এখন আবার কিছু বললে তাহা উচিত না অনুচিত, এটা কি বলা যায় গোছের লেখাপত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরতে থাকে, সেসব করার জন্য জ্যাঠামশাইরাও আছে। কিন্তু তাদের তোয়াক্কা না করেই বলছি, কখনও সখনও বাড়িতে কিছু অবাঞ্ছিত অতিথি এসে পড়লে তিনি কখন উঠবেন, কখন বিদেয় হবেন তা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে, ঠিক সেরকম এক অবাঞ্ছিত অতিথি হলেন আমাদের সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সরকারে যে দল আছে এমনকী বিরোধী দলনেতাও শুনছি অপেক্ষায় আছেন এ রাজ্যপাল কবে বিদেয় হবেন। রাজ্যে নির্বাচন হবে, নির্বাচনের পরে নব নির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল, এটা একটা অত্যন্ত নিয়মমাফিক ব্যাপার, কিন্তু আমাদের সি ভি বোস সেটা নিয়েও রাজনীতি করে চলেছেন। তো সেই তিনি এক মামলা ঠুকে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নামে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নাকি ওঁর সম্মানহানি ঘটিয়েছেন, তাই মামলা। মানহানির মামলা। বিষয়টা কী? বিষয় হল রাজভবনের এক মহিলা কর্মচারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন যে আমাদের মহামহিম রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন, প্রমাণিত নয়, কিন্তু একটা অভিযোগ তো বটেই। এর সঙ্গেই আর একজন ভদ্রমহিলা জানিয়েছেন, দিল্লির এক হোটেলে তাঁর সম্মানহানি করেছেন এই রাজ্যপাল। তার মানে ওঁর বিরুদ্ধে দুটো শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ এসেছে। তো মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে মেয়েরা এসব শুনেছে, তারা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছে। ব্যস, এতেই মানহানি হয়ে গেল লাটসাহেবের, এবং তিনি মানহানির মামলা ঠুকলেন। বেশ করলেন, কিন্তু তিনি সেই মামলার আবেদনে একবারের জন্যেও বলেননি যে মামলা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী যেন কিছু না বলেন, আবেদন করেননি, কিন্তু বিচারপতি রায় দিয়ে দিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বলতে পারবেন না। যদি রায়ে বলা হত দু’পক্ষই কিছু বলতে পারবেন না, তাহলেও না হয় বোঝা যেত, এই রায়কে কুণাল ঘোষ, তৃণমূল নেতা একতরফা বলেছেন, সেটাই বিষয় আজকে, রাজ্যপাল বলবেন, মমতা বলবেন না?
যে কোনও মামলার একটা মূল সূত্র থাকে, গাড়ি চুরি হয়েছে, তারপর সেই গাড়ি নিয়ে চোরেরা চলে গেছে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর। মামলা হলে আগে কোনটা নিয়ে কথা হবে? দুর্গাপুর যাওয়া নিয়ে না গাড়ি চুরি নিয়ে। আগে সেটাই খতিয়ে দেখা হবে যে সত্যিই তারা গাড়িটা চুরি করেছিল কি না। ইলিশমাছ চুরি করে রেঁধে জামাইকে খাইয়েছে, মামলা তো ইলিশ মাছ চুরির, জামাইকে খাওয়ানো তো পরের, বা ধরুন হোটেলে সেই মাছ রেঁধে বিক্রি করে পয়সা কামিয়েছে, সে মামলা তো পরের, আগে তো চুরির মামলা।
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দু অধিকারীর ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’!
তো এখানে মামলাটা কী? মামলা হল আমাদের মহামহিম নাকি রাজভবনের এক কর্মচারীর শ্লীলতাহানি করেছেন, আরে বাবা আগে সেটার বিচার হোক। দেখা গেল অভিযোগ মিথ্যে বে-বুনিয়াদ, তাহলে তিনি শ্লীলতাহানি করেন, করে থাকেন, রাজভবনে তো এসবই হয় যাঁরা বলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হোক। এখানে এক বিচিত্র ব্যাপার, অভিযোগ আসা ইস্তক রাজ্যপাল তাকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে বলে দিলেন পুলিশকে ঢুকতে দেব না, তারপরে বললেন মুখ্যমন্ত্রীকে ঢুকতে দেব না, তারপরে এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কেবল বলেছেন যে ওঁকে কেউ কেউ জানিয়েছেন রাজভবনে যেতে তাদের ভয় লাগছে, উনি কেবল সেই কথাটা বলেছেন। তার জন্য মানহানির মামলা, এই রাজ্যের দেড় দু’ কোটি মহিলা যদি চিঠি লিখে জানায় যে হ্যাঁ ওই রাজভবনের মহিলা কর্মচারীর বয়ান শুনে তাঁদের মনে হয়েছে যে রাজভবনে যাওয়াটা তাদের কাছে ভীতিপ্রদ ব্যাপার তাহলে সেই দেড় দু’ কোটি মহিলার বিরুদ্ধে সি ভি আনন্দ বোস কি মানহানির মামলা করবেন? আমরা সেই প্রশ্নটাই আমাদের দর্শকদের কাছে রেখেছিলাম যে মানুষ তো কোনও এক বিশেষ জায়গায়, বিশেষ মানুষের নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ শুনে যদি সেই জায়গা বা সেই মানুষটাকে নিয়ে নিজের মতামত তৈরি করেন, বলেন যে না বাবা রাজভবনে যাব না, তাহলে কি সেটা অন্যায়? সেই অভিযোগ যদি আদালতে ভুল বলে প্রমাণ হয় তাহলে তো ল্যাটা চুকে যায়, তার তদন্ত বিচারটাই কি আগে করা উচিত নয়? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বিচার ব্যবস্থা সবার ঊর্ধ্বে, বিচারপতির রায়কে প্রভাবিত করার কোনও ইচ্ছেই আমাদের নেই, কিন্তু সেই বিচার যদি আমাদের মগজেই না ঢোকে, সেই বিচার যদি হিং টিং ছট প্রশ্নের জন্ম দেয় তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বইকী। একজন নিয়োজিত সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান যা ইচ্ছে খুশি বলবেন, যা খুশি করবেন আর একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কথাও বলতে পারবেন না, এ আবার কেমনধারা বিচার?