skip to content
Monday, October 7, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | দুর্গাপুজোও তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়েরই গল্প
Fourth Pillar

Fourth Pillar | দুর্গাপুজোও তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়েরই গল্প

মহিষাসুরই তখন মন কি বাত বলত, তার ইচ্ছেই ছিল শাসন, বিরোধিতা ছিল মৃত্যু

Follow Us :

গণতন্ত্র এক শাসন ব্যবস্থা, যার সবচেয়ে প্রচলিত সংজ্ঞা হল, আ গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য পিপল। মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য, মানুষের সরকার। আমরা কখনও কেন্দ্রীয় সরকার বলি, কখনও মোদিজির সরকার বলি, কখনও বা বিজেপির সরকার বলি বটে, কিন্তু তা ঠিক নয়, তা অসম্পূর্ণ বা বেঠিক। গণতন্ত্রে মানুষ ভোট দেয় সরকার তৈরি করতে, সেই সরকার মানে আইনসভা, রাজ্যসভা, লোকসভা, বিধানসভা। গণতন্ত্র মানে গরিষ্ঠাংশের শাসন নয়, কেউ তা বোঝানোর চেষ্টা করে বটে, কিন্তু তা ডাহা মিথ্যে। গণতন্ত্রে মানুষ শাসক ও বিরোধী দুই দলকেই নির্বাচিত করে, তারা সংসদে বসে আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমে দেশ চালায়, এটাকেই গণতন্ত্র বলে। মানুষের, মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য এক শাসনব্যবস্থা। সেই শাসন ব্যবস্থার, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিরোধিতা। মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা, দল বা মোর্চা যা করতে চাইছে, সংখ্যালঘু সদস্যরা, দল বা মোর্চা তার বিরোধিতা করতে পারে। এমনকী সংসদে বসে থাকা, প্রত্যেক দল একমত হয়েও যদি একটা আইন পাশ করে, তাহলেও আপনি একলা, কয়েকজনে মিলে, কয়েকটা সংগঠন মিলে তার বিরোধিতা করতে পারেন, বলতেই পারেন, আমরা এই আইন মানছি না, বলতেই পারেন, সেটাই গণতন্ত্র। আমাদের সংবিধান সেই গণতান্ত্রিক ধারণাকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে, আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে, কিছু অধিকার, মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে, প্রত্যেক মানুষের ফ্রিডম অফ স্পিচ আছে, মনের কথা খুলে বলার অধিকার আছে। হ্যাঁ, মন কি বাতে, শুধু মোদিজি বলবেন, বাকিরা সারা জীবন শুনেই যাবে এমনটা নয়, বলা আছে যে প্রত্যেক নাগরিক বলতে পারে তার মনের কথা, দেশের যে কোনও জায়গায় গিয়েই বলতে পারে।

আপনি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার যে কোনও ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে আইন মেনে আপনার মনের কথা বলতে পারেন, সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে, মৌলিক অধিকার। এবং এই সংবিধানই আপনাকে এক বিচার ব্যবস্থা দিয়েছে, যেখানে আপনি একলাই গিয়ে বিচারপতিকে বলতে পারেন, হুজুর এই আইন জনবিরোধী, এই আইন বাতিল করুন। এটাই গণতন্ত্র। এই সংবিধান রচনার সময়, বিজেপির উত্তরসূরিরা দেশের সংবিধান সভা বয়কট করেছিল, করেছিল কারণ তাঁদের এই ব্যবস্থা না পসন্দ, তাঁরা মনেপ্রাণে, তাদের আদর্শ অনুযায়ী গণতন্ত্র বিরোধী। তাদের গুরুদেব সদাশিব গোলওয়ালকর, হিটলার আর নাৎসি শাসনের মধ্যেই তাদেরকে খুঁজে পায়, এক রাজা আর তাঁর মুখের বাণীতে দেশ চলবে, এটাই তাঁদের কাম্য শাসন ব্যবস্থা, রাজতন্ত্র। গণতন্ত্র নয়। না হলে একবার ভাবুন দেশের এক অংশে আগুন জ্বলছে, এখনও রোজ মণিপুরের দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে, মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেই রাজ্যে পা রাখারও প্রয়োজন বোধ নেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর। তিনি এই বিষয় নিয়ে একটা কথা বললেন না, চোখের জল ফেলা তো দূরের ব্যাপার, সামান্য শোকপ্রকাশও করলেন না। ২০২-এ মোদিজি ৫৩৭ জন কৃষকের মৃত্যুতে বিচলিত নন, এই অন্নদাতাদের মৃত্যু তাঁর কাছে তুচ্ছ, এ নিয়ে তিনি একটা কথাও মুখে আনেননি।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আবার চীন-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা?

তিনিও হয়তো তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতো বিশ্বাস করেন, এই কৃষকেরা আসলে বব্বর খালসার লোকজন, এরা খলিস্তান পন্থী, এরা মাওবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি। ওঁর পক্ষে এসব মনে করা স্বাভাবিক, হাথরসে মন্ত্রীপুত্রের গাড়ির চাকার তলায় চাপা পড়ে মারা গেলেন ৫ জন মানুষ, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা। অন্য রাজনৈতিক দল যখন ঘটনাস্থলে যেতে চাইল, তখন প্রায় ৭২ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হল সেই গ্রাম আর ঘটনাস্থলকে, গ্রেফতার করা হল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে, আবার প্রমাণিত হল, দেশে গণতন্ত্র নেই। মোদিজির সরকার মনে করে গণতন্ত্র হল মেজরিটির শাসন, মেজরেটেরিয়ানিজমে বিশ্বাসী তারা। মানে কী কথাটার? সোজা বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। Majoritarianism is a traditional political philosophy or agenda that asserts that a majority (sometimes categorized by religion, language, social class, or some other identifying factor) of the population is entitled to a certain degree of primacy in society, and has the right to make decisions that affect the society. মানে এক সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, যেখানে তার সংখ্যালঘুদের মতামত অগ্রাহ্য করে, ধর্ম, শ্রেণি বা এক নির্দিষ্ট দলের শাসন চালু করা হয়। আমরা ইতালিতে মুসোলিনিকে, জার্মানিতে হিটলারকে এই ধরনের শাসন কায়েম করতে দেখেছি, এই ব্যবস্থায় যে কোনও সংখ্যালঘু তার সাধারণ অধিকার হারিয়ে ফেলে, আক্রান্ত হয়। ভারতবর্ষেও সেই ব্যবস্থাই চালু করেছে আরএসএস বিজেপি, যে কোনও বিরোধিতা কে তারা দেশদ্রোহ মনে করে, যে কোনও প্রতিবাদকে চক্রান্ত মনে করে, যে কোনও বিরোধী কণ্ঠস্বরকে তারা চুপ করিয়ে দিতে চায়। তারা যা বলছে, বা তাদের নেতা যা বলছে, সেটাকেই লাগু করতে চায়।

কোন সংখ্যাগরিষ্ঠতা? যে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সায় আছে দেশের ৩৭-৩৮ শতাংশ মানুষের, তাকেই হাতিয়ার করে গণতন্ত্রকে খুন করতে চায়। এমনটা নতুন নয়, পৃথিবীতে বহুবার এমন মেজরেটেরিয়ানিজম দেখা গেছে, এর একমাত্র উপায়, বিরোধী প্রত্যেক শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ করে, এই শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, একমাত্র সেই ঐক্যের হাতিয়ার দিয়েই এই সংখ্যাগরিষ্ঠবাদের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায়, ইতিহাস তাই বলছে। দেখুন না চার্চিলের মতো ভয়ঙ্কর কমিউনিস্ট বিরোধী, রুজভেল্টের মতো চরম কমিউনিস্ট বিরোধী, স্তালিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই হিটলার, মুসোলিনি, তোজোর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন, জিতেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সংখ্যাগরিষ্ঠবাদের বিরুদ্ধে, হাত মিলিয়েছিল অজস্র বিরোধী দল, তাদের মধ্যে দক্ষিণপন্থী জনসংঘও ছিল, কমিউনিস্টরাও ছিল, সমাজগণতন্ত্রীরাও ছিল, তাদের সম্মিলিত ঐক্যের সামনে হেরে গিয়েছিলেন প্রবল ক্ষমতাশালী ইন্দিরা গান্ধী। বাংলাদেশে এরশাদের শাসন শেষ হয়েছিল, মিশরে, উগান্ডায় বিভিন্ন দেশের ইতিহাস সেই কথাই বলে। আজ আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই, জাঁকিয়ে বসেছে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, তার বিরুদ্ধে লড়াইতে জিততে হলে চাই সার্বিক ঐক্য, যতদিন সে ঐক্য না তৈরি হচ্ছে, ততদিন আমাদের ওই একতরফা মন কি বাত শুনে যেতেই হবে, পরিত্রাণ নেই।

এইসবের মাঝখানে চলে এল দুর্গাপূজো, সেই দুর্গার আবাহনও কিন্তু এই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথাই বলে, অসুররা দলে দলে বেরিয়ে এসে, মহিষাসুরের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করেছিল, কেবল মহিষাসুরই তখন মন কি বাত বলত, তার ইচ্ছেই ছিল শাসন, বিরোধিতা ছিল মৃত্যু। দেবতারা চেষ্টা করেছিলেন, ইন্দ্র চেষ্টা করেছিলেন, আলাদা আলাদা লড়াইতে দেবতারা পরাস্ত হয়, তাঁরা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে তিনি তাঁদের এক ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সামনে আনতে বলেন। তাঁরা সবাই মিলে দুর্গাকে সামনে রেখে লড়াই শুরু করেন, যার যা ছিল খড়্গ, ধনুক, তরবারি থেকে সমস্ত অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করেন তাঁদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে, অসুরপতিকে মেরে আবার শান্তি আর সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনেন মা দুর্গা। কল্পকাহিনি, কিন্তু মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা অস্ত্র আর শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ না করলে, প্রবল অন্যায় আর অত্যাচারের মোকাবিলা করা যায় না। আজ আশ্বিনের শারদপ্রাতে যখন বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী, ধরণীর বহিরাকাশে যখন অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা, তখন সেই সমস্ত শক্তি যাঁরা গণতন্ত্র চান, যাঁরা আইনের শাসন চান, যাঁরা এই প্রবল অত্যাচারী শাসনের অবসান চান, তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। এক মা দুর্গাকে চাই, যিনি দেশের মানুষের, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের সমর্থন নিয়ে অত্যাচারীকে দমন করবেন, শারদীয়া উৎসব আমাদের কাছে সেই ঐক্যবার্তা নিয়ে আসুক। সব্বাই ভালো থাকবেন, উৎসব আনন্দের হয়ে উঠুক, অন্যায় আর পাপের অবসান হোক। আগামী ক’দিন চতুর্থ স্তম্ভের ছুটি, ততদিন সব্বাই ভালো থাকবেন, বড়দের প্রণাম, ছোটদের জন্য রইল শুভেচ্ছা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Israel | বিগ ব্রেকিং কয়েক ঘন্টার ম‍ধ‍্যেই ইরানে বড় হামলা চালাতে পারে ইজরায়েল
00:00
Video thumbnail
Russia | বিগ আপডেট ফাদার অফ অল বম্ব ব‍্যবহার করবে রাশিয়া? বিস্ফোরক দাবি জেলনস্কির
00:00
Video thumbnail
Iran | ইরানকে চারদিকে ঘিরে রেখেছে আমেরিকা? দেখুন ভয় ধরানো ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Iran | Israel | ইরান-ইজরায়েল সংঘাত দিল্লির সিদ্ধান্ত কী?
00:00
Video thumbnail
Kunal Ghosh | অনশনে কোনও হস্তক্ষেপ নয়, বেশি অসুস্থ হলে দায়ী থাকবেন প্ররোচকরা, বিস্ফোরক কুণাল
09:02:36
Video thumbnail
Iran | Israel | ইরান-ইজরায়েল সংঘাত দিল্লির সিদ্ধান্ত কী?
11:41:26
Video thumbnail
Sera 10 | ব্যারাকপুরে মণ্ডপে ফুটে উঠছে পরিবেশ
21:46
Video thumbnail
Exit Poll 2024 LIVE | কলকাতা টিভি পোল অফ পোলস, ইন্ডিয়া জোটের জয়জয়কার
11:39:00
Video thumbnail
Iran | Israel | ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত, ইজরায়েলের বুকে তুমুল ব‍্যথা, দেখুন হাড়হিম করা ভিডিও
05:12:01
Video thumbnail
RG Kar | আরজি করের নির্যাতিতার বাড়ির সামনে তৈরি হচ্ছে ধরনা মঞ্চ
01:54:37