আরও নৃশংস ধর্ষণ আর খুনের ঘটনা ঘটেছিল ৪ অক্টোবর, জয়নগরের মহিষমারিতে। এক নাবালিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। কিছুদিন আগেই ঘটেছে আরজি করের ঘটনা, তার রেশ ধরেই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা, ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ডাঃ কিঞ্জল নন্দ বা ডাঃ অনিকেত মাহাতোরা না গিয়ে পৌঁছলেও সেখানেও যান কিছু রাতজাগা পার্টি, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগানো হয়, ভিডিওতে দেখেছি আমরা পুলিশ প্রাণ বাঁচাতে দৌড়চ্ছে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি অবস্থা আয়ত্তে আনে পুলিশ প্রশাসন। ক’দিনের মধ্যেই মুস্তাকিন সর্দারকে প্রধান এবং একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজশ আছে ইত্যাদি কথাও শুনেছিলাম আমরা। তদন্তে বহু প্রমাণ আসে, তার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ ছিল যেখানে ওই অভিযুক্ত মেয়েটিকে সাইকেলে নিয়ে যাচ্ছে, যার পরে মেয়েটির আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এরপরে ঘটনাস্থল থেকে যা যা পাওয়া যায় তার ফরেনসিক টেস্টের পরে, ডিএনএ ম্যাচ করানোর পরে এবং ছেলেটির মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ইত্যাদি পাওয়ার পরে সেই সব প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার ২৫ দিনের মধ্যে রাজ্য পুলিশ চার্জশিট পেশ করে, শুনানি শুরু হয় ৫ নভেম্বরে এবং গত বৃহস্পতিবার ৬২ দিনের মাথায় নিম্ন আদালত ছেলেটিকে দোষী সাব্যস্ত করে আর তাকে ফাঁসির সাজা দেওয়ার ঘোষণাও হয়। বারুইপুর পুলিশ জেলার এসপি পলাশ ঢালির নেতৃত্বে যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি হয়, তাদের, দাবি উচ্চ আদালতেও এই ছেলেটি শাস্তি এড়াতে পারবে না। মানে সিবিআই নয়, রাজ্য পুলিশ ঘটনার ২৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে ফাস্ট ট্রাক কোর্টে এই ঘৃণ্য অন্যায়ের একটা সুবিচার আনতে পারল। সিরিয়াল বিজ্ঞাপন সিনেমাতে ব্যস্ত ডাঃ কিঞ্জল নন্দ বা আপাতত ৫ কোটি টাকা ফান্ডের জিম্মা নিয়ে বসে থাকা ডাঃ অনিকেত মাহাতোরা কি এই খবর পড়েছেন? মানে পড়ার সময় হয়নি, তাঁরা কি তাঁদের শিরদাঁড়াগুলো, যেগুলো লালবাজারে রেখে এসেছিলেন সেগুলোর কথা ভাবছেন? বা ভাবার সময়ও পাচ্ছেন? সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত মাহাতোরা আসলে অভয়ার বিচার চান না।
হ্যাঁ, ডাঃ কিঞ্জল নন্দ, ডাঃ অনিকেত মাহাতোরা আসলে অভয়ার বিচার চান না। আরজি করের নির্যাতিতা ধর্ষিতা এবং খুন হওয়া মেয়েটির বাবা-মা এক ঘৃণ্য চক্রান্তের মধ্যে আটকে গেছেন যে চক্রান্ত ওই আরজি কর থেকেই তৈরি হয়েছিল। প্রাথমিক কিছু ধোঁয়াশা, রাজ্য সরকারের অন্তত একটা বড় ভুল পদক্ষেপ, ওই সন্দীপ ঘোষকে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ করা আর এক মেধাবী ডাক্তারের এমন মৃত্যু মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত নাগরিক মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। সেটাকেই পুঁজি করে সেই উত্তাপে নিজেদের রুটি সেঁকে নিতে নামল এই ডাক্তারদের সংগঠন।
আরও পড়ুন: Aajke | তিলোত্তমার বাবা-মাকে হয় ভুল বোঝানো হচ্ছে, না হলে তাঁরা ভুল বুঝছেন
প্রায় প্রতিটা গুজব, মিথ্যের উত্তর ছিল ওনাদের কাছে, কিন্তু ওনারা মুখ বুজে আরও গুজবের জন্ম দেওয়ার আবহ তৈরি করলেন, প্রত্যেকটা তথ্য থাকার পরেও এক রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠলেন ওনারা। যা অবহেলিত হল তা হল ওই ধর্ষণ আর খুনের ঘটনার বিচার। ৯ অগাস্ট সেই ঘটনা ঘটেছে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে ধরে ফেলল কলকাতা পুলিশ, তারা যা যা প্রমাণ এনেছিল হুবহু সেই প্রমাণের ভিত্তিতেই সিবিআই তাদের চার্জশিট দিয়েছে, শুনানি শুরু হয়েছে, আর তার সঙ্গে এক সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে বলে এখনও তা দেয়নি। কিন্তু এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, কিছু ডাক্তারবাবু আর রাজনৈতিক হিসেব নিকেশের ছক মেনেই এই সাপ্লিমেন্টারি চর্জশিট দেওয়া হবে যা এই বিচারকে কেবলমাত্র দীর্ঘায়িত করবে, আরও অনেক সময় লাগাবে, এবং শেষপর্যন্ত সে সব মিথ্যে আর ভুয়ো বলেই প্রমাণিত হবে, আজ বলছি, পরে তা মিলিয়ে নেবেন। যে বিচার হতে পারত ৬০-৭০ দিনে তা নিম্ন আদালতেই সম্ভবত বছরখানেক ধরে চলবে, অনায়াসে বলাই যায়। দেড়শো গ্রাম বীর্য থেকে পোস্ট মর্টেমে কম্প্রোমাইজ, পেলভিক বোন কলার বোন ভাঙা থেকে সেমিনার হলের পাশের টয়লেটের রিনোভেশন, প্রতিটার জবাব ছিল ওই নন্দ, মাহাতো আর হালদারদের কাছে। তাঁরা চুপ করে থেকে গুজব ছড়াতে সাহায্য করেছেন, অভয়ার বিচার অন্তত প্রাথমিক বিচার, নিম্ন আদালতে বিচার এখনও অধরা আর তার জন্য দায়ী ওই ডাঃ কিঞ্জল নন্দ, ডাঃ অনিকেত মাহাতো আর কিছু রাজনৈতিক হুলো বেড়ালেরা, যাঁরা মাছের গন্ধ পেয়েই মাছের দখলের লোভে মাঠে নেমেছিলেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে জয়নগরে ধর্ষণ আর খুনের বিচার তো ৬২ দিনেই এল, কিন্তু ১১৫ দিন হয়ে গেল আরজি কর ঘটনার, কেন এল না বিচার? এই ডাক্তারবাবুদের আন্দোলন আর মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইতেই কি হারিয়ে গেল বিচার? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।
জয়নগরে কেন গেলেন না রাত দখলের আন্দোলনজীবীরা? কেন গেলেন না ডাঃ কিঞ্জল নন্দ, ডাঃ অনিকেত মাহাতোরা? গেলেন না কারণ সেখানে তেমন মধু ছিল না, অপরাধী ধরা পড়ার পরেই এলাকার লোকজন বুঝেছিলেন তদন্ত ঠিক দিকেই যাচ্ছে, তাদের মিথ্যে বলে ভুল বোঝাবার সুযোগও ছিল না, আর অখ্যাত এক গ্রামের মেয়ের নামে বিচার চাই বললেই কি কোটি কোটি টাকা আসত? হাজার হাজার ক্যামেরা এসে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকত? থাকত না। কাজেই এই আন্দোলনের উত্তাপে রুটি পরোটা লুচি বানানো যাবে না বলেই তাঁরা জয়নগরে যাননি। কান্তি বুড়ো দিনদুয়েক গিয়েছিলেন, জেনেওছিলেন ওখানে দোষীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনিও হাল ছেড়েছিলেন। কিন্তু কলকাতায় অনেক মধু, অনেক ড্রামাবাজি, অনেক নৌটঙ্কি আর তার ফলও হাতেনাতে, কেউ পেলেন বিপ্লবীর তকমা, কেউ পেলেন বিজ্ঞাপন, কারও ভাঁড়ারে এল কোটি কোটি টাকা। মনে রাখুন, এরপরের বার এঁদের কথায় রাস্তায় নামার আগে মাথায় রাখুন।