প্রচণ্ড গরম ও চড়া রোদ মানেই ঘাম ও ঘামের দুর্গন্ধের সমস্যা। এই গরমে বাড়িরে বাইরে যেতে হলেই শরীর ঘামবেই। শরীর থেকে বের হওয়া ঘামের নিজস্ব কোনো গন্ধ হয় না তবে ত্বকের ওপর লেগে থাকা ঘামে ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তির কারণেই এই দুর্গন্ধ হয়। এই সমস্যার ক্লিনিকাল টার্ম হল ব্রমহেড্রোসেস। ঘামের দুর্গন্ধ শুধু যে শুধু বিব্রত করে তাই নয় বরং শরীরে ঘাম জমলে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
কখন ঘাম হয়
- ঘামের উৎপত্তি শরীরের সেবাসিয়াস, এক্রিন ও অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেক। এগুলির মধ্যে সেবাসিয়াস ও অ্যাপোক্রিন ঘামের গ্রন্থিগুলি মূলত শরীরের যে সব অংশে চুল বা অবাঞ্ছিত রোমে যেখানে সেখানে ঘামের জন্য দায়ী এই দুই গ্রন্থি। অন্যদিকে ত্বকের ঘামের জন্য দায়ী এক্রিন গ্রন্থি। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
- গরমকালে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে ঘাম হয়। যেমন কোনও কঠোর পরিশ্রম কিংবা শরীরচর্চা করার সময় শরীরের তাপমাত্রা যাতে মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে শরীরের কোনও বিপদ না ডেকে আনে তাই শরীর ঠাণ্ডা করতেই ঘাম হয়। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে হাতে গোনা কয়েকজনের কোনও কারণ ছাড়াই হাত ও পায়ের তালু, বগলের নিচে অতিরিক্ত ঘাম হয়। এই সমস্যাকে হাইপারহাইড্রোসিস বলা হয়। মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষের এই সমস্যা হয়।
- আর কোন কারণে ঘাম হয়
- হরমোনের প্রভাবে বয়ঃসন্ধির সময় গায়ে দুর্গন্ধ বাড়তে পারে, তবে এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
- খাবারের কারণেও ঘাম হয়। যেমন মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, ব্রকলি, রসুন বেশি খেলে কিংবা খাবারে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকলে ঘাম হয়। একইসঙ্গে অতিরিক্ত লবণ ও মসলাযুক্ত খাবার খেলেও ঘাম হয়।
- এছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমনকি মদ্যপান করলে ঘাম হয়। মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকলেও ঘাম হয়।
এই গরমে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে
- এই গরমে দিনে অন্তত দুবার স্নান করুন এবং মাথা থেকে পায়ের পাতা ভাল করে পরিষ্কার করুন যাতে কোথাও কোনও জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা তৈরি না হয়।
- গ্রীষ্মকালের পোশাক নিয়ে সচেতন হতে হওয়ার প্রয়োজন। গরমে সুতির পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। বিশেষ করে অন্তর্বাস ও মোজা পরিষ্কার রাখুন।
- যথাসম্ভব কড়া রোদ এড়িয়ে চলুন। ছাতা, ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন। শরীর দুর্গন্ধ মুক্ত রাখতে দিনের শেষে বাড়ি ফিরে স্নানের জলে কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্নান সেরে নিন। এতে যেমন দুর্গন্ধের সমস্যা থাকবে না তেমন আবার সারাদিনের ক্লান্তিও ঘুঁচবে। এছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে স্নানের জলে নিমপাতা ফোটানো জল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।
- গরমে ঘেমে অনেকেরই ঘামাচি সহ ত্বকের একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল বা অ্যান্টিব্যক্টেরিয়াল পাউডার ও অয়েন্টমেন্টের ব্যবহারে সমস্যা কমে যা। তবে ত্বকের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে ডার্মেটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
- মসলাযুক্ত খাবার, কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি যথাসম্ভব এড়িয়ে যান। এগুলিতে যেমন ঘামের সমস্যা হয় তেমন আবার বদহজম ও ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে। বরং বেশি পরিমাণ জল খান, ডাবের জল খেতে পারেন, পাতিলেবুর জল কিংবা ফলের রস খেতে পারেন। এগুলি শরীর ঠাণ্ডা রাখবে এবং ঘাম ও কম হবে।
আরও পড়ুন: আপনি কি রোল-অন ডিওডরেন্ট ব্যবহার করেন?
(ছবি সৌ: Unsplash)