অভয়ার ধর্ষণ খুনের তাড়াতাড়ি বিচার, থ্রেট কালচারের বিচার, আরজি করে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির বিচারের দাবিতে যখন জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে গেছেন, যখন রাজ্যের প্রান্তিক মানুষজন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তখন তাঁদেরই ৫৩৬ জন সতীর্থ চুটিয়ে প্র্যাকটিস করেছেন বেসরকারি হাসপাতালে। রাজ্যের মানুষের ট্যাক্সের পয়সা গেছে বেসরকারি হাসপাতালের মালিকের ঘরে, ওই ৫৩৬ জন ডাক্তারবাবুও পকেটে পুরেছেন তার ভাগ। কেবল ৫ জন ডাক্তার মিলে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যসাথী বিল পাশ করিয়েছেন, কত টাকা তাঁদের পকেটে গেছে তা তদন্তে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে এবং কতখানি নির্লজ্জ হলে এখনও এ নিয়ে একটা কথা না বলে তাঁদের প্রতিবাদী ইমেজ নিয়ে রাস্তাতেই আছেন অনিকেত, কিঞ্জল, দেবাশিসরা? সবকিছু জেনে অমন আগুনখেকো প্রতিবাদীরা চুপ করে বসে আছেন কেন? আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে একটা কথা নেই কেন? ইটিং ফায়ার ভমিটিং ফায়ার, খাচ্ছেন আগুন, বমি করছেন আগুন বিপ্লবীরা এ নিয়ে একটা কথা বলছেন না কেন? যাঁরা এখনও দ্রোহের গ্যালারিতে গা গরম করেই যাচ্ছেন, তাঁদের মুখে এই অন্যায় নিয়ে একটা কথাও নেই কেন? এক অন্যায়ের প্রতিবাদে আর এক প্রবল অন্যায়কে সমর্থন করার নাম বামপন্থা? সেই সুদূর ক্যানিং, গোসাবা, সিউড়ি, কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি থেকে ছুটে আসা মানুষজনেরা সেদিন মেডিক্যাল কলেজের গেট থেকে ফিরে গেছেন, জরুরি অপারেশন হয়নি, কিন্তু সেই প্রতিবাদ আর কর্মবিরতিতে শামিল ডাক্তারবাবুদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মালকড়ি ভালোই ঢুকেছে, জানতেন না অনিকেত, কিঞ্জল, দেবাশিসেরা? জানতেন না মহম্মদ সেলিম বা রাত দখলের হাঁক দেনেওয়ালারা? সব্বাই জানতেন এমন বলতে পারব না কিন্তু ডাক্তারেরা সবটা জানতেন, জেনেশুনেই রাজ্যের কোষাগার থেকে টাকা গেছে বেসরকারি মালিকদের হাতে। সেটাই বিষয় আজকে, রোগী মরল, চিকিৎসা পেল না, জুনিয়র ডাক্তাররা টাকা কামালেন।
যে বিপ্লবী ডাক্তাররা আগস্ট মাস থেকে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন ক্রোধে, প্রতিবাদে, সতীর্থের ধর্ষণ মৃত্যুর বিচার চেয়ে, সেই তাঁরাই সেই কর্মবিরতির আড়ালে কেবল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে ৫৫ কোটি টাকার কাছাকাছি পকেটে পুরেছেন, জানেন ধর্ষিতা মৃতার বাবা-মা?
এছাড়াও আছে আরও হাজারো ইনসিওরেন্স কোম্পানি, স্টার হেলথ, ওরিয়েন্টাল ইনসিওর্যান্স আরও কত। ৫৩৬ জনের নাম তথ্য পাওয়া গেছে, যাঁরা কেবল আড়ালে নিজেদের পকেট ভরেছেন কেবল তাই নয়, তাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে এই কর্মবিরতি চলাকালীন পুরো টাকা নিয়েছেন, আবার বেআইনিভাবে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করে টাকা কামিয়েছেন। জানেন না কমরেড সেলিম সুজন?
আরও পড়ুন: Aajke | ৬ আসনে উপনির্বাচন, ফলাফল কী হবে?
মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার সমুদ্র গুপ্ত, গ্রিনভিউ ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম, মন্ডল নার্সিংহোম, নৈহাটি হেলথ কেয়ার ইনস্টিটিউট, নিউ মেডিক্যাল নার্সিং হোম, পরিজন নার্সিংহোম, সোনালি নার্সিং হোমে রোগী দেখেছেন ৯ অগাস্ট থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত, মানে ওই কর্মবিরতির সময়ে, এইসব বেসরকারি নার্সিং হোমে ১২৪ জন রোগী দেখেছেন তিনি, সরকারের কোষাগার থেকে ১৫ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, এই রোগীরা অনায়াসে সরকারি হাসপাতালে যেতে পারতেন, কিন্তু সেখানে তো কর্মবিরতি চলছে। একইভাবে ডঃ নাসিম মন্ডল ৮২ জনের চিকিৎসা করেছেন চার্নক হাসপাতাল, ড্যাফোডিল হাসপাতাল, সান মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে আর তাঁর হাত দিয়ে রাজ্যের ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ডাঃ বিপুল রায় খরচ করিয়েছেন ১৬ লক্ষ ৮৭ হাজার, অভিষেক চক্রবর্তী খরচ করিয়েছেন ৫৩ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। এবং বলাই বাহুল্য এসব চিকিৎসা তাঁরা সেবাব্রতে তো করেননি, নিজেদের পকেটেও তার ভাগ গেছে। এঁরা ৫ জনই নন ৫৩৬ জন জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার কর্মবিরতির সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালে চুটিয়ে রোগী দেখেছেন, ফিজ নিয়েছেন, সরকার থেকে মাইনেও নিয়েছেন, এবং এসবই গোপনে নয়, প্রকাশ্যে। এঁরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন, গলা ফাটিয়েছেন, এঁরাই তো ওই বিপ্লবী কিঞ্জল নন্দের আশাভরসা। কেউ কিচ্ছু বললেন না, আরও দরকারি কথা হল তাঁরা এই কাজটা বেআইনিভাবে করেছেন, রাজ্যের ক্লিনিকাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী এই কাজ তাঁরা করতে পারেন না, সরকারের উচিত এই প্রত্যেকটা বিষয় খতিয়ে দেখে এঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা, রেজিস্ট্রেশন কেড়ে নেওয়া এবং মানুষের কাছে এঁদের নাম ছবি প্রকাশ করে এই জালিয়াতি তুলে ধরা। সাধারণ মানুষের উচিত সরকারের কাছে এই অন্যায়ের বিচার দাবি করা। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা এই অভয়া খুন ধর্ষণের প্রতিবাদের কর্মবিরতিতে যাওয়া ডাক্তারদের সেই সময়েই বেসরকারি হাসপাপালে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করা, রাজ্যের কোষাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা বেসরকারি নার্সিং হোমের পাঠিয়ে দেওয়াকে আপনারা কীভাবে দেখছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বহুকাল আগে এ রাজ্যে এক পয়সা ট্রাম ভাড়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে তখনকার বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন, কত পয়সা বাড়ল সেটার চেয়ে জরুরি হল এটা বোঝা যে কার পয়সা কার পকেটে যাচ্ছে? তখনও বেসরকারি ট্রাম কোম্পানির পকেটে মানুষের টাকা যাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন তিনি। আজ কিন্তু এই অন্যায়ের তিনটে দিক আছে। প্রথম কথা হল নৈতিকতা, সতীর্থের খুন ধর্ষণের বিরুদ্ধে ঘোষিত কর্মবিরতির আড়ালে পয়সা কামানো। ২) রাজ্যের মানুষের টাকা বেসরকারি মালিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ৩) এই কাজ বেআইনি, একইসঙ্গে সরকারের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে বেসরকারি নার্সিং হোম থেকে রোজগার তাঁরা আইনতই করতে পারেন না। যাঁরা করলেন এই কাজ তাঁদের মুখে প্রতিবাদ, আন্দোলন দ্রোহের কথা শুনলে, সত্যি বলব? বমি পায়।