skip to content
Friday, May 16, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ১২১ জন মৃত, অভিযুক্ত বাবাজির নাম নেই এফআইআরে, গ্রেফতারও...
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ১২১ জন মৃত, অভিযুক্ত বাবাজির নাম নেই এফআইআরে, গ্রেফতারও হননি

হিন্দুত্ব আর ঐতিহ্যের আড়ালে ১০০ শতাংশ বেআইনি, ধান্দাবাজি

Follow Us :

ঘটনা ঘটেছে ১০ দিন আগে, যাঁরা এ বঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের বলি, হাথরসের ১২১ জনের মৃত্যুর পরে সেই বাবাজিকে গ্রেফতার তো দূরস্থান, তাঁর নামও রাখা হয়নি এফআইআর-এ। তিনি কোথায় তা উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানে না। কেউ জানে না। কিন্তু সেখান থেকে তিনি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন। জানা যাচ্ছে, নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যতম চক্রী হর্ষবর্ধন মিনার বাড়িতে গিয়ে থাকতেন এই ভোলেবাবা ওরফে সূরয পাল। যে ভোলেবাবার প্রবচনে গিয়ে আপাতত পুড়ে ছাই ১২১ জন মানুষ। যে ভোলেবাবা এখন পুলিশের নাগালের বাইরে। যেমন করে আজ ৭-৮ বছর হয়ে গেল স্বামী নিত্যানন্দ খুন ধর্ষণের অভিযোগে জড়িয়ে পড়ার পরে এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে। অনেকে বলেন, হাসতে হাসতেই বলেন যে পৃথিবীর প্রথম ধূর্ত ধান্দাবাজ মানুষটির সঙ্গে যেদিন প্রথম একজন সরল মানুষের দেখা হল, সেদিন কোট আনকোট গুরু, বাবাজির জন্ম হয়েছিল। সমাজে কোনও নিয়ম তো ছিল না, কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ সমাজকে চালানোর জন্যই, মানুষের সুবিধের জন্যই, ভালোর জন্যই কিছু নিয়ম তৈরি করেছিলেন। ধীরে ধীরে সেই সেট অফ রুল থেকে জন্ম নিল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। আর তারপর থেকেই সমাজের, এলাকার, দেশের রাষ্ট্রের মাথা আর এই ধর্মগুরুদের নেক্সাস তৈরি হয়েছে। একে অন্যের পরিপূরক। আমি তোমাকে দেখছি তুমি আমাকে দেখো। শাসকের, রাজার অনুগ্রহে বেড়ে উঠেছে ধর্ম আর ধর্ম বলেছে রাজা, শাসক দেবতার দূত, দেবতার অংশ, দেবতার প্রতিনিধি, কাজেই বাকি রাখা খাজনা মোটে ভালো কাজ না।

মধ্যযুগে এক্কেবারে খুল্লমখুল্লা গিভ অ্যান্ড টেক-এর ব্যবস্থা ছিল। রাজার পুত্র হবে, প্রজারা খাজনা দেবে, বণিকরা নজরানা দেবে আর রাজা ব্রাহ্মণ ডেকে দান দক্ষিণা দেবেন। ব্রাহ্মণরা খুশি হবেন রাজাকে উপাধি দেবেন নরোত্তম, নরনারায়ণ, রাজা তখন ঈশ্বরের প্রতিনিধি। তার বহু পরে রাষ্ট্র বদলেছে, রাষ্ট্র নিজেকে ধর্ম-বিযুক্ত করেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে থাকলেও আজ চার্চ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে না, বহু বহু ইসলামিক দেশ আছে যেখানে দেশ চলে সংবিধান মাফিক, আমাদের দেশ চলে এক লিখিত সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু এক সমান্তরাল শক্তি, প্যারালাল ফোর্স চলতে থাকে ধর্মের এই স্বয়ম্ভু ঠিকেদারদের, তাদের হাতেই নাকি ভালো থাকবে সমাজ, তাদের হাতেই আছে সুখ আর শান্তির যাবতীয় চাবিকাঠি, তারাই এনে দিতে পারে শারীরিক মানসিক এমনকী অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিও। কাজেই বিরাট দেশের বিভিন্ন জায়গাতে গজিয়ে ওঠে বিভিন্ন রং ঢং-এর বাবাজি মাতাজিরা। এমনি এমনি তো গজায় না, এদের পিছনেও থাকে রাষ্ট্রশক্তি। একটা সময় পর্যন্ত এই বাবাজি মাতাজিদের নিজেদের খুব পছন্দের কোনও দল ছিল না, তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করত। কিন্তু যখন দেখল একদল আছে যারা নিজেরাই ধর্মকে সামনে রেখেই এগোতে চায় তখন তাদেরকে আঁকড়ে ধরল এই বাবাজি মাতাজিরা। সেই তখন থেকেই বেশিরভাগ বাবাজি মাতাজি প্রকাশ্যেই বিজেপিকে সমর্থন করেছে, রথযাত্রার সময়ে তারাও নেমেছে পথে, রামরাজ্য থেকে হিন্দুরাষ্ট্রের কথা তাদের মনে ধরেছে। নিরামিষ খাবার, জ্যোতিষ থেকে যাবতীয় হিন্দু আচার বিচারকে সামনে রেখে কেউ শিব, কেউ নারায়ণ, কেউ কৃষ্ণ, কেউ বা যোগসাধনা ইত্যাদির উপরে ভর করে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | শুভেন্দু বনাম অগ্নিমিত্রা বনাম দিলু ঘোষ এবং বিজেপির ঘুরে দাঁড়ানো

এবং বার বার বোঝা গেছে এদের ৯৯.৯৯ শতাংশ হচ্ছে আদতে ধান্দাবাজ চোর, নারীধর্ষক, বিলাস আর বৈভবের মধ্যে থাকাটাই লক্ষ্য, টাকা পয়সা নিয়ে নয় ছয় করে, মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে, এসব নতুন কিছু নয়। কিন্তু এদের চটকদারি কথাবার্তা আর কিছু সত্যি বেশিটা মিথ্যের এক ককটেল মানুষকে আকর্ষণ করে। ধরুন বাবা রামদেব, যেন মনে হল হাজার হাজার বছরের পুরনো ওই যোগব্যায়াম তিনিই আবিষ্কার করেছেন, আর ওই যোগব্যায়ামের আড়ালে ব্যবসা ফেঁদে বসলেন। আমরা ভেবেছিলাম প্রাণায়াম শেখাবেন, যোগব্যায়াম শেখাবেন উনি খুলে বসলেন পতঞ্জলি যেখানে টর্ন জিন্সও বিক্রি হচ্ছে, অ্যালোভেরার রসও বিক্রি হচ্ছে। বেশ করছেন, বিজনেস করছেন করুন এই পর্যন্ত কিছুই বলার ছিল না এটা ছাড়া যে যা বলছেন তার সবটা সত্যি নয়। যোগব্যায়াম আমাদের শরীর ভালো রাখে, সুঠাম স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়াম খুব ভালো কিন্তু যোগব্যায়ামে সব রোগ সেরে যাবে এমনটা নয়। কিন্তু এরপরে তিনি মানুষের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে নিজের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য আলোপ্যাথির বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকলেন এবং এমন কিছু ওষুধ বাজারে ছাড়লেন যা নাকি সব রোগ সারিয়ে দেয়, করোনার ওষুধ এখনও কেউ বার করেনি উনি কেবল বার করেছেন নয়, বাজারে তা হু হু করে বিকিয়েছে। কিন্তু ওনার বা ওনার ভাইয়ের অসুখ করলে ঢুকে পড়েছেন নামকরা হাসপাতালে আলোপ্যাথির চিকিৎসার জন্যই। ওনার নিজের এক চোখ পিট পিট করে যা স্নায়ুরোগের মধ্যেই পড়ে, নিজের ওইসব আমলা আর অ্যালোভেরা দিয়ে সারাতে পারেননি। এখন সুপ্রিম কোর্টের বকাঝকা খেয়ে বাতেলাবাজি খানিক কমিয়েছেন।

ওদিকে আশারাম বাপু, ধর্ষণ খুনের দায়ে জেলে, ইনি লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে অটল বিহারী থেকে মোদিজির গুরু, ওনারা আশ্রমে গেছেন, প্রণাম করেছেন, জেলেও নাকি বিরাট আরামেই আছেন। রাম রহিম বাবা, খুনের দায়ে জেল খাটছেন কিন্তু যেদিন প্রয়োজন জেল থেকে বেরিয়ে আসেন, প্যারোল পান, ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন, জেল থেকে ৫০ গাড়ির কনভয়ে আশ্রমে যান, ফেরেন সেইভাবেই। ওদিকে নিত্যানন্দ, ধর্ষণের অভিযোগ আসার পর থেকে ফেরার, তিনি নাকি কোনও এক কৈলাসে আছেন, সেটা নাকি হিন্দুরাষ্ট্র। খেয়াল করে দেখুন এঁদের প্রত্যেকের যোগাযোগ, স্ট্রং কনেকশন উইথ বিজেপি। কারণ নরেন্দ্র মোদির বিজেপি যে হিন্দুরাষ্ট্রের কল্পনা করে, এঁরা সেই কল্পনার শরিক। ওনারা সংখ্যালঘুদের, মুসলমানদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ছড়ান, তাতে শামিল এই বাবাজি মাতাজিরা, আশ্রমের মধ্যে মুসলমান ঢুকেছিল বলে হাড়গোড় ভেঙে দিয়েছিল ওই নিত্যানন্দের চ্যালারা। যে তীব্র ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য লড়ে যাচ্ছে মোদিজির বিজেপি, তার শরিক এরাও। বিপদে পড়লে এক আধজনকে জেলে পাঠাতে হয়েছে, কিন্তু তাদের জেলযাত্রা আমার আপনার সাধারণ জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সর্বোচ্চ সীমারও অনেক উপরে। এঁরাই বছরে বছরে হিন্দু সম্মেলনে হাজির থাকেন, সেখান থেকেই ডাক দিন হিন্দুরাষ্ট্রের। আর তার বদলে সারা বছর ধরে বিভিন্ন জায়গাতে সৎসঙ্গ, প্রবচন, অমৃতবাচনের নাম করে রোজগার করেন। এই ভোলেবাবাও সেই গোষ্ঠীর একজন। ১২১ জনের মৃত্যুর পরেও এঁর নাম এফআইআর-এ নেই। উনি সবার সামনে দিয়ে পুলিশি পাহারায় বেরিয়ে গেছেন, ঘটনাস্থলে ৭০ জন পুলিশ ছিল, উনি কোথায় এখনও কেউ জানে না। ওনার আশ্রমে যাঁরা গেছেন তাঁরা জানেন, বিদেশি গাড়িই আছে ১৯টা। উনি মধ্য এশিয়া থেকে আনা ফল খান। ওনার এক মহিলা বাহিনী আছে যারা নাকি ওনার বডিগার্ড। এবং এদের প্রত্যেকের তাই। আলোপ্যাথি? ছিঃ সকালে উঠে নিমপাতা বেটে বড়ি করে খান সদগুরু, মাথার ভেতরের শিরাতে রক্তক্ষরণ নিয়ে কোনও আয়ুর্বেদ নয়, সোজা সবথেকে দামি হাসপাতালে ঢুকে পড়েছেন সদগুরু, ইনি আবার চোস্ত ইংরিজিতে জ্ঞান দেন। এঁরা সন্ন্যাসী, এঁদের দেখেছেন কোথাও রিলিফে? সারা বছর সাধারণ মানুষের পাশে? কিন্তু এঁদের সম্পত্তি কারও হাজার কোটি কারোর চারশো কোটি, কারোর আটশো কোটি। এবং এদের যাবতীয় কাজকারবার প্রায় এক, এক হিন্দুত্ব আর ঐতিহ্যের আড়ালে ১০০ শতাংশ বেআইনি, ধান্দাবাজি।

জানি কেউ কেউ বলবেন আপনার চোখ কেবল এই হিন্দু সাধুসন্তদের দিকেই কেন? মুসলমান পিরবাবা ফকির কি নেই? কেন থাকবে না? কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এদেশে তাদের বাড়বাড়ন্ত কম। চলে যান না বাংলাদেশে, আগেও ছিল এখনও আছে, সেই ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে শর্ষীনার পীরের কথা কে জানেন না? গোলাম আজমের কথা কে জানেন না? এখনও আছে, নয়া নয়া পিরবাবা গজায়, সরকারের প্রশ্রয়েই বেড়ে ওঠে, ফুলেফেঁপে ওঠে। দুনিয়ার সব জায়গায় শাসকের সাহায্য ছাড়া এই ধর্মীয় বাবাজি মাতাজিরা বেড়ে উঠতে পারে না। আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আমাদের ভারতবর্ষে তারা হল আরএসএস বিজেপির অন্যতম শক্তি। যেন কিছুই না, যোগব্যায়াম শেখাতে শেখাতে রামদেব ২০১৪-র নির্বাচনের সময়ে বলেছিলেন, মোদিজির সরকার এলে পেট্রলের দাম ৪০ টাকা হয়ে যাবে। তারপরে? একটা কথাও বলেছেন? এখন অন্য কথা বলেন, ইনফ্লেশন হচ্ছে জিনিসের দাম বাড়ছে কিন্তু মোদিজিই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। হ্যাঁ, যোগব্যায়াম শেখাতে শেখাতে স্পষ্ট এই প্রচার রামদেব করেন। করেন বলেই ৫৩০ কোটি টাকার কারখানা ৭০ কোটি টাকাতে কিনে ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ১৩০ কোটি টাকা লোন পেয়ে যান, ওই একই কারখানার বদলে। এই হচ্ছে এদের আসল চেহারা। তাই ১২১ জন মানুষ মারা গেলেও ভোলেবাবার নাম এফআইআর-এ থাকে না। এইসব বাবাজি মাতাজিরা বাড়তে থাকে, তৈরি হয় বিজেপির ফ্যাক্টরিতে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sheikh Hasina | ফের সরাসরি বক্তব্য রাখছেন হাসিনা, কী বলছেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Sheikh Hasina | এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
BJP leader Viral Video | বিজেপি নেতার এই অশ্লী/ল ভিডিয়োতে তেলপাড় দেশ, ফেক ভিডিও বলে অস্বীকার নেতার
00:00
Video thumbnail
NDA | Amit Shah | ফের ভাঙন এনডিএ-তে? অমিত শাহর ওপর ক্ষো/ভ উগরে দিলেন এই বড় শরিক
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন রাহুল গান্ধী, তারপর কী হল…
00:00
Video thumbnail
Weather Update | প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী, তা/ণ্ডব হবে কোন কোন জেলায়?
00:00
Video thumbnail
TMC | ২৬-এর ভোটের আগে তৃণমূলের সংগঠনে বিরাট রদবদল, বাদ পড়লেন কারা? নতুন মুখ কারা?
00:00
Video thumbnail
Money on Street | রাস্তায় ছড়িয়ে তাড়া তাড়া নোট! দেখে নিন কী কাণ্ড
00:27
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | তৃণমূলে জন বার্লা, লাইনে আছেন আরও বেশ কিছু বিজেপি নেতা
10:08
Video thumbnail
Fourth Pillar | দুজনে মিলেছে খাপে খাপ নরেন্দ্র মোদীজি, ডোনাল্ড ট্রাম্প?
00:39