ফেঁসে গেল ফেঁসে গেল কালীরামের ঢোল, বলো হরিবোল, হরিবোল। খানিকটা সেরকম অবস্থা মোদি-শাহ সরকারের। এতদিন ধরে সংসদে, মন্ত্রীর দফতরে চিঠি লিখে, ধরনা দিয়ে রাজ্যের নির্বাচিত সাংসদেরা, রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়কেরা, রাজ্যের সাধারণ মানুষ দাবি জানাচ্ছিল, রাজ্যের বকেয়া টাকা দিন, মানুষ শ্রম দিয়েছে সেই পয়সা দিন, কিন্তু তা নিয়ে নানান টালবাহানা চালিয়েই যাচ্ছিল এই সরকার। ভাবখানা এমন যে টাকাটা ওঁদের বা ওঁদের পিতৃপুরুষের, ইচ্ছে হচ্ছে না তাই দিচ্ছেন না। কথায় কথায় যে সরকার লক্ষ-কোটি টাকা শিল্পপতিদের বকেয়া টাকা মাফ করে দেন, খাতা থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দেন, যে সরকারের আমলে লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা লাইন দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়, মানুষের গচ্ছিত টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে যায় সে ব্যাপারে সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ, কিছু করেছেন? কুটোটিও নাড়েননি, আবার লন্ডনে ক্রিকেট খেলা হবে, আমরা আবার বিজয় মালিয়া বা নীরব মোদিকে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে খেলা দেখতে আসতে দেবো। কিন্তু ঘনশ্যাম জানা, নিশি কৈবর্ত বা ফাজিল শেখের দৈনিক কাজ করার টাকা এই সরকার দেবে না, মনরেগার বকেয়া লক্ষ কোটি টাকার কথা বললেই জালি মালের মতো চোখ উল্টে চলে যাচ্ছে সরকার। এ কথা আমরা বার বার বলেছি, এবারে সেটাই সাফ হয়ে গেল লোকসভাতেই। তাই সেটাই বিষয় আজকে, ভাতে মারতে চান সেটা সাফ বলুন।
বঞ্চনার প্রতিবাদ তো প্রথমে নিয়ম মেনেই হয়, নতুন সরকার, নতুন সংসদ, তাই তৃণমূল সাংসদেরা সংসদেই দাবি তুলেছিলেন, বকেয়া টাকা মেটাও। তো জবাব এসেছিল ঘাপলা আছে, বেনিয়ম আছে, লক্ষ লক্ষ জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে, কাজেই টাকা মেরে দিয়েছে তৃণমূল সরকার কাজেই টাকা দেওয়া হবে না। এবং এসবের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মাইনে পাওয়া আর জেলের ভয়ে আপাতত বিজেপি হয়ে যাওয়া কিছু ইউটিউবার। রাজা যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ, কাজেই তাঁদের একজন বললেন হুঁ হুঁ বাওয়া, সব তথ্য আছে, চাইলেই বের করে দেখিয়ে দেব।
আরও পড়ুন: Aajke | ইলিশ আসবে না?
তো খানিক খোঁজ নিয়ে আমরা জানলাম যে ১৯–২০ থেকে ২৩-২৪ পর্যন্ত প্রায় ২৪ লক্ষ জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এবার সংসদে সেই হিসেব পেশ করা হল। জানা গেল উত্তরপ্রদেশে ৯১ লক্ষের মতো জব কার্ড বাতিল হয়েছে কিন্তু তাদের টাকা বাকি পড়ে নেই, বিহারে বাতিল হয়েছে ৯৯ লক্ষ জব কার্ড। উত্তরপ্রদেশ বড় রাজ্য, কিন্তু বিহার? আমাদের চেয়ে সামান্য ছোট, সেই রাজ্যে ৯৯ লক্ষ জব কার্ড বাতিল হয়েছে সংসদে এই সরকারই সেটা জানাচ্ছে, কিন্তু তাদের বকেয়া পড়ে নেই। মধ্যপ্রদেশের ৩৭ লক্ষ জব কার্ড বাতিল রয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৬ লক্ষ জব কার্ড বাতিল হয়েছে তাদের টাকা বকেয়া পড়ে নেই কিন্তু বাংলার ২৪ লক্ষ জব কার্ড বাতিল হয়েছে বলেই ২০২১ থেকে এই মনরেগা বাবদ একটা ফুটো পয়সাও আসেনি এই রাজ্যে। তাহলে? বাঙালিকে ভাতে মারতে চান? ভুখা মারতে চান? আমরা সেই প্রশ্নই করেছিলাম আমাদের দর্শকদের, বিহারের ৯৯ লক্ষ জব কার্ড বাতিল, উত্তরপ্রদেশের ৯১ লক্ষ, মধ্যপ্রদেশের ৩৭ লক্ষ আর অন্ধ্রপ্রদেশের ৩৬ লক্ষ জব কার্ড বাতিল, এদের কারও মনরেগার টাকা বকেয়া নেই, কিন্তু ২৪ লক্ষ জব কার্ড বাতিলের অজুহাতে ২০২১-এর গোহারা হারের পরে মোদি-শাহ সরকার বাংলাকে মনরেগা খাতে এক পয়সাও দেয়নি, এটাকে কীভাবে দেখছেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
আসলে রাগটা হল ২১-এ গোহারা হেরে যাওয়ার, তাই গুজরাটি দুই মোটাভাই আমাদের বাংলার টাকা বকেয়া রেখেছেন। আমরা লড়ব, সংসদের ভিতরে বাইরে লড়ব, স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা অস্বাভাবিক হল যাঁরা বিজেপির নির্বাচিত সাংসদ তাঁরা কাদের হয়ে কথা বলছেন? বাংলার আমজনতার হয়ে? যাঁরা তাঁদের শ্রমের বিনিময়ে পয়সা পাচ্ছেন না তাঁদের হয়ে নাকি ওই মোদি-শাহ সরকারের হয়ে? মানুষ দেখছেন, মানুষ সব মনে রাখবেন। এরপরে পাড়ায় হাতজোড় করে ভোট চাইতে এলে মানুষজন যা দেবেন তার নাম এখনই বলছি না, মানুষজন যখন দেবেন, তখন বলেই দেবেন।