ক্রমশ হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনের রাশ, যেটুকু ছিটেফোঁটাও ছিল তাকিয়ে দেখুন সেটুকুও আর নেই বিজেপির হাতে। হয় কোট আনকোট এক অরাজনৈতিক মানুষজনদের হাতে, যাঁরা ঘোর বিজেপি বিরোধী, আর খানিকটা হলেও সিপিএম-এর হাতে. কারণ এখনও শহুরে মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তের মননে মগজে বাম ধারণাটা ওই সিপিএম-এর সঙ্গে মিশে আছে। এনারা গোঁসা করেই খানিক গিয়েছিলেন তৃণমূলে, খানিক বসে পড়েছিলেন ধুউউর সব শালা বাজে বলে, সেই তেনারা আজ রাস্তায় কেউ সরাসরি সিপিএম-এর ঝান্ডার তলায়, কেউ বা ওই অরাজনৈতিক ব্যানারের তলায়। এদিকে ন্যাশনাল বিজেপির সঙ্গে আমাদের রাজ্যের বিজেপির মূল তফাৎটা হল দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিজেপির এক বিরাট পরিকল্পনা সাজানোর টিম আছে। তাদের রিসার্চ অ্যান্ড প্ল্যানিং টিম, সেই তাদের পরিকল্পনার পরে তা এগজিকিউট করা হয়। আমাদের রাজ্যে সেই কবে থেকেই বিজেপি চলে কলোকিয়াল ভাষায় হুপ-এ, মানে হাওয়ায়, বাংলা বিজেপির নেতারা মনে করেন একটা হাওয়ায় ভেসে ভেসে তাঁরা ক্ষমতা দখল করবেন আর তার জন্য প্রতিটা নির্বাচনের আগে তাঁরা ফেক নিউজ, সাম্প্রদায়িক প্রচার, মন্ত্রীসান্ত্রী এনে, প্রচারে বিপুল টাকা ঢেলে একটা হাওয়া তৈরির চেষ্টা করেন। সংগঠন নেই, তাতে কী? ওনাদের ধারণা, ঠিকঠাক হাওয়া তুলতে পারলেই নবান্ন হাতের মুঠোয়। সমস্যা হল, না সেই হাওয়া উঠেছে, না ওরা ক্ষমতা দখলে সামান্য দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন। সেই বিজেপি আবার ভেবেছে এসে গিয়েছে গদি এক্কেবারে হাতের মুঠোয়, দলের উপরে ভরসা নেই, খুব ভালো করে জানেন ছাত্র যুবকরা ডাকলেও আসবে না, তাই অরাজনৈতিক ছাত্রসমাজের নাম করে মাঠে নামলেন, ব্যর্থ, বন্ধ ডাকলেন, ব্যর্থ। এখন মরিয়া বিজেপি বা বলা ভালো শুভেন্দু অধিকারী যাঁর আম ছালা দুটোই গেছে, তিনি এখন কাপালিকের মতো বলি চান, লাশ চাইছেন, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। লাশ চাই লাশ চাই? কাপালিক শুভেন্দুর?
শুভেন্দু বলেছেন যেরকমভাবে নেতাজি লড়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার লড়াই লড়তে হবে। ওই তুম মুঝে খুন দো ম্যায় তুমহে আজাদি দুঙ্গার মতোই বলেছেন কিছু কথা। এখন সো কল্ড অরাজনৈতিক সমাবেশে হক সে মাঙ্গো আজাদি, জোর সে বোলো আজাদি ইত্যাদি তো শুনেছি, কিন্তু আমাদের শুভেন্দুবাবুও কি সেই আজাদির চক্করে পড়েছেন? মানে দেশ চলছে বিজেপির নেতৃত্বে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আর তার এক অঙ্গরাজ্য বাংলা নাকি পরাধীন, তাই উনি স্বাধীনতার লড়াই লড়তে চান।
আরও পড়ুন: Aajke | এরা কারা? যারা গতকাল ঋতুপর্ণার গাড়ির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল?
এই শান্তিকুঞ্জের মূর্তিমান অশান্তিটি জানেন না যে আদত স্বাধীনতার যুদ্ধে ওনার আপাতত নেতাদের নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, জানেন না যে সুভাষচন্দ্র বসু সার্কুলার দিয়েই হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লিগের সদস্যদের কংগ্রেসের সদস্য হতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছিলেন। কাজেই হামাগুড়ি দিন, হুপ হুপ করুন, নবান্ন দখলে যান, টাচ মি নট বলে চেল্লান, প্লিজ স্বাধীনতার কথা মুখেও আনবেন না। ওই শব্দটা গোলামের দাসেদের মুখে মানায় না। এবং এসব উনি সত্যি করে চান নাকি? সেটাও নয়, এক কাপালিক ঘুরে বেড়াচ্ছে লাশের সন্ধানে, অমাবস্যার রাতে লাশের পিঠে বসে সে সর্বশক্তিমান হওয়ার সাধনা করছে। কোনও স্বাধীনতা ইত্যাদি বকওয়াস, স্রেফ লাশ চাই, যে কোনও মূল্যে। তার পরিকল্পনা চলছে। উসকানি দিয়ে লাঠি গুলি চালিয়ে একটা লাশ, কাপালিকের বড্ড দরকার। আমরা জানি, আর আমাদের মতো আম আদমি যখন জানি, তখন শুভেন্দুবাবু নিশ্চিন্তে থাকুন আপনার এই পরিকল্পনা দিদিমণিও জানেন, জানেন বলেই এই সংযম আমরা দেখছি। বিভিন্ন সরকার এর অর্ধেকের অর্ধেক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গুলি চালিয়ে দিয়েছে। এখানে এখনও চলেনি। হায় কাপালিক এখনও লাশ পায় নাই। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমরা মনে করি বিজেপি আর তাদের এই বাংলার নেতৃত্ব, শুভেন্দু অধিকারী একটা লাশের অপেক্ষায় আছেন, উসকানি দিচ্ছেন রোজ, একটা লাশ পেলেই এই আন্দোলনকে আরেকটা স্তরে নিয়ে যাওয়া যাবে বলেই তিনি মনে করেন। আপনাদের কী মতামত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এক নৃশংস ধর্ষণ আর হত্যা আজ এই বাংলার রাজনৈতিক মাঠের দখল নিয়েছে বা এরকমভাবেও বলা যায় যে এক রাজনীতি দখল নিয়েছে তিলোত্তমার লাশের। এমনটা নতুনও নয়। রাজনৈতিক দল তো লাশ গুলি রক্ত মাখা সিঁড়ি বেয়েই ক্ষমতায় বসে, আজই বা হঠাৎ তার ব্যত্যয় হবে কেন? কিন্তু এই ঘটনায় যে অসংখ্য সাধারণ মানুষ নেমেছেন পথে, তাঁদের পবিত্র ক্রোধ, তাঁদের পবিত্র প্রতিবাদ এই লাশ খুঁজে বেড়ানো তান্ত্রিকদের চিনে ফেলে, এবারেও চিনে ফেলেছে, বাংলার মাটিতে এই লাশ ঘাঁটা তান্ত্রিকদের জায়গা নেই।