এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে? নাটকের ওয়ার্কশপে আমাদের শেখানো হত। প্রতিটা শব্দের ওপর জোর দিয়ে দেখো, কোনটাতে বাক্যের ঠিক মানেটা বেরিয়ে আসছে। বুঝলেন না তো? বেশ তাহলে সেই ওয়ার্কশপের ব্যাপারটা করে দেখাই তাহলে। কনটেক্সটটা, বিষয়টা কী? মন্থরা এতদিন কথা বলেননি, আজ যখন রাজা দশরথ তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে রামকে বেছে নিয়েছেন এবং তাঁর সিংহাসনে আরোহণ উপলক্ষে সারা অযোধ্যা আনন্দে উদ্বেল, তখন মন্থরা এসে কৈকেয়ীকে অনর্গল বলে যাচ্ছেন রাম রাজসিংহাসনে বসলে ভরতের ভাগ্যে কিছুই জুটবে না, রামের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন কাটবে ইত্যাদি। এবং কৈকেয়ীকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে যুদ্ধে আহত রাজা দশরথকে সেবা করে সারিয়ে তোলার পরে রাজা দশরথ দুটো বর দেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেই বর তখন তিনি নেননি, এসব শুনে কৈকেয়ী রাজা দশরথের কাছে যাচ্ছেন এবং বলছেন, এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে? মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্য। তো ওয়ার্কশপে আমরা বলতাম…।
আজ আবার সেই কথাই বলতে ইচ্ছে করছে, এ কী কথা শুনি আজ ডাক্তারবাবুদের মুখে? সাবজুডিস ম্যাটার নিয়ে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং চাইছিলেন, যাঁরা রাজ্যজুড়ে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সর্বত্র সিসিটিভি লাগানোর দাবি তুলেছেন, যাঁরা নিজেরাই জানিয়েছেন যে ডাক্তারবাবুদের অনেকেই পরীক্ষায় টুকে পাশ করেন, অনেকেই যাঁরা আসলে ১০ নম্বর পাওয়ার যোগ্যতাও রাখেন না। সেই ডাক্তারবাবুদের পরীক্ষা হলে সরকার সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করেছিলেন, আর তখনই রেগে আগুন তেলে বেগুন ওই ডাক্তারবাবুরা, তাঁরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা হলে সিসিটিভি লাগানো চলবে না। আর সেটাই বিষয় আজকে, এখন সিসিটিভিতে আপত্তি কেন ডাক্তারবাবুরা?
আরও পড়ুন: Aajke | তিলোত্তমার বাবা-মা ভুলে গেছেন বিজেপির ইতিহাস?
এমনিতে সেই আন্দোলনের সময়ে যাদবপুরের আলু বেগুন পটলরাও মহামিছিল, মোমবাতি জ্বালানো বা দ্রোহের কার্নিভাল সর্বত্র হাজির ছিলেন যাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানোর বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে ডাক দিয়েছিলেন হোক কলরব। এই আরজি কর আন্দোলনেই থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সেই মিছিলে হাজির ছিলেন সেই আলুদা, যিনি নাকি যাদবপুরে র্যাোগিং প্রশিক্ষক। তো এসব কন্ট্রাডিকশনের কথা শুনে এক বিপ্লবী বলেছেন, কিউবাতে যেভাবে বিপ্লব হয়েছিল, ভিয়েতনামে কি সেভাবে হয়েছে, জায়গা ভেদে নাকি পাল্টে যায়, তাই যাদবপুরের র্যাগিং মাস্টার আরজি করের থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে নামে। সে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু এই ক’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে দাবি যে ডাক্তারবাবুরা করেছিলেন, যে ডাঃ মাহাতো, ডাঃ নন্দ, ডাঃ হালদারেরা কোটি কোটি টাকা তুলে সেই সুরক্ষা ব্যবস্থা যাতে লাগু হয় তার জন্য আইনি খরচ জুগিয়েছিলেন। যে ডাঃ মাহাতো সর্বসমক্ষেই বলেছিলেন, যারা ১০ পাওয়ার যোগ্য নয় তারাও নাকি ডাক্তারবাবু হয়ে যাচ্ছে, আজ তাঁরাই ডাক্তারবাবুদের পরীক্ষার হলে সিসিটিভি লাগানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর কেন? আসলি কারণটা কী? সিসিটিভি বন্ধ করে গণ টোকাটুকি চান? আচ্ছা পরীক্ষা হলে কোন গোপনীয়তা ধরা পড়ে যাবে যার জন্য সিসিটিভি লাগালে অসুবিধে হবে? জানি ক’দিন আগেই বেলেল্লাপনা করার জন্যই কয়েকজন বিপ্লবী ডাক্তারকে রিসর্টে ধরা হয়েছে, কিন্তু আর যাই হোক পরীক্ষা হল তো বেলেল্লাপনা করার জায়গা নয়, তাহলে সিসিটিভি লাগানোতে আপত্তি কেন? সাধারণ মানুষও তো দেখতে চায় তাঁদের, টোকাটুকি ছাড়া পরীক্ষা হচ্ছে কি না দেখতে চায়, কারণ অসুখ করলে চোখ বুজে ডিডি গেঞ্জি জাঙ্গিয়া নয় আমরা আমাদের ডাক্তারবাবুদের ভরসা করি, যখন শক কা গুঞ্জাইশ হ্যায়, সন্দেহের অবকাশ আছে, এবং সেই সন্দেহ ডাঃ অনিকেত মাহাতোর মতো একজন বিপ্লবীই মূখ্যমন্ত্রীর সামনে জানিয়েছেন, তখন হোক সিসিটিভি লাগিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরীক্ষা হোক, আমরাও আশ্বস্ত হই। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ডাক্তারবাবুরা হাসপাতালের সর্বত্র সিসিটিভি লাগানোর দাবিতে কাজ বন্ধ করেছিলেন, সেসব তো লাগানো হচ্ছে, তার সঙ্গে তাঁদের পরীক্ষা হলেও সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তাতে ডাক্তারবাবুদের এত আপত্তি কেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
তবে একটা কথা বলে রাখি ডাক্তারবাবুরা, গাঁয়েগঞ্জে লোকজনে বলে, আগে নাম ফাটে তারপর অন্যকিছুও ফাটে, কী ফাটে নিশ্চয়ই জানেন। তো এবার সেই খেলাটা সবে শুরু হয়েছে, হাজার হাজার রাডারের তলায় আছে আপনাদের প্রত্যেকটা কাজ, প্রতিটা ভুলচুকে দোদমার আওয়াজ শুনতে পাবেন। ধরুন ওই রিসর্টে এর আগেও বেলেল্লাপনা হয়েছে, করেছেন, অনেকেই করে কিন্তু এখন মাছরাঙাকে হাজতে যেতেই হবে, কারণ সেই মাছরাঙা মাছ ধরার আগে হেব্বি চিল্লিয়েছে। ধরুন সাগর দত্ত হাসপাতালে ইতিমধ্যেই একটি বাচ্চা মেয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে, সেই অভিযোগে একজন কেস খেয়েছেন। এসব কিন্তু জাস্ট শুরু হয়েছে, ব্যাকলাশ আসবে বলেছিলাম, এটা তার শুরুয়াত। এটা থ্রেট নয়, আসলে সেই কবে নিউটন বলে গেছেন প্রতিটি ক্রিয়ার এক বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, এ হল তাই।