রাষ্ট্র কেমন হবে? দেশ কীভাবে চলবে? রাজারাজড়াদের হাত থেকে দেশ চলে এসেছে মানুষের হাতে, কিন্তু তারপরেও এই প্রশ্ন থেকেই যায়। কিছু মানুষ বলবেন, কেন, গরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনে সরকার হবে। কিন্তু সেখানে এক সমস্যা তো থেকেই যায়, গরিষ্ঠ মানুষের সিদ্ধান্তই যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে তো আপনাকে গণপিটুনি বা গণধোলাই বা গণধর্ষণকেও সমর্থন করতে হয়, কারণ খেয়াল করে দেখুন যারা মারছে, ধরছে, ধর্ষণ করছে, তারাই তো সংখ্যায় বেশি, তারাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে যে ছেলেটি বা বৃদ্ধকে পেটানো হচ্ছে সে তো একলা, বা সেই মেয়েটি, সেও তো একলা। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাই সব নয়, সেটাই একমাত্র শর্ত নয়। যতক্ষণ না তার সঙ্গে একটা লিখিত নিয়মকানুন জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হবে, ১০ হাজার মানুষেরও যদি মনে হয়, তাহলেও একজনকে পিটিয়ে মারা যাবে না। আর রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেই লিখিত ডকুমেন্টটাই হল সংবিধান, গণতন্ত্রের সঙ্গে এই সংবিধানকে জুড়ে দিলে তবেই সেটা রিপাবলিক হয়, যেখানে এক নিয়ম অনুযায়ী গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চালনা করা হবে। কাজেই আমাদের দেশ ১৯৪৭-এ কেবল স্বাধীন হয়েছিল, এক গণতান্ত্রিক কাঠামোর লক্ষ্যে চলা শুরু করেছিল, ১৯৪৯-এর ২৬ নভেম্বর দেশের সংবিধান সভা জানাল যে এই নাও সংবিধান, এখন থেকে দেশ শুধু স্বাধীন গণতান্ত্রিক নয়, এখন থেকে সে প্রজাতান্ত্রিক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক। তার মানে দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭-এ, ১৯৫০ থেকে আমাদের নিজেদের সংবিধান তৈরি হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, বাসস্থান বা তাদের আর্থিক অবস্থাকে তোয়াক্কা না করে দেশের প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ফ্রিডম অফ স্পিচ, মতামত ব্যক্ত করার অধিকার, ঘোরাফেরা করার অধিকার, বসবাস করার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার। এসব কিছু আমাদের সংবিধান আমাকে, আপনাকে, হরিপদ জানা, সুলেমান শেখ, নীরজ বাটলিওয়ালা বা বিনয় গঞ্জালেসকে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা কেমন? এক্কেবারে উল্টো। এক যাত্রায় কেবল পৃথক ফল নয়, উল্টো ফলও হতে পারে। হয়েই চলেছে। এমন নয় যে এই এক যাত্রায় পৃথক ফলের শুরুয়াত মোদি জমানা থেকে, না তাও নয়। সুদীর্ঘ কংগ্রেসি শাসনকালে এই বেনিয়ম আমরা দেখেছি। ৪৭-সাল থেকেই এই গরমিলের সাক্ষী আমরা।
আদিবাসীরা জ্বালানির জন্য কাঠকুটোর বোঝা সমেত গ্রেফতার হয়ে জেলে পচেছে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অন্যদিকে বনের পর বন, জঙ্গলের কাঠ উজাড় হয়ে গেছে, যা ছিল আদিবাসী কোল ভিল মুন্ডা ওরাওদের জমিন, জঙ্গল তা উবে গেছে, কারখানা তৈরি হয়েছে, সেই কারখানার তৈরি ইস্পাত দিয়ে ব্রিজ হয়েছে, ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে, ইমারত হয়েছে ৩০তলা, ৪২তলা। নিজভূমে পরবাসী ওই মানুষেরা স্রেফ কাঠকুটোও তুলে নিয়ে যেতে পারে না, ফরেস্ট অ্যাক্ট নাকি তাই বলছে। অধিগ্রহণ হবে, সব কিছু, নদীর বাঁক থেকে চার ফসলা জমি থেকে জঙ্গল, টিলা, পাহাড় থেকে সমুদ্রতট। সে সব হবে উন্নয়নের নামে, সে উন্নয়ন কাদের? দেশের অধিগৃহীত জমির ৭৩ শতাংশ ছিল আদিবাসীদের হাতে, হ্যাঁ ৭৩ শতাংশ। তাদের জমি, জঙ্গল, পাহাড় কেড়ে নিয়ে উন্নয়ন হয়েছে। বেশ, তাহলে সেই আদিবাসীদের উন্নয়ন কেন হয়নি? কেন তাদের চাল ফুটো হয়ে জল পড়ে? কেন তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্য এত খারাপ? তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমন জঘন্য কেন? তাদের আর্থিক অবস্থা এত খারাপ কেন? ৭৩ শতাংশ সম্পদ যাদের উৎখাত করে এল, কোন আইনে তারাই আজ সব থেকে পিছিয়ে? একসঙ্গে যাত্রা করেছিল তারাও, এই স্বাধীন দেশের জন্য লড়ার ইতিহাস তাদের আছে, বিরসা মুন্ডার ইতিহাস আছে, সিধো কানুর ইতিহাস আছে, উলুগুলানের ইতিহাস আছে, অনেকের চেয়ে বেশি আছে। দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়াম থেকে রাজপথ আর লুটিয়েন বাংলোর ভিড়ে একজন আদিবাসীকে ঠাঁই দিলেই দায় শেষ? ৬৫০ টাকা দামের সিনেমার টিকিট কেটে ‘কান্তারা’ সিনেমা দেখছেন আপনি? সেই আদিবাসী শোষণের ছবি দেখেন ক’জন আদিবাসী? সেই দেখার সাধ্য কতজনের আছে? এক যাত্রায় এমন পৃথক ফল কেন? এবং এই পৃথক ফল নিয়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল, হ্যাঁ প্রত্যেক রাজনৈতিক দল হয় চুপ না হলে যযেততে, যখন যেমন তখন তেমন। মনে আছে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এপিসোড, সে এক উন্নয়নের সুনামির কথা বলছিল বাম সরকার, মাছ কাটলে মুড়ো দেব, গাই দুয়োলে দুধ দেব, চাকরি তো এসেই গেছে, মাইনে পেলে প্রথমে কী কিনবি তাই ঠিক করে ফেল, এমন এক ভঙ্গিমা। চার ফসলা জমিতে মোটোর কারখানা হবে, সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তরপাড়া হিন্দ মোটর্সে তালা ঝোলানো হচ্ছে, সিঙ্গুরে গাড়ির কারখানা হবে। বিরোধিতায় কারা? তৃণমূল দল, বিজেপি, কংগ্রেস। ঠিক সেই সময়েই কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার, ওড়িশায় নিয়মগিরি পাহাড় বেচে দেওয়া হচ্ছে, বিরোধিতা করলে মাওবাদী বলে জেলে পাঠানো হচ্ছে, বাম দলগুলো তার বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস এবং বামেদের বিরোধিতা জারি ছত্তিশগড়ে তখন, যখন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক আদিবাসী জঙ্গল, পাহাড় বেচে দিচ্ছেন। গুজরাটে সর্দার সরোবর ড্যাম প্রকল্পে জল বাড়ানো হবে, ডুবে যাবে ১৭ হাজারের বেশি পরিবার, রাজ্যে বিজেপি, কেন্দ্রে বিজেপি। আন্দোলন হচ্ছে, সামনে মেধা পাটেকর, কিন্তু বামেরাও সেই আন্দোলনে রয়েছেন, কংগ্রেসও বলছে এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা হোক।
এ রাজ্যে এখন তৃণমূল দলের সরকার, দেউচা পাচামিতে কয়লা তোলা হবে তাই অধিগ্রহণ হবে, তাজপুরে বন্দর হয়তো করবে গৌতম আদানি বা অন্য কেউ। না এখনও সরকার গুলিগোলা চালায়নি, কিন্তু কথা বলছেন উন্নয়ন নিয়ে এবং অধিগ্রহণও চলছে। বিরোধিতায় কারা? বিজেপি, কংগ্রেস এবং অবশ্যই বাম। কেরালায় তো খেলা জমে ক্ষীর, ভিজিঞ্জম সমুদ্র বন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে আদানিদের হাতে, বাম সরকার স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের বিরোধিতা সামলাতে পুলিশ পাঠাচ্ছে, জেলে পুরছে পরিবেশ কর্মী সংগঠনের নেতা কর্মীদের, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলছেন পিছনে আছে মাওবাদীরা। এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সেখানে এই বিরোধিতা রুখতে হাতে হাত মিলিয়েছে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস, তাদের তৈরি যৌথ মঞ্চ এখন ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর কাজ করছে। সদ্য সদ্য আদানি কিনেছেন এনডিটিভি, তার অনুষ্ঠানে সিপিএম পলিটব্যুরো নেতা জানিয়েছেন যে কোনও মূল্যে এই বন্দর হবে। যাদেরকে ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট বলেছেন রাহুল গান্ধী থেকে প্রকাশ কারাত, সেই আদানি, আম্বানি হাসছেন। মনে পড়ে যাচ্ছে, ব্রিগেডের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা, ওখানে কারখানা হবে, হবেই, দেখি কে আটকায়। এসব দেখলে সুকুমার রায়ের কথাই কেবল মনে পড়ে, এক হ য ব র ল চলছে সারা দেশে, দেশজুড়ে একুশে আইন। কার উপরে ভরসা করবে মানুষ? কার কথায় বিশ্বাস করবে মানুষ? প্রশাসনের মাথায় রাজনৈতিক দল, তাদের প্রত্যেক কথা, প্রত্যেক কাজ তাদের দলের রাজনৈতিক ফায়দাকে মাথায় রেখেই হচ্ছে। সেই রাজনৈতিক দলই চালাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থা, জঘন্যতম গণধর্ষণে অভিযুক্তরা ছাড়া পাচ্ছে জেল থেকে, সমাজকর্মী, কবি, সাংবাদিক, অধ্যাপক জেলে পচে মরছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে টুইট? মামলা এবং জেল অনিবার্য, মুখ্যমন্ত্রীরাও কম যান না। গোলি মারো শালো কো বলে ক্যাবিনেট মিনিস্টার লালবাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরছে, আমার জমি দেব না তোমার উন্নয়ন যজ্ঞে, বলার পরেই তাকে জেলে পোরা হচ্ছে। জাজ নয় তো যেন গুরুঠাকুর, চেয়ারে বসে সরকার চালানোর দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত দলের স্বীকৃতি বাতিল করার কথা বলে দিচ্ছেন, কোন আইন, কোন ধারা তাঁকে এসব বলার অধিকার দিয়েছে, তা কেউ জানে না। ফিল্ম স্ক্রিপ্ট রাইটারদের মাঝে মধ্যে বলা হয়, ভালো ভালো, জনপ্রিয় হতে পারে এমন ডায়ালগ লিখুন, সিনেমা শেষ হলেও মনে থাকবে মানুষের, অবরে সবরে বলবে, কিতনে আদমি থে? দো সর্দার ইত্যাদি। তো এখন সেই দায়িত্ব কি জজ সাহেবের? মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে বলাটাই যা বাকি।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কংগ্রেস রোজ সকালে বোনভিটা খাওয়া প্র্যাকটিস করুক
তাহলে লোকসভা, বিধানসভা, প্রশাসন আর বিচারব্যবস্থা গেল, বাকি রইল চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের মোটামুটি সমস্ত জাতীয় ইংরিজি বা হিন্দি চ্যানেল, আঞ্চলিক প্রায় সমস্ত চ্যানেল চলছে মোদি-শাহের নির্দেশে। আজকের টিভি চ্যানেল খুলে দেখুন না, তারা চিৎকার করে জানাচ্ছে, তাদের মালিকের দাবি, তাদের মালিকের ইচ্ছের কথা। কী ধ্যাষ্টামো ভাবুন, ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-এর বিরাট জয়, যেন কিছুই নয়, মহারাষ্ট্রের জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা আর মধ্যে মধ্যে চিল চিৎকার কংগ্রেস মুছে গেল। একটা স্বাধীন চ্যানেল ছিল, তো সেটাও তো কবেই শেঠজি কিনে নিয়েছে, রবীশ কুমারের ভাষায়, শেঠজির অনেক পয়সা আছে। এনডিটিভি চলে গেছে আদানির হাতে। এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চারটে স্তম্ভ, আইনসভা, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা আর সংবাদমাধ্যম, চারটে স্তম্ভই নড়বড় করছে, অথচ এরই উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামো। সে স্তম্ভের ইট খসে পড়ছে, সে স্তম্ভের ভিতে শাবল পড়ছে।
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
সেসব বিপদের মাঝেই আজ নতুন করে প্রশ্ন উঠছে সংবিধানের প্রিয়াম্বল নিয়ে, প্রস্তাবনা নিয়ে। নামে মাত্র লেখা আছে সেকুলার আর সোশ্যালিস্ট, সেসব মুছে ফেলার জন্য কাজ শুরু করেছে আরএসএস-বিজেপি। ২০২৪-এ থমকে গিয়েছিল, আবার পূর্ণ উদ্যমে নেমেছে তারা, দেশের সংখ্যালঘু মানুষজন আজ যে সংশয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে, যে বিপন্নতা বোধ তাদের ভেতরে কাজ করছে, আসুন তাদের দিকে চোখ ফেরাই। আম্বেদকর সংবিধান সভার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, রাজেন্দ্র প্রসাদ সেই বিবরণী লিখছিলেন, প্যাটেল, নেহরু, শ্যামাপ্রসাদ, আবুল কালাম আজাদরা ছিলেন সদস্য, ২৯৯ জন ছিলেন। ২৮৪ জন এই খসড়ায় সই করেছিলেন তার মধ্যে ৩০ জন মুসলমানও ছিলেন। মহম্মদ ইসমাইল সাদিব, কেটিএন আহমদ ইব্রাহিম, মেহবুব আলি বেগ মাদ্রাজ থেকে বোম্বে থেকে আবদুল কাদের মহম্মদ শেখ, আফতাব আহমদ খান ছিলেন, বাংলা থেকে জশুদ্দিন আহমদ, নজরুদ্দিন আহমদ আব্দুল আলিম গজনভি, রাদিভ এহসান, আবদুল হামিদ এই ৫ জন ছিলেন। সংযুক্ত প্রান্ত মানে ইউপি-এমপি মিলিয়ে যে অঞ্চল সেখান থেকে বেগম এজাজ রসুল, হায়দর হুসেন, হজরত মোহানি মহম্মদ ইসমাইল খান, রফি আহমদ কিদোয়াই, মহম্মদ হাফিজুর রহমানের মতো স্কলাররাও ছিলেন, সংবিধান কেবল হিন্দুরা লেখেননি। বিহার থেকে ইমাম হোসেন, সৈয়দ জাফর ইসলাম লুৎফুর রহমান মহ তাহেব, তাজমুল হোসেন, অসম থেকে আবদুর রউফের মতো প্রাজ্ঞ মানুষ ছিলেন, জম্মু কাশ্মীর থেকে শেখ আবদুল্লাও ছিলেন। এই দেশের সংবিধান বানানোর ইতিহাসে এঁরাও ছিলেন। একসঙ্গে দেখেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন। সেই জন্যই একবার সংসদে অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন যে দেশ তার সংবিধানকে নিয়ে চলবে, ধর্ম নিয়ে নয়।
কিন্তু আজ সেই দেশ ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইনও এনে ফেলেছে। দেশের শাসকদল, মন্ত্রিসভা কোথাও তাদের ঠাঁই নেই, উল্টে বটেঙ্গে তো কটেঙ্গে স্লোগান দিয়ে আরও তীব্র বিষ ছড়ানো হচ্ছে। ৪৭-এর পর থেকে একটু মুসলমানদের অবস্থাটা দেখে নেওয়া যাক। মুসলমান সম্প্রদায়ের ৪০ শতাংশ মানুষ গরিবি সীমার নীচে। মাসে রোজগার ৫৫০ টাকারও কম। এমনিতেই দেশে ১০ শতাংশ মানুষের কাছে ৭৫ শতাংশ সম্পদ রাখা আছে আর ৬০ শতাংশ মানুষের কাছে ৪ শতাংশের কম সেই দেশে এই আয় এমনিতেই কম, সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরও খারাপ। মুসলমান একটি মানুষের প্রতিদিনের আয় ৩২ টাকা ৭০ পয়সা। অথচ মুসলিম জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ আমাদের দেশের শ্রমশক্তি, তাঁদের শ্রম মূলত কনস্ট্রাকশন, বেকারি, সেলাই, কুকিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাঁদেরকে সব দল কখনও না কখনও ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছে, কখনও এই মসজিদের ইমাম, কখনও ওই মসজিদের ইমামকে সামনে দাঁড় করিয়ে রাজনীতির বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও তাঁদের বিরুদ্ধে মেরুকরণ তাঁদের দিকে ঘৃণা ছড়িয়ে মেরুকরণের রাজনীতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাঁদের সস্তা সুপারি কিলার হিসেবে ব্যবহার করেছে, ধর্মগুরুরা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে এ কে ৪৭, তারা টেররিস্ট হয়েছে। তারপর আপামর মানুষের মনে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে মুসলমান মানে ৮টা বউ, ২০টা ছেলেপিলে, মুসলমান মানে নোংরা বস্তি, মুসলমান মানে সমাজবিরোধী ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ন্যারেটিভ বহু মানুষ খেয়েছেন, বমি করেছেন। আরও ঘৃণা আরও বিচ্ছিন্ন করেছে তাঁদের। সাংঘাতিক এক কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে গেছে মুসলমান সমাজ। এক ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা, সর্বগ্রাসী ভাঙন। আর সেই ভাঙনের আদত কারিগর নরেন্দ্র মোদি অ্যান্ড কোম্পানি।