skip to content
Saturday, December 7, 2024
HomeScrollFourth Pillar | মহিলারাই দখল নিচ্ছেন মাঝমাঠের
Fourth Pillar

Fourth Pillar | মহিলারাই দখল নিচ্ছেন মাঝমাঠের

এখন একই বাড়ি থেকে মহিলারা তাঁদের পরিবারের পুরুষের নির্দেশে নয়, নিজের মর্জিমতো ভোট দিচ্ছেন

Follow Us :

সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে— এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ;
এ-বাতাস কি পরম সূর্যকরোজ্জ্বল;
প্রায় তত দূর ভালো মানব-সমাজ
আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে
গ’ড়ে দেবো, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে।

জীবনানন্দ বলেছিলেন, এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে, আপনি চান বা না চান, আমাদের দেশ বা বিদেশের হুদো হুদো রাজনৈতিক জোকার এবং শয়তানরা চান বা না চান সমাজ এগোবে সামনের দিকে, আর সেই এগিয়ে যাওয়া কতদিনে বোঝা যাবে? এক বিরাট সময় কেটে যাওয়ার পরে আমরা এখন বুঝি হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর নিকাশি ব্যবস্থা কত ভালো ছিল, বুঝতে পারি শূন্যের আবিষ্কার কীভাবে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, বুঝতে পারি ইনকা সভ্যতার মানুষজন কৃষিকাজ নিয়ে কত পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন, যা আজও আমরা কেবল অনুসরণ করে যাচ্ছি। ঠিক সেইরকম ভাবে কিছু কাজ শুরু হয় আর সেই কাজের প্রভাব, সেই কাজের ব্যাপ্তি বোঝা যায় অনেক পরে, বহুদিন পরে। সেই কবে নীতীশ কুমার ক্ষমতায় এসেই সাফ জানিয়ে দিলেন রাজ্যের কোষাগারে টান পড়ে পড়ুক, বিহারে মদ বাতিল, মদ্যপানও বেআইনি। আমরা ভেবেছিলাম ভোট এলেই হয় উনি ওনার সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন, না হলে ওনার গদি উল্টোবে। কিন্তু বাস্তবে হলটা কী, দু’হাত ভরে ভোট উজাড় করে দিলেন মহিলারা, উনি আবার ক্ষমতায় এলেন। রাতে মাতাল স্বামীর বেধড়ক মার খেয়ে সারা গায়ে হাতে পায়ে কালশিটে আর ব্যথা নিয়ে পরের দিন জীবন শুরু করা বিহারের মহিলারা এখনও নীতীশবাবুকে এই কারণে ভোট দেন। উনিই প্রথম মহিলা ভোটারদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।

২০২০-তে জগনমোহন রেড্ডি, জগন্না আম্মা ভোদি প্রকল্পে ১৫ হাজার করে ক্যাশ টাকা দেওয়া শুরু করলেন সেই মহিলাদের যাঁরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু এই স্কিম তার বিভিন্ন শর্তের জন্য তেমন জনপ্রিয় হল না। এরপরে এই বাংলাতে ২০২১ এ মমতা ব্যানার্জি ভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করলেন, ১০০০ টাকা ক্যাশ দেওয়া শুরু করলেন প্রথমে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের, তারপরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। তখন আমাদের কাঁথির খোকাবাবু থেকে বহরমপুরের জোকার প্রত্যেকে এসব হল টাকা দিয়ে ভোট কেনা ইত্যাদি বলতে শুরু করেছিলেন আর ২০২১, ২০২৪-এ ভোটে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সরাসরি প্রভাব দেখে কংগ্রেস বিজেপি, দেশের প্রত্যেকটা দল বুঝে গেল এইখানে লুকিয়ে আছে অমূল্য রতন। রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস থেকে বিজেপি এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টুকলি করা শুরু করে দিলেন। হ্যাঁ, মহিলাদের হাতে একটা টাকা গিয়ে পৌঁছল, গরিব ঘরের মহিলারা কেউ খাবারের জন্য খরচ করলেন, কেউ দুটো ছাগল মুরগি কিনে তার মাংস দুধ ডিম বিক্রি শুরু করলেন, কেউ টুথপেস্ট, ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনলেন, কেউ লোকাল পার্লারে গিয়ে চুল বাঁধিয়ে আনলেন, মানে অর্থনীতিতে যাকে বলে মানি সার্কুলেশন শুরু হল। অর্থনীতি আর আমাদের শরীরের রক্ত সংবহন প্রণালীর এই এক মিল, পাম্প করা বন্ধ হলেই দুটোই মারা পড়বে। যত খরচ হবে, তত অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে। ১ লক্ষ টাকা এক বছর ব্যাঙ্কে পড়ে থাকার মানে তা এক লক্ষ তিন কি চার কি পাঁচ হাজার টাকা, আর ৩০ জন মহিলার প্রতিমাসে ১০০০ টাকা খরচ করার মানে কমকরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। বাংলাতে তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি, তেমন শিল্প নেই, কোর সেক্টরে তেমন বিরাট ইনভেস্টমেন্ট নেই কিন্তু স্টেট জিডিপি বাড়ছে, ভালরকম বাড়ছে। কারণ ওই তলার গরিবস্য গরিব মানুষগুলোর হাতে কিছু টাকা পৌঁছচ্ছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মমতা সফল আর ওড়িশার নবীনবাবু হেরে ভূত, কেন?

সিপিএম দলে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আসা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল, তাঁদের ভাষায় এক বুর্জোয়া সিস্টেমে রাজ্য সরকারে আসাটা কি এক বিপ্লবী কাজ? কারণ সিপিএম তো বিপ্লব করবে, রাজ্য সরকারে আসবে কেন? প্রথমে তো নির্বাচনেই আসব কেন? তা নিয়ে ঝগড়া মেটার পরে রাজ্য সরকারে আসব কেন, এটা ছিল প্রশ্ন। তো শেষমেশ বিপ্লবীরা লিখলেন গরিবস্য গরিবদের ন্যূনতম সাহায্য, রিলিফ দেওয়ার জন্য আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রাজ্য সরকারে যাব, গঠনতন্ত্রে এমনটা লেখা আছে, কিন্তু কেন্দ্র সরকারে যাব তা তো লেখা ছিল না, তাই সে ধারায় যখন সুযোগ এল তখনও তাঁরা সরকারে যাননি, জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি, কারণ ওনারা তো বিপ্লব করবেন, সেই বিপ্লবও হয়নি, এদিকে ঘটিও উল্টেছে। থাক সে কথা, যেটা বলার তা হল এই স্কিম এনে মমতা গরিবস্য গরিব মানুষকে খানিক সাহায্য করতে পেরেছেন, এবং সেই গরিব মানুষেরা তাঁকে সমর্থন করোতে ভোলেননি, তিনি জিতেছেন এবং এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে আরও ব্যাপক করার কাজে হাত দিয়েছেন, টাকাও বেড়েছে আবার সংখ্যাও বেড়েছে, এখন ২ কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পে টাকা পাচ্ছেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই শিবরাজ সিং চৌহান লাডলি বহনা চালু করে দিলেন, ফল পেলেন, কর্নাটক তেলঙ্গানাতে মহালক্ষ্মী প্রকল্প, ২৫০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে, বহরমপুর কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরি অবশ্য এখন কিছু বলছেন না। ছত্তিশগড়ে মহাত্রি বন্ধন যোজনা এনেছে বিজেপি, ওড়িশাতে বিজেপি এসেই সুভদ্রা যোজনা চালু করেছেন ওই একই স্কিমে প্রায় একইভাবে মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়া শুরু হল, কেজরিওয়াল বাসের টিকিট ইত্যাদি দিতে শুরু করেছিলেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সন্মান যোজনা এনে ১০০০ টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে ডিএমকের স্তালিন কালাইমার মাগালির উরিমাই থিট্টাম প্রকল্প এনে ওই একই রকম মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়া চালু করেছেন, একনাথ শিন্ডে লাডকি বহন চালু করলেন আর মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী সমাজে হেমন্ত সোরেন মাইয়া সম্মান যোজনা শুরু করলেন, হাতেনাতে ফল।

দু’ জায়গাতেই মহিলারা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে উড়িয়ে দিয়ে দু’ হাত উজাড় করে ভোট দিলেন, এ জয় মহিলাদের জন্য, শিন্ডে জানেন, হেমন্ত সোরেনও জানেন। মহারাষ্ট্রে ৬ শতাংশ মহিলা ভোট বেশি পড়েছে, ওসব ইভিএম-এর গপ্পো ছেড়ে এই হিসেবটা দেখুন, তাঁরা রাজ্য সরকারকে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, নানদেদ-এর ৬টা বিধানসভায় জিতেছে বিজেপি আর লোকসভায় জিতেছে কংগ্রেস, উত্তরটা এখানেই লুকিয়ে আছে। পুনে থানে নাগপুর শোলাপুর নাসিকে মহিলাদের ভোট বেড়েছে ৬ শতাংশ, বিদর্ভে বিরোধীদের ভোটে ধস নামার কারণ খুব পরিষ্কার। আবার ঝাড়খণ্ডে ৮১টা আসনের মধ্যে ৬৮টাতে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ভোট বেশি পড়েছে, গতবারে মহিলাদের ভোট ছিল ৬৭ শতাংশ, এবারে ৭০ শতাংশ, ৩ শতাংশ বেশি ভোট যদি একদিকে যায়, তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছিল তো স্লোগান বটেঙ্গে তো কটেঙ্গে মহারাষ্ট্রে, কিন্তু ঝাড়খণ্ডেই বা কম কী ছিল? আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে ঘুসপেটিয়ারা, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমান মানুষজন, এটাই তো ছিল প্রচার, প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে এই প্রচার করেছেন, কিন্তু রেজাল্টে তার ছাপও নেই। অবশ্যই আদিবাসী আইডেন্টিটির লড়াইকে সামনে রেখে হেমন্ত সোরেন অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই যে ৩ শতাংশ মহিলাদের ভোটবৃদ্ধি, তার প্রায় সবটাই তিনি পেয়েছেন যেমন এই প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছে মহারাষ্ট্রে মহাযুতি, বিজেপির নেতৃত্বে জোট। কিন্তু এ তো গেল ভোটের অঙ্ক আর তার হিসেব নিকেশ, নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন এতে সমাজের কোন অগ্রগতিটা হল, এধারে বিজেপি জিতেছে তো ওধারে বিজেপি বিরোধীরা, এতে সামাজিক অগ্রগতিটা কোথায়? তার শুরুয়াত কিন্তু আরও আগে ১৯৮০-তে ইন্দিরা গান্ধী যখন ক্ষমতায় ফিরছেন, সেই সময়ে এক সমীক্ষা জানিয়েছিল, প্রায় ৩০ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী ভোট দিয়েছেন, ঘরের পুরুষদের কথা শুনে নয়।

সেটা ছিল শুরুয়াত। কিন্তু আজ সেই সংখ্যাটা যে বিশাল হয়ে উঠেছে তা বলাই বাহুল্য, তা না হলে রাজ্যে রাজ্যে এই মহিলা ভোটের এই বিরাট প্রভাবের কথা বোঝাই যেত না, মানে এখন একই বাড়ি থেকে মহিলারা তাঁদের পরিবারের পুরুষের নির্দেশে নয়, নিজের মর্জিমতো ভোট দিচ্ছেন, তাঁরা হাতে টাকা পাচ্ছেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন। হ্যাঁ, আপনি বলতেই পারেন এই টাকা আসলে ভিক্ষে, বলতেই পারেন এই টাকা আসলে ঘুষ, ভোট কেনা হচ্ছে, আপনার মনে হতেই পারে যে এইভাবে টাকা খরচ না করে সত্যিই যদি কলকারখানা গড়ে তোলা হত তাতে বেশি লাভ হত, কিন্তু অর্থনীতি অন্য কথা বলছে। অর্থনীতি বলছে, ওই গরিবস্য গরিবদের ন্যূনতম সাহায্য এক বিরাট গতি এনেছে বাজারে, এক গ্রামের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মহিলার কেনা মোবাইলের টপ আপ আসলে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত ঘরের চাকরিজীবী ছেলেটির মাইনে বা বোনাস জোগাচ্ছে, এক চাষির টুথপেস্ট কেনা এক মাহিন্দ্রা ট্রাক ভাড়ায় চালান এমন মালিকের পেট চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে মহিলাদের ডানা গজিয়েছে, তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিচ্ছেন, সেটা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখার সিদ্ধান্ত নয়, দেশের শাসক বদলের সিদ্ধান্ত, শাসক নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত, হ্যাঁ মহিলারা দখল করছে মাঝমাঠ, এটাই সমাজ অগ্রগতি, যা আজ থেকে ৫০০ বছর পরে আগুনের বর্ণমালার মতো ফুটে উঠবে, সে বর্ণমালায় বাংলার নাম থাকবে, থাকবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা, মমতা ব্যানার্জির কথা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
India-Bangladesh Meeting |৯ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক বৈঠক , কারা থাকবেন? দেখুন বড় আপডেট
03:15:13
Video thumbnail
Sujay Krishna Bhadra | বিগ ব্রেকিং, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন কালীঘাটের কাকু
03:09:15
Video thumbnail
Jagdeep Dhankhar | কংগ্রেস সাংসদের আসনে টাকার বান্ডিল তদন্তের নির্দেশ ধনখড়ের তুলকালাম রাজ্যসভা
20:10
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, বিজেপির নয়া সমস্যা দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:35:25
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | BJP | প্রিয়াঙ্কাকে কীভাবে ট‍্যাকেল করবে বিজেপি?
45:01
Video thumbnail
TMC | BJP | বাংলায় বড় ভাঙন বিজেপিতে কারা যোগ দিলেন তৃণমূলে? দেখুন এই ভিডিও
11:55:00
Video thumbnail
Muhammad Yunus | Sheikh Hasina | হাসিনার ইমপ্যাক্টে বিশাল চাপে ইউনুস, বাধ্য হয়ে কী করলেন দেখুন
01:06:46
Video thumbnail
Bangladesh | নিজের স্বার্থে বাংলাদেশে ভোট হতে দিচ্ছেন না ইউনুস?
01:10:25
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | তিলোত্তমার বাবা-মাকে হয় ভুল বোঝানো হচ্ছে, না হলে তাঁরা ভুল বুঝছেন
10:12
Video thumbnail
India vs Australia LIVE | ব্যাটিং বিপর্যয় ভারতের ফের বাঁচাবেন বুমরা?
05:57:40