সীমান্তে আবার উত্তেজনা, আবার চীনা ফৌজকে দেখা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সীমানার অনেকটা ভিতরে এসে ছাউনি তৈরি করতে। ওদিকে তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বদলে মোদিজি বিশ্বের চীন-বিরোধী শিবিরের সঙ্গে বৈঠক করছেন। শীত আসছে এবং এই সময়েই সীমান্ত দখল শুরু হয়, কাজেই আজ সেটা নিয়েই আলোচনা। কেবল তাইই নয়, আমরা জানি আর কয়েক মাসের মধ্যেই মোদি সরকারের সংকট আরও বাড়বে, আর সংকট বাড়লে যে কোনও দক্ষিণপন্থী সরকারের হাতিয়ার জঙ্গি জাতীয়তাবাদ। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশরা আমাদের দেশে লুঠপাট চালিয়েছে, এদেশ থেকে সম্পদ তুলে নিয়ে গেছে, তাদের রানির মাথার মুকুটে বসানো হিরেও গেছে ভারতবর্ষ থেকে। তারপর দেশভাগের মতো দগদগে ঘা রেখে চলে গেছে। সে বিভাজনের যন্ত্রণা এই উপমহাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে। সে বিভাজন যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে সে বিষবৃক্ষ আজও গরল উগরে দিচ্ছে আমাদের বারমাস্যায়। এখানেই শেষ নয়, সীমান্ত নিয়ে ইংরেজদের গড়িমসি, তাদের ক্যালাসনেসের জন্য এই উপমহাদেশের সীমান্ত আজও কালাশনিকভ, কামান, বোমারু বিমানের শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে। এই যে ৬২তে চীন-ভারত যুদ্ধ, এর জন্য ওই ইংরেজরাও অনেকাংশেই দায়ী। প্রথমত ওরা লুঠতরাজ চালাতেই এদেশে এসেছিল, অন্য আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। যার ফলে বাণিজ্য হয় এমন সীমান্ত বাদ দিলে তারা সেই সীমান্ত নিয়ে মাথা ঘামাত না। বিখ্যাত সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল তাঁর বই INDIA’S CHINA WAR-এ লিখছেন, ব্রিটিশরা বিভিন্ন সময়ে ১১টা আলাদা আলাদা ম্যাপ তৈরি করেছিল লাদাখ অঞ্চলের, সেই ১১টাতে ১১ রকমের সীমান্ত নির্ধারণ করা আছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সীমান্তের ম্যাপ তৈরি হয়েছে, উত্তর-পূর্বের ম্যাকমোহন লাইন নিয়েও একই কথা। তৈরি হয়েছে, নিজেরাই ভুলে মেরেছে। এবং যেহেতু সেসব জায়গা থেকে খাজনা বা আমদানি ছিল না, মূলত সেই কারণেই সীমান্ত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার হলেও ভূখণ্ড কার দখলে তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা ছিল না। পশ্চিম বা পূবে একই আবস্থা ছিল। সীমান্তে দেখানো হচ্ছে তাওয়াং ব্রিটিশ ভারতের কিন্তু রাজত্ব করছেন তিব্বতের দলাই লামা। ম্যাপে আছে আকশাই চীন ভারতবর্ষের কিন্তু তার দখলদারি চীনের কাছে আছে। এবং এই সুসভ্য জাতি একটা দেশে ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়ে যাওয়ার পরে সে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হল কিন্তু রেখে গেল বিবাদে ভরা সীমান্ত। কাশ্মীরের রাজার সঙ্গে এক চুক্তি, রাশিয়া কনভেনশনে আর এক চুক্তি, তিব্বতের সঙ্গে এক চুক্তি, চীনের সঙ্গে অন্য চুক্তি।
আমাদের দেশ স্বাধীন হল আমরা বিভাজনের র্যাডক্লিফ লাইন নিয়ে ব্যস্ত থাকলাম। তারপর হঠাৎ বোঝা গেল, আরও অনেক বিবাদের পৃষ্ঠভূমি তৈরি করে গেছে ওই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। চীনের সঙ্গে ভারতের সেই কোন অতীত থেকে সুসম্পর্ক, আমাদের দেশ থেকে বৌদ্ধধর্ম গিয়েছে সেখানে, ফা হিয়েন, হিউ এন সাংয়ের মতো পর্যটকেরা এসেছেন আমাদের দেশে। বাণিজ্য সম্পর্ক দু’ দেশের বহু পুরনো এমনকী চীন বিপ্লবের পরে ইউরোপ যখন সরকারিভাবে চীনকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগছে সেই তখনই ভারতবর্ষ চীনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনে গিয়েছেন নেহরু, হিন্দি চিনি ভাই ভাই স্লোগান দিয়েছেন চৌ এন লাই। তার কয়েক বছরের মধ্যে হঠাৎ করে এরকম একটা যুদ্ধ চীনের সঙ্গে হবে তা কিন্তু কারওরই ধারণার মধ্যে ছিল না। সেই যুদ্ধের পৃষ্ঠভূমিটা জানা খুব দরকার। বিভিন্ন ঐতিহাসিক, রাজনীতিবিদ চীন-ভারত যুদ্ধের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেউ চীনের পক্ষে কেউ চীনের বিরুদ্ধে, সেসব ব্যাখ্যা থেকে কিছুটা বোঝার চেষ্টা করা যাক। আগেই বলেছি এর উৎস ব্রিটিশদের অপদার্থতা। পূর্বে পশ্চিমে বহু জায়গা যা ব্রিটিশরা ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে খাতায় কলমে রেখেছিল, কিন্তু কার্যত সেই জায়গায় কবজা ছিল চীনের। দু’ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দু’ দেশের কেউই সীমান্ত নিয়ে এত মাথা ঘামায়নি। মূলত দুটো কারণে এই সীমান্ত বিবাদ উঠে এল। ১) নেহরুর রাশিয়া প্রীতি। নেহরুর মুখ থেকে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সমাজ ব্যবস্থার কথাই শুধু নয়, রাশিয়ার মতো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ইত্যাদি শুনেছি। সেসব কার্যকর হতে শুরু করেছে রাশিয়ার সহযোগিতায়, রাশিয়ার সাহায্যে শিল্প গড়ে উঠছে দেশে, কৃষ্ণ মেননের মত রাশিয়াপন্থী মানুষ তখন ডিফেন্স মিনিস্টার। শুরুতে নয়, কিন্তু কিউবা ক্রাইসিসের পরে রাশিয়া আমেরিকার সম্পর্ক ভালো হতে থাকে, চীন রাশিয়ার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ২) ইতিমধ্যেই তিব্বত চীনের সরাসরি শাসনে এসে গেছে, রাস্তা তৈরি হচ্ছে, লাসায় তিব্বতি বিদ্রোহীদের দমন শুরু হয়েছে। দলাই লামা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এবং এরকম তো সম্ভব নয় যে দলাই লামা নিজে নিজে ভারতবর্ষে ঢুকে পড়বেন, তারও রাজনৈতিক সহযোগিতা নেহরু করেছিলেন। সেই দলাই লামা যিনি ২০০৪ পর্যন্ত তাওয়াংকে তিব্বতের অংশ হিসেবেই মানতেন, তিনি পালিয়ে এলেন তাওয়াং। সেখানে ক’দিন থেকে তেজপুর দিয়ে ভারতবর্ষে রাজনৈতিক আশ্রয় নিলেন। ইতিমধ্যেই দলাই লামা চীনের ঘোষিত শত্রু, সে আপনি চান বা না চান, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকবে না এ তো বলাই বাহুল্য।
চীন এই ঘটনাকে একটু বাড়িয়েই দেখতে শুরু করল। ৪৯-এ বিপ্লব শেষ করে বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি নিয়ে নাজেহাল আর বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্দিহান চীন ভারতবর্ষের এই তিব্বত সম্পর্কীয় সিদ্ধান্তকে সম্প্রসারণবাদের সঙ্গে জুড়ে নিল, তাদের বক্তব্য রাশিয়া আমেরিকা ভারত মিলে এক নতুন বিশ্ব শক্তি তৈরি করতে চাইছে। তাদের রাজনৈতিক দলিলগুলোতে এসব কথা লেখা শুরু হল। এবং চীন সীমান্ত নিয়ে তাদের বক্তব্য জোর দিয়ে বলতে শুরু করল, ১৯৫৯-এ দলাই লামা পালিয়ে আসার পর থেকে এ ঘটনা বাড়ল। ১৯৬০-এ চীন-ভারত আলোচনা হলো, নেহরু-চৌ এন লাই বসলেন, সীমান্ত সমস্যা ততদিনে বড় আকার ধারণ করেছে। সমস্যার সমাধান তো বের হলই না বরং আরও কিছু নতুন জায়গার নাম বেরিয়ে এল। এদিকে সে বছরেই চীন কিন্তু নেপাল আর বার্মার সঙ্গে চুক্তি সেরে রাখল, মানে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল তারা, আমরা বুঝিনি। শুধু তাই নয়, কলকাতা বন্দর দিয়ে নিয়মিত অসামরিক মাল মানে আনাজ, ওষুধ, তাঁবু, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এসেছে, চলে গেছে তিব্বতে। তিব্বতে দু’ধার থেকেই সাপ্লাই লাইন খোলা ছিল, এক) বেজিং থেকে লাসা। দুই) কলকাতা হয়ে লাসা।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar| রাজ্যপাল নারী নির্যাতন নিয়ে কথা বলা বন্ধ করুন
এবং চীন এতদিনে স্থির সিদ্ধান্তে এসেছে যে তিব্বতের বিদ্রোহের পিছনে ভারত আছে, এবং এই লড়াই আসলে সেই বিদ্রোহকে উসকে দেওয়ার জন্যই করা হচ্ছে। সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো তিনটে সিদ্ধান্ত নেয়। ৬ অক্টোবর ১৯৬২-র দলিলে দেখা যাচ্ছে, সেই মিটিংয়ে সেই সময়কার কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়নার ডেপুটি চেয়ারম্যান লিন বিয়াও জানাচ্ছেন যে ভারত ১০ অক্টোবর থেকে সম্ভাব্য আক্রমণে যেতে পারে। তাই তিনি এবার আক্রমণে নামার অনুমতি চাইছেন। তিনি তিনটে বিষয় পলিটব্যুরো সদস্যদের জানান।
১) চীন বড় আক্রমণ শানাবে ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে, মানে অরুণাচল থেকে সিকিম পর্যন্ত। পূবে প্যাংগং গালওয়ান, আকশাই চীন সংলগ্ন এলাকায় আক্রমণের আকার ছোট হবে।
২) চীন যেটাকে সীমান্ত বলে মনে করে তার মধ্যে কোনও পোস্ট রাখা হবে না, কেউ ঢুকলে তাদের তাড়ানোর লড়াই হবে।
৩) এটা করতে গিয়ে আমরা সীমানা পার করব, মানে ভারতে ঢুকব এবং ইউনিল্যাটারালি, মানে নিজেরাই আবার পিছিয়ে আসব, যাতে করে আলোচনায় বসা যায়।
মাও সে তুং বা লিন বিয়াও জানতেন যে নেহরু নন-অ্যালায়েনমেন্ট গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে যে পরিচিতি রাখেন তার ফলে চীন পেছনে সরে না এলে নেহরুর সুবিধে, চীনকেই সবাই দখলদার বলবে। এই দলিলে লিন বিয়াওয়ের আর একটা কথা খুব উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেছিলেন, লড়াইটা এমন জবরদস্ত দিতে হবে যাতে অন্তত আগামী তিরিশ বছর শান্তি বজায় থাকে।
চীন তার পরিকল্পনা মাফিক এগোল। ভারতের ৩০-৪০ কিলোমিটার ঢুকে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে পিছিয়ে গেল, এই লজ্জাজনক হার নেহরুকে বিষণ্ণ করে তুলল, চীন আকশাই চীন দখলে নিল। আন্তর্জাতিক চাপ মেনে দু’ পক্ষ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে আপাতত সীমানা হিসেবে মেনে নিল। মানে চীন ঠিক যেটা চাইছিল সেটাই হল, কেবল প্যাংগং এলাকাতে তারা খুব একটা এগোতে পারল না।
ঠিক এই পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের উত্তেজনাকে দেখতে হবে। এবারে উত্তেজনার শুরুতেই ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ বলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদি যেন নেহরুর ভুলের পুনরাবৃত্তি না করেন। কথাটা বলেছিলেন নেহরুর ফরোয়ার্ড পলিসি মাথায় রেখে। চীন ২০ অক্টোবর আক্রমণে নামল, ঠিক ১ মাস ১ দিন পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হল। কৃষ্ণ মেনন পদত্যাগ করলেন, যুদ্ধ শেষ হল কিন্তু সীমান্ত বিবাদ যে একেবারে মিটে গেল তা নয়।
এতদিন পরে আবার চীন এই সীমান্ত নিয়ে বিবাদে যখন নামছে তখন পৃথিবীর মানচিত্রে বহু পরিবর্তন ঘটে গেছে, সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া আর নেই, চীন অর্থনৈতিকভাবে ভারতের থেকে অনেক অনেকটাই এগিয়ে গেছে। আমেরিকা এখন চীনের বিরুদ্ধে। বরং রাশিয়া চীন অনেক কাছাকাছি। নন অ্যালায়েনমেন্ট মুভমেন্ট বা নির্জোট আন্দোলন শেষ। বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে। এদিকে ভারতবর্ষের প্রায় প্রত্যেক পড়শি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খুব খারাপ হয়েছে। ৬২-র পর ৬৫, ৭১ ভারত-পাক যুদ্ধ হয়েছে, মিলিটারি বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। দেশে কংগ্রেস শাসনের অবসান, কট্টর হিন্দু তীব্র জাতীয়তাবাদী বিজেপি-আরএসএস ক্ষমতায়। সবমিলিয়ে কায়াপলট দু’ ধারেই। চীনের প্যাংগং ব্যথা রয়ে গেছে কেবল তাই নয়, চীন এখন পাকিস্তানের বন্দর থেকে সোজা রাস্তা দিয়ে তার রাজধানী পর্যন্ত বাণিজ্য করিডোর খোলার পথে। এতে করে পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলা যাবে, নেপালের ল্যান্ডলক অবস্থা কেটে যাবে। সব মিলিয়ে অনেক বড় পরিকল্পনা।
যুদ্ধ নয়, যুদ্ধের আবহ শুরু হতেই বিরোধী দল চিৎকার শুরু করেছে, কেন প্রধানমন্ত্রী বললেন চীন সীমানার মধ্যে ঢোকেনি? কেন বলছেন না যে চীনের ফৌজ আমাদের সেনাদের প্রাণ নিয়েছে তার বদলা নিতে হবে? তিনি যে ৫৬ ইঞ্চির চওড়া ছাতির কথা বলেন সেটা কোথায়? কংগ্রেস অফিস থেকে রোজ কামান দাগা হচ্ছে, এদিকে ভক্তজনেরাও একটু বিভ্রান্ত, ঘর মে ঘুস কর মারকে আয়েঙ্গের মোদিজি নীরব কেন? যিনি মেঘের আড়ালে র্যাডার এড়িয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে দেন তিনি চুপ কেন? তিনি চুপ কারণ তিনি প্রকৃত অবস্থাটা জানেন। তিনি জানেন যে একটা যুদ্ধ আর তার ফলাফল কিসের ওপর নির্ভরশীল, তিনি জানেন যে ঠিক এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি একটা যুদ্ধের ভার সইতে পারবে না, তিনি জানেন যে আর একটা পরাজয় তাঁর আপাতত এক পা পিছিয়ে আসার থেকে ১০০ গুণ অপমানজনক হয়ে উঠবে। তিনি জানেন যে পড়শি দেশে তাঁর সমর্থন তলানিতে, তিনি জানেন যে আমেরিকার আগামী নির্বাচনে ট্রাম্প সাহেব, তাঁর বন্ধু আবার হেরে যেতে পারেন। তিনি জানেন যে এই সীমান্ত বিরোধ নিয়ে নাম না করে জাতীয়তাবাদী ভাষণ দেওয়া পর্যন্তই ঠিক আছে তার বেশি যাওয়াটা উচিত নয়। রামচন্দ্র গুহ, ঐতিহাসিক, তিনি ইতিহাসটা পড়েছেন, ভূগোলটা জানেন আর অর্থনীতিটা বুঝতে পারেন। তাই তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শুরুতেই বলেছিলেন মোদিজি নেহরুর ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না করেন। এই আণবিক হাতিয়ারের জামানায় ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে ইত্যাদি বলার মধ্যে কোনও গৌরব নেই। চীনের সঙ্গে যদি লড়তেই হয় তাহলে অর্থনীতির ময়দানে সেই লড়াই লড়তে হবে। নিজেদের স্বয়ং সম্পুর্ণ করে তুলতে হবে। জাতীয়তাবাদ আধুনিক বিশ্বে এক বিরাট বোঝা, তার ঊর্ধ্বে উঠেই দেশের উন্নতি বিকাশের পতাকাকে তুলে ধরতে হবে। সেই সময়টা দেখতে চাই আমরা, ১৩৬ কোটি ভারতবাসী সেই সময়টা দেখতে চায় যখন যে কোনও মোবাইল খুলে দেখলে দেখা যাবে লেখা আছে মেড ইন ইন্ডিয়া, যে কোনও ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এসি, স্মার্ট ফোন, স্মার্ট ওয়াচ-এর পেছনে লেখা থাকবে মেড ইন ইন্ডিয়া। যুদ্ধ হোক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিয়ে, যুদ্ধ হোক অশিক্ষার বিরুদ্ধে, যুদ্ধ হোক ভাইরাস ব্যাক্টিরিয়ার বিরুদ্ধে। আসুন পাহাড় বরফ ঘেরা লাদাখ, প্যাংগং গালওয়ান চুশুল বা নাথুলা সেলার রাস্তার পাশে পাথরে যা লেখা আছে তাই আবৃত্তি করি, ওঁ মণিপদ্মে হুঁ। আমার হৃদয়ের মধ্যে যে পদ্ম, যে প্রজ্ঞা, যে জ্ঞান তা বিকশিত হোক। ওঁ মণিপদ্মে হুঁ।