skip to content
Tuesday, January 21, 2025
HomeScrollFourth Pillar | এ বাংলায় রাজনৈতিক জোটের ভবিষ্যৎ
Fourth Pillar

Fourth Pillar | এ বাংলায় রাজনৈতিক জোটের ভবিষ্যৎ

আচ্ছা লিবারেশন কি চারু মজুমদারকে হঠকারী অতিবাম বলে চিহ্নিত করে?

Follow Us :

শীত যেরকম নিঃশব্দে ঘাড়ের উপর এসে পড়ে, মা মাসিরা হই হই করে বাক্স-প্যাঁটরা খুলে লেপ তোষক সোয়েটার মাফলার বের করেন, একদিন হঠাৎই যেমন গলির মোড়ে এসে হাজির হয় খেজুর রসওলা, হঠাৎই চোখে পড়ে বাসস্টান্ডে জয়নগরের মোয়া, সম্ভবত তার থেকেও সন্তর্পণে নির্বাচন এসে হাজির হয়। হঠাৎই ক্যালেন্ডার বলে দেয় আর মাত্র তিন মাস কি চার মাস পরেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যাবে। সাত পুরনো বাসী মরা ইস্যু বের হয়ে আসতে থাকবে, বের হবে কত পুরনো কেচ্ছা কাহিনি, বের হবে পাওনাগন্ডার খাতা, যা এখন নির্বাচনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গরিব মানুষজন তাকিয়েও দেখেন না নেতানেত্রীদের অবাধ পুকুর চুরি, তাঁদের কপালে ভাঁজও পড়ে না। নেই রাজ্যের বাসিন্দারা কেবল নিজেদের পাওনা গন্ডার হিসেব বুঝে নিতে চান, সরকারি ঘোষিত প্রকল্পে বাড়িতে মোট কত টাকা সরাসরি আসবে, প্রতিশ্রুতি নয় টাকা, ক্যাশ টাকা। দেখাই যাচ্ছে পরিষ্কার ওই যাকে ভারি ভরকম ইংরিজিতে ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারি বলে, সেই তাঁরাই ঠিক করে দিচ্ছেন সরকারের ভবিষ্যৎ। মহারাষ্ট্রে লাডকি বহন যদি একনাথ শিন্ডেকে এগিয়ে দেয়, তাহলে ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন কেবল মহিলাদের টাকাই দেননি, আদিবাসী গরিব মানুষজনের বিদ্যুৎ বিল মাফ করে দিয়েছেন, সেখানে সেই থিওরি মেনে তিনিই ফিরে আসবেন। তো মোদ্দা কথায় আসি, দেড় বছরের মাথায় এ রাজ্যে সেই ধুন্ধুমার শুরু হবে। ওই খেরোর খাতা খুলে পাওনা গন্ডার হিসেব বুঝে নেওয়ার ব্যাপার তো আছেই, তার সঙ্গেই আছে জোটের হিসেব। সেই জোট কেমন হতে চলেছে? আগামী দিনে বাংলার রাজনৈতিক জোটের হিসেব নিকেশ। মনে আছে সব্বার সেই ২০১১তে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে ছিল কংগ্রেস, এসইউসিআই, আরও ছোট ছোট কিছু দল, বামফ্রন্ট ছিল অক্ষুণ্ণ আর বিজেপি এ রাজ্যে চিরটাকালই বান্ধববর্জিত, মমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তাদের এ রাজ্যে বন্ধু নেই।

তো ২০২৬-এ কী হতে চলেছে? উপর থেকে না বোঝা গেলেও জোটের রসায়ন নিয়ে নাড়াঘাঁটা শুরু হয়ে গেছে। কমিউনিস্ট পার্টিকে বাদ দিলে বাকি দল জোট তৈরির ব্যাপারে কোনও তত্ত্বকে হাজির করে না, নির্বাচনে জেতার জন্য জোট, এছাড়া আর কোনও তত্ত্ব নেই, কাজেই যে জোটের রসায়ন জয় এনে দিতে পারে বলে তাদের মনে হয়, তারা সেই জোট তৈরি করে, সেটা নির্বাচনের আগে হোক বা পরে। আমরাই বাবরি মসজিদ ভেঙেছি, আর সেই জন্য আমরা গর্বিত, বলেছিলেন বালাসাহেব ঠাকরে, তো সেই ঠাকরের শিবসেনার সঙ্গে জোট করতে কংগ্রেসের কাছে বিবেচনা ছিল ক্ষমতায় আসা বিজেপিকে ঠেকানো, তারা অনায়াসে মসৃণভাবেই মহাবিকাশ আগাড়ি বানিয়ে সরকারে এসেছিল, আবারও আসতেই পারে। আবার এনসিপি হল ন্যাশন্যাল করাপ্ট পার্টি, ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঘাপলা করেছে ওই অজিত পওয়ার অ্যান্ড কোম্পানি বলার ক’দিনের মধ্যেই সেই অজিত দাদা পওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি জোট বাঁধল। এবং এর মানে আবার এরকমও নয় যে এই জোটের পরে অন্য কোনও জোট হবে না, হবে, আলবৎ হবে। অজিত পওয়ার কংগ্রেস শিবসেনা মিলে সরকার হতেই পারে অসম্ভব কিছু নয়। কারণ আগেই বলেছি কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া অন্য কেউ জোটের আগে কোনও তত্ত্ব হাজির করে না। আচ্ছা এসব বলার মানে এটাও নয় যে জোটের ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টি খুব ধোওয়া তুলসি পাতা, তারাও হাজারো এমন জোট করে যা তাদের লিখিত বা ঘোষিত আদর্শের কাঁথায় আগুন জ্বেলেই করা সম্ভব, কিন্তু তা তারা করে এক বিশাল তত্ত্ব সামনে এনে। কংগ্রেস দেশকে বেচে দিতে চায়, কংগ্রেস দেশের শোষক পুঁজিপতিদের প্রতিনিধি কাজেই তাদের আটকানোর জন্য মান্ডার রাজাকে সরকারে বসিয়ে তাকে সমর্থন দেওয়া হোক, থাকুক না বিজেপি সেই সরকারে। তত্ত্ব তো আগেই খাড়া করা হয়ে গেছে। দিন ঘুরেছে ছবি ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গেছে, এবার বিজেপিকে আটকানোর তত্ত্ব, কাজেই কংগ্রেসকে সমর্থন। মানে অন্যরা যা করে তা করে, কমিউনিস্ট পার্টি সেটাই করার জন্য এক তত্ত্ব এনে হাজির করে। আজ নয়, জন্মলগ্ন থেকেই। মনে আছে ১৯৬৪-র কথা, সংশোধনবাদী, পুঁজিবাদের দালাল, ইন্দিরা গান্ধীর পা-চাটা কুকুর ইত্যাদি বিশেষণ ছিল সিপিআই-এর জন্য, দেওয়ালে স্লোগান ছিল, দিল্লি থেকে এল গাই সঙ্গে বাছুর সিপিআই। কিন্তু তার ঠিক পরে পরেই দু’ দুটো যুক্তফ্রন্ট সরকারে ওই সিপিআইকে নিয়েই সরকার তৈরিও হয়েছিল, তাতে দুই দলই ছিল, অনায়াসে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কান্না আর ঘেন্নার পাহাড়ে বসে মোদি–শাহের শাসন চলছে

কাজেই জোট মানে নির্বাচনী জোট, সে যে তত্ত্বই এনে হাজির করুন না কেন আদতে সেই জোট নির্বাচন জেতার জন্যই হবে। এক কাঠমোল্লা ‘ঠিক কি না চিল্লাইয়ে কন’ বলে অশিক্ষিত আসরে আদতে নিম্নমানের নিম্নমেধার, কুরুচিকর কথাবার্তা বলতেন, সেই তাঁকে নিয়ে সিপিএম ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল। এ রাজ্যে ওই প্রথম কোনও তত্ত্ব হাজির না করেই কমিউনিস্ট পার্টি ভোটে জেতার জন্য এক জোটের কথা মানুষকে জানিয়েছিল, আয় ভাই বুকে আয় বলে ভরা জনসমাবেশে সে কী আদেখলেপনা। আব্বাস সাব্বাসের সেই গপ্প সব্বার জানা। উল্টো দিকে তেমন কোনও তত্ত্বের আমদানির চেষ্টা কখনও হয়নি, বাংলা কংগ্রেস এধারে ওধারে সব ধারে গেছে, মমতা বিজেপি ভোটে জোট হয়েছে, তৃণমূল নেত্রী সেই সেদিনেই বুঝেছিলেন, এ রাজ্যে ৩৩ শতাংশ মুসলমান ভোট এখানে বিজেপি এক বোঝা। যেই মাত্র সেই বোঝার ভার তিনি টের পেয়েছেন তা মাথা থেকে নামিয়েছেন, কোনও তত্ত্ব ইত্যাদি হাজির করেননি, ওরা সাম্প্রদায়িক, পড়ুন এবং বুঝুন ওরা মুসলমান বিরোধী, ওদের সঙ্গে আমি নেই, সিম্পল। কাজেই ভোট যখন মাত্র দেড় বছরের মাথায় এসে হাজির হবে তখন জোটের কাজও শুরু হয়ে যাবে, গেছেও। বামফ্রন্টে নিয়ে আসা হল সিপিআইএমএল লিবারেশনকে। মানে সেই জন্মলগ্নের সময় নির্বাচন বিরোধী এক দল যারা নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিল, তারা নির্বাচনের রাস্তাতে তো আজ ফেরেনি, ১৯৯০-এই লিবারেশন নির্বাচনে ফিরেছে, প্রকাশ্য রাজনীতিতে এসেছে, সংসদীয় রাজনীতিকে মেনেই মাঠে নেমেছে, কিন্তু বামফ্রন্টের সঙ্গে তাদের জোট হয় নি, মাত্র গত নির্বাচনেও এই লিবারেশনকে সিপিএম মমতার দালাল বলেছে, লিবারেশনে সেক্রেটারি দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে ডেঁপো বলেছে, সেই নকশালপন্থী লিবারেশনকে তারা বামফ্রন্টের জোটে আনল। আচ্ছা লিবারেশন কি চারু মজুমদারকে হঠকারী অতিবাম বলে চিহ্নিত করে? নকশালবাড়ির আন্দোলন আসলে এক অতিবাম শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা বলে মনে করে? করে না। কিন্তু এটাই নকশালপন্থীদের সম্পর্কে সিপিএম-এর ধারণা বা অ্যাসেসমেন্ট। কিন্তু সেসব তত্ত্ব গেছে গড়ের মাঠে ঘাস কাটতে। বামফ্রন্টের নয়া শরিক নতুন ইতিহাস সিপিআইএমএল লিবারেশন। আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট হবে? এবারে হাড়োয়া আসনটা ছেড়ে দিয়েছে বলেই আগামী দিনেও বামফ্রন্ট আইএসএফ আসন সমঝোতা করবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কারণ আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকি লোকসভার আগে যা যা করেছেন তাতে ওনার ছকটা খুব না হলেও অনেকটা পরিষ্কার, কাজেই সেই সমঝোতা হবে কি না তা দেখার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তৃণমূল আর জাতীয় কংগ্রেস জোট হবে, আজকের পরিস্থিতি সাফ বলে দিচ্ছে সেটার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি, মধ্যে যে প্রবল বাধা ছিল, সেই অধীর চৌধুরীকে সরানোর পরে শুভঙ্কর চক্রবর্তীকে আনাই হয়েছে সেই জন্য। আর কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের আপাতত মাথারা জানেন যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে গোটা ২০ আসনে লড়লেও গোটা ১৪ আসন তাঁরা পেতেই পারেন, কাজেই সেই কালনেমির লঙ্কাভাগে সবাই মনোযোগ দিয়েছেন। এ রাজ্যে সুর নিচু আর মাথা নত করার শর্ত মেনেই কংগ্রস-তৃণমূল জোট হতেই পারে। আবার সেই জোট তৃণমূলকেও এক্কেবারে কিছু দেবে না তেমনও নয়, কংগ্রেসের সমর্থন মানে মুসলমান ভোটে আর একটু বৃদ্ধি, অ্যান্টি ইনকম্ব্যান্সির জন্য তৃণমূলের ভোট যদি ৩ শতাংশ কমে তাহলে তার ভরপাই এই জোট থেকে আসবে, তার বেশিও আসতে পারে। তাই তৃণমূল এই জোটে আগ্রহী নয় এমনটাও নয়। তারমানে আপাতত যা হিসেব তাতে বিজেপি একলা, বামফ্রন্ট নকশালপন্থী লিবারেশনকে নিয়ে দীপঙ্কর ভট্টাচার্জের সুপারিশ মেনে যুক্তফ্রন্ট বা গণফ্রন্ট নামে কিছু বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, নির্দল প্রার্থী নিয়ে, মমতা কংগ্রেসকে নিয়ে নতুন জোট হাজির হবে ২০২৬-এ। কী হবে? সে আর এক দিনের আলোচনা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Junior Doctors | RG Kar Case Update | যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সঞ্জয় রায়ের, কী বলছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
57:29
Video thumbnail
RG Kar Case Update | যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সঞ্জয় রায়ের
01:18:35
Video thumbnail
RG Kar Case Update | Judge | আমৃ*ত্যু কারাদণ্ড সঞ্জয় রায়ের, বিচারক কী কী জানিয়েছেন? দেখুন এই ভিডিও
37:36
Video thumbnail
RG Kar Update | শুরু সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া, কী হচ্ছে এই মুহুর্তে? দেখুন সরাসরি
02:59:28
Video thumbnail
RG Kar Case Update | সাজা ঘোষণার পর বিরাট মন্তব্য নির্যাতিতার বাবা-মা'র , কী বললেন শুনুন
34:15
Video thumbnail
RG Kar Case Update | আমৃ*ত্যু কারাবাস সঞ্জয় রায়ের
37:56
Video thumbnail
RG Kar Case Update | দুপুর ২.৪৫ মিনিটে সাজা ঘোষণা জানিয়ে দিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস
02:08:00
Video thumbnail
R G Kar Case Update | আমাকে ফাঁসানো হয়েছে আদালতে বিরাট মন্তব্য সঞ্জয় রায়ের, আর কী কী বললেন সঞ্জয়?
56:13
Video thumbnail
RG Kar | Mamata Banerjee | আজ সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা, কী বললেন মমতা?
02:53:26
Video thumbnail
RG Kar Case Update | রুদ্রাক্ষের মালা কি বাঁচাবে সঞ্জয়কে?
52:13