skip to content
Monday, January 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | প্রত্যেকটা অঙ্ক বিজেপির বিরুদ্ধে যাচ্ছে, সেই হিসেবটা দেখা যাক

Fourth Pillar | প্রত্যেকটা অঙ্ক বিজেপির বিরুদ্ধে যাচ্ছে, সেই হিসেবটা দেখা যাক

Follow Us :

পতনের কিছু শর্ত তো থাকে, কিন্তু একবার পতন শুরু হলে তা আর কোনও প্রি-কন্ডিশন, কোনও প্রাক শর্ত মেনে চলে না, নতুন নতুন উপাদান যোগ হয়, পতন তরান্বিত হয়। হ্যাঁ, সমাজ বিজ্ঞান আর ইতিহাস বহু নির্মম পতনের সাক্ষী। কিন্তু পতনের আগে কিছু অঙ্ক, হিসেব থাকে, যা দেখলে সেই অনিবার্য পতনের একটা অনুমান তো করাই যায়। সেই হিসেবগুলো, অঙ্কগুলোর প্রত্যেকটা একে একে আরএসএস–বিজেপির বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। আসুন সেই হিসেবটা বোঝার চেষ্টা করা যাক। সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচনে জেতাটা জরুরি, জেতার জন্য বহু চালাকি করাই যায়, বহু ব্যবস্থা করাই যায়। কিন্তু শেষমেশ মানুষের সম্মিলিত বিরোধিতার সামনে সেসব ব্যবস্থা আর চালাকি শেষ হয়ে যায়। কাজেই যাঁরা বিজেপির প্রচুর টাকা আছে, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকেই হাতে নিয়ে নিয়েছে ইত্যাদি সত্যি কথাগুলোকেই বিজেপির ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখান, তাঁদের বলি এসবের পরেও মানুষ সরকার ফেলেছে, ফেলে দেয়, ফেলে দেবে। আমাদের দেশের নির্বাচনের প্রথম হিসেব জাতপাতের। আমি চাই বা না চাই, আপনি চান বা না চান, জাতপাতের জটিল হিসেব বাদ দিয়ে আমাদের দেশের নির্বাচনকে বোঝা যাবে না। সিএসডিএস-এর সমীক্ষা বলছে ৫৫ শতাংশ মানুষ, বড় আটটা রাজ্যের ৫৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তাঁরা নিজেদের কাস্টের লোককেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান। আরেকটু বিশদে হিসেবটা দিই, ৪৩ শতাংশ মানুষ অন্ধ্রপ্রদেশে, ৫৭ শতাংশ বিহারে, ৬৫ শতাংশ মধ্যপ্রদেশে, ৫৪ শতাংশ মহারাষ্ট্রে, ৬২ শতাংশ রাজস্থানে, ৫২ শতাংশ ঝাড়খণ্ডে, ৬১ শতাংশ ছত্তিশগড়ে আর ৪৮ শতাংশ তেলঙ্গানার মানুষ জানিয়েছেন তাঁরা নিজেদের জাতের মানুষকেই ভোটে জেতাতে চান। উত্তরপ্রদেশের নাম নেই দেখে অবাক হচ্ছেন? ওখানে কাস্টের হিসেবটা ধর্মে বদলে দিতে পেরেছে বিজেপি। ওখানে কেবল জাতের ভিত্তিতে জন প্রতিনিধি বাছার পার্সেন্টেজটা কম নয়, কিন্তু এতটাও নয়। ওখানে বিজেপি হিন্দু বনাম মুসলমান ন্যারেটিভটা দাঁড় করাতে পেরেছে, বিএসপি জমি হারিয়েছে, কংগ্রেস জমি হারিয়েছে, মুসলমান ভোট সমাজবাদী দলে জমা হচ্ছে। আমাদের বাংলাতেও মেরুকরণটা জাতের ভিত্তিতে নয়, ধর্মের ভিত্তিতেই, অসমেও তাই। দক্ষিণে এরই সঙ্গে দ্রাবিড় নন দ্রাবিড় ফ্যাক্টর কাজ করেছে। যাই হোক দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ নিজের জাতের মানুষকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়, এটা হল প্রথম ব্যাপার।

এবারে আসুন দেখা যাক এই জাতের ভিত্তিতে ভোট দেওয়া মানুষজনের মধ্যে শিক্ষিতের হার কত? ওই সাক্ষর, সই করতে পারেন যাঁরা, তার মধ্যে ৬৩ শতাংশ, স্কুল পাশ করেছেন, তার মধ্যে ৫৬ শতাংশ, এবং কলেজ পাশ করেছেন, তার মধ্যে ৪৭ শতাংশ মানুষ নিজের জাতের মানুষকেই ভোট দেন। তার মানে শিক্ষা মানুষকে জাতের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়নি। মাত্র ৯-১০ শতাংশ মানুষ নিজের জাতের বাইরে ভোট দেন আর ওই সাক্ষরদের মধ্যে ২৭ শতাংশ, স্কুলপাশদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ, কলেজ পাশ করাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন জাতের বিচার তাঁরা করেন না। জাতিভিত্তিক জনগণনা হয়নি কিন্তু বহু সার্ভেতে জাতের একটা মোটামুটি হিসেব তো আছে, আসুন সেটা দেখে নিই। আপার কাস্ট বা জেনারেল যাদের বলা হয়, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, কায়স্থরা জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ, পিছিয়ে এবং অতি পিছিয়ে পড়া মানুষ ৪১.৯ শতাংশ, সিডিউল কাস্ট ১৬.৬ শতাংশ, শিডিউল ট্রাইব ৮.৬ শতাংশ, মুসলমান ১৪.২ শতাংশ আর অন্য সংখ্যালঘু, নাস্তিক ইত্যাদি মিলে ৬ শতাংশ মানুষ আছেন। জাতিভিত্তিক জনগণনা নিয়ে মোদিজি এক রাশ কেঁদেছেন, জাতি নিয়ে দেশটাকে কংগ্রেস ভাগ করার চেষ্টা করছে, বিরোধীরা জাতি নিয়ে রাজনীতি করছে ইত্যাদি। কী কান্না, কী কান্না। কিন্তু এই মোদিজিই কথায় কথায় নিজেকে ওবিসি বলেই দাবি করেন। ওনার আমলেও শিডিউল কাস্ট, শিডিউল ট্রাইবের গণনা হয়েছে, তাঁদের জন্য আলাদা প্রকল্প হয়েছে। আমাদের দেশে কাস্ট স্ট্রাকচার এক বাস্তব, একে এড়িয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ এই কাস্ট আর ক্লাসের এক যোগসম্পর্ক আছে, নিচু জাতের মানে গরিব, উঁচু জাতের মানে বড়লোক, এটা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অনস্বীকার্য সত্য। কিন্তু এ নিয়ে কথা পরে বলা যাবে, আপাতত জাতের হিসেবটা বোঝা যাক। জাতের হিসেবটা আগে কেমন ছিল, এখন কেমন?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | আগামী ৫ রাজ্যের বা ২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপি হারবে কেন? 

সেই জনসঙ্ঘের আমল মানে ১৯৭০ থেকে ২০১৯-এর নির্বাচন পর্যন্ত শিডিউল কাস্ট ভোটারদের মধ্যে জনসঙ্ঘের বা বিজেপির ভোট ছিল ১০ শতাংশ, এখন ৩৪ শতাংশ মানে ২৪ শতাংশ ভোট বেড়েছে। কংগ্রেসের ছিল ৪৬ শতাংশ, এখন ২০ শতাংশ, মানে ২৬ শতাংশ ভোট কমেছে। আঞ্চলিক দলগুলোর ছিল ৪৪ শতাংশ, এখন ৪৬ শতাংশ, মানে ২ শতাংশ বেড়েছে। ওই যে বিএসপি, লোক জনশক্তি বা আরও ছোট ছোট দল, তারা শিডিউল কাস্টের ভোট বাড়িয়েছে, আর সবটাই কিন্তু এসেছে কংগ্রেসের কাছ থেকে। শিডিউল ট্রাইবদের মধ্যে বিজেপি পেত ৫ শতাংশ, এখন ৪৪ শতাংশ, ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি। কংগ্রেস ছিল ৪৮ শতাংশ এখন ৩১ শতাংশ মানে ১৭ শতাংশ কমেছে। আঞ্চলিক দলের কাছে ছিল ৪৭ শতাংশ, এখন তা কমে ২৫ শতাংশ, মানে ২২ শতাংশ কমেছে। ওবিসিদের বিজেপি ৭ শতাংশ ভোট বেড়ে এখন ৪৪ শতাংশ, ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। কংগ্রেসের ৩৭ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ কমে এখন ১৫ শতাংশ। আঞ্চলিক দলের ৫৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমে এখন ৪১ শতাংশ হয়েছে। আপার কাস্টের ৬ শতাংশ ভোট বেড়ে বিজেপির এখন ৬১ শতাংশ। কংগ্রেসের ৬৫ শতাংশ কমে এখন ১২ শতাংশ। আঞ্চলিক দলের ২৯ শতাংশ কমে এখন ২৭ শতাংশ হয়েছে। মুসলমানদের ভোটের কিচ্ছু পেত না বিজেপি, এখন তা ৮ শতাংশ । কংগ্রেসের ছিল ৭৫ শতাংশ, এখন ৩৩ শতাংশ। আঞ্চলিক দলের ছিল ২৫ শতাংশ, ৩৪ শতাংশ বেড়ে এখন তা ৫৯ শতাংশ । ২০১৯-এ বিজেপি যত ভোট পেয়েছে তার ৪৯ শতাংশ ওবিসি, ২১ শতাংশ আপার কাস্ট, ১৫ শতাংশ এসসি, ১০ শতাংশ এসটি, আর সামান্য নামমাত্র মুসলমান ভোট। কংগ্রেসের মোট ভোটের ৩২ শতাংশ ওবিসি, মুসলমান ২৫ শতাংশ, এসসি ১৭ শতাংশ, এসটি ১৪ শতাংশ, আপার কাস্ট ৮ শতাংশ। এখানেই সমস্যা। বিজেপির মোট ভোটের ৪৯ শতাংশ ওবিসি, ২১ শতাংশ আপার কাস্ট। এদিকে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি উঠছে, এর আগে কংগ্রেস যখন এর বিরোধিতা করত তখন বিজেপি দু’ মুখে ওবিসি রাজনীতি করে গেছে। এই প্রথম একজন ওবিসি প্রধানমন্ত্রী হল, এই প্রথম একজন দলিত রাষ্ট্রপতি হল, এই প্রথম একজন আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হল ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন চাকাটা ঘুরেছে, কংগ্রেস বলছে হ্যাঁ, আমরা ভুল করেছিলাম, আমরাও জাতিভিত্তিক জনগণনা চাইছি। এবং কেবল গণনা নয়, জিসকি জিতনি সংখ্যা ভারি, উসকি উতনি হিসসেদারি। যারা যত সংখ্যায় আছে, তাদের ততটাই চাই। এই স্লোগানে সবচেয়ে বিপদে বিজেপি, কারণ তাঁদের মোট ভোটের ৪৯ শতাংশ ওবিসি। এই ভোটের বিরাট অংশকে তাঁরা হিন্দু ব্র্যাকেটের মধ্যে আনতে পেরেছিলেন, এখন তারা বিগড়োলে পুরো খেলাটা ঘুরে যাবে। পুরো বিরোধী জোট এখন এই জাতিগত জনগণনার দাবি তুলেছে। আপনি ভাবতেই পারেন বিজেপি মেনে নিক, ল্যাটা চুকে যাবে। না অত সহজে নয়। বিজেপি মেনে নিলে তাদের বিরোধীদের দাবি মেনে নিতে হল, এই খবর চলে যাবে ওই ওবিসিদের কাছে, কাজেই বিজেপির ওবিসি ভোট খানিক কমবে। অন্যধারে এর পরেই ২৫ শতাংশ ভোট আছে আপার কাস্টের, তাদের এক বিরাট অংশ ভোটই দিতে আসবে না। দেশভাগের পরেই হিন্দু মহাসভা আরএসএস ইত্যাদির পক্ষেই ছিল দেশের সামন্ত রাজা নবাবেরা, কিন্তু তাদের অকর্মণ্যতা দেখেই তারা চলে যায় কংগ্রেসের দিকে। ঠিক সেরকমটাও হতে পারে। অন্তত বিজেপির আপার কাস্টের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামবে এটা তো বলাই যায়। তার মানে বিজেপির ভোট ৮-১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। না মানলে আরও বেশি, ওবিসি ব্যাঙ্কে ধস নামবে, ভোট কমবে ১৪-১৫ শতাংশ।

কাজেই শাঁখের করাতের উপরে বসে আছে বিজেপি, নরেন্দ্র মোদি। এখন পাহাড়ে ধ্যান করলে হবে না, মানুষ ওনাকে মহাপ্রস্থানে পাঠাতে চায়। কেবল এই একটাই তো ইস্যু নয়, বেকারত্ব আছে, মূল্যবৃদ্ধি আছে, তার উপরে এই জাতিভিত্তিক জনগণনা এসে হাজির। এবং এই ইস্যু বিরাটভাবে কাজ করবে কোথায়? হিন্দি হার্ট ল্যান্ডে, সেখানেই তো বিজেপির রমরমা বাজার। দক্ষিণে কমল ফুল ফোটার তো কোনও সম্ভাবনাই নেই, যা আছে তা তো এই হিন্দি গোবলয়ে। সেখানেই ভোটে ধস নামলে বিজেপি টাল সামলাতে পারবে না। কিন্তু গল্প তো এখানেই শেষ নয়, এই জাতের সঙ্গে মিশে আছে পিছিয়ে পড়া, অশিক্ষা, বৈষম্য, দারিদ্র। সে নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো তার আগে আজ শুধু এটুকু বলি বিহারের জাতিভিত্তিক জনগণনার প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট আপনারা দেখেছেন, আমরা চর্চাও করেছি। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের রিপোর্ট আসলে তা আরও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলবে। কারণ ওই রিপোর্টে থাকবে অর্থনৈতিক মাপকাঠি আর বৈষম্যের হিসেব। কাদের মাথায় ছাদ আছে? কাদের ঘরে ফ্রিজ আছে? এসি আছে, গাড়ি আছে? কাদের আয় কত? এসব বের হবে। না খেতে পাওয়া মানুষের কাছে আসল সত্যিটা বের হয়ে আসবে। হ্যাঁ, তখন এই খেলার ক্লাইম্যাক্স দেখব আমরা। তা নিয়েও বিশদে আলোচনা করবো আমরা আজ নয়, পরের দিন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Medinipur | মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন কাণ্ড, ৩ প্রসূতিকে আনা হলSSKM হাসপাতালে, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
BJP | শেষ শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এগিয়ে বিজেপি, দ্বিতীয় স্থানে কে? জানতে হলে দেখুন
00:00
Video thumbnail
Kanyashree Prakalpa | ট্যাব কেলেঙ্কারির পর কন্যাশ্রী দুর্নীতি দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Medinipur | SSKM | মেদিনীপুর থেকে SSKM -এ গ্রিন করিডরে স্থানান্তর ২ প্রসূতিকে, দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পকে সতর্কবার্তা ফ্রান্স-জার্মানির, এবার কী হবে? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
BJP | "আমাকে জিজ্ঞাসা করে বাচ্চা পয়দা করেছিলেন?" এ কী বললেন বিজেপি নেতা?
00:00
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | স্বামীজির বাড়ি থেকে বার্তা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
Gangasagar | গঙ্গাসাগর মেলায় বিদেশী পূণ্যার্থীদের ভিড়, কী করছেন তারা? দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Voter List | নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ নির্বাচন কমিশনের , ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ বিজেপির , দেখুন ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Medinipur | মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্যালাইন কাণ্ড, ৩ প্রসূতিকে আনা হলSSKM হাসপাতালে, দেখুন সরাসরি
13:47