Placeholder canvas
HomeBig newsএকটি বাজির আগুনে ছাই সন্তানের গড় আয়ু

একটি বাজির আগুনে ছাই সন্তানের গড় আয়ু

Follow Us :

একটাই কথা, বাজি (Firecracker) পোড়ানো বন্ধ হোক। তা সে শব্দ হোক কিংবা আলোর বাজি। পরিবেশকর্মীসহ বিজ্ঞানীরাও দাবি তুলেছেন, বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করুক সরকার। বর্তমানে রাজধানী দিল্লির বায়ুদূষণ (Air Pollution) রোজ খবরের শিরোনামে। এই সেদিন ইডেনেও জয়োল্লাসের বাজির শব্দে পুলিশের একটি ঘোড়ার মৃত্যু হয়। দিওয়ালি (Diwali) বা কালীপুজো (Kali Puja) এলে পথের কুকুররাও ভয়ে লুকিয়ে থাকে। শিশু ও বৃদ্ধদের প্রাণান্ত দশা হয়। তাতেও নারকীয় উল্লাসে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আগুনে ছাই হয়ে যায়। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি হয়ে চলেছে বিষের চুল্লি। কিন্তু, এটা সরকারের একার কাজ নয়। আমরা যদি আমাদের উত্তরসূরিদের ফুসফুস থেকে বাতাস কেড়ে নিতে চাই, তাহলে আসুন সমোৎসাহে বাজি পোড়াই। বাতাসে মিশিয়ে দিই বিষাক্ত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর ধাতুকণা। তাই সরকারি নিষেধাজ্ঞা নয়, সকলে মিলে শপথ নিন, দাবি তুলুন— দীপাবলির আলো জ্বলে উঠুক মুক্তমনে, শুদ্ধ চিত্তে। ভাস্বর হোক জ্ঞান, শিক্ষার জ্যোতি। তবেই পরিবেশের আঁধার কাটবে।

আরও পড়ুন: কুন্তলের ফ্ল্যাটে ফের ইডির হানা

কেন দীপাবলি?

রামায়ণ (Ramayana) অনুসারে লঙ্কাজয়ের পর রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যায় ফিরে আসা উপলক্ষে গোটা রাজ্য দীপমালায় সেজে উঠেছিল। দক্ষিণ ভারতে এটা উদযাপন করা হয় কৃষ্ণের নরকাসুর বধ উপলক্ষে। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও দীপাবলি পালিত হয়। হিন্দু নববর্ষ অথবা লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো হয় এই দিনেই। মূলত অশুভ শক্তির বিনাশ ও অন্ধকার (মনের, অশিক্ষার) দূর করে আলোক (জ্ঞান, বুদ্ধি, মুক্তি) উদগীরণের উৎসব দীপাবলি। স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রস্তর ও তাম্রলিপিতেও দীপাবলির নাম রয়েছে।

রাজা হর্ষ, শূণ্ড থেকে বিজয়নগর (হায়দরাবাদ), এমনকী আকবরের আমলে দিল্লিসহ গোটা দেশে দিওয়ালি পালিত হত। আকবর নিজেও অংশ নিতেন উৎসবে। আল বারুনির লেখায় ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বলার বর্ণনা রয়েছে। যদিও ঔরঙ্গজেব সরকারিভাবে দিওয়ালি ও হোলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, কবে থেকে আলোর উৎসব এভাবে শব্দদানবের মোচ্ছবে পরিণত হয়েছিল, তা জানা না গেলেও রাজস্থান ও গুজরাতের প্রাচীন বিবাহ অনুষ্ঠানে ঘটা করে বাজির রোশনাই ছিল চমকপ্রদ।

বাজির জন্ম

করোনার মতো বাজির জন্মও চীনে। প্রথম দিকে বাঁশের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে তার চড়চড় শব্দ শুনে মানুষ উল্লাস করত। গান পাউডার আবিষ্কারের পর তাতে এটা সংযোজিত হয়। চীনের মিং সাম্রাজ্যের কালে বাজির হদিশ মেলে। ভারতেও বাজির আমদানি শুরু হয় চীনের গিরিপথ দিয়েই। তখন তার নাম ছিল মান্দারিন বাজি।

মৃত্যুর মহোৎসব

বাজির সূচনাকালের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান কালের আকাশ-পাতাল ফারাক। কিন্তু এখন সমস্ত রকমের দূষণে ভারী বাতাস, জল, স্থল। এ অবস্থায় একটাও বাজি পোড়ানো আমাদের সন্তানের কয়েক বছরের আয়ু পুড়িয়ে দিয়ে যাবে। সে কারণে আগেও হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে। যেখানে বাজি পোড়ানো বন্ধের আর্জি জানানো হয়েছিল। অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্মিলিতভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোভিডকালে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। ডাক্তারদের মতে, শুধু শব্দবাজিই নয়, সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করা হোক। কারণ বাজি থেকে বাতাসে যে দূষণমাত্রা বাড়ে, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। শুধু যে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, তা নয়, বাতাসে ভারী ধাতুকণার মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষত, আলোর বাজিগুলি শব্দবাজির তুলনায় অতি-দূষণ ছড়ায়। যদিও এই মুহূর্তে ৯০ ডেসিবেলের কম শব্দসম্পন্ন বাজি পোড়ানোয় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ডাক্তারদের অভিমত, দিওয়ালিতে যে পরিমাণ বাজি পোড়ানো হয়, তাতে ২০-২৫ গুণ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশবিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা বলছেন, বাজির ধোঁয়া ও ধূলিকণা মিশে যে ধোঁয়াশা (স্মোগ) তৈরি হয়, তা থেকে ভয়ঙ্কর ধরনের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সরকারকে এ ব্যাপারে অতি সতর্ক থাকতে হবে।

আদালতের চৌকাঠে বাজি

এই অবস্থায় উদ্বেগজনক বায়ুদূষণের জেরে সব রাজ্যের মুখ্যসচিবের রিপোর্ট তলব করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (NGT) অর্থাৎ জাতীয় পরিবেশ আদালত। অক্টোবর ২০ থেকে ১ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ুদূষণ তথ্য নজরে আসে ট্রাইব্যুনালের। তার ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ট্রাইবুনাল রিপোর্ট চেয়েছে। সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, রিপোর্টে তা জানাতে হবে।

দেশের বিভিন্ন শহর ও মহানগরীগুলির বায়ুদূষণ ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে। এই অবস্থায় সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতেই হবে বলে নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের। উল্লেখ্য, দূষণ সূচক (AQI) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে পরিস্থিতি ভালো। ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে থাকলে পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ১০১ থেকে ২০০ হলে পরিস্থিতি মোটামুটি। ২০১ থেকে ৩০০ অবস্থা খারাপ। সূচক ৪০১ থেকে ৪৫০ তে পৌছলে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তথ্য অনুযায়ী অর্ধশতাধিক শহর ও মহানগরীর বায়ুদূষণের অবস্থা খুবই খারাপ অথবা অত্যন্ত উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। যদিও কলকাতা সেই তালিকায় এখনও নেই।

দিওয়ালি পর্যন্ত মুম্বইয়ে সন্ধ্যা সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি ফাটানো যাবে। সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় নির্দেশ জারি করল বোম্বে হাইকোর্ট। বেড়ে চলা দূষণ এবং শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এদিন স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ২৩টি দূষণ পরিমাপক কেন্দ্র সেখানে রয়েছে। তার মধ্যে ১২টি কেন্দ্রর দূষণ সূচক অত্যন্ত খারাপ জায়গায় রয়েছে। এই তথ্যকেও গুরুত্ব দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণ ব্যবস্থাতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। অন্যদিকে, দিল্লির পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে দূষণ সূচক গত পাঁচ-ছয়দিন ধরে সহনীয় মাত্রার বহু উপরে রয়েছে।

অন্যদিকে, দূষণের মাত্রা যখন এই হারে বাড়ছে, তখন এদিনই কেরল হাইকোর্টে দূষণ বিরোধী একটি রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে সিপিএমের সরকার। সিঙ্গল বেঞ্চের ওই রায়ে বলা হয়েছিল, কোনও ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে বাজি পোড়ানোর সম্পর্ক নেই। কোনও ধর্মগ্রন্থেও এর উল্লেখ নেই। কিন্তু, কেরল সরকারের বক্তব্য, ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে বাজি পোড়ানো চিরকালীন একটি প্রথা ও রেওয়াজ। এটাকে বন্ধ করা উচিত নয়।

অন্য খবর দেখুন

Municipality Recruitment Scam | ইডি দফতরে টিটাগড় পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রশান্ত চৌধুরী

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments