ইস্পাতের বিজ্ঞাপন, ডু নট ডিস্টার্ব ইত্যাদি হয়ে গেছে, এবারে আবার মিডিয়ার সামনে মুখোমুখি কিঞ্জল নন্দ, ডাঃ কিঞ্জল নন্দ। ওদিকে ডাঃ অনিকেত মাহাতোর আদত সংগঠন জানিয়েই দিয়েছে যে তারা সিপিএম-এর সঙ্গে নেই। ডাঃ দেবাশিস হালদারও বাকি সব সামলে এতদিন পরে মিডিয়ার মুখোমুখি। কিছুদিন আগেই রাজ্যে ৬টা উপনির্বাচন হয়ে গেছে, সেখানে ৬টা আসনেই জিতেছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। তো স্বাভাবিক প্রশ্ন তো উঠবেই এই যে এত দ্রোহের কার্নিভাল, দ্রোহের ফেস্টিভাল, দ্রোহের আগুন, তার উত্তাপ কেন লাগল না জনগণের গায়ে? তাঁরা কি আদত নৌটঙ্কিটা ধরে ফেলেছেন? বুঝে ফেলেছেন? তো তখন ওনারা বলেছিলেন, আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব। এটা বাম ধারার খুব পুরনো ব্যাপার, কোনও সিদ্ধান্ত জানানোর আগে লম্বা লম্বা বৈঠক হবে তারপরে ওই ইটের পাঁজায় বসে রাজা মুঠো মুঠো বাদামভাজা খাচ্ছে, কিন্তু গিলছে না-র মতো এক কিম্ভূতকিমাকার সিদ্ধান্ত জানানো হবে, যা সাধারণের মাথায় ঢুকবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যিনি বলছেন, মানে জানাচ্ছেন, তাঁর মাথাতেও ঢোকেনি। ধরুন ঠিক কোন কোন কারণে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ভোগে চলে গেল তা নিয়ে কি একটা সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন দেশের হাজার হাজার কমিউনিস্ট পার্টিগুলো, আর যদি দিয়েও থাকেন তা আপনার বোধগম্য হয়েছে? হয়নি। ঠিক সেই রকম ওনারাও জানিয়েছিলেন, ওই জিবি না কি যেন, সেসব হয়ে গেলে জানাবেন। ৯ হাজার জুনিয়র ডাক্তারদের জিবি হয় ওই মেরেকেটে ৬০ জনে, সেটাই জেনারেল বডি, তো সম্ভবত তেমন এক জিবি মিটিংয়ের পরে তাঁরা জানিয়েছেন, ওসব রাজনীতিতে তাঁরা নেই, ওসবের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। এর পরের প্রশ্ন ছিল তাঁদের তহবিলের ব্যাপারে, নয় নয় করে ৫ কোটি টাকা, অত টাকা হবে কি? তো ওনারা জানিয়েছেন চোরেদের প্রশ্নের জবাব ওনারা দেবেন না। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের এই উত্তর নিয়ে বহু আলোচনার অবকাশ থেকেই গেল, সেটাই বিষয় আজকে, ডাক্তারবাবুরা ৫ কোটি টাকার হিসেব দেবেন না।
সাংবাদিকদের সামনে জানিয়েছেন, ওনারা তো এই সরকার, নির্বাচন, দলীয় রাজনীতিতে নেই, কাজেই ওই উপনির্বাচনে যা হয়েছে তা নিয়ে ওনাদের কিছু বলারও নেই। আচ্ছা এঁরা কোন গ্রহের বাসিন্দা? রাজ্যের মানুষকে বললেন প্রতিবাদ করুন, মানুষকে বললেন দ্রোহের, বিদ্রোহের আগুন জ্বালান, মানুষকে বললেন এক ভয়ঙ্কর অন্যায়কে লুকোতে চাইছে এই সরকার পুলিশ প্রশাসন। সেই মানুষ যদি আপনাদের বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করত তাহলে ওই সরকারকে, যাদের দিকে আঙুল তুলে আপনারা ধর্ষণ আর খুনের অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁদের ভোট দিত? যাদের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বালাতে বললেন তাদের আবার পুনঃনির্বাচিত করত? না করত না, এটা শিশুও জানে।
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দু বাংলায় আগুন লাগাতে চাইছেন
ওই অভয়ার বাড়ি থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে এক শহরতলি নৈহাটিতে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে, কেন? কেন আপনাদের প্রতিবাদের সামান্যতম প্রভাব সেখানকার মানুষের ওপরে পড়ল না? পড়ল না কারণ মানুষ আপনাদের এই নৌটঙ্কি ধরে ফেলেছে। মাত্র একদিন আগে রাজ্যজুড়ে ইডির তল্লাশি হল, অন্তত ৫০০ জন ডাক্তার ছাত্র কেপিসি কলেজের, হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের, শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের, তাদের রাডারের নীচে পাওয়া গেছে বহু জাল নথি যা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন অনেকে। একটা কথা? একটা উচ্চারণ করেছে এই ডাক্তারদের সংগঠন? সাগর দত্ত হাসপাতালে এক রোগীর মারা যাওয়ার জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে তাঁদের সংগঠনের একজন ডাক্তারকে, ওনারা একটা কথাও বলেছেন? কর্মবিরতির আড়ালে অনায়াসে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করে কোটি কোটি টাকার বিল পাশ করিয়েছেন এই ডাক্তারেরা, কেবল অনৈতিক নয়, তা বেআইনি। একটা কথাও বলেছেন এই বিপ্লবী ডাঃ কিঞ্জল নন্দ? তিনি ব্যস্ত তাঁর সিরিয়াল আর সিনেমার প্রচারে, মধ্যে ইস্পাতের রডের বিজ্ঞাপন নিয়ে। যাঁরা রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের মেরুদণ্ড দিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের নিজেদের মেরুদণ্ড যে সোজা নেই তা মানুষ বুঝেছে আর বুঝেছে বলেই উল্টো চাপে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে। আর সেটা স্বীকার করার মতো সৎসাহসও এই ডাক্তারবাবুদের নেই। প্রশ্ন উঠেছিল এই যে কোটি পাঁচেক টাকা আন্দোলনের ফান্ডে জমা হয়েছে তার হিসেব কই? ঠিক যেমনভাবে ওই আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের প্রতিটা দুর্নীতির জবাব মানুষ চায়, তেমনই আন্দোলনের তহবিলে ৫ কোটি টাকা থাকলে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে, উঠেছে। তো ওনাদের জবাব হল, সাধারণ মানুষ চাইলে হিসেব দেব। কীভাবে চাইবে? লাইন দিয়ে এসে সাধারণ মানুষ আরজি করের সামনে দাঁড়াবে? কীভাবে? সাধারণ মানুষের আড়ালে কোন কীর্তিকে লুকোনোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা? আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে এই প্রশ্ন রেখেছিলাম, এই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলাকালীন কমবেশি ৫ কোটি টাকা চাঁদা উঠেছিল, এ ছিল বহু মানুষের আন্দোলন, আপনাদের কি মনে হয় না যে এই তহবিলের একটা পরিষ্কার হিসেব দেওয়া উচিত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
শিয়ালদহ আদালতে বিচার চলছে, বহু তথ্য সামনে আসছে, আরও আসবে। এখন আরও পরিষ্কার হচ্ছে যে এই ডাক্তারবাবুরা বহু মিথ্যের কথা জানতেন, কেবল মুখ বন্ধ রেখেই সেই সব মিথ্যেকে বাড়তে, ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেই সব মিথ্যে আজ না হয় কাল আমাদের সামনে আসবে। সেদিন এই ডাক্তার বিপ্লবীদের মানুষের কাছে জবাব দিতে হবে, পাই পয়সার হিসেবও দিতেই হবে।