কলকাতা: কামদুনি-কাণ্ডে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত সইফুল আলি এবং আনসার আলির আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। নগর দায়রা আদালতে আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি বেকসুর খালাস পেয়েছে। এছাড়া যাওবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নষ্কর ১০ বছর জেল খাটার কারণে শুক্রবার খালাস পেয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে। এদিন বিচারপরি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ বহুলচর্চিত কামদুনি মামলার রায় ঘোষনা করল।
এর আগে নগর দায়রা আদালত মোট ছয় জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তারা হল সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, ভোলানাথ নষ্কর এবং আমিনুল ইসলাম। নিম্ন আদালত সইফুল, আনসার এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। এছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ইমানুল, ভোলানাথ এবং আমিনুলকে। কলকাতা হাইকোর্ট এদিন সইফুল এবং আনসারের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। ভোলানাথ, আমিনুল এনামুল এবং আমিন আলির সাজা বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এই রায়ে হতাশ নির্যাতিতার পরিবার। ওই ঘটনার পর থেকে দোষীদের চূড়ান্ত শাস্তির দাবিতে আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন, নির্যাতিতার ছোটবেলার দুই বন্ধু টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমি কয়াল। হাইকোর্টের এই রায়ে তাঁরাও খুব ভেঙে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই টুম্পা, মৌসুমিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ঘটনার পরে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের মাওবাদী এবং সিপিএম বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে টুম্পা, মৌসুমি সহ যাঁরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন দোষীদের শাস্তির দাবিতে, তাঁদের বিভিন্ন সময় শাসকদলের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ফাস্ট ট্রাক কোর্টে দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
১০ বছর আগে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের পর নৃশংভাবে খুন করার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের ছয় মাস পরই একই ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল বারাসত লাগোয়া কামদুনি। ওই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল আলোড়ন পড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অকুস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলেন।
২০১৩ সালের ৭ জুন বারাসতের কামদুনিতে ওই কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। এই ঘটনায় নিম্ন আদালত তিন অভিযুক্তর ফাঁসি এবং আরও তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল। অভিযুক্তদের তরফে সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাওয়া হয়। মামলা শেষ না হওয়ায় সেই শাস্তি কার্যকর হয়নি।
২০১৬ সালে কামদুনি মামলায় রায় ঘোষণা করে কলকাতা নগর দায়রা আদালত। এই ঘটনায় মোট অভিযুক্ত ছিল ন’জন। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি ও নুর আলি বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। বাকি ছ’জন সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর ও আমিনুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে আনসার, সইফুল ও আমিনের ফাঁসির নির্দেশ হয়। ইমানুল, ভোলানাথ এবং আমিনুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টে দোষীদের সাজা মুকুব করার জন্য আবেদন জানান সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবিরা। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে। নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে প্রথম দিন থেকেই দুই আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এবং আইনজীবী শীর্ষেন্দু সিংহরায় লড়াই করে চলেছেন।
ওই মামলা চলাকালীন মোট ১৪ জন সরকারি আইনজীবী বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হন। সেই সময় প্রথম সারির সরকারি আইনজীবীরা এই মামলায় দাঁড়াতে চাননি। অনেক সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে অভিযুক্ত পক্ষ সরাসরি যোগাযোগ করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।