skip to content
Sunday, January 19, 2025
HomeScrollসোজা হিসেব, ঘুষ দাও, ভোটে জিতে গদিতে বসে পড়ো
Aditir Songe Sada Kalo

সোজা হিসেব, ঘুষ দাও, ভোটে জিতে গদিতে বসে পড়ো

আমাদের রাষ্ট্রে এক নতুন আইনি ঘুষ দেবার ব্যবস্থা হয়েছে

Follow Us :

গতকাল বলেছি, আবার বলছি, আরও দু’ তিন দিন তো বলতেই হবে, ঝাঁ চকচকে একটা নতুন অনুষ্ঠান নিয়ে চলে এসেছি, কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু করার আগে আবার বলে নিই, অনুষ্ঠানটা কিসের, কেন? আমি যা বলছি তাই ঠিক, আমার গুরুদেব যা বলছেন তার বাইরে কোনও সত্য নেই, আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ, আমার মতবাদই শ্রেষ্ঠ, শেষ পর্যন্ত আমিই শ্রেষ্ঠ, ব্যস, জন্ম নেবে হিটলার, জন্ম নেবে মুসোলিনি, পল পট বা স্তালিন বা এই এনাদের অসংখ্য খুদে সংস্করণ। এক আমিতেই ঢেকে যায় সব কিছু, সব সত্য, সব যুক্তি। কঠিন হয়ে যাচ্ছে, নো চিন্তা, সহজ করে বোঝানোর জন্য অমিতাভ বচ্চন আছেন। ওনার ওই সিনেমাটা মনে করুন, ছবির নাম সুহাগ, সামনে ভিলেন, ঢিসুম ঢিসুম মারের মধ্যে বচ্চনের হাতে কোলাপুরি চপ্পল, ডায়ালগ, ইয়ে কেয়া হ্যায়, রঞ্জিত: চপ্পল। বচ্চন: কৌন সা? রঞ্জিত: কোলাপুরি। বচ্চন: নম্বর? রঞ্জিত: ছে। বচ্চন: ছে নহি ছক্কে ন, ন ন। এতক্ষণ ভিলেন বলে পিটছিল, এবারে নম্বর ভুল হওয়ার জন্য পিটছে। হ্যাঁ এটাই সত্য, আপনি সামনে থেকে যদি ৬ পড়েন, উল্টোদিক থেকে সেটাই ৯। দু’ধার থেকে দুজনেই সত্যি। কিন্তু রঞ্জিত বেচারি তো ভিলেন, মার তো খাবেই। সে অন্য গল্প। যেটা বলার চেষ্টা করছি, একটা ঘটনাকে কেবল এক দিক থেকেই দেখা বা বোঝার চেয়ে তাকে আরও অন্যদিক থেকে জানা বা বোঝাটা খুব জরুরি। আরে বাবা, কম সে কম শুনুন না যে ওধারের মানুষটা কী বলতে চাইছে। এবং এই এক আবহের মধ্যে সংবাদমাধ্যম বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলেছে। বহুতর কারণে। সংবাদমাধ্যম এখন কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম। অতএব কর্তা যাহা বলিবেন আমরা সকলেই সেই সুরে গান ধরিব, কৃপা করে করো মোরে রায়বাহাদুর। কিন্তু আমরা সেই আবহের বাইরে এসে একটা অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছি যেখানে একটা বিষয়কে একটা, দুটো, তিন বা চার পাঁচ ছ’ রকম ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। ধরুন জুনিয়র ডাক্তাররা একরকম করে ভাবছেন, কলকাতা পুলিশ সেভাবে ভাবছে না, বা সরকার আরও আলাদাভাবে ভাবছে, বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি আরও আলাদা। কিন্তু যখন এ নিয়ে কিছু বলা হয়, তখন একটা বক্তব্যই উঠে আসে, আমরা আমাদের এই নতুন অনুষ্ঠানে সেই সব মতামতগুলো আপনাদের সামনে রাখব, তারপর খুঁটে খা, আপনি যেটা পছন্দ বেছে নিন, কিন্তু নেওয়ার আগে এটাও জেনে নিন যে অন্যদিকের অন্য আর একজন এ নিয়ে কী বলছে, কী ভাবছে।

তো আজকের বিষয়, সোজা হিসেব, ঘুষ দাও, ভোটে জিতে গদিতে বসে পড়ো। ধরুন দেশের দুই প্রান্তে দুই সরকার, শিন্ডে সরকারের তো গুণে নুন দেওয়ার জায়গাও নেই, দল ভেঙে, বিধায়ক পিছু নাকি ২০-২৫ কোটি টাকা খরচ করার পরে আবার এনসিপিকেও ভেঙে সরকার তৈরি হয়েছিল আর মাত্র চার মাস আগে লোকসভার নির্বাচনে গোহারান হার। সেদিন অজিত পওয়ারের মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের সেই ছিঁচকে চোর পটাশ। কিন্তু তার চার মাস পরে ইন্ডিয়া জোট হাওয়া, তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে বিধানসভাতে টেকনিক্যালি বিরোধী দল বলেই কিছু থাকবে না। এই চার মাসে নতুন যা হয়েছে তা হল লাডকি বহিন যোজনা, যেখানে একনাথ শিন্ডের সরকার মহিলাদের ১৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা কেবল করেছে তাই নয়, দিওয়ালির আগে তাদের হাতে আগামী তিন মাসের টাকা তুলে দিয়েছে, ৪৫০০ টাকা ২ কোটির মতো মহিলা পেয়েছেন। অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডে মাইয়া সম্মান যোজনা, সেখানেও মহিলাদের হাতে হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু করেছেন হেমন্ত সোরেনের সরকার, আজ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে কোনও সরকার আবার নির্বাচনে জিতে আসেনি, সেদিক থেকে এই সরকারের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ইনকম্বান্সির হাওয়াও ছিল, দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, আর ঝাড়খণ্ডের দারিদ্র ইত্যাদি নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই, যাবতীয় আদিবাসী নেতারা এখন কোটি কোটিপতি, কিন্তু সাধারণ আদিবাসী মানুষজন এখনও চূড়ান্ত দারিদ্র নিয়েই বাঁচে আর মরে। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল হেমন্ত সোরেনের জয়জয়কার, বিজেপির যাবতীয় সাম্প্রদায়িক প্রচারকে হারিয়ে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই হেমন্ত সোরেন আবার মুখ্যমন্ত্রী হলেন। তো এই পর্যন্ত শুনে কী মনে হল ভাইসকল? আমাদের রাষ্ট্রে এক নতুন আইনি ঘুষ দেবার ব্যবস্থা হয়েছে, যিনি বিশ্বাসযোগ্যভাবে সেই ঘুষ দেওয়ার কথা মানুষকে পৌঁছে তিনি উপঢৌকন হিসেবে রাজ্যপাটের হকদার হবেন, মানে ফেলো কড়ি মাখো তেল আমি কি তোমার পর। সাফ দেখা গেল ঝাড়খণ্ডে ৮১টা আসনের ৬৮টাতে মহিলা ভোটারদের সংখ্যা পুরুষ ভোটারদের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে ৩ শতাংশ বেশি ভোট দিয়েছেন মহিলারা। খুব পরিষ্কার এটা যে যান সরকারে যান, চুরি করুন, ডাকাতি করুন, কেবল বলুন আমাদের কত দিচ্ছেন, তো এটাকেই তো ঘুষ বলে নাকি?

হ্যাঁ এটা একটা মত বটে। কিন্তু অন্যদিকেরও তো মত আছে। সেটাও শুনে নিন, তারপর বাপ-বেটায়, স্বামী-স্ত্রীতে, বন্ধু-বান্ধবীতে লেগে যা লেগে যা নারদ নারদ। অন্য মতটা বলার আগে একটা প্রশ্ন, আচ্ছা এ কি শুধু আমাদের দেশের প্রবণতা? উত্তর— না। বিকশিত দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো, আমেরিকা সমেত বিভিন্ন দেশে মহিলাদের সরাসরি আর্থিক সাহায্যের বহু প্রকল্প আছে। ট্রেন বাসের টিকিট থেকে আনাজপত্র থেকে শুরু করে এক্কেবারে ক্যাশ ট্রান্সফার নতুন কিছু নয়, বহুদিন ধরেই চলে আসছে। ফরাসি দেশে তিন সন্তানের মা মাসে নির্দিষ্ট সংখ্যার রেল ও বাসের কুপন পান, জার্মানিতে টাকা পান, ইতালিতে টাকা পান, এরকম হরেক প্রকল্প আজ নয় বহুদিন ধরেই আছে, যেগুলো ওখানে সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিমের মধ্যেই পড়ে। অবশ্যই ওগুলোর বেস আমাদের মতো বিরাট নয়, ওই স্কিমগুলোর বিভিন্ন শর্ত আছে। তা থাক, কিন্তু তা যে এক ধরনের সহায়তা, তা তো অস্বীকার করা যায় না। আসলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি তো নাগরিকদের প্রয়োজনে, রাষ্ট্র গার্জিয়ানের মতো নাগরিকের দায়িত্ব নেবেই, এটাই তো চুক্তি। যেমন আপনার পরিবারের কর্তা চুক্তিবদ্ধ পরিবারের প্রত্যেকের ভরণপোষণের জন্য। এবার যে পরিবারের যেমন রোজগার সেই পরিবারের মানুষজন ততটা খরচ করবেন। যদি খাবার না জোগাতে পারেন, তাহলে অন্তত হাতে কিছু পয়সা দিয়ে একটা রুটি কিনে পেট ভরাতে বলবেন। দ্রোণাচার্য পিটুলির গোলা দিয়ে তাঁর ছেলে অশ্বত্থামার কান্না থামিয়েছিল। কাজেই রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করার জন্যই সবথেকে পিছিয়ে পড়া, বা যার সহায়তা দরকার তাকে সহায়তা করবে এতে অন্যায়টা কোথায়? এই রাষ্ট্রই তো আরও অনেক কিছুই করে যা বেশ কিছু মানুষ ভোগ করেন, সব্বাই নয়। কিছুদিন আগে বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম, চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো এক ইন্দ্রপ্রস্থ, এয়ারপোর্টে ফোয়ারা আর গাছপালা লাগিয়ে এক ফাইভ স্টার আবহ। কার পয়সায়? দেশের। দেশের পয়সা মানে রামা শ্যামা যদু মধুদেরও পয়সা। তো ক’জন রামা কৈবর্ত্য আর কাশেম মল্লিক ওই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করেন? দেশের ক’ শতাংশ মানুষ করেন? বিশাল বিশাল পার্ক, বুলেট ট্রেন, কতকিছুই তো হচ্ছে যা চোখেও দেখবেন না দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ, কিন্তু হচ্ছে। যা দেখে আমাদের অনেকের মনে হয়, ওই তো দেশ কেমন তরতর করে এগোচ্ছে। কই তখন তো কেউ বলেন না যে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। দেশের শিল্পপতিদের ১০.৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে, কই তখন তো কেউ বলেন না যে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। শিল্পপতিদের কথায় কথায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে, ট্যাক্স হেভেন তৈরি হয়েছে, এসইজেড তৈরি হয়েছে, সুদের হার কমানো হচ্ছে, কই তখন তো কারও মুখে কোনও কথাই দেখি না। মহিলাদের হাতে দেড় হাজার টাকা দিলে অর্থনীতির জ্ঞান খলবলিয়ে বের হতে থাকে কেন?

আরও পড়ুন: ভারতের জাতীয় পতাকা আর বাংলাদেশের কথা

আপনি চান বা না চান, আমাদের দেশ বা বিদেশের হুদো হুদো রাজনৈতিক জোকার এবং শয়তানরা চান বা না চান সমাজ এগোবে সামনের দিকে, আর সেই এগিয়ে যাওয়া কতদিনে বোঝা যাবে? এক বিরাট সময় কেটে যাওয়ার পরে আমরা এখন বুঝি হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর নিকাশি ব্যবস্থা কত ভালো ছিল, বুঝতে পারি শূন্যের আবিষ্কার কীভাবে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, বুঝতে পারি ইনকা সভ্যাতার মানুষজন কৃষিকাজ নিয়ে কত পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন, যা আজও আমরা কেবল অনুসরণ করে যাচ্ছি। ঠিক সেইরকম ভাবে কিছু কাজ শুরু হয় আর সেই কাজের প্রভাব, সেই কাজের ব্যাপ্তি বোঝা যায় অনেক পরে, বহুদিন পরে। সেই কবে নীতীশ কুমার ক্ষমতায় এসেই সাফ জানিয়ে দিলেন রাজ্যের কোষাগারে টান পড়ে পড়ুক, বিহারে মদ বাতিল, মদ্যপানও বেআইনি। আমরা ভেবেছিলাম ভোট এলেই হয় উনি ওনার সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন, না হলে ওনার গদি উল্টোবে। কিন্তু বাস্তবে হলটা কী, দু’হাত ভরে ভোট উজাড় করে দিলেন মহিলারা, উনি আবার ক্ষমতায় এলেন। রাতে মাতাল স্বামীর বেধড়ক মার খেয়ে সারা গায়ে হাতে পায়ে কালশিটে আর ব্যথা নিয়ে পরের দিন জীবন শুরু করা বিহারের মহিলারা এখনও নীতীশবাবুকে এই কারণে ভোট দেন। উনিই প্রথম মহিলা ভোটারদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।

২০২০-তে জগনমোহন রেড্ডি, জগন্না আম্মা ভোদি প্রকল্পে ১৫ হাজার করে ক্যাশ টাকা দেওয়া শুরু করলেন সেই মহিলাদের যাঁরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন, কিন্তু এই স্কিম তার বিভিন্ন শর্তের জন্য তেমন জনপ্রিয় হল না। এরপরে এই বাংলাতে ২০২১ এ মমতা ব্যানার্জি ভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করলেন, ১০০০ টাকা ক্যাশ দেওয়া শুরু করলেন প্রথমে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের, তারপরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। তখন আমাদের কাঁথির খোকাবাবু থেকে বহরমপুরের জোকার প্রত্যেকে এসব হল টাকা দিয়ে ভোট কেনা ইত্যাদি বলতে শুরু করেছিলেন আর ২০২১, ২০২৪-এ ভোটে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সরাসরি প্রভাব দেখে কংগ্রেস বিজেপি, দেশের প্রত্যেকটা দল বুঝে গেল এইখানে লুকিয়ে আছে অমূল্য রতন। রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস থেকে বিজেপি এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টুকলি করা শুরু করে দিলেন। হ্যাঁ, মহিলাদের হাতে একটা টাকা গিয়ে পৌঁছল, গরিব ঘরের মহিলারা কেউ খাবারের জন্য খরচ করলেন, কেউ দুটো ছাগল মুরগি কিনে তার মাংস দুধ ডিম বিক্রি শুরু করলেন, কেউ টুথপেস্ট, ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিনলেন, কেউ লোকাল পার্লারে গিয়ে চুল বাঁধিয়ে আনলেন, মানে অর্থনীতিতে যাকে বলে মানি সার্কুলেশন শুরু হল। অর্থনীতি আর আমাদের শরীরের রক্ত সংবহন প্রণালীর এই এক মিল, পাম্প করা বন্ধ হলেই দুটোই মারা পড়বে। যত খরচ হবে, তত অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে। ১ লক্ষ টাকা এক বছর ব্যাঙ্কে পড়ে থাকার মানে তা এক লক্ষ তিন কি চার কি পাঁচ হাজার টাকা, আর ৩০ জন মহিলার প্রতিমাসে ১০০০ টাকা খরচ করার মানে কমকরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। বাংলাতে তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি, তেমন শিল্প নেই, কোর সেক্টরে তেমন বিরাট ইনভেস্টমেন্ট নেই কিন্তু স্টেট জিডিপি বাড়ছে, ভালরকম বাড়ছে। কারণ ওই তলার গরিবস্য গরিব মানুষগুলোর হাতে কিছু টাকা পৌঁছচ্ছে।

সিপিএম দলে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে আসা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল, তাঁদের ভাষায় এক বুর্জোয়া সিস্টেমে রাজ্য সরকারে আসাটা কি এক বিপ্লবী কাজ? কারণ সিপিএম তো বিপ্লব করবে, রাজ্য সরকারে আসবে কেন? প্রথমে তো নির্বাচনেই আসব কেন? তা নিয়ে ঝগড়া মেটার পরে রাজ্য সরকারে আসব কেন, এটা ছিল প্রশ্ন। তো শেষমেশ বিপ্লবীরা লিখলেন গরিবস্য গরিবদের ন্যূনতম সাহায্য, রিলিফ দেওয়ার জন্য আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রাজ্য সরকারে যাব, গঠনতন্ত্রে এমনটা লেখা আছে, কিন্তু কেন্দ্র সরকারে যাব তা তো লেখা ছিল না, তাই সে ধারায় যখন সুযোগ এল তখনও তাঁরা সরকারে যাননি, জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেননি, কারণ ওনারা তো বিপ্লব করবেন, সেই বিপ্লবও হয়নি, এদিকে ঘটিও উল্টেছে। থাক সে কথা, যেটা বলার তা হল এই স্কিম এনে মমতা গরিবস্য গরিব মানুষকে খানিক সাহায্য করতে পেরেছেন, এবং সেই গরিব মানুষেরা তাঁকে সমর্থন করোতে ভোলেননি, তিনি জিতেছেন এবং এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে আরও ব্যাপক করার কাজে হাত দিয়েছেন, টাকাও বেড়েছে আবার সংখ্যাও বেড়েছে, এখন ২ কোটির বেশি মহিলা এই প্রকল্পে টাকা পাচ্ছেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই শিবরাজ সিং চৌহান লাডলি বহনা চালু করে দিলেন, ফল পেলেন, কর্নাটক তেলঙ্গানাতে মহালক্ষ্মী প্রকল্প, ২৫০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে, বহরমপুর কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরি অবশ্য এখন কিছু বলছেন না। ছত্তিশগড়ে মহাত্রি বন্ধন যোজনা এনেছে বিজেপি, ওড়িশাতে বিজেপি এসেই সুভদ্রা যোজনা চালু করেছেন ওই একই স্কিমে প্রায় একইভাবে মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়া শুরু হল, কেজরিওয়াল বাসের টিকিট ইত্যাদি দিতে শুরু করেছিলেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সন্মান যোজনা এনে ১০০০ টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে ডিএমকের স্তালিন কালাইমার মাগালির উরিমাই থিট্টাম প্রকল্প এনে ওই একই রকম মহিলাদের হাতে টাকা দেওয়া চালু করেছেন, একনাথ শিন্ডে লাডকি বহন চালু করলেন আর মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী সমাজে হেমন্ত সোরেন মাইয়া সম্মান যোজনা শুরু করলেন, হাতেনাতে ফল।

দু’ জায়গাতেই মহিলারা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে উড়িয়ে দিয়ে দু’ হাত উজাড় করে ভোট দিলেন, এ জয় মহিলাদের জন্য, শিন্ডে জানেন, হেমন্ত সোরেনও জানেন। মহারাষ্ট্রে ৬ শতাংশ মহিলা ভোট বেশি পড়েছে, ওসব ইভিএম-এর গপ্পো ছেড়ে এই হিসেবটা দেখুন, তাঁরা রাজ্য সরকারকে তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, নানদেদ-এর ৬টা বিধানসভায় জিতেছে বিজেপি আর লোকসভায় জিতেছে কংগ্রেস, উত্তরটা এখানেই লুকিয়ে আছে। পুনে থানে নাগপুর শোলাপুর নাসিকে মহিলাদের ভোট বেড়েছে ৬ শতাংশ, বিদর্ভে বিরোধীদের ভোটে ধস নামার কারণ খুব পরিষ্কার। আবার ঝাড়খণ্ডে ৮১টা আসনের মধ্যে ৬৮টাতে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ভোট বেশি পড়েছে, গতবারে মহিলাদের ভোট ছিল ৬৭ শতাংশ, এবারে ৭০ শতাংশ, ৩ শতাংশ বেশি ভোট যদি একদিকে যায়, তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছিল তো স্লোগান বটেঙ্গে তো কটেঙ্গে মহারাষ্ট্রে, কিন্তু ঝাড়খণ্ডেই বা কম কী ছিল? আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে ঘুসপেটিয়ারা, বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমান মানুষজন, এটাই তো ছিল প্রচার, প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে এই প্রচার করেছেন, কিন্তু রেজাল্টে তার ছাপও নেই। অবশ্যই আদিবাসী আইডেন্টিটির লড়াইকে সামনে রেখে হেমন্ত সোরেন অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই যে ৩ শতাংশ মহিলাদের ভোটবৃদ্ধি, তার প্রায় সবটাই তিনি পেয়েছেন যেমন এই প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছে মহারাষ্ট্রে মহাযুতি, বিজেপির নেতৃত্বে জোট। কিন্তু এ তো গেল ভোটের অঙ্ক আর তার হিসেব নিকেশ, নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন এতে সমাজের কোন অগ্রগতিটা হল, এধারে বিজেপি জিতেছে তো ওধারে বিজেপি বিরোধীরা, এতে সামাজিক অগ্রগতিটা কোথায়? তার শুরুয়াত কিন্তু আরও আগে ১৯৮০-তে ইন্দিরা গান্ধী যখন ক্ষমতায় ফিরছেন, সেই সময়ে এক সমীক্ষা জানিয়েছিল, প্রায় ৩০ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ইচ্ছে অনুযায়ী ভোট দিয়েছেন, ঘরের পুরুষদের কথা শুনে নয়।

সেটা ছিল শুরুয়াত। কিন্তু আজ সেই সংখ্যাটা যে বিশাল হয়ে উঠেছে তা বলাই বাহুল্য, তা না হলে রাজ্যে রাজ্যে এই মহিলা ভোটের এই বিরাট প্রভাবের কথা বোঝাই যেত না, মানে এখন একই বাড়ি থেকে মহিলারা তাঁদের পরিবারের পুরুষের নির্দেশে নয়, নিজের মর্জিমতো ভোট দিচ্ছেন, তাঁরা হাতে টাকা পাচ্ছেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন। হ্যাঁ, আপনি বলতেই পারেন এই টাকা আসলে ভিক্ষে, বলতেই পারেন এই টাকা আসলে ঘুষ, ভোট কেনা হচ্ছে, আপনার মনে হতেই পারে যে এইভাবে টাকা খরচ না করে সত্যিই যদি কলকারখানা গড়ে তোলা হত তাতে বেশি লাভ হত, কিন্তু অর্থনীতি অন্য কথা বলছে। অর্থনীতি বলছে, ওই গরিবস্য গরিবদের ন্যূনতম সাহায্য এক বিরাট গতি এনেছে বাজারে, এক গ্রামের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মহিলার কেনা মোবাইলের টপ আপ আসলে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত ঘরের চাকরিজীবী ছেলেটির মাইনে বা বোনাস জোগাচ্ছে, এক চাষির টুথপেস্ট কেনা এক মাহিন্দ্রা ট্রাক ভাড়ায় চালান এমন মালিকের পেট চালাচ্ছে। আর অন্যদিকে মহিলাদের ডানা গজিয়েছে, তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিচ্ছেন, সেটা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখার সিদ্ধান্ত নয়, দেশের শাসক বদলের সিদ্ধান্ত, শাসক নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত, হ্যাঁ মহিলারা দখল করছে মাঝমাঠ, এটাই সমাজ অগ্রগতি, যা আজ থেকে ৫০০ বছর পরে আগুনের বর্ণমালার মতো ফুটে উঠবে, সে বর্ণমালায় বাংলার নাম থাকবে, থাকবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা, মমতা ব্যানার্জির কথা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
00:00
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
00:00
Video thumbnail
RG Kar | কাল সাজা ঘোষণা, সারাদিন প্রেসিডেন্সির ৬ নম্বর সেলে কী করে কাটালেন সঞ্জয়? দেখে নিন প্রতিবেদন
00:00
Video thumbnail
Mahakumbh 2025 | কী কারণে মহাকুম্ভে অ*গ্নিকাণ্ড? ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
00:00
Video thumbnail
RG Kar | বিচারককে কি বললেন সঞ্জয় রায়?
11:46:50
Video thumbnail
Shakib Al Hasan | গ্রেফতারির মুখে সাকিব আল হাসান, জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা
02:30
Video thumbnail
RG Kar | কোন পথে নির্যা*তিতার বিচার, দেখে নিন বিশেষ প্রতিবেদন
03:14
Video thumbnail
RG Kar | কাল সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সঞ্জয়ের, তার মানসিক অবস্থা কীরকম? জেনে নিন বিশেষ প্রতিবেদনে
11:38