মুখোশ খুলে নামবেন না মুখোশ পরে নামবেন সেটা ঠিক করতে করতে আন্দোলন তার আকর্ষণ হারিয়েছে। আমি নই, এক বিজেপি নেতা কথা প্রসঙ্গে এই কথা বললেন। হ্যাঁ, দলের মধ্যে এ নিয়েই জোর ঝগড়া চলছে। আমি তর্ক-বিতর্ক বললাম না, ওসব বিজেপিতে হয় না, হয় হুকুম মেনেই কাজ করা হয়, না হলে ঝগড়া হয়। যতদিন এক ওমনিপোটেন্ট, ওমনিশিয়েন্ট, ওমনিপ্রেসেন্ট নেতা ছিলেন, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় বলা হত, ততদিন এসব নিয়ে বিজেপিতে সেরকম কোনও ঝামেলা ছিল না। দিল্লি থেকে যা বলা হত, সোনামুখ করে সেই নির্দেশ গিলে তা মেনে কাজে নামা হত। কিন্তু এখন তো চাকা অন্যদিকে ঘুরছে এখন দলের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়া হয়, এ রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। না হলে এই বিরাট সামাজিক আন্দোলনকে নিয়ে দৃশ্যতই উল্লসিত আমাদের বিরোধী দলনেতা কাঁথির খোকাবাবু যখন দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের স্লোগান দিচ্ছেন, যখন বলছেন আমরা আমাদের ঝান্ডা ছেড়েই অন্দোলনে নামতে রাজি আছি, ঠিক সেই সময়ে দিলীপ ঘোষ হেঁকে জানিয়ে দিলেন এই আন্দোলন ছিল এক বিশুদ্ধ নৌটঙ্কি। এমনিতেই দিলু ঘোষ সিভিল সোসাইটি নিয়ে, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজকে নিয়ে ততটা সড়গড় নন। সেই দিলু ঘোষ আজ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে তিনি বললেন, এত নাটক করে লাভ কী হল? যাঁরা বদলি হলেন তাঁদের তো আসলে প্রোমোশন দেওয়া হল, মোমবাতি জ্বেলে তালি দিয়ে লাভ কী হল? কেন মানুষ দেড়মাস আন্দোলন করলেন? হাসপাতালের অবস্থার কি কোনও পরিবর্তন হল? আজ সেটাই বিষয় আজকে, আরজি কর আন্দোলন আর বিজেপির নৌটঙ্কি।
হ্যাঁ, দিলু ঘোষ বলেছেন এই নাগরিক সমাজের আন্দোলন আসলে নাটকবাজি। কেন? কারণ সেই শুরুর দ্বিতীয় দিনেই তিনি গিয়ে গোব্যাক শুনেই তিনি ঘরে ফিরেছিলেন। ওদিকে দলের বিধানসভার নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আন্দোলনকারীরা যদি চান তাহলে বিজেপির ঝান্ডা রেখে দিয়েও তাঁরা শামিল হতে পারেন। ইন ফ্যাক্ট এই একই চেষ্টা আমাদের কাঁথির খোকাবাবু করেছিলেন আগেই, ছাত্রসমাজের নামে বকলমে এক নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়ে, তা তো সুপার ডুপার ফ্লপ। তারপরে আরও ফ্লপ পরের দিনের বনধ, শান্তিকুঞ্জের বাইরের মুদির দোকানও খোলা ছিল।
আরও পড়ুন: Aajke | বিচার, সুপ্রিম কোর্ট এবং চন্দ্রচূড় সাহেব
এদিকে দিলু ঘোষ বলছেন গোটা আন্দোলনটা নাটক, ওদিকে বিজেপি বলছে কালীঘাট অভিযান। কেন? মা কালীর কাছে কোনও বিশেষ প্রার্থনা নিয়ে বিজেপি নেতারা কালীঘাটে যাবেন? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে? আচ্ছা এরপর ৪২ জন সাংসদ যদি দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের সামনে গিয়ে ধর্না দেন, কেমন হবে ব্যাপারটা? এবং বেলা বাড়তেই জানা গেল, ওনাদের কালীঘাট অভিযান শেষ হবে হাজরা মোড়ে। ও হরি, এদিকে গতকাল থেকে পুলিশে সাজো সাজো রব, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ধর্না। এক আজব দল, যাবেন হাজরা মোড়ে, বলছেন কালীঘাট অভিযান, এদিকে এই ঘোষণা শুনেই বহুদিন আগেই টাকাপয়সার বিনিময়ে শিরদাঁড়া জমা করে আসা চোখে চোখ রাখা সাংবাদিকদের কী উত্তেজনা, কী করবেন মমতা? মানে হেলিকপ্টারে করে পালাবেন কি না এই গোছের আলোচনাও সেরে রেখেছে। তারপর জানা যাচ্ছে তেনারা যাবেন হাজরাতে, সম্ভবত থাকবেন রুদ্রনীল ঘোষ যিনি নিজেই এই একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন এবং তাঁকে প্রাথমিক আশ্রয় দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। বাকি যাঁরা থাকবেন তাঁদের মাথায় রয়েছে বিলকিস বানো থেকে হাথরস, উন্নাও, কাঠুয়া, মণিপুরের ধর্ষণের দায়। কিন্তু তাঁরা থাকবেন। কিন্তু আরও বড় প্রশ্ন হল এই অভিযানে কোন কোন গোষ্ঠী থাকবে, বিজেপিতে আপাতত চার থেকে পাঁচটা গোষ্ঠী, দু’জন থাকলে তিনজন থাকবেন না, এটা বিজেপিও জানে, মানুষও জানেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রতিদিন ঘটে চলা অসংখ্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই বিজেপির নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার নৈতিক অধিকার কি আছে? তাঁদের মুখে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটা কথাও কি মানায়? শুনুন মানুষজন প্রশ্নের উত্তরে কী বলেছেন।
একটা ধর্ষণ, হত্যা, খুন, মলেস্টেশন, একটা আত্মহত্যা আর তারপরেই সরকারের পদত্যাগের দাবি যাঁরা আগে করেছিলেন, তাঁরা ভাবুন, যাঁরা এখন করছেন তাঁরাও ভাবুন। কারণ এই সমাজে আর একটা ধর্ষণ বা গণধর্ষণ বা হত্যা ঘটতে খুব বেশি সময় তো লাগে না, জেনেই তো ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। মানে যেদিন তিলোত্তমা ধর্ষিতা হয়েছিলেন সেদিন থেকে আজ অবধি প্রতিদিনে গড়ে ৯০ জন করে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। এবং নিশ্চয়ই বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত মিডিয়া পর্যন্ত পৌঁছয়নি। কিন্তু তার মধ্যেও আরজি করের ধর্ষণ আর হত্যা এক অন্য মাত্রা নিয়েছে, তার বিচার হোক, অপরাধী শাস্তি পাক, কিন্তু আন্দোলনের নামে এই নৌটঙ্কি বন্ধ হোক এটাও চাইব।