আমাদের সুরক্ষা চাই বলেছিলেন ডাক্তারবাবুরা, তার ক’দিন আগেই ঘটে গেছে সেই নৃশংস ধর্ষণ আর হত্যা। পুলিশ প্রহরা বসল, এরপরে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে এল সিআরপিএফ-এর তিন ব্যাটেলিয়ন জওয়ান। কিন্তু সুরক্ষিত মনে করছেন না জুনিয়র ডাক্তারেরা, তাঁরা দাবি তুললেন কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দিতেই হবে। কেন? কারণ তিনি থাকাকালীন আরজি করে ভাঙচুর হয়েছে, বাপের ভাগ্যি যে সেই ভাঙচুর উনিই করেছেন তেমন দাবি ওই ডাক্তারবাবুদের সংগঠন থেকে করা হয়নি, তো যাই হোক এটা একটা দাবি। সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করা হোক, এটাও দাবি। দাবি স্বাস্থ্য দফতরের কিছু আমলার বিরুদ্ধে। এই পৃথিবীতে তাঁদেরই একমাত্র মগজ আছে, শিরদাঁড়া আছে, কিন্তু যা ছিল সেটা নিজেরাই হাতে করে দিয়ে আসলেন, শিরদাঁড়া দিয়ে আসলেন লালবাজারে আর মগজটা চলে গেল স্বাস্থ্য দফতরে। আরজি করে সিআরপিএফ এসে গেছে, কিন্তু সেখানে সুরক্ষিত নয় বলেই তাঁরা চলে গেলেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে রাস্তায়। প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ চালায় যে কোম্পানি তারা খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে দিল, তারপর মিটিং মিটিং খেলা, পঞ্চায়েত ওটিটি সিরিজে দেখেছিলাম, কর লো তুম লোগ মিটিং মিটিং, সেই খেলা শুরু হল। মুখ্যমন্ত্রী দু’দিন ডেকে বসে রইলেন, তাঁরা গেলেনই না। তৃতীয় দিনে রাজি কথা বলতে, নবান্ন চলে গেলেন, সেখানে গিয়ে বায়না লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে, এত্তবড় বিপ্লব আঁখো দেখা হাল না চালালে স্পনসর কোম্পানিদের বিরাট লস, তাই লাইভ স্ট্রিমিং চাই। বাপের ভাগ্যি যে বলেই দেননি ওই কোম্পানিকেই এর এক্সক্লুসিভ রাইট দিতে হবে। তো সেই নাটক শেষ করে তাঁরা ফিরলেন আবার ধরনাস্থলে। আবার তারপরের দিন কালীঘাটে মিটিং, আবার নাটক, এবং শেষ পর্যন্ত ওই আঁখো দেখা হাল ছাড়াই বৈঠক হল। সরকার পক্ষ থেকে জানানো হল, সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুলিশ কমিশনারকে, ডিসি নর্থকে, স্বাস্থ্য দফতরের দু’জন আমলাকেও সরানো হলো। আমরা ভেবেছিলাম ডাক্তারবাবুরা এবারে ধরনা মঞ্চে ফিরে বৈঠক করে কাজে ফিরবেন। কিন্তু গতকাল গভীর রাতে বৈঠকের শেষে তাঁরা জানিয়েছেন, না তাঁরা ফিরছেন না, কাজে যোগ দিচ্ছেন না, তাঁদের আরও দাবি আছে, তাঁরা আবার বৈঠক চান। সেটাই বিষয় আজকে, আর কবে কাজে ফিরবেন ডাক্তারবাবুরা?
অত্যন্ত অমমতাসুলভভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আগের বলা কথা থেকেও পিছিয়ে এসে পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দিলেন, সরিয়ে দিলেন ডিসি নর্থকে। কেন? আমরা আগেই বলেছি যে এই আন্দোলন সেই অর্থে মমতার ভোটব্যাঙ্ককে স্পর্শও করছে না, এই আন্দোলনকারীরা মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষজন। এঁরা ২০১১তে হয়তো মমতাকে ভোট দিয়েছেন, তারপরে নয়, গ্রাম বা শহরের বস্তি এলাকাতে গরিব মানুষের জনসমর্থনে এতটুকুও চিড় খায়নি মমতার ভোট ব্যাঙ্ক। এই ইস্যুতে ৩৫৬ রাজ্য সরকার ভেঙে দেওয়া ইত্যাদি কোনওভাবেই সম্ভব নয়, বিজেপি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেমসাইড গোল করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: Aajke | এবারে পুজো নামুক বাংলায়
তাহলে মমতা এটা করছেন কেন? কারণ আর বেশিদিন এই ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে খাড়া করে রাখার মতো অবস্থাও নেই। পুজোর ছুটি আসছে, বহু সিনিয়র ডাক্তার ছুটি নিয়ে রেখেছেন, বাইরে চলে যাবেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা ছুটিতে যাবেন। এই সময়ে এই আন্দোলন চলতে থাকলে তা মানুষের উপরে বিরাট আঘাত হয়ে নেমে আসবে। মমতা সেটাকে আটকাতে চান, মমতা যে কোনও মূল্যে এই অচলাবস্থা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁর অন্য চোখটা রয়েছে দুর্গাপুজোর অর্থনীতির উপরে, অনেকটা ক্ষতি হয়েছে তিনি ক্ষতিটা কম করতে চান। কিন্তু ডাক্তারবাবুদের হিডেন এজেন্ডা ঠিক সেটাই, বাংলার হেলথ সিস্টেমটাকে চুরমার করে দাও, দায় চাপাও রাজ্য সরকারের উপরে। এখন ওঁদের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে এছাড়া আর কোনও ইচ্ছে ওঁদের নেই, আর কোনও এজেন্ডা ওঁদের নেই, ওঁরা একটা অর্থনৈতিক ব্লকেজ তৈরি করতে চান, একটা কেয়স তৈরি করতে চান যার পেছনে ওই দফা এক দাবি এক পদত্যাগ পদত্যাগ রয়েছে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন স্বাস্থ্যসচিবকেও সরিয়ে দিতে হবে, ওঁরা আরও সুরক্ষার দাবি করছেন, আবার বৈঠকে বসে আবারও যদি এসব দাবি মেনে নেন মমতা, তাহলেও আবার নতুন দাবি উঠবে, এবং ডাক্তারবাবুরা আন্দোলন তুলবেন না। আমরা প্রশ্ন করেছিলাম আমাদের দর্শকদের, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হল, সরকার সেসব দাবির অধিকাংশই মেনে নিলেন খালি তাই নয় তা কার্যকরও করলেন, এরই মধ্যে তাঁরা জানিয়েছেন এই আন্দোলন চলবে, নতুন দাবি তোলা হয়েছে। সরকারের কী করা উচিত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এরকম আন্দোলন দেখেছেন? যেখানে সেই আন্দোলন যাঁরা করছেন তাঁদের সিংহভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরেও আন্দোলনকারীরা কাজে যোগ দেন না? অন্য কোনও পেশা হলেও তবু ভাবা যেত, এঁরা ডাক্তার, এঁরা জানেন এঁরা ঠিক কী করতে চাইছেন, এই মানসিকতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে আমাদের আগামী দিনের চিকিৎসকেরা, ভাবলেও হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে, অথচ এঁরা মনে করেন শিরদাঁড়া এঁদেরই আছে, মগজ এঁদেরই আছে, কার্যক্ষেত্রে দুটোরই যে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না তা কিন্তু পরিষ্কার। অরিজিৎ গানটা তিলোত্তমাকে নিয়ে লিখেছিলেন বটে, কিন্তু মাথায় বোধহয় এঁদের কথাও ছিল, তাই আমাদের, আম আদমির প্রশ্ন হল আর কবে? আর কবে? আর কবে?