যে ছাত্র আন্দোলনকে আমাদের রাজ্যের মহামহিম রাজ্যপাল গণতান্ত্রিক আন্দোলন বললেন, যে আন্দোলনে জলকামান আর টিয়ার গ্যাস ছড়ানো হয়েছে বলে উনি রাজভবনে বসেই কাঁদলেন, যে ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানকে সমর্থন করলেন আমাদের রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কাঁথির খোকাবাবু, সেই ছাত্র আন্দোলনের অডিও ফাঁস হয়েছে। রাজ্যের মানুষ জানতে পেরেছেন, এই ছাত্রসমাজের ডাকা নবান্ন অভিযান আসলে কিছু লুম্পেনদের ডাকা এক নৈরাজ্যবাদী চক্রান্ত ছিল। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, ওসব নবান্ন গিয়ে কোনও লাভ নেই, বরং কালীঘাটে চলো, সেখানে ভাঙচুর করলেই মানুষ বেরিয়ে আসবে। রীতিমতো গ্রুপ তৈরি করে কিছু ছেলেমেয়ে এই কাজে নেমেছিল। ভাবার কোনও কারণ নেই যে এটা তাদের কাঁচা মাথার কাজ, এর পিছনে পাকা মাথারাও আছে, যারা শিখিয়েছে যা ভাঙচুর কর আর মনে মনে ভেবেছে গেলেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙচুর করলেই গুলি চলবে, লাশ পড়বে। ব্যস, এরপরে তো আর কোনও সমস্যাই নেই, রাজভবনে পদ্মপাল তো বসেই আছেন, ৩৬৫ ধারা জারি হবে, কেবল আরজি কর নয়, রাজ্যের রাস্তাঘাট দখলে নেবে সিআরপিএফ, চাই কি মিলিটারি। তারপর সময় সুযোগ বুঝে অপারেশন লোটাস, ভোটে হেরেও অনায়াসে সরকার তৈরি করা যায় তার সবথেকে বড় উদাহরণ তো বিজেপি, তারা সেদিকেই তাকিয়েছিল। সমস্যা হল তা পুলিশের নজরে এসেছে, জড়িত সন্দেহে বেশ কিছু গ্রেফতারি হয়েছে, এবং সাভারকরের দল, কাজেই লক আপে ঢোকার আগেই যা জানে সব বলেও দিয়েছে, এবারের মতো ছেড়ে দিন, আর করব না, থানা থেকে বেরিয়ে তৃণমূলই করব, এরকম কথাবার্তাও নাকি বলেছে। সঠিক জানি না তবে এরকম বলাটা তো বিজেপির জিন-এ আছে, যারা ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পায়, যারা বিপ্লবীদের ধরিয়ে দেওয়ার শর্তে জেলের বাইরে থাকে, তাদের উত্তরসূরিরা এটুকু তো করবেই। আর সেটাই বিষয় আজকে, মমতা ব্যানার্জির বাড়ি ভাঙচুর করো, এটাই দাবি?
কাল অভিষেক ওই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জনসভায় একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সেই ২০১৬ থেকে বিজেপি ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে, তারপরে পঞ্চায়েতে হেরেছে, মিউনিসিপালিটিতে হেরেছে, কর্পোরেশনে হেরেছে, বিধানসভাতে ২০১৬-তে, ২০২১-এ হেরেছে, লোকসভায় ২০২৪-এ মুখ পুড়েছে, উপনির্বাচনে হেরেছে, এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা বুঝে ফেলেছে যে সোজা রাস্তায় চললে এই বাংলার মানুষ তাদের ক্ষমতায় আনবে না।
আরও পড়ুন: Aajke | রাজ্যপাল শুভেন্দুর ভাষায় কথা বলছেন
কারণ অনেক, সবচেয়ে বড় কারণ হল তারা সাম্প্রদায়িক, যে সাম্প্রদায়িকতা বাংলার জেনেটিকস-এ নেই। আমাদের মাটি রবি-নজরুলের, আমাদের মাটি লালন-চৈতন্যের, আমাদের মাটি সুভাষ বসু, ক্ষুদিরামের, এখানে সাম্প্রদায়িকতা কল্কে কোনওদিনও পায়নি। এই নেতাজিই কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন সার্কুলার দিয়ে ওই হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লিগের সদস্যরা কংগ্রেসের সদস্য হতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আর বিজেপির দ্বিতীয় সমস্যা হল তারা বাঙালি নয়, এখনও তাঁদের নেতারা আসেন আসনপিড়ি পেতে রুটি আর আলু পোস্ত খেয়ে বলেন বাঙালি খানা খুব বালু আছে। এখনও তাদের কর্মীরা কর্মী নন, কারিয়াকর্তা। আর এই দুই সমস্যা তাঁরা মেটাবেন, তা তাঁদের সাধ্যে কুলোবে না। যার ফলে তাঁরা বাংলার মানুষের কাছে কল্কে পাচ্ছেন না, আর তা না পেতে, না পেতে, না পেতে চূড়ান্ত হতাশ। সেই হতাশ লোকজনেরা এখন যেন তেন প্রকারেণ গদিতে বসতে চায়। আর তার জন্য যা খুশি করতেও তারা রাজি। সব বাজি রেখে মুখ্যমন্ত্রী হতে বিজেপিতে এসেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, এখন হাতে পেনসিল, কাজেই হতাশ। সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ এই ছাত্রসমাজের নবান্ন অভিযান, তারই বহিঃপ্রকাশ এই ছেলেগুলো, যারা সেই নবান্ন অভিযানের আড়ালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঘরদোর ভাঙচুর করতে চায়। তারা তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম দিয়েছে উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ভাবা যায়? এমন বহু মানুষজনকে আমি জানি যাঁরা তৃণমূল করেন, কিন্তু তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে, বিচার চাই শাস্তি চাই বলে, কিন্তু তাঁরা কি মমতার পদত্যাগ চান? নবান্ন অভিযান চান? কালীঘাটের বাড়ি ভাঙচুর করতে চান? বহু মানুষ আছেন যাঁরা তৃণমূলও নন, বামপন্থী, তাঁরাও পথে নেমেছেন উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে, তাঁদের একজনও কি এই নৈরাজ্যবাদকে সমর্থন করবেন? একজনও নয়। কিন্তু এই জাস্টিস চাইয়ের আড়ালে এটাই আসল গেমপ্ল্যান, আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, উই ওয়ান্ট জাস্টিসের নামে, ছাত্রসমাজের নবান্ন অভিযানের আড়ালে এক চক্রান্ত করা হয়েছিল কালীঘাটে মমতা ব্যানার্জির বাড়ি ভাঙচুরের, এটা কি এই ন্যায় বিচারের, শাস্তির দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তাকেই পিছিয়ে দেবে না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
একটা নাগরিক কণ্ঠস্বরকে হাইজ্যাক করে গদিতে বসার উদগ্র ইচ্ছে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী এই ছাত্রসমাজের নামে নবান্ন অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন। নামহীন গোত্রহীন এই সংগঠনে ঢুকে পড়েছে লুম্পেনরা। আজ একজন ধর্ষিতা নারীর বিচার চাওয়ার জন্য, নিজের কর্মস্থলে নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়ার বিচারের দাবিতে আন্দোলন এক পুলিশের চোখ কেড়ে নিল, সম্ভবত সে আর একটা চোখে দেখতেই পাবে না এই জীবনে, এর বিচার কে করবে? কারা চায় এই অশান্তি তৈরি করতে? সেটা বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কামড়াতে বলছি না, ফোঁস তো করাই যায়। হ্যাঁ, রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।