সিপিএম নাকি ঘুরে দাঁড়াবে, আর তাই যুবশক্তিকে নিয়ে আসা হবে সামনে, সেই যুবক আর তরুণেরা হাল ধরবেন দলের, দলে আবার নতুন রক্ত সঞ্চালন হবে, দল ঘুরে দাঁড়াবে। ৪৭-এর পর থেকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা ইস্যুগুলো দেখুন। সেই ৫২-তে যা ছিল এখনও তাই, সেই একই স্লোগান, রোটি কপড়া আউর মকান, মাঙ্গ রহা হ্যায় হিন্দুস্থান। ৫২ আর ২০২৪-এ ফারাক হল সেদিন এই স্লোগানে কংগ্রেস ছিল সামনের মুখ, ২০২৪-এ বিজেপি। ঠিক সেইরকম সেই ২০১১-তে হারার পর থেকে শুনেই আসছি সিপিএম ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সে ঘোরা আর শেষ হচ্ছে না, ঘুরেফিরে সিপিএম ঠিক একই জায়গাতে এসে দাঁড়াচ্ছে। তার মূল কারণ হল দল ঠিক কী চায়, দলের জানা নেই। সিপিএম বিপ্লব চায়? রামগরুড়ের ছানারা ঠিক এই কথা শুনেই অট্টহাস্যে ফেটে পড়েছিল। সিপিএম-এর নেতৃত্ব স্থানীয় একজনও বিশ্বাসই করেন না সেটা। কিন্তু কর্মসূচি খুলুন, সেখানে জ্বলজ্বল করছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা। বিপ্লব ছেড়ে দিন, আপাতত এদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে সিপিএম-এর বন্ধু কারা? শত্রুই বা কারা? সে ক্ষণে ক্ষণে বদলে গেছে, প্রতি নির্বাচনে সেই বন্ধু শত্রুর আলাদা আলাদা চেহারা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একবার কংগ্রেসের দেশকে বেচে দেওয়ার বিরুদ্ধে, গ্লোবালাইজেশনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে রুখতে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এক সরকার চালানো। আবার কিছুদিন পরেই বিজেপিকে আটকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইউপিএ সরকার চালানো। আর এখন, যেযেসেতে, যেখানে যেমন, সেখানে তেমন। এবং সেই সিপিএম-এও নাকি বিরাট গোষ্ঠীকোন্দল। সেটাই আজকের বিষয় আজকে। গ্যাংটকে নয়, সিপিএমে গন্ডগোল।
ধনেপাতার ক্যাশমেমোর বা অন্তর্বাসের বুক পকেটের মতোই এক আজব ব্যাপার হল সিপিএম-এর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। খবরটা আসার পরে মাথায় যে প্রথম প্রশ্নটা আসে তা হল, আছে ক’জন যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হবে? তারপরেই মনে পড়ে বালি আর সুগ্রীব তো দুই ভাই, তাতে কি লড়াই হয়নি। মানে দু’জন থাকলেও গোষ্ঠী হওয়া সম্ভব। সেরকম দুই গোষ্ঠী আছে দক্ষিণ ২৪ পরগণাতে। সুজন গোষ্ঠী আর শমীক গোষ্ঠী। তো তাদের মধ্যে ধুন্ধুমার। এবং এক অভূতপূর্ব ব্যাপার ঘটে গেছে।
আরও পড়ুন: Aajke | গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার লকেট, বললেন গোখরো সাপ মিঠুন চক্কোত্তি
দক্ষিণ ২৪ পরগণার সম্মেলন, শুরুই হল প্রকাশ্য সমাবেশ দিয়ে, সে বিরাট বক্তৃতা। ওদিকে জেলা কমিটি নিয়ে লড়াই এমন পর্যায়ে গেল যে একদা বাঘ ও বকরিকে এক ঘাটে দুধ খাওয়াতেন যিনি সেই খোকন দস্তিদার, কান্তি গাঙ্গুলির পুত্র সাম্য গাঙ্গুলি, সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী থেকে ভায়রাভাই রাহুল ঘোষ সমেত ১৮ জন সুজন ঘনিষ্ঠ জেলা সম্মেলনের প্যানেল ছেড়ে বেরিয়ে এলেন, কাজেই শমীক গোষ্ঠীর জয় জয়কার। কিন্তু জিতে হবে কী? দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ৪টে আসনের একটাতেও তো সিপিএম তাদের জামানতই ধরে রাখতে পারেনি। অথচ মাথায় রাখুন এই দক্ষিণ ২৪ পরগণাতেই হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের সবথেকে বড় লড়াইগুলো, সেই কাকদ্বীপের অহল্যা মা। এই দক্ষিণ ২৪ পরগণাতে সেই কবে আত্মগোপন করে থাকা নেতা কংসারী হালদার নির্বাচনে জিতেছিলেন, এই দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাংসদ জ্যোতির্ময় দত্ত সংসদে বলতে উঠলে সরকার পক্ষের হাড় হিম হয়ে যেত। এই দক্ষিণ ২৪ পরগণাতে ১৫ বছর আগেও কান্তি গাঙ্গুলি ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যেত না, সেই দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে সিপিএম-এর কী করুণ পরিসমাপ্তি। এবং সেই প্রায় নিশ্চিহ্ন সংগঠনেও শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই চলছে। বিপদ কি একটা? এই লড়াই ছড়িয়ে পড়ছে জেলায় জেলায়, উত্তর ২৪ পরগণাতে নাকি তুর্কি নাচ হবে, ঘনিষ্ঠ মহলে এই কথা নাকি বলেছেন তন্ময় ভট্টাচার্য। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সবকটা লোকসভা আসন, বিধানসভা আসনে জামানত খোয়ানো সিপিএম -এর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখনও চলছে, উত্তর চব্বিশ পরগণা থেকেও নাকি একই খবর আসছে। সিপিএম দলটা কি আদৌ ঘুরে দাঁড়াবে? নাকি এবার উঠেই যাবে? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।
একটা দল যারা ১৫ বছর আগে ৪০ শতাংশ মানুষের ভোট পেত, তারা এখন ৬ শতাংশ মানুষের সমর্থনও পায় না, অথচ তারা নাকি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, মার্কসবাদী পথে রাজনীতির চর্চা করে। আসলে মাটির সঙ্গে সম্পর্কবিহীন এক রাজনৈতিক দলের ঝান্ডার রং কী? প্রতীক চিহ্ন কী? মতবাদ কী? তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। আসল কথা হল মানুষ, আম জনতা, গরিব নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষ, তাদের রোজকার ইস্যু, তাদের সমস্যা, তাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা, তাদের হাসি কান্না, তাদের আনন্দ দুঃখ, এর কোনওটার সঙ্গেই যোগাযোগ না থাকার ফলেই এক নিরালম্ব বায়বীয় আকার নিয়ে চলছে সিপিএম, যার পুনরুত্থান, রেজারেকশন অসম্ভব।