নয়াদিল্লি ও মুম্বই: ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (British Broadcasting Corporation – BBC)-এর দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে দ্বিতীয় দিনেও আয়কর হানা (IT Raid) অব্যাহত। জনপ্রিয় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি’র দুই অফিসে গত মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আয়কর দফতরের টিম হানা দেয়। বুধবারও আয়কর আধিকারিকরা তল্লাশি-অনুসন্ধান (Search and Investigation) চালিয়েছে। বিবিসি’র কিছু কর্মচারীর (BBC Staffs) বক্তব্য, ভারতে সংস্থার ব্যবসায়িক পরিচালনার (Business Operation) বিষয়ে আইটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মঙ্গলবার রাতে যে সমস্ত এডিটোরিয়াল এবং অন্যান্য কর্মীরা (Editorial and Other Staff Members) বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদেরকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাড়ি থেকেই কাজ (Work From Home – WFH) করতে বলা হয়েছে। বিবিসি’র যে কর্মীরা সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন, তাঁদের বক্তব্য, আয়কর দফতরের টিম (IT Team) তরফে তাঁদেরকে কোনওভাবে আয়কর দফতরের এই সমীক্ষা বা হানা (Survey or Raid) নিয়ে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে না করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: Croatia Heart-Shaped Island: প্রেমদিবসে কোটি কোটি টাকা আয় করল ‘আইল্যান্ড অফ লাভ’
সূত্রের খবর, আয়কর দফতরের আধিকারিকরা তল্লাশি অভিযান একাটানাই চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল রাত থেকে কোনওরকম বিরতি (No Overnight Break) নেওয়া হয়নি। যে সমস্ত কর্মীদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ডেস্কটপ কম্পিউটার স্ক্যান (Desktop Computer Scan) করে দেখা হয়েছে। বিবিসির দিল্লি অফিসের কর্মীদের অনেকে জানিয়েছেন, আয়কর দফতরের কর্মীরা তাঁদের ফোন বাজেয়াপ্ত (Confiscate) করে নেন, যদিও তা পরে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এবং বুধবার বিবিসির দিল্লি ও মু্ম্বই অফিসে যে আয়কর হানা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও বিবৃতি (Statement) জারি করেনি আয়কর দফতর। তবে এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, বিবিসির দুই কার্যালয় থেকে আয়কর দফতরের আধিকারিকরা ডিজিটাল ডেটা এবং কাগজে লেখা তথ্য (Digital Data and Paper Informations) কপি করেছেন।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, বিবিসির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রান্সফার মূল্যের নিয়ম মেনে না চলা এবং মুনাফা ঘুরপথে চালান (Deliberate Non-Compliance With The Transfer Pricing Rules And Vast Diversion Of Profits) করার অভিযোগ এনেছে ভারতের আয়কর দফতর। আইটি টিম এই আয়কর হানাকে সমীক্ষা বলছে এবং মূল ফোকাস রয়েছে কর সুবিধা সহ অননুমোদিত লাভের মূল্যের হেরফের (Manipulation of Prices for Unauthorised Benefits)-এর বিষয়ে।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন (India: The Modi Question)’ নামে দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্রের সিরিজ দেখিয়েছে বিবিসি। সেখানে বিবিসি ব্রিটেনের তৈরি করা একটি রিপোর্ট তুলে ধরেছে, সেখানে বলা হয়েছে, ২১ বছর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরায় ট্রেনে আগুন ধরানোর ঘটনা পরিকল্পিত ছিল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সেই পরিকল্পনা করেছিল। গোধরায় ওই ঘটনা না ঘটলেও, অন্য কোথাও ঘটত। এই তথ্যচিত্র গোটা বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ভারত সরকার এই তথ্যচিত্রে ভিডিয়ো ক্লিপস বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এমনকি ভারতে বিবিসির সম্প্রচার বন্ধ করা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র। তবে তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ঘরে-বাইরে এই নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে মোদি সরকার। তারই মধ্যে বিবিসির দুই অফিসে আয়কর হানার ঘটনা। বিরোধী ও সমালোচক মহলের বক্তব্য, বিবিসি তথ্যচিত্রে যে তথ্য তুলে ধরেছে, তাতে কেন্দ্রের মোদি সরকার (Modi Government) চাপে পড়েছে। সেই কারণে আয়কর দফতরের দল পাঠিয়ে আয়কর সমীক্ষার নামে হেনস্তা (Harassment) করা হচ্ছে বিবিসিকে।