সেই গঙ্গারামকে মনে আছে? উনিশটি বার ম্যাট্টিকে সে, ঘায়েল হ’য়ে থামল শেষে। কিন্তু আমাদের আজকের গঙ্গারাম এখনও ক্রিজে টিকে আছেন, তবে ওই, ওই টিকে থাকাই সার, টিকে থাকার জন্য, খুটখুট করেও রান না তুলে কেবল টিকে থাকার জন্য তো তাকে এতবড় জায়গাটা দেওয়া হয়নি, কাজেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব ভয়ঙ্কর বিরক্ত। হ্যাঁ, আমি আমাদের কাঁথির খোকাবাবু শুভেন্দু অধিকারীর কথাই বলছি। বছরখানেকেরও বেশি দলের ভেতরে থেকেই যোগাযোগ রেখে গেছেন দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে, আমাকে জেলে পাঠাবেন না, এই আর্তি সম্ভবত ছিলই কিন্তু তারচেয়েও বেশি প্রতিশ্রুতি ছিল। এটা অবশ্য আরএসএস বিজেপির ধারা মেনেই, ওনারা বিপদে পড়লেই মুচলেকা দেন, কেবল ক্ষমা চান না, কেবল জেল থেকে ছেড়ে দিন বা জেলে পুরবেন না বলে নাকি কান্না কাঁদেন না, তার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও দেন। তো এই টাচ মি নট খোকাবাবুও তেমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন, প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল দলটাকে আড়াআড়ি ভেঙে দেব। তো গোটাদুয়েক সিকি আধুলি নেতা আর কিছু ঝিঙ্কু মামণি ছাড়া পেয়েছিলেন এক চরম পাল্টিবাজ চোখে আঙুল দাদা রুদ্রনীলকে। সিপিএম-এর বুদ্ধবাবু পিতা সমান, তৃণমূলে মমতা মা, তারপরে বিজেপিতে জ্যাঠা কাকা ইত্যাদি, ওই ঝড়ের মধ্যে দল ইনট্যাক্ট রেখেই তৃণমূল কবজির জোর বুঝিয়েছিল। এরপরে অবকি বার ২০০ পার, তো উনি বলেছিলেন ওনার মহলে ২০০ না হোক ১২০ তো পাবই, বাকিরা তৈরি আছে, ভেঙে নেব। হল ৭৭, সেও হারাধনের ১০টা ছেলের মতো রোজ কমছে। কাজেই মার্কশিটে ১০০-তে ১২-১৩-র বেশি জুটছে না, একটা জেলা দখলে রাখার জন্য এর থেকে বেশি তো দেওয়া যায় না। সেটাই বিষয় আজকে, ডাহা ফেল শুভেন্দু অধিকারী। নেতৃত্ব বিরক্ত।
দল ভাঙতে পারেননি, কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন কংগ্রেসের সিফিলিস গনোরিয়া, দলের মধ্যে উপদলের খুব বাজে অসুখ। এসে ইস্তক দলের মধ্যে নিজের গ্রুপ তৈরি করতে গিয়ে বিজেপিকেই তিনভাগে ভেঙে ফেলেছেন। অ্যাট লিস্ট এটা এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতেই পারছেন। মুখে বলছেন যে উনি নির্বাচনে প্রার্থী ঠিক করেন না, কিন্তু মূলত ওনার আগ্রহে মেদিনীপুর থেকে কাঠিবাজি করে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে আনা হয়েছিল অগ্নিমিত্রা পলকে, পল পল দিল কে পাস, তিনি হেরে ভূত। ওদিকে এনেছিলেন এক বাচাল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে, তিনি এখন দলের কাছে বোঝা, কখন কী বলে ফেলবেন তাই নিয়েই দলের মধ্যে আশঙ্কা সবসময়।
আরও পড়ুন: অভয়ার আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার সরলেন, দায়ী ডাঃ কিঞ্জল নন্দ অ্যান্ড কোম্পানি
সুকান্ত মজুমদার মনে করেন আর একটু হলেই তাঁকেও হারানো হচ্ছিল, তিনি এখন তাঁর লোকজন নিয়ে নেমেছেন মাঠে তাঁরা হুইসপারিং ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে, শুভেন্দুকে সভাপতি করা হোক, হিসেবটা সোজা, উনি সভাপতি হলে ক্যাবিনেট র্যাঙ্কের বিরোধী দলনেতা পদটা যাবে। শুনলাম দিলীপ ঘোষও খুব আগ্রহ দেখিয়েছেন এমন এক ব্যবস্থায়, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করা রাজনীতির প্রথম পাঠ। শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিধানসভাতে ৭৭ জনকে নিয়ে অচল করে দেওয়া হোক বিধানসভার কাজকর্ম, দু’ এক দিন চেষ্টা করে সেখানেও হাল ছেড়েছেন, যে কেউ বলবে ওনার মধ্যে এক ভালো লেজিসলেচার হওয়ার প্রাথমিক যে গুণ, পড়াশুনো করা সেটা নেই, বরং শঙ্কর ঘোষ নাকি নজর কাড়ছেন। আর বিধানসভার বাইরে, আরজি কর ইস্যু দেখুন, এই শুভেন্দু অধিকারী ইস্যুটাকে নিয়ে গামছাতে মুড়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছেন বললেও কম বলা হয়, উনি বকলমে লড়তে গিয়ে নিজেই নাজেহাল হয়েছেন, দলের মুখ পুড়েছে। আন্দোলনের ভাটার সময়েও আবার লোক হাসালেন, মা-বাবাকে নিয়ে আসলেন বিধানসভায়, চোখের জল মোছালেন। পরের দিন সেই বাবা-মা জানালেন অমিত শাহ দেখা করছেন না, সিবিআই তদন্ত করছে না, খেল খতম পয়সা হজম। এসে গেল বাংলাদেশ ইস্যু, হাতে গরম এরকম ইস্যু মমতা পেলে রাজ্য ভাসিয়ে দিতেন, উনি ক’টা জায়গাতে কিছু মিছিল করলেন, মন খুলে তেমন কিছু বলতেও পারলেন না, কারণ ওনার আক্রমণের লক্ষ্য তো মমতা। যেখানে কেন্দ্র সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলছেন মমতা সেখানে এক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিসে তিনি রাজ্য সরকারকে দায়ী করে শেষমেশ নিজের বোধবুদ্ধির ভাণ্ডারটাকে হাট করে খুলে দিলেন পাবলিকের সামনে। এদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছিল এই ইস্যুতে আগুন জ্বলুক, ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী দিঘা আর জগন্নাথের মন্দির এনে ডজন গোল করে বেরিয়ে গেলেন। এখন ওই জগন্নাথ দেবের মন্দির নিয়ে একা একা আস্ফালন করা ছাড়া শুভেন্দুর কিছু করারও নেই। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, তৃণমূল দলকে ভাঙার জন্য, বিধানসভা অচল করে দেওয়ার জন্য, রাজ্যের প্রতিটা জেলায় আন্দোলন মিছিল সভা দিয়ে সারা রাজ্যে শক্তি জাহির করার জন্যই শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপিতে এতবড় জায়গা দেওয়া হয়েছিল, এখন দিল্লিতে বসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন শুভেন্দু বারুদ ছাড়া কার্তুজ, আপনারা কী মনে করেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
তৃণমূলের ছাতার তলাতে বসে, বরং বলা ভালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁচলের ছায়ায় বসে বিরাট সংগঠক, বিরাট নেতা, বিরাট প্রভাব আছে, এক ডাকে লক্ষ লোক জড়ো করার ক্ষমতা আছে এসব অনেকেই ভাবেন, কেউ কেউ বলেন, কিন্তু এনারা জানেন না ওই ছায়া সরে গেলে, ওই ছায়া তুলে নিয়ে সেই নেতার কী হবে। আজ শুভেন্দুকে দেখে সেটাই মনে হচ্ছে, আহারে বেচারা। তবে শুভেন্দুবাবু আপনাকে বলছি, মমতা সোমেন মিত্রকে দলে নিয়েছেন, সৌগত রায়কে, হালফিল বাস্তিল খ্যাত শুখেন্দুশেখর রায় কিংবা প্রবীর ঘোষালকেও দলে ফিরিয়েছেন, আপনি বরং সেইখানে একটা অ্যাপ্লিকেশন জমা করে রাখুন, দিদিমণির মনে একদা বিদ্রোহী, বিক্ষুব্ধদের জন্য একটু বেশি মায়াদয়া আছে, আমরা বারবার দেখেছি।