একটা হিসেব কষে দেখানো হচ্ছে যে এই সামান্য কজন জুনিয়র ডাক্তারের (Junior Doctors) , মানে ৫০০০ মত যে জুনিয়র ডাক্তার কাজ করেন কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে, তাদের কাজ বন্ধ করাতে কিচ্ছু যায় আসে না, সিনিয়র ডাক্তারেরা সব সামলে নিচ্ছেন, সব ঠিক আছে, সরকার মিছি মিছি ২৪ জনের লিস্ট সামনে রেখে রাজনীতির কথা বলছেন। তো এই হিসেব সরকার তো দিচ্ছেন, এটা ঘটনা, আবার সেই একই হিসেব সেদিন হাইকোর্টে (Calcutta High Court) সরকারের তরফ থেকেও রাখা হয়েছে, কপিল সিব্বাল এই কথাগুলো বলেছেন যে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্ম বিরতি কিন্তু স্বাস্থ পরিষেবা ব্যবস্থার ওপরে খুব খারাপ প্রভাব ফেলছে, তিনি আবেদন করেছিলেন যে হুজুর আপনারা কিছু বলুন, তো বিচারপতিরা সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশ দিলেন, সরকার কোনও শাস্তিমূলক আচরণ করতে পারবেন না, ডাক্তারদের সুরক্ষার দায় নিতে হবে কিন্তু ডাক্তারবাবুরা কাজে ফিরুন, মঙ্গলবার ৫ টার মধ্যে। উপস্থিত বিকাশ উকিল সমেত বাকিরা কি কেউ বিরোধিতা করেছেন আদালতে? করেন নি। আবার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই সেই কর্ম বিরতি এখনও চলছে, উলটে আরও কিছু শর্ত জুড়ে গেছে, আরও কিছু আমলাদের সরিয়ে দেওয়া থেকে মিডিয়ার সামনে বৈঠক ইত্যাদির শর্ত। এবং ক্রমাগত বলা হচ্ছে যে এই কর্মবিরতিতে কোনওরকম স্বাস্থ পরিসেবার বিঘ্ন ঘটছে না। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, তাহলে এই জুনিয়র ডাক্তাররা ঠিক কী করেন? তাঁরা আছেন কেন? যদি না থেকেও কোনও ফারাকই না পড়ে, তাহলে তাঁদের রাখাই বা কেন? একটা তো যুক্তি থাকবে। সেটাই বিষয় আজকে, কলকাতার সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তাররা আছেন কেন?
আরও পড়ুন: Aajke | মুখ্যমন্ত্রী কোন ভাষায় চিঠি দিলে আলোচনা টেবিলে আসবেন, ডাক্তারবাবুরা?
এক মা সভায় সভায় আসছেন, তাঁর সদ্য হারানো কন্যার বিচারের দাবিতে, তাঁর দাবির পাশে দাঁড়িয়েছেন এই ডাক্তারবাবুরা, অন্য আরেক মা কাঁদছেন, আমার ছেলেটা চিকিৎসা না পেয়েই মরে গ্যালো, কেউ কিছুই বলবেন না? এই ডাক্তারবাবুরা আন্দোলন করছেন, জমায়েতের পাশে এসে যাচ্ছে খাবার, পাঠাচ্ছে টেকনো, যাদের প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ আছে, যেখানে ডাক্তার হতে গেলে কম করে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা মাথা পিছু খরচ হয় সেই টেকনো ইন্ডিয়া ধর্মঘটি ডাক্তারদের খাবার পাঠাচ্ছে, কেন? কে কাদের পাশে? প্রথমে দাবি কী ছিল? সুরক্ষার। গতকাল জানা গ্যালো ওটা নয় তাঁদের ৫ দফা দাবী আছে, সেটা মেনেই আলোচনা করতে হবে। তারপরে জানা গ্যালো সেই আলোচনা মিডিয়ার সামনেই করতে হবে। দিন গড়াচ্ছে, দাবির তালিকা বাড়ছে। মানুষ বলছে শুধু নয়, কেবল হাসপাতালের হিসেব বলছে যে স্বাস্থ পরিষেবা ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, দিনে ৬০০০ আউট ডোর পেশেন্ট আসতো আর জি করে, এখন আসছে ১২০০/১৩০০, এটা কেন? যাঁদের সামান্য সঙ্গতি আছে তাঁরা জান বাঁচাতে ছুটছেন ঐ প্রাইভেট হাসপাতালের দিকে, যেখানে নাকি ৪০% ব্যবসা বেড়েছে। মানে আন্দোলনে খাবার যোগাচ্ছে টেকনো ইন্ডিয়া, যাঁরা ক্যাপিটেশন ফি নিয়ে ছাত্র ভর্তি করেন, ব্যবসা বাড়ছে প্রাইভেট কর্পোরেট হাসপাতাল নার্সিং হোমের, অথচ এই আন্দোলন নাকি জনগণের স্বার্থে। এক পুরনো দিনে জুনিয়র ডক্টরস মুভমেন্ট এ অংশ নিয়েছেন এমন ডাক্তারবাবু বলছিলেন ৮৩ র আন্দোলনে ১২ টা দাবির ১০ টাই ছিল চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর জন্য, রুগীদের সুবিধে বাড়ানোর জন্য আর এবারে কিন্তু দাবী জুনিয়র ডাক্তারদের সুরক্ষা, তাঁদের রেস্ট রুম, তাঁদের টয়লেট, তাঁদের ভয়মুক্ত পরিবেশের, তাঁদের সহকর্মীর ধর্ষণ আর খুনের বিচার চেয়ে। এবং ডঃ পূণ্যব্রবত গুণ, যিনি নাকি শঙ্কর গুহনিয়োগির সঙ্গে জন আন্দোলনে নেমেছেন তিনি মাঠে নেমেছেন এক মা কে মিথ্যে প্রমাণ করতে যিনি তাঁর সন্তান কে হারিয়েছেন মাত্র কদিন আগে, যে মায়ের বক্তব্য তাঁর সন্তান চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। কেন এই কথাগুলো উঠছে? কারণ ক্রমশ এই আন্দোলন দুই পক্ষে বিভাজিত হচ্ছে, শহরের এলিট সমাজ, গ্রামশি চে দেরিদা ফুকো পড়া সমাজ, রিক্লেইম দ্য নাইটের কল দেওয়া সমাজ আর অন্য দিকে প্রান্তিক মানুষের সমাজ, গরীব মানুষজন, যাঁদের কাছে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায়ই নেই। যাঁরা ফ্রিতে ওষুধের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেই বিপ্লবীরা যাঁরা বিশ্বাস করতেন, এই চিকিৎসা কাঠামোয় মানুষকে যথার্থ স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া সম্ভবই নয়। যারা বিশ্বাস করতেন একটি জনস্বাস্থ্য আন্দোলন, একটি জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, যে নীতি হবে সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষাকারী। সেই তাঁরাই এখন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার সামান্যতম ক্ষতি হয়নি বলে জানাচ্ছেন। মুখে নয়, একদম লিখিত। তাঁদের মনে হচ্ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা তো বেশ ভালোই আছে। আমরা সেই প্রশ্নটাই মানুষের কাছে রেখেছিলাম, যদি জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে কোথাও কোনও কাজই না আটকে থাকে, যদি স্বাস্থ ব্যবস্থা তাঁদের কথায় ঠিক ঠাকই চলে, তাহলে তাঁরা আছেন কেন? তাঁদের রাখাই বা হয়েছে কেন? শুনু মানুষজন কী উত্ততর দিয়েছেন।
আসলে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য শুরু থেকেই স্পষ্ট, ওই দফা এক দাবি এক মূখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। কিছু মানুষজনকে তো আহা উহু করতে শুনলাম এই ইস্যু যদি মাস ছয় আগে হতো, তাহলে ৫ টা আসনও পেতনা তৃণমূল, এই হিসেবও শুনেছি। এক জঘন্য ধর্ষণ, খুন, তার পেছনের দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কে ক্রমশ এক রাজনৈতিক হাতিয়ার করার চেষ্টা চলছে, ক্রমশ আন্দোলন কে যে কোনও মূল্যে জিইয়ে রাখার চেষ্টা চলছে, অন্য কিছু নয়, যে খুশি, যারা খুশি আসুক ক্ষমতায়, তাতে খুব একটা কিছু যায় আসে না, কিন্তু বোড়ে হয়ে মারা পড়ছে গরীব মানুষ, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে গরীব মানুষ, সমস্যা সেখানেই। এই সমস্যা অবিলম্বে মেটানো হোক, সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষ সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা পাক, এটাই মানুষের চাহিদা।