তখন সে কী চোখমুখ, হদ্দমুদ্দ করেই ছাড়বে, রাস্তায় থেকেই ছিনিয়ে আনব বিচার। যত বলি ও স্যর, ও ম্যাডাম আমাদের দেশ তো আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয়, এখানে রাস্তায় বিচার হয় না, আদালতে হয়। কে শোনে কার কথা, দেড়শো গ্রাম বীর্যের তেজে, পেলভিক বোন আর কলার বোন ভাঙার প্রতিবাদে গলা চিরে স্লোগান দিচ্ছেন। মিথ্যের পর মিথ্যে বলেই চলেছেন, ফেসবুকে পোস্ট করছেন, এমনিতে ১৩খানা লাইক পড়ত, তা বেড়ে ১৩০। অনলাইনে পুজোর ঝক্কাস সব মিনি মিডি টি-শার্ট, দ্রোহের আলোয় চল ভেসে যাই লেখা কুর্তা কেনা হয়েছে, এবারে পুজোয় এটাই ছিল ট্রেন্ড, তৃণমূল বাড়ির মামণির টি-শার্টেও লেখা শেষ দেখে ছাড়ব, পাশে মোমবাতি। উৎসব বয়কটের স্লোগানের পরেও মানুষের ঢল পুজোর প্যান্ডেলে, মিডিয়ার শত চেষ্টার পরেও উৎসব আর শবদেহের ফারাকটা মানুষ নিজেই করে রেখেছে। অতএব সেই রাস্তা থেকে ছিনিয়ে আনব প্রতিবাদীরা মন বহলানেকে লিয়ে একটু পাটায়া, কেউ গোয়া, কেউ আলামাটিতে চলে গেলেন, সেখানে সমুদ্র কী গভীর নীল বা রোদ্দুর কী পরম উজ্জ্বল। এবং খরচ করে বেড়াতে এসে সেসব ছবি ফেবুতে না দিলেই নয়, দিলেনও, কেউ কেউ সেই ষাঁড় যাঁরা লজ্জা পান, ষাঁড়ে পেয়েছে লজ্জা, ফেসবুকে দিলেন না, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালেন, ভ্রমণ ছবি। রাজ্যের লোক শবসাধনা করবে, ওনারা উৎসবে থাকবেন, এটাই তো রেওয়াজ, আজ থেকে নয়, সেই কবে থেকেই। সেই সেলিব্রিটিরা মিলে মিশে একটা ন্যারেটিভ মন দিয়েই তৈরি করেছেন, বা বলা ভালো এক তৈরি করা ন্যারেটিভকে বাজারে চালিয়েছেন, সঞ্জয় রায় আসলে দোষীই নয়, খুন ধর্ষণের পরেই তো ওকে ষড়যন্ত্র করে ওই ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে পাকা মাথা, তাদের লিস্টে বহু নামের মধ্যে স্পষ্ট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেই, তবে সে তো পিঠ বাঁচাতে। সেই ন্যারেটিভ লুফে নিয়েছে সঞ্জয় রায় নিজেও, চিৎকার করে জানিয়েছে আমাকে ফাঁসিয়েছে বিনীত গোয়েল। এবং তার মুখনিসৃত বাণীকে বেদবাক্য ধরেই আরেক অভিযুক্ত মলেস্টার, আমাদের কালো চশমা রাজ্যপাল জানতে চেয়েছেন, উসনে সহি বোলা কেয়া? ওই অভিযুক্ত ধর্ষক খুনি যা বলছে তা কি সত্যি? তো এমন সরল শিশুসুলভ জিজ্ঞাসা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, তাই সেটাই বিষয় আজকে, চরম পাল্টিবাজ প্রতিবাদীদের দলেই নাম লেখালেন কালো চশমা রাজ্যপাল।
সব্বাই জানেন সেলিব্রিটিদের রকম সকম আছে, সত্যি সত্যি সেলিব্রিটি, তাঁরা তাকিয়ে থাকেন বড় মিডিয়া হাউসের দিকে, কোন দিকে জল গড়াইতেছে? অবশ্য তা বোঝাবার জন্য সেলিব্রিটি সাংবাদিকও আছে, তাঁদের ফোন করে বোঝার চেষ্টা করেন, খবর দিয়ে পারসোনাল মেক আপ ম্যান বা ওম্যানকে দিয়ে একটা বেশ শোক শোক মেকাপ নিয়ে, হাজির হন, আগে থেকেই অপেক্ষা করেন ফোটগ্রাফার, ফটো তোলা শেষ, দ্রোহ শেষ। আর তেমন সাড়া না পেলে ঘরে বসে জল মাপা।
আরও পড়ুন: Aajke | রোগী মরল, চিকিৎসা পেল না, জুনিয়র ডাক্তাররা টাকা কামালেন
এমন সেলিব্রিটির সংখ্যা ভারি কম, কারণ তাঁদের হাজারো ব্যস্ততা। দ্বিতীয় স্তরের সেলিব্রিটিদের নিশ্চিত নিজেদের এজেন্ডা আছে, নিজেদের শিল্পকর্মের প্রচার নিয়েই তাঁরা নামেন, নেমেছেন, প্রচার হয়েছে, আপন কুলায় ফিরে গেছেন। শেষ পর্যায়ের সেলিব্রিটিরা ঝাঁকে থাকেন, যতক্ষণ কাজ নেই ততক্ষণ রাস্তায় থাকেন, থেকেছেন। মধ্যে বেড়ানো, ঘোরা, ফুর্তি, তারপর আবার দ্রোহের আগুন জ্বালো, তারপর আবার কাজে মনযোগ। এবং সব পাখি ঘরে ফেরার পরে রাস্তায় পড়ে থাকেন কিছু সত্যিই আবেগী মানুষ, সত্যিই জেনে বা না জেনেই প্রতিবাদের জন্যই প্রতিবাদে নেমেছিলেন, তাঁরা দেখেন ভিড় কমতে কমতে সতরঞ্চিওয়ালা, হতাশ হন, বাড়ি ফেরেন, পরের প্রতিবাদে আর শামিল হন না, তখন ওই তিন দলের সেলিব্রিটিদের দেখে নতুন মুরগি, কোঁকর কোঁ, রাস্তায় হাজির, হাতে মোবাইল, একটা সেলফিতে যদি আধখানা সেলিব্রিটি শিকার করা যায়। কিন্তু এই সবই ছিল আসলে ওই ন্যারেটিভকে বাজারে চালানোর এক গ্র্যান্ড প্ল্যানিং। আসলে এই সরকার এই ধর্ষণ আর খুনের জন্য দায়ী, এই সরকারের পদত্যাগ চাই, দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। অফিসিয়াল বাম, উগ্রবাম, লিবারেল বাম, দক্ষিণপন্থী থেকে উগ্র দক্ষিণপন্থী প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে সহমত ছিলেন। যে দেশে প্রতি ৮-৯ মিনিটে একটা করে ধর্ষণ হয়, দেশ জুড়েই হয়, সেই দেশে একটা খুন আর ধর্ষণের জন্য কোন পদ্ধতিতে কোনও বিচারের আগেই এক সরকার আর তার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের স্লোগান দেওয়া যায় তা বোধের মধ্যে আসে না যতক্ষণ না এই গ্র্যান্ড প্ল্যানের পুরোটা বোঝা যাচ্ছে। আসলে এই অপরাধীকে আড়াল করার পিছনে এক রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে, মহামান্য রাজ্যপালের গতকালের বক্তব্যে তা পরিষ্কার। নিজে এক নয়, দু’ দুটো মলেস্টেশনের ঘটনায় অভিযুক্ত, তিনি এই যে খুন ধর্ষণে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় আসলে তাকে ফাঁসানো হয়েছে এবং তার পেছনে বিনীত গোয়েল আছে বলে যে দাবি করছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। একেই সম্ভবত আমাদের বাংলা প্রবাদবাক্যে সুঁড়ির সাক্ষী মাতাল বলে। তো আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, একজন নারী নিগ্রহে অভিযুক্ত রাজ্যপাল অন্য আর এক ধর্ষণ খুনে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের তাকে ফাঁসানো হয়েছে দাবির ব্যাখ্যা চেয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে। আপনারা কী বলছেন?
আসলে এই ধর্ষণ আর খুনের ঠিক আগেই এক চরম অগণতান্ত্রিক শক্তি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল করেছে বাংলাদেশে। বারবার মানুষের রায়ে প্রত্যাখ্যাত সরকারি বাম আর বিজেপি ধরে নিল, ওই পথেই ক্ষমতা দখল হবে, প্রতিবার হ্যাটা হতে থাকা নারী নিগ্রহে অভিযুক্ত কালো চশমা রাজ্যপালও ধরে নিলেন এই পথেই তিনিও মুক্তি পাবেন, তাই সব শকুনের মতো এক ধর্ষিতা নারীর মৃতদেহকে ঘিরে গোল হয়ে ঘুরছেন। কেবল মনেই নেই, একজন মানুষকে বহুদিনের জন্য বোকা বানানো যায়, কিছু মানুষকে অনেক দিনের জন্য বোকা বানানো যায়, কিন্তু বহু বহু মানুষকে বোকা বানানো অত সহজ নয়, মানুষ সত্যিটা ধরে ফেলেছে।