পুজোর আগে ওজন কমানোর হিড়িক ওঠে প্রত্যেকবার। পুজোর জামাকাপড়, পুজোর সাজে নজরকাড়া হয়ে উঠতে কম সময়ে দ্রুত ফলের আশায় অসাধ্য সাধন করতেও পিছপা হন না অনেকেই। তা, পছন্দের খাবারগুলি নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক কিংবা হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও সকাল-বিকেল দু’বেলা শরীরচর্চা করা। তবে এত কিছু করেও মনের মতো ফল পান না অনেকেই। অনেকের আবার ওজন কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। কারণ, ওজন কমানোর হিড়িকে নিজের অজান্তেই এই সব ভুল করে বসেন অনেকেই। যেমন-
ঠিকমতো খাবার না খাওয়া
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ডায়েটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মানে এই না যে কম খেতে হবে। ওয়েট লস জার্নির ক্ষেত্রে অনেকেই ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ স্কিপ করেন। আর এতে ফল হয় উল্টো। দিনের প্রধান খাবারগুলি না খাওয়ার ফলে যেমন পুষ্টির ঘাটতি হয় তেমন বাড়ে খিদে। আর খিদের চোটে তখন কোনও বাদ বিচার ছাড়াই সহজলভ্য ফাস্ট ফু়ড খেয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায় অধিকাংশের মধ্যে। এমনকি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন অনেকই। ওজন কমার বদলে আরও বেড়ে যায়। তাই ওয়েট লস জার্নির সময় দিনের প্রধান তিনটি খাবার নিয়মমাফিক খেতে হবে। এর মধ্যে কোনওটাই বাদ দিলে চলবে না।
লিকুইড ক্যালোরি আপনার সমস্যা বাড়াতে পারে
অনেকেই মনে করেন ওয়েট লস জার্নির মধ্যে বাজার থেকে কেনা ফলের রস কিংবা সোডা খাওয়া যেতেই পারে। এতে আর কি শরীরের কী ফ্যাট জমবে। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। সলিড খাবারের তুলনায় এই সব লিকুইড খাবারে ক্যালোরি থাকে আরও বেশি। তা ছাড়া এ গুলো খিদে মেটাতে পারে না। বরং খিদে আরও বাড়িয়ে দেয় কারণ লিকুইড ক্যালোরি শরীর খুব তাড়াতাড়ি হজম করে ফেলে। ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই লিকুইড ক্যালোরি।
বাজারের থেকে কেনা ‘হেলদি ফুডের’ ওপর ভরসা
অনেকেই ডায়েটিং করতে গিয়ে কম খাবেন ভেবে বাজার থেকে কেনা প্রোটিন বার কিংবা ফ্রুট জুস বাছেন। টাটকা ফল কিংবা শাক সবজি ও বাড়িতে রান্না করা খাবারের বদলে বাজার থেকে কেনা এই সব খাবারই বেশি খান। এর ফলে সমস্যা আরও বাড়ে। কারণ,বিশেষজ্ঞদের মতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সব লো ফ্যাট ও ফ্যাট ফ্রি খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। চিনি ছাড়াও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় বেশ কিছু অ্যাডিটিভস। যেমন বাজারে থেকে কেনা যে ফ্যাট ফ্রি ফ্লেভারড ইয়গহার্টের ওপর আপনি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন। সেই ইয়গহার্ট ঠিক তত পরিমাণ চিনি থাকে যত পরিমাণ একটি চকোলেট বারে পাওয়া যায়।
প্রত্যেকদিন ওজন মাপার অভ্যেস
রোজ রোজ ওজম মাপলে যে ওজন বাড়বে তা ঠিক নয়। তবে নিয়মমাফিক খাওয়া দাওয়া ও শরীরচর্চা করেও যখন ওজনে বিশেষ কিছু হেরফের দেখতে পাবেন না, তখন অনেকের মধ্যেই একটা বিরক্তি কাজ করতে শুরু করে। রাতারাতি যে ওজন কমবে না তা জানা সত্ত্বেও ওজন কমানোর সদিচ্ছা ব্যাক সিট নেবে আর মাথা চাড়া দেবে হতাশা। এই হতাশায় অনেকেই ডায়েটিং ভুলে মনের খুশিমত খাবার খেতে শুরু করেন। এর ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েকগুন।
ঘুমের ঘাটতি
ঘুমের অভাবে লেপটিনের স্তরে বাজে ভাবে কমিয়ে দেয় আর বাড়িয়ে দেয় ঘ্রেলিনের মাত্রা। এই লেপটিন শরীরে তৃপ্তের আভাস দেয় অন্যদিকে ঘ্রেলিন হরমোন খিদে বাড়িয়ে তোলে। তাই ঘুমের ঘাটতি হলেই বাড়বে খিদে। এখানেই শেষ নয় যত কম ঘুমোবেন তত বেশি হাই-ফ্যাট ও হাই কার্ব যুক্ত খাবারের প্রতি আশক্তি বাড়বে। বলা বাহুল্য, বাড়বে ওজনও।