skip to content
Friday, January 17, 2025
HomeScrollমমতা-বিজেপি সেটিং তত্ত্বে কতটা যুক্তি আছে? কতটা আবেগ?
Aditir Songe Sada Kalo

মমতা-বিজেপি সেটিং তত্ত্বে কতটা যুক্তি আছে? কতটা আবেগ?

এই তত্ত্বের অবতারণা হয়েছে মূলত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে আর বিরোধিতা অবশ্যই কালীঘাট থেকে

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। পৃথিবীর সব্বাই যদি এক মতের হত, সব্বাই একই সুরে কথা বলত, কী বোরিং হত সেই পৃথিবী। কাজেই তর্ক-বিতর্কে সাদা-কালোর দ্বন্দ্বে নানান রং ভেসে উঠুক। মাও সেতুং বলেছিলেন, শত ফুল বিকশিত হোক, যত আগাছা নির্মূল হোক। তো ভনিতা ছেড়ে শুরু করি আজকের বিষয়। সেটিং হ্যাঁ, সেটিং না। এই তত্ত্বের অবতারণা হয়েছে মূলত আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে আর বিরোধিতা অবশ্যই কালীঘাট থেকে। মূলত সিপিএম জোর দিয়েই বলে, দিদি-মোদির একটা সেটিং আছে, আর কালীঘাট থেকে বলা হয়ে থাকে বামে রামে এক জবরদস্ত সেটিং আছে, আজ সেটাই বিষয়।

পিছিয়ে পড়া স্টুডেন্টকে আগে দেখতে হয়, সেই তত্ত্ব মেনে আগে আমি আলিমুদ্দিনের যুক্তিটা রাখি। ধরুন দিদিমণি এবং তাঁর সরকারের দুর্নীতি, সে তো সব্বাই জানে, পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, যেদিকে তাকাও কাটমানি আর কমিশন, চাকরি থেকে পুকুর সব বিক্রি হয় এই জমানাতে। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য হাতের নির্দেশে সিবিআই দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েও কিছুতেই আর কিছু করে উঠতে পারে না। ধরেছে বটে কয়েকজনকে কিন্তু মন্ত্রিসভার বাকিরা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ লিপ্ত কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ধোয়া তুলসিপাতা? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? সেই পর্যন্ত সিবিআই কিছুতেই পৌঁছয় না, সেই পর্যন্ত তো ছেড়েই দিন, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের এত দুর্নীতি সামনে আসার পরেও তার অন্যতম ডিরেক্টর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও এক অজানা কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে, আমরা এটাকেই সেটিং বলছি। মোদিজির বিপদে দিদিমণি হাজির থাকবেন এই কড়ারেই নাকি ওই চোর-পুলিশ খেলা খেলে ছেড়ে দেওয়া হবে সব্বাইকে। রাশি রাশি অভিযোগ, লটারির টাকা থেকে গরু, বালি, পাথর চুরির অভিযোগ কিন্তু কিছুই নাকি প্রমাণ করা যাচ্ছে না, বীরভূমের মানুষজনকে জিজ্ঞেস করুন তাঁরা মুচকি হাসবেন। এটা সেটিং নয়? সারা দেশের রাজনৈতিক দলই কেবল নয়, গণতান্ত্রিক মানুষজন রাস্তায় আদানি চোর হ্যায়, মোদি চৌকিদার হ্যায় এই স্লোগান নিয়ে, কিন্তু সংসদে তৃণমূল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওসব আদানি কোনও ইস্যুই নয়, তাঁরা এই ইস্যুতে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও থাকতে রাজি নন। আসলে বাংলায় তৃণমূল থাকুক, কেন্দ্রে বিজেপি এই সেটিং আজকের নয়, খুব পুরনো। লোকদেখানো ঝগড়া করার জন্য কিছু লোকজনকে রাখা আছে, তাদের কাজিয়া তো স্রেফ নৌটঙ্কি, বিশুদ্ধ ড্রামাবাজি, আসলে সবটা পূর্বনির্ধারিত, পরিকল্পিত, সেটাই হল সেটিং। এই হল মোদ্দা যুক্তি যা সিপিএম, তাদের নেতা কর্মীরা আকছার বলে থাকেন। এরসঙ্গে আছে ইতিহাসের রেফারেন্স, মমতা বিজেপি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, মমতাকে স্বস্তিকা, মানে আর এসএসএর পত্রিকাতে দেবী বলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এবারে অন্যদিকের লজিকটাও শুনে নিন।

আরও পড়ুন: ইউনিফর্ম সিভিল কোড, মোদিজির টার্গেট দেশের সংখ্যালঘু মানুষজন

বামেদের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাবে তারা হল পাক্কা যযেততে, মানে হল যখন যেমন তখন তেমন। ধরুন কেরালাতে ওনারা কংগ্রেসকে বিজেপির বি টিম বলেন, অফিসিয়ালি বলেন, ওনাদের মুখপত্র দেশাভিমানীতে সেসব লেখাও হয়। আবার এই বাংলাতে সেই কংগ্রেসের হাত ধরে তৃণমূলকে বলেন বিজেপির বি টিম। এখন সমস্যা হল এই সিপিএম কিন্তু সারা দেশে বিজেপির সঙ্গে লড়েই না, কেরালাতে লড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, বাংলাতে লড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঝাড়খণ্ডে একলাই লড়েছে, কার বিরুদ্ধে? ভগবান জানেন। ঠিক সেইভাবে পঞ্জাব, অসম, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশে এরা কার বিরুদ্ধে লড়ে? অন্ধ্রপ্রদেশে কার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়? এরাই যদি সচ্চা বিজেপি বিরোধী হয় তাহলে এক ওই রাজস্থানের দু’ একটা আসন আর মহারাষ্ট্রের একটা আসন বাদ দিলে ওরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে কোথায়? তৃণমূল আর কোথাও না লড়লেও এই বাংলার ৪২টা আসনেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ে ২৯টা আসন দখল করেছে, যেখানে সিপিএম-এর দুটো আসন বাদ দিলে প্রত্যেকটাতে জামানত জব্দ, এদের মুখে সেটিং তত্ত্ব মানায়? এই এরাই কংগ্রেসকে আটকানোর জন্য বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের মন্ত্রিসভাকে সমর্থন করেছিল যে সরকারেই ছিলেন আদবানি, অটলবিহারী ছিলেন। এই শহীদ মিনারে জ্যোতি বসু অটল বিহারীর হাত ধরে ছবি আমরা দেখেছি, সেই ইতিহাস অনায়াসে ভুলে মমতার দিকে আঙুল তোলার মধ্যে আর যাই হোক সততা নেই। লড়াই কোথায় হবে? রাজ্যে, রাজ্যে, রাস্তায়, বিধানসভাতে আর সংসদে। কোথায় আছে সিপিএম? বাংলার বিধানসভাতে ওরা শূন্য, আর কেরালার বিধানসভাতে বিজেপি শূন্য, কাজেই লড়বে কোথায়? সাকুল্যে ৪টে, রাজস্থানে কংগ্রেসের সমর্থনে একটা আসন, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র সমর্থনে দুটো আসন আর কেরালাতে নিজেদের জোরে একটা আসন। কংগ্রেস বা ডিএমকে-র সঙ্গে সমঝোতা না হলে একজন এমপি সেটাও আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সেই দল সেটিং-এর তত্ত্ব কার বিরুদ্ধে তুলছে যারা অন্তত এই বাংলার ৪২টা আসনেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছে, উত্তরপ্রদেশে ভদোহিতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছে। আজ বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের নেতারা সেই জোটের মাথায় মমতাকে দেখতে চাইছেন, কী হবে সেটা পরের কথা কিন্তু লালুপ্রসাদ থেকে শরদ যাদব থেকে অখিলেশ যাদব, সঞ্জয় রাউত, উদ্ধব ঠাকরেরা মনে করেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে ইন্ডিয়া জোটের মাথায় মমতাকে আনা উচিত, অথচ সেই নেত্রী সিপিএম-এর ভাষায় বিজেপির সঙ্গেই সেটিং করে রাজ্যে টিকে আছে। এসব আসলে ৩৪ বছরের মৌরসিপাট্টা চলে যাওয়ার দুঃখে প্রলাপ বকা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তো এই হল দুই শিবিরের বক্তব্য, হ্যাঁ সেটিং, না সেটিং এর গল্প। আমরা বহু আগে ময়দানে গড়াপেটার গল্প শুনতাম। সবটা গল্প ছিল না, কিছুটা সত্যিও ছিল তাতে। কিন্তু রাজনৈতিক গড়াপেটার খবর কিন্তু তত পুরনো নয়। এই বাংলায় একসময়ে মমতা ব্যানার্জিই এই সেটিং তত্ত্বের আমদানি করেছিলেন। বেশ জোর দিয়েই তখন তিনি বলতেন দিল্লিতে দোস্তি, রাজ্যে কুস্তি আমরা চলতে দেব না। তো সেই কুস্তি পরে গলাগলিতে পরিণত হয়েছিল আমাদের চোখের সামনে কালো হাত ভেঙে দেওয়ার বদলে সেই হাতে হাত ধরে নিয়ে চলো সখা গানও আমরা শুনেছি। নতুন কোনও গানও কি শোনা যাবে? আজ নয় অনেকদিন পরে, যদি শোনা যায় তাহলে সেদিন সেটিং তত্ত্ব জিতে যাবে, আর যদি তা নাই শোনা যায়, তাহলে সেটিং তত্ত্ব ছুড়ে ফেলে দেবে মানুষ, এই সংসদীয় গণতন্ত্রে জনতা জনার্দনই তো শেষ কথা বলে।

RELATED ARTICLES

Most Popular