skip to content
Wednesday, January 15, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | আমাদের সম্পাদক জেলে, আমরা মাথা নোয়ালেই তিনি মুক্তি পাবেন
Fourth Pillar

Fourth Pillar | আমাদের সম্পাদক জেলে, আমরা মাথা নোয়ালেই তিনি মুক্তি পাবেন

সংবাদপত্রের উপর এরকম নির্লজ্জ আক্রমণ এর আগে এমনকী জরুরি অবস্থাতেও দেখা যায়নি

Follow Us :

২০০ দিনের বেশি হয়ে গেল, আমাদের সম্পাদক কৌস্তুভ রায় জেলে। এমন নয় যে তিনিই দেশের প্রথম মালিক সম্পাদক যিনি জেলে আছেন, সেই তালিকায় অনেক পরেই তাঁর নাম আছে। মোদি জমানাতে রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনকদের তালিকাতে বহু সাংবাদিক, সংবাদ কর্মী আছেন। কোথাও ইডির ভয় দেখিয়ে, কোথাও ইনকাম ট্যাক্স পাঠিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমকে, সাংবাদিকদের, এ এখন নতুন কিছু নয়। বেশি করলে চ্যানেল বন্ধ করা হবে, তাও না পারলে কিনে নেওয়া হবে। চোখের সামনেই এনডিটিভি চলে গেল প্রণয় রায়ের হাত থেকে আদানির হাতে আর আদানি সেই চ্যানেলে কী করছেন তা কি কারও অজানা? সংবাদপত্রের উপর এরকম নির্লজ্জ আক্রমণ এর আগে এমনকী জরুরি অবস্থাতেও দেখা যায়নি। সেই কবে ১৯৮০ সালে কোটলার মাঠে অটল আদবানি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে, সাংবাদিকদের সামনে খোলসা করলেন, কেন তাঁরা দল ভেঙে বেরিয়ে এসে নতুন দল তৈরি করছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে অটল – আদবানি – মুরলী মনোহর জোশি – প্রমোদ মহাজন – বিজয় রাজে সিন্ধিয়া বা সেই অর্থে যে কোনও বিজেপি নেতার সম্পর্ক কোনওদিনও খারাপ ছিল না, বরং অন্য দলের চেয়ে ভালোই ছিল। অটল বিহারী প্রধানমন্ত্রী হলেন, সাংবাদিকদের পোয়াবারো কারণ তিনি অন্যান্য অনেকের চেয়ে বেশি মিডিয়া স্যাভি কেবল নয়, নিজেও বুঝতেন সাংবাদিকতার এ বি সি ডি। আর সেই অর্থে সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী পদ তো চতুর্থ স্তম্ভের আওতার বাইরে হতে পারে না। কিন্তু সব ছক পাল্টে গেল নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে। এই প্রথম এক প্রধানমন্ত্রীকে আমরা পেলাম, যিনি আক্ষরিক অর্থেই রহস্যময়। তাঁর দুটো জন্মদিন, জন্মের পর থেকে যা উনি বলেছেন সেসব তারিখ নিয়ে বিস্তর ঘাপলা। এবং সে সব কথাও তিনিই বলেছেন, অন্য কেউ তো বলেননি। তিনিই বলেছেন যে ১৬ বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর তাঁর ভাষায় তিন চার সাল ভটকতে রহে। এদিকে দেখা যাচ্ছে উনি ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন, কে জানাল? উনিই জানিয়েছেন।

জন্মতারিখ থেকে চা বিক্রি, এমার্জেন্সি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য লড়াই, পড়াশুনো এবং সার্টিফিকেট ইত্যাদি সব ঘাপলার কথা তো আগেই বলেছি। মোদ্দা কথা হল তিনি রহস্যময়, তিনি অস্বচ্ছ। আর ঠিক তাই, তিনি কোনও সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন না, সেদিক থেকে তিনি কেবল দেশেই নয় বিশ্বেও একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন না, হতে ভয় পান। তার কারণ তিনি জানেন সবাই অক্ষয় কুমার নন, সবাই তিহাড়ি সুধীর চৌধুরি, অমিশ দেবগণ, রজত শর্মা, বা অঞ্জনা ওম মোদি থুড়ি অঞ্জনা ওম কাশ্যপ তো নন। বেয়াড়া প্রশ্ন আসতেই পারে, করণ থাপারের সেই এপিসোড তো তিনি এখনও ভোলেননি, যেখানে এক গ্লাস জল খেয়ে ক্যামেরা বন্ধ করিয়ে দোস্তি বনি রহে বলে ইন্টারভিউ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ২০১৪ থেকে এতগুলো বছরে মোদিজি একবারের জন্যও সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি ভুলতে পারেননি। এবং তাই একটা সাংবাদিক সম্মেলনেও দেশের প্রধানমন্ত্রী হাজির থাকেননি, কিন্তু তিনি প্রতিটা ভাষণে স্বচ্ছতা পারদর্শিতার কথা বলেন। আসলে প্রশ্নতে তাঁর বড় ভয়। সত্যিকে তিনি ভয় পান। সেই ভয় থেকে জন্ম নিয়েছে রাগ, বিদ্বেষ। তাঁর পক্ষের নয় এমন প্রত্যেক সংবাদপত্রকেই তিনি শত্রু বলে মনে করেন, তাঁর পক্ষে নয় এমন প্রত্যেক মানুষকেই তিনি শত্রু বলেই মনে করেন। তাঁর কোনও কাজের সমালোচনা তাই হয়ে দাঁড়ায় দেশদ্রোহ। সেদিন ভাষণে বললেন বিরোধীরা আমার কবর খুঁড়তে চায়, আমি দেশের বিকাশ চাই, তাই ওরা এই কথা বলছে। এক প্যারানয়েড মানুষ, এক উদ্বেগ আর আশঙ্কায় ভুগতে থাকা মানুষ ছাড়া এই কথা কেউ বলেছেন? এ দেশে জওহরলাল সমেত প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব হয়েছেন, রাস্তায় তাদের কুশপুতুল জ্বালানো হয়েছে, কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও স্লোগান উঠেছে, অটল হাটাও দেশ বাঁচাও স্লোগান আমরা শুনেছি। কিন্তু কোনও প্রধানমন্ত্রীই এরকম কথা ভাষণে বলেননি যে দেশের বিরোধী দল আমাকে খুন করার জন্য সুপারি কিলার নিয়োগ করেছে। এবং এই অমূলক আশঙ্কা বা উদ্বেগ থেকেই ওই তীব্র স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এক বিদ্বেষ জন্মেছে, যা সরকারের, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেই সরকার বা প্রশাসনও সংবাদ মাধ্যমকে হয় পায়ের তলায় দেখতে চায়, জো হুজুরি চায়, বশ্যতা চায়, প্রশ্নাতীত আনুগত্য চায়। না হলেই সেই সংবাদ মাধ্যমের দফতরে ইডি, সিবিআই, এনআইএ যে কেউ যেতে পারে, গুচ্ছ গুচ্ছ মানহানির মামলায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘোরাতে পারে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | রাজনৈতিক দল নয়, আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে ভরসা আমাদের অন্নদাতারা

ঠিক এই মুহূর্তে কেবল খবর করার জন্য মামলা ঝুলছে শ’ খানেকের বেশি, শ’ খানেক সাংবাদিকরা জেলে। সেই রীতি মেনেই মালয়ালম চ্যানেল মিডিয়া ওয়ানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অভিযোগ, তারা নাকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, তারা নাকি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর কাজ করছে। সে অভিযোগ আনার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হল এই টিভি চ্যানেলটিকে। অগতির ভরসা আদালত, মামলা চলছিল। এতদিন পর সুপ্রিম কোর্টের রায় এল, যেখানে বলা হয়েছে এই নির্দেশের কোনও ভিত্তিই নেই। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, চ্যানেলটি সেই সময় থেকেই বন্ধ ছিল, রায়ে বলা হয়েছে চার সপ্তাহের মধ্যে চ্যানেলটির লাইসেন্স রিনিউ করতে হবে। লড়াই বহুদিনের, মিনিস্ট্রি অফ হোম আফেয়ার্স-এর তরফে মানে অমিত শাহের দফতরের তরফে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবেই চ্যানেলটির লাইসেন্স বাতিল করা হল। সম্পাদক সাংবাদিক প্রমোদ রামন আর কেরালা ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট আদালতে যান। আদালতকে সরকার এক মুখবন্ধ খামে প্রমাণ দিয়ে জানান যে জাতীয় নিরাপত্তার কথা ভেবেই লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। খামে কী ছিল তা জানা গেল না, কিন্তু হাইকোর্ট এই নির্দেশ বজায় রাখে। এরপর সুপ্রিম কোর্ট। সেই আদালত তার রায়ে জানাচ্ছে এই যে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে তার সপক্ষে সরকার কোনও প্রমাণ দেয়নি। তাদের তরফে বলা হয়েছে যে সিএএ আইনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু উসকানিমূলক অনুষ্ঠান করা হয়েছে, দিল্লি রায়ট নিয়েও নাকি কিছু অনুষ্ঠান করা হয়েছে, সেসব অনুষ্ঠানের ভিডিও প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যা দেখার পরে বিচারকেরা জানিয়েছে এগুলো সরকার বিরোধী হতেই পারে, কিন্তু এগুলোকে দেশবিরোধী বলার মতো কোনও জায়গা নেই। মজার কথা হল ঠিক এই হুমকি আমাদের চ্যানেলকেও দেওয়া হয়েছিল, আমরা সেদিনও চোখে চোখ রেখেই আইনি লড়াই চালিয়েছিলাম, সে লড়াই এখনও চলছে। তারপরেও আমরা মাথা নোয়াইনি আর সেই কারণেই আমাদের সম্পাদক জেলে। আসলে নরেন্দ্র মোদি, আরএসএস, বিজেপি চায় বশ্যতা, কিন্তু বোঝে না যে চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। আগেই বলেছি টিকাউ শিরদাঁড়া বিকাউ নহি। ব্যক্তির স্বাধীনতা কতটা? রাষ্ট্র সেই স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে কি? রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবনে নাক গলাবে, সেটাই বা কতটা সমীচীন? এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। দুটো এক্সট্রিম ধারণা আছে। এক, ব্যক্তি স্বাধীনতা চূড়ান্ত, তাতে কোনও হস্তক্ষেপই মানা হবে না। দুই, রাষ্ট্র সবার উপরে, রাষ্ট্র ব্যক্তিজীবনের উপরে যে কোনও রকমের হস্তক্ষেপ করতেই পারে। রাষ্ট্রবাদীরা একথা আকছার বলেই থাকে, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র।

এই আলোচনার প্রেক্ষিতেই, ১৭৬৩ সালে আর্ল অফ চ্যাথাম, উইলিয়াম পিট বলেছিলেন, “The poorest man may in his cottage bid defiance to all the force of the Crown. It may be frail—its roof may shake, the wind may blow through it, the storm may enter, the rain may enter—but the King of England cannot enter!— all his force dares not cross the threshold of the ruined tenement!” গরিবতম মানুষটির কুঁড়েঘরেও রাজার সৈন্যের ঢোকা নিষেধ, নড়বড়ে হতেই পারে, ছাদ টলমল? হতেই পারে, বাতাস ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে বয়ে যায়? যেতেই পারে, বৃষ্টি ঢুকে পড়তেই পারে যে কোনও সময়। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা ঢুকতে পারে না, এই নড়বড়ে কুঁড়েঘরটাতে তার সৈন্যরা ঢোকার চেষ্টাও যেন না করে। এভাবেই তিনি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে বুঝিয়েছিলেন। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতিও ব্যক্তির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছে, ফুটনোটে বলা হয়েছে, রিজনেবল রেস্ট্রিকশন, মানে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকবে কিন্তু তার কিছু যুক্তিযুক্ত শর্তও রয়েছে। একজন খুনিকে খুঁজে বার করতে তার ফোন ট্যাপ করা, তার আত্মীয়ের ফোন ট্যাপ করা ওই রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের মধ্যেই পড়ে। কেউ যদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগে উৎখাত করতে চায়, তাকে খুঁজে বার করতে বিভিন্ন রকমের সার্ভেল্যান্স হল ওই রিজনেবল রেস্ট্রিকশন। কেউ বোমা, গুলি আর কল্লা কেটে নেওয়ার হুমকি দিলে, তার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে, অস্ত্র সংগ্রহের জন্য পয়সা জমা করলে তাকে ধরা যায়, জেরা করা যায়, তার ফোন বা কম্পিউটারের উপর নজরদারি চালানো যায়, এটা ওই রিজনেবল রেস্ট্রিকশন। কিন্তু এই রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের বাহানা সামনে রেখে, উগ্রপন্থী এল এল জিগির তুলে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে ব্যক্তিজীবনের সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা বা সামান্য বিরোধিতার স্বরকে স্তব্ধ করার যুক্তিকে রিজনেবল রেস্ট্রিকশন বলে না, সেটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার এক প্রয়াস মাত্র, আর কিছুই নয়। আর এটাই, এই রিজনেবল রেস্ট্রিকশনই এখন দেশে দেশে জঙ্গি রাষ্ট্রবাদী সরকার আর দলের, তাদের অর্বাচীন নেতাদের অস্ত্র। যে অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে তারা সেই নড়বড়ে কুঁড়েঘরেও ঢুকতে চায় যেখানে রাজার প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এখন সেই চতুর্থ স্তম্ভের কুঁড়েঘরেও সৈনিক ঢুকছে, গ্রেফতার করছে সাংবাদিক, সংবাদকর্মী, মালিক সম্পাদককে, সেই তালিকাতেই আছেন কৌস্তুভ রায়। অভিযোগ মনি লন্ডারিংয়ের? সে এক তামাশা, ক’দিন পরেই খোলসা করে নিশ্চয়ই বলব সেই কথাও।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | বাঙালি জাতিকে অপমান RSS মুখপত্রে
00:00
Video thumbnail
BJP | বঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতি কে?
00:00
Video thumbnail
Baghajatin | Building Collapse | কী কারণে ভাঙল ৪ তলা ফ্ল্যাট, স্থানীয় বাসিন্দারা কী বলছেন?
00:00
Video thumbnail
TMC | Malda Incident | গু*লি*বিদ্ধ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি
00:00
Video thumbnail
Baghajatin | বাঘাযতীনে ভেঙে পড়ল ৪ তলা ফ্ল্যাট, দেখুন কী অবস্থা
00:00
Video thumbnail
Delhi | AAP | ফের রাজধানীতে রাজ করবে আপ? দেখুন সাট্টা বাজারের হিসেব কী জানাচ্ছে?
00:00
Video thumbnail
Nirmala Sitharaman | নির্মলার বাজেটে বাড়ছে প্রত্যাশার পারদ ইনকাম ট্যাক্সে কত ছাড়?
02:16:06
Video thumbnail
Anubrata Mondal | Kajal Sheikh | কেষ্টর পা ছুঁলেন কাজল! কী হল তারপর? দেখুন এক্সক্লুসিভ
02:03:38
Video thumbnail
Beyond Politics (বিয়ন্ড পলিটিক্স) | কেয়ার করুন শেয়ারের
09:27
Video thumbnail
IKSFF | ২১শে জানুয়ারি থেকে শুরু আন্তর্জাতিক কলকাতা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
02:39