skip to content
Wednesday, January 15, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : ধান কাটি, কাটি ধান, ধান কাটি

চতুর্থ স্তম্ভ : ধান কাটি, কাটি ধান, ধান কাটি

Follow Us :

যাযাবর মানুষ, ঘর বেঁধেছিল কেন? ফল আহরণ আর শিকারেই দিন কাটানো মানুষজন থিতু হল, ঘর বসাল, ক্রমে সে ঘরের এক কোণে তৈরি হল তুলসিতলা বা জায়নামাজের উদার জমিন, কেন? কারণ সভ্যতার সেই পর্যায়ে মানুষ কৃষক হয়ে উঠল, সেই অর্থে মানব সভ্যতার, আদিমতম পেশা, কৃষি।
যেখানে জল মেলে সহজে, সহজেই বীজ অঙ্কুরিত হয়, নদীর ধারে, উর্বর জমিতে গড়ে উঠল বসতি, নগর। ঘাম ঝরেছিল সেইখানে, রক্তও ঝরেছিল। পাকা গমের হলুদ ক্ষেত, রুটির সুঘ্রাণ কিংবা সোনালী ধান, গরম ভাতের স্বপ্ন সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুদিন, বহু বছর। জেমস ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন তো সেদিনের কথা। সে কৃষকদের জমির মায়া, সন্তানের মায়ার চেয়ে কম নয়, তার ফসল, পোয়াতি মহিলার মতো পাকা ধানক্ষেত, অতি বৃদ্ধ পিতার মতো পুরনো আলপথ, ঘরের পাশে মাচায় শিশুর মত বেড়ে ওঠা লাউ, করলা, শসা। এ কৃষকের সংসার।

আজও, হ্যাঁ আজও গোলা ভরা ধান কিনতে আসে মহাজন, নগদ টাকা দিয়ে ধানের বস্তা নিয়ে যায়, চাষীর চোখ ভিজে যায়, যেন মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি চলে গেল। এরাই কৃষক, মূল্য নয়, কেবল অর্থোপার্জন নয়, কৃষি তার জীবন যাপন। সে এক শ্রমিকের মত সর্বহারা নয়, তার টান আছে, জমির টান। তাগিদ আছে ফসল ফলানোর তাগিদ, স্বপ্ন আছে, সোনালী ধানের স্বপ্ন। তাই সে জান বাজী রেখে বলতে পারে, হেই সামালো ধান হো, জান কবুল আর মান কবুল করে সে মাঠে নামতে পারে, রুখা সুখা বাঁজা জমিতেও যে ফসল ফলাতে পারে, তার রোখ, তার জেদ, তার লড়াইয়ের ক্ষমতার আন্দাজ পায়নি বহু শাসক, তার জমি কেড়ে নিতে চেয়েছে, অন্যায়ভাবে তার তৈরি ফসল গোলায় ভরতে চেয়েছে। আর ততবার, ততবার কৃষকরা বুঝিয়ে দিয়েছে, এ বড় কঠিন ঠাঁই, এ এক পলাশীর প্রান্তর, লড়াই হবে, হবেই।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, নির্বাচন

সারা পৃথিবীতেই হয়েছে। যেখানে শিল্প কৃষিকে গিলে খেয়েছে বহু আগেই, গফুররা যেখানে বহু আগেই চলে গেছে চটকলে, সেখানেও। আর কৃষিপ্রধান দেশে? যখন মার্কস সাহেব বলছেন, সর্বহারা, শ্রমিকরাই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবে। তখন নিজের দেশের বাস্তবতা বুঝেই, চীনে মাও সে তুং ডাক দিয়েছিলেন বিপ্লবের, কৃষকরাই ছিল তার অগ্রবাহিনী। আমাদের দেশে নীল চুক্তি চাষ কারা রুখেছিল? কোন রাজনৈতিক দল? কৃষকদের অদম্য জেদ আর তাঁদের আন্দোলনের সামনে মাথা নীচু করেছিলেন, নীলকর সাহেবরা।

১৯১৭, সারা ভারত দেখেছিল, এক নতুন লড়াই। চম্পারনে কৃষকদের সত্যাগ্রহ, গান্ধিজীর নেতৃত্ব আর ব্রিটিশদের মাথা নোয়ানো। ১৯২১, কেরালাতে মপালা কৃষক বিদ্রোহ, গান্ধিজীর সঙ্গে এবার মৌলানা আজাদ, জমিদাররা হেরেছিল, ব্রিটিশদের সাহায্য নিয়েও হেরেছিল। তারও আগে ১৯১৮তে গুজরাতে খেদা সত্যাগ্রহ, লড়াইয়ের সামনে বল্লভভাই প্যাটেল, ইংরেজরা হেরেছিল, কৃষকদের প্রতিরোধের সামনে, ফসলের খাজনা কমাতে বাধ্য হয়েছিল। সারা দেশে, চাষের তিনভাগের একভাগ ফসল গোলায় তোলার লড়াই এই বাংলায়, তেভাগা আন্দোলন। ইংরেজ, জমিদারদের যৌথ আক্রমণকে ঠেকিয়ে ঐতিহাসিক লড়াই, অহল্যা মা আর তার গর্ভের সন্তান দেখে যেতে পারেনি বটে, আজ তেভাগা এক স্বীকৃত অধিকার। নকশাল বাড়ির কৃষক আন্দোলন, সারা দেশ জুড়ে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ, আজও প্রাসঙ্গিক।

আমরা ২৩৫, গর্বিত উচ্চারণের মুখোমুখি কৃষকদের লড়াই, ৩৪ বছরের সিপিএম শাসনের অবসান নয়, তাদের বিলুপ্তি। তাও ছিল কৃষক আন্দোলন। আর দীর্ঘ এক বছর ধরে চলতে থাকা আন্দোলনে জলকামান চালিয়ে, কাঁটাতার আর পেরেকের গজাল দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে, মিথ্যে মামলা দিয়ে, খালিস্থানী, মাওবাদী আর বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে, আন্দোলনজীবী বলে ব্যঙ্গ করে, গাড়ির চাকার তলায় পিষে মেরেও শেষ পর্যন্ত, কঁহি তপস্যা মে কমি রহ গয়ি থি, ইত্যাদি ডায়ালগ দিয়ে কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে হল। কিন্তু তফাতটা দেখুন, এর আগের প্রত্যেকটা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয়েছে, দু’পক্ষ সামনা সামনি বসে, আলোচনায়, ইংরেজরাও আলোচনায় ডেকেছেন গান্ধী, আজাদ, প্যাটেলকে, কৃষক নেতাদের সঙ্গে বসেছেন ইংরেজ শাসকরা, বুদ্ধদেব মমতার মিটিং হয়েছে, অনেক আন্দোলনের পর, অনেক অত্যাচার, লাঠি গুলি, দমন পীড়নের পর, শেষমেষ দু’পক্ষ বসে মীমাংসা হয়েছে। কিন্তু এবারে দেখুন, নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদি, নিজেই আইন করলেন, একদিনের জন্য কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি, কোনও আলোচনায় যাননি, উল্টে সংসদে দাঁড়িয়ে এই আন্দোলনের নেতাদের আন্দোলনজীবী বলেছেন, এখনও মন্ত্রিসভায় তাঁকে রেখেছেন, যার ছেলে গাড়ির চাকার তলায় পিষে মেরেছে কৃষকদের, দলের লোকজন আন্দোলনরত কৃষকদের মাওবাদী, খলিস্থানী বলেছেন, তিনি মৌনিবাবা হয়ে রয়ে গেলেন। তারপর ইউপির নির্বাচন যখন মাথার ওপরে, তখন ভোট কাটাকুটির অঙ্ক কষে বিল ফেরত নিচ্ছেন, না সেই বিল ফেরত নেওয়ার সময়ও কোনও আলোচনা নেই, খানিক খাঞ্জা খাঁয়ের মত। ইচ্ছে হল, বিল আনলাম, ইচ্ছে হল বিল ফেরত নিলাম। এবার আপনারা বাড়ি যান। ফল দেখুন, ফাটা বাঁশে আটকে রয়েছে তাঁর আবেদন।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ: ফাসিস্তদের হার

দেশের কৃষকরা প্রকাশ্য জনসভায় বলছেন, আপনি মিথ্যেবাদী, আপনাকে বিশ্বাস করতে পারছি না। হ্যাঁ প্রকাশ্য জনসভায়, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী দল নয়, কৃষকরা মিথ্যেবাদী বলছেন। প্রথম কথা হল, আপনি বিলটা এনেছিলেন কেন? আপনার এক্তিয়ারের বিষয়ই নয়, কৃষি রাজ্যের বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কিছু সুপারিশ করতে পারে, কৃষি আইন রাজ্যের বিষয়, আপনার নয়। বেড়ে খেলে আইন তৈরি করলেন, যা প্রথম দিন থেকেই অসাংবিধানিক। আনারও কেউ নন, ফেরত নেওয়ারও কেউ নন, তবে বেড়ে খেলেছেন, এবার সামলান। কৃষকরা গত ১৫/২০ বছর ধরে এমএসপি, মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের জন্য আন্দোলন করছেন, এতদিন পরে মোদিজী জানাচ্ছেন, এমএসপি-র জন্য নাকি কমিটি তৈরি হবে, কত বড় মিথ্যেবাদী আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তা আর একবার প্রমাণিত।

২০১১ সালে দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এক কমিটি তৈরি হয়, তার চেয়ারম্যান ছিলেন, সেদিনের গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি আজকের প্রধানমন্ত্রী, সেদিন তিনি গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর কাছে, ওই রিপোর্ট জমা দেন। সে সব ভুলে মেরে দিয়েছেন, কৃষকরা তো ভোলেননি। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, কমিটির কি দরকার, কমিটি তো ছিলই, তার রিপোর্ট পড়ে আছে আপনার দফতরে, পিএমও অফিসে, কেবল ফাইলটা বের করুন, সই করুন। নিজেরই কমিটি, দেখারও দরকার নেই, সই করুন এমএসপি দিন। এটা প্রথম দাবি।

পরের দাবি হল, কৃষকরা নিজেদের গ্রামে, বাড়িতে ফিরে যাবে, আপনি বলবেন আর ফিরে যাবে? আপনার পুলিশ প্রশাসন হাজারটা মিথ্যে মামলা রুজু করেছে, সেই মামলা ফেরত নিন। তারপর তাঁরা বাড়ি ফিরবেন। এবং ৬৭১ জন শহীদ হয়েছেন, আপনাদের নির্বোধ আচরণের শিকার তাঁরা, এই মৃত্যুর দায় আপনাদের। এই মৃত্যুর ক্ষতি কোনওদিন পূরণ হবে না, যার বাবা, যাঁর দাদা, যাঁর কাকা মারা গেছে, তাঁরা তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু সরকার এই মৃত্যুর জন্য দায়ী, নিয়ম অনুযায়ী তার ক্ষতিপূরণ দিন। এবং শেষ দাবি হল আপনার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী, অজয় কুমার মিশ্রা, তার ছেলে গাড়ির চাকার তলায় পিষে মেরেছে কৃষকদের, তার পদত্যাগ চাই। এই চারটে দাবি মেটালে বাকি দাবি নিয়ে কৃষকরা আলোচনা চালাবে, কিন্তু রাস্তা থেকে সরে যাবে।

আপনি দুঃখিত, আপনি ক্ষমা চেয়েছেন, কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছে, আপনার দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমাতে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, কাজের কথা বলুন, এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি দিন, মামলা তুলুন, মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিন, অজয় মিশ্রাকে বরখাস্ত করুন। এর কমে কৃষকরা কোনও কথাই মানবে না, এরপরেও পড়ে থাকবে, খরচ আর তার ওপরে ৫০ শতাংশ যোগ করে এমএসপি নির্ধারণ, বিদ্যুৎ বিল সংশোধন, দুগ্ধ বিল যা আনা হচ্ছে, ধানে গোড়া জ্বালানো নিয়ে যে আইন, সেসব নিয়ে তারপর আলোচনা চলতে থাকবে। বাকি যাকে সাদা বাংলায় বলে পিতলা পিরিত, সেসব বাদ দিয়ে কাজের কাজ করুন। আজ্ঞে হ্যাঁ মোদিজী, এটাই কৃষকরা বলছেন।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : উত্তর প্রদেশ-২০২২
এই কৃষকরা অনায়াসে, জানেন না হয়তো, ময়ুরকে বিস্কুট না খাইয়ে একদিন সক্কালে চলে যান জমিতে, দেখবেন, কৃষকরা অনায়াসে আগাছা উপড়ে ফেলে, গাছ আর আগাছার মধ্যে ফারাক তাদের চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না, ওনারা গত ১৫-২০ বছর ধরে আন্দোলন করছিলেন, আপনার বিলের বিরুদ্ধে নয়, ওনারা ওনাদের ফসলের প্রকৃত মূল্য, কমদামে সার, বিদ্যুৎ, সেচের ব্যবস্থার জন্য লড়ছিলেন, সেই লড়াই জারি আছে, সেটাই কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Maha Kumbh | মহাকুম্ভের ৫ আশ্চর্য সাধু, তাঁদের কথা জানলে চমকে উঠবেন
00:00
Video thumbnail
Jyotipriya Mallick | জেল মুক্তি জ‍্যোতিপ্রিয়র, কী বললেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Maha Kumbh | সুন্দরী এই অঘোরীকে চেনেন? কীভাবে অলৌকিক কাণ্ড হয়, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
India | Pakistan | সোনার খনি পাকিস্তানে, ভারতের কি বিপদ বাড়বে?
00:00
Video thumbnail
Maha Kumbh | মহাকুম্ভের ৫ আশ্চর্য সাধু, তাঁদের কথা জানলে চমকে উঠবেন
03:31
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | ভগবতের ‘স্বাধীনতা’ বিতর্ক
27:04
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | গুড়াপের বিচার ৫২ দিনে
25:47
Video thumbnail
Maldah Incident | মালদহের কালিয়াচক গু*লিকাণ্ডে গ্রে*ফতার ১
01:38
Video thumbnail
জেলার সারাদিন ( Jelar Saradin ) | রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন জ্যোতিপ্রিয়র
22:43
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | পাওয়ার হাউসের নামে দামি গাছ কাটা, কাঠগড়ায় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত
25:48