প্রথমে এক অমানবিক সিদ্ধান্ত জানালেন কয়েকজন ডাক্তার, জানালেন বাংলাদেশিদের চিকিৎসা করব না, এটাই বললেন মুখে কিন্তু আদতে যে কথাটা বলতে চাইলেন তা হল বাংলাদেশি মুসলমানদের চিকিৎসা করব না। আমাদের সৌভাগ্য, বেশিরভাগ নামকরা ডাক্তার, সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশের চিকিৎসকদের সংগঠনের এদেশের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়ে দিলেন, এই কথা বলা মেডিক্যাল এথিক্স, চিকিৎসা নৈতিকতা বিরোধী, এরকম যাঁরা বলছেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে একমত নই। এবার খবর আসছে মালদা থেকে, সেখানে কিছু হোটেল মালিক বলেছেন আমরা কোনও বাংলাদেশিকে হোটেল ভাড়া দেব না, এই কথাও নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্যই বলা। কিন্তু এই সবের উৎস হল এক তীব্র মুসলমান বিরোধী প্রচার, যে প্রচার চালাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ওনার ওপার বাংলার হিন্দুদের নিয়ে এক ছটাকও মাথাব্যথা নেই। তিনি যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য কুমির কান্না কাঁদছেন তার আসল উদ্দেশ্য হল এ রাজ্যের হিন্দুদের চাগানো, এ রাজ্যের হিন্দুদের বলা, দেখো আমি হিন্দুদের জন্য কত চিন্তা করি। হুঙ্কার দিচ্ছেন এমন যে ওপার বাংলার একজন হিন্দুর গায়ে হাত পড়লে তিনিই কামান নিয়ে মাঠে নামবেন, কিন্তু সেই তিনিই খুব ভালো করে জানেন এটা দুই দেশের মধ্যে এক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়, যা কিছু করার তা ভারতবর্ষের ইউনিয়ন সরকার, মোদি-শাহ সরকারকেই করতে হবে। তো এই বিড়াল তপস্বী শুভেন্দুবাবু আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নিতে একটা কথাও বলেছেন? একটা চিঠিও পাঠিয়েছেন। আসলে তিনি এক তীব্র হিন্দুত্বের প্রচার চালিয়ে ভোট জড়ো করার কাজ করছেন। সেটাই বিষয় আজকে, শুভেন্দু বাংলায় আগুন লাগাতে চাইছেন।
শুভেন্দু আজ নয়, ২০২৪-এর ফলাফল বের হওয়ার পরে যখন দেখেছিলেন ১৮ থেকে কমে তাঁরা ১২ হয়েছেন এই বাংলায়, দুটো আসন কোনওক্রমে পেয়েছেন, না হলে ১০-এ ঠেকতেন, সেদিন বুঝেছিলেন এ রাজ্যের হিন্দুরা উন্মাদ নয়, তাঁর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির, তাঁর মুসলমান খেদাও রাজনীতির পক্ষে সায় দেয়নি। অবশ্যই ৩৩ শতাংশ মুসলমানদের বেশিরভাগ একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে, কিন্তু হিন্দুদেরও এক বিরাট অংশ মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রশ্নে। কাজেই ৪২-এ ১২ বিজেপি আর ২৯ তৃণমূল আর কংগ্রেস ১টা আসন পেয়েছিল। এটা বোঝার পরেই সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে প্রকাশ্যেই, কোনও লুকোছাপা না করে শুভেন্দু বলেছিলেন, আমাদের ওই ৩০ শতাংশ ভোট চাই না, ওদের ভোট চাই না, আমরা ৭০ শতাংশের ভোট চাই, হিন্দুদের ভোট চাই।
আরও পড়ুন: Aajke | মমতাই শেষ কথা
সেদিনই ওকে জেলে পোরা উচিত ছিল। আমাদের সংবিধান এরকম কথা বলার অধিকার দেয়নি, এ কথা বলার জন্য জেল হওয়া উচিত, কিন্তু তাঁকে জেলে পোরা হয়নি। এটাকে আরও বড় ইস্যু করে তুলবেন তিনি, বাংলাদেশের চিন্ময় মহারাজের মতো জেলে ঢুকে শহীদ হওয়ার চেষ্টাতে ছিলেন, সেই প্ল্যান খাটেনি, কেউ পাত্তাও দেয়নি। এখন তিনি সেটাই কাজে লাগাতে চাইছেন। ওপার বাংলার হিন্দুরা বাঁচল না মরল তা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর এক ছটাক মাথাব্যথা নেই। উনি ভাবছেন ওপার বাংলার সংখ্যাগুরু মুসলমান অত্যাচার চালাচ্ছে, এপার বাংলার হিন্দুরা এক হও বললে উনি এই রাজ্যের ৭০ শতাংশের হিন্দুদের পুরোটাই পেয়ে যাবেন এবং তারপরে তেনার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আটকায় কে? খোয়াব দেখছেন তিনি। এবং সঙ্গে পেয়েছেন কিছু মিডিয়া যাঁরা হয় টাকা পেয়েছে না হলে টাকা পাবে বলে আশ্বাস পেয়েছে। তারাও নেমেছে ধোঁয়া দেখে হাওয়া দিতে যাতে চড়চড় করে আগুন লেগে যায়। ওপার বাংলার হিন্দুদের প্রতিনিধি নন ওই ইসকন থেকে বিতাড়িত মহারাজ, তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। সে তো আজমল কাসভকে আমাদের দেশে ফাঁসি দেওয়ার বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানে বিক্ষোভ হয়েছিল, আমাদের দেশের পতাকাও পোড়ানো হয়েছিল। প্রতিটা দেশে ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকলে সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু দু’ দলের নির্দিষ্ট রাজনীতি থাকে। আমাদের দেশ ঘোষিতভাবেই সেকুলার, ধর্মনিরপেক্ষ। আমরা কী করতে পারি? আমরা মনে করলে প্রতিবাদ করতেই পারি, বাংলাদেশের মানুষজন তাঁদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। এগুলো তো স্বাভাবিক, কিন্তু শুভেন্দু যা করছেন তা হল ওপার বাংলার রাজনীতিকে টেনে, ওপার বাংলার উত্তাপকে হাতিয়ার করে এই বাংলায় তাঁর নিজের রুটি সেঁকে নেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি মনেপ্রাণে চাইছেন আরও কয়েকটা লাশ পড়ুক, সেই লাশের আগুনে আরও গনগনে আঁচে সেঁকে নেবেন তাঁর রুটি। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করছিলাম, দেশে বিজেপির সরকার আছে, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কাছে দাবিপত্র না রেখে বাংলাদেশের ঘটনায় মমতার বিরুদ্ধে কামান দাগছেন শুভেন্দু অধিকারী। এটা কি আসলে এই বাংলার হিন্দুদের খেপিয়ে হিন্দু ভোট জড়ো করার চেষ্টা? নাকি শুভেন্দু সত্যিই ওপার বাংলার হিন্দুদের জন্য চিন্তিত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বঙ্গ বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী ভারত বাংলা সীমান্তে সনাতনীদের ডাক দিয়েছিলেন, সেই সমাবেশে গরম গরম বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। একবারও বলেননি যে প্রধানমন্ত্রী মুখে তালা মেরে বসে আছেন কেন? ওনার অবশ্য আগুন লাগলেই মুখে তালা দেওয়ার ইতিহাস খুব পুরনো। গুজরাটে আগুন জ্বলছিল, উনি চুপ করে বসে দেখছিলেন, মণিপুরে আগুন জ্বলছে, নারীদের ধর্ষণ করে নগ্ন করে প্যারেড করানো হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ওনার মুখে তালা, এখনও তাই, কাজেই সেটা নতুন কিছু নয়। যেটা নতুন তা হল সনাতনীদের সভার শেষে ১০ হাজার প্যাকেট বিরিয়ানি দেওয়া হয়েছে। ওদিকে কেবল রেস্তরাঁতে মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে যোগীর উত্তরপ্রদেশে দোকান ভেঙে, মালিককে পিটিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে, অন্য দোকানের উপরে দোকানদারদের নাম লিখে দিতে বলা হয়েছে যাতে বোঝা যায় যে দোকানদার হিন্দু না মুসলমান? এখন প্রশ্ন হল এই ১০ হাজার বিরিয়ানির প্যাকেট তো একটা দোকান থেকে আসেনি, তাদের কে কোন ধর্মের তা কি যাঁরা খেয়েছেন তাঁদের জানানো হয়েছে? না এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।