যে একবারের জন্যও পাকিস্তানের নামটা পর্যন্ত করে উঠতে পারলেন না। আমরা আগেই বলেছিলাম জুলাই মাস মোদিজির জন্যে খুব সুবিধের হবে না। আমেরিকার সঙ্গে ট্রেড ডিলের আগেই, বাণিজ্য চুক্তির আগেই আমেরিকা জানিয়ে দিল রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা যাবে না। কিনলে ৫০০ শতাংশ শুল্ক বসবে। ভারতের কারও মুখে এখনও এ নিয়ে কোনও কথাই নেই। কোয়াড সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এ নিয়ে কোনও কথা বলেননি। কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যা হল মোদিজি দিন দশেকের জন্য বিদেশ বেড়াতে গেছেন, আর সেই বেড়ানোর মধ্যিখানেই তাঁকে যেতে হবে ব্রিকস সম্মেলনে। সেখানে চীন, থাকবে, ব্রাজিল থাকবে, রাশিয়া থাকবে, সাউথ আফ্রিকা থাকবে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আসবে, আমেরিকার এই ফতোয়া নিয়ে কথা হবে। কীসের অভিনয় করবেন মোদিজি সেখানে? বোবার? মৌনিবাবার? এবং মাথায় রাখুন ফিরেই সংসদে আসতে হবে, সেখানে এক শশী থারুর দিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ সামলানো যাবে না।

ইস্যু কি শুধু ট্রাম্পের ফতোয়া? ব্রিকসে মোদিজি তুলতে পারবেন পাকিস্তানের কথা? পাকিস্তানের মুনির আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যাহ্ণভোজনের কথা? ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার চেষ্টা করেই চলেছেন যেন কাশ্মীর নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে তিনি, একমাত্র তিনিই মধ্যস্থতা করতে পারেন। কাশ্মীর যেহেতু দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার মূল কারণ, ট্রাম্প ভাবছেন এখানে শান্তি আনতে পারলে সেটাই হবে বড় ‘সফলতা’। পাকিস্তান বরাবরই চাইত যে, কাশ্মীর নিয়ে বাইরের দেশগুলো কথা বলুক, হস্তক্ষেপ করুক। তাই ট্রাম্পের এই আগ্রহে পাকিস্তান খুব খুশি, কারণ ওরা এটাকে নিজেদের দাবিকে সামনে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ মনে করে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি ট্রাম্পের মুখের উপরে জানিয়ে দিতে পারবেন, কাশ্মীর ইস্যু একেবারে দ্বিপাক্ষিক, এতে কোনও মধ্যস্থতা চলবে না— এবং ভারত কখনওই এই বিষয়ে কারও মধ্যস্থতা মেনে নেবে না। এর পিছনে ট্রাম্পের রাজনীতিটাও পরিষ্কার, ভারতকে পাশ কাটিয়ে যদি পাকিস্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে জোট গঠনের পরিকল্পনা জোরদার হবে, বা হতে পারে বলে মনে করছেন ট্রাম্প সাহেব।

হেঁ হেঁ করে জড়িয়ে ধরে যে কূটনীতি হয় না, সেটা মোদিজি আপাতত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, কিন্তু তাঁর সম্ভবত অন্য বাধ্যবাধকতাও রয়েছে, তিনি মুখেই বলেন ইন্ডিয়া ফার্স্ট, আসলে তো তা আদানি আম্বানি ফার্স্ট, কাজেই ট্রাম্প সাহেবের ফতোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে চীন যেভাবে রুখে দাঁড়াল সেই জোর তিনি দেখাতে পারবেন না, কিন্তু তিনি আমেরিকার ছাতার ছায়াও হারাবেন, রাশিয়ার তেলও হারাবেন, পাকিস্তান, চীনকে আরও সুবিধে করে দেবেন, যার ফল দেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে। ট্রাম্পের ফতোয়া উত্তর কোরিয়া মানেনি, দিব্যি আছে, চীন বা রাশিয়ার ফতোয়া মানার প্রশ্নই নেই, কানাডা কবেই বলেই দিয়েছে, নিজের চরকায় তেল দিন। কলম্বিয়া, মেক্সিকো পর্যন্ত রুখে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সমেত দুনিয়ার একগুচ্ছ দেশ ইজরায়েলের ট্রাম্প সখা নেতানিয়াহুকে ওয়ার ক্রিমিনাল বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইরান হুমকি দিচ্ছে। দেশের মধ্যে নিউইয়র্কের হনু মেয়র জোহরাম মামদানি নিউ ইয়র্কে এলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে বলে জানিয়েছে। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা হু হু করে পড়ছে দেশে এবং বিদেশে, সেই মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই ফতোয়ার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলতে পারছেন না, দেশবাসী লজ্জিত।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Satyajit Ray | সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ প্রকাশ
01:34:16
Video thumbnail
Prashant Kishor | SIR-এর কারণে বিহারে ক্ষমতা হারাতে চলেছে NDA, বিরাট ভবিষ্যদ্বাণী পিকের
04:10
Video thumbnail
SSC | আজ হাইকোর্টে SSC মামলার রায়দান
01:18:05
Video thumbnail
Bangla Bolche | Arup Chakraborty | মমতাকে নিশানা কংগ্রেস, CPM-র
01:29
Video thumbnail
Bangla Bolche | Tarunjyoti | 'ভাষা দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ হয়না'
01:27
Video thumbnail
Air India | অ/ভিশপ্ত 787 বোয়িংয়ে জ্বা/লানি সরবরাহ সুইচে ছিল না কোনও সমস্যা, বাড়ছে রহস্য
05:13
Video thumbnail
Politics | বাদল অধিবেশনে এবার বিরোধী-ঝড়ে পড়বে সরকার
03:42
Video thumbnail
Weather Update | নিম্নচাপের জেরে উত্তাল সাগর, কী কী বিশেষ নিরাপত্তা? উপকূলবর্তী এলাকায়, দেখুন ভিডিও
01:28:51
Video thumbnail
Mamata Banerjee | সিপিএমের যারা শরিক কী করছে এখন ঠিক?
04:41
Video thumbnail
Politics | বাঙালির হে/নস্থা রাস্তায় মমতা
05:40

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39