skip to content
Wednesday, April 23, 2025
HomeCurrent Newsচতুর্থ স্তম্ভ: কুমীর কাঁদতে থাকে

চতুর্থ স্তম্ভ: কুমীর কাঁদতে থাকে

Follow Us :

কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের মেলা………তার মধ্যে প্রধান সেবক, কাম চৌকিদার, কাম চায়ওয়ালা নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী কাঁদলেন। প্রকাশ্যে তিনি আসেন না, তাই এক ভিডিও কনফারেন্সে তাঁকে দেশের মানুষ কাঁদতে দেখলো। ক্যারেক্টর বিল্ডিং অফ অ্যান অ্যাক্টর, স্তানিস্লাভিস্কির লেখা অভিনেতার চরিত্র নির্মাণ, অভিনেতাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য বই। উনি অভিনেতা হতে চান কিন্তু পড়াশুনো বড্ড কম, তাই এ বই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পড়া নেই, এবং পড়া থাকলেও যে খুব একটা সুবিধে হত, তাও নয়, কারণ উনি যে কখন কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন, কখন যে চা-ওলা, কখন যে ফকির, কখন যে চওকিদার, কখন যে প্রধান সেবক, কখন যে সন্ন্যাসী কেউ জানে না, এবং সব থেকে বড় কথা হল উনিও জানেন না। জানেন না বলেই পকেটে ৭০/৮০ হাজারের কলম রেখে অনায়াসে বলেন, অরে হম তো ফকির হ্যাঁয় জী, ঝোলা লেকে চল পড়েঙ্গে, কেউ বলে দেয়নি, এই যে তোমার ওই টসটসে চেহারা, পকেটে ম ব্লাঁ নিয়ে কার্টিয়ের গগলস নিয়ে ফকির হওয়া যায় না। তো মোদ্দা কথা দেশের মানুষ, বেশিরভাগ মানুষ জেনে ফেলেছে যে আপনি একজন অখাদ্য, বাজে, অভিনেতা। তো সেই বাজে অভিনেতা কাঁদলেন, কান্না দেখে কেউ কেউ বললো কুম্ভিরাশ্রু। এখন গবেষণা বলছে কুমির যখন খায়, তখন কাঁদে, কেন? খেতে খেতে কাঁদে কেন? এমন সৃষ্টিছাড়া ব্যবহারের কারণও জানিয়েছেন, বিজ্ঞানীরা। বলছেন খাবার সময় কুমির হিস হিস করে আওয়াজ করে, আসলে খুব জোরে শ্বাস নেয়, নাসারন্ধ্র দিয়ে সেই বাতাস গিয়ে টিয়ার গ্ল্যান্ড, অশ্রুথলিতে চাপ দেয়, চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে। তার মানে এক অভুক্ত কুমির যখন এক মানুষ বা ছাগশিশুকে পেয়ে মনের সুখে আহার করে, চিবিয়ে চিবিয়ে খায়, যখন তার প্রতিটি ইন্দ্রীয় সুখে ভরভর, তখন তার চোখ দিয়ে জল বের হয়, তখন সে কাঁদে। এক কথায় কুমিরের আনন্দ হলে কুমির কাঁদে। সেই কুমির থেকে প্রেরণা পেয়েছেন আমাদের নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী, তিনি সেই ছোট্টবেলায় তাঁর বাড়ির সামনে মগরমচ্ছ ধরেছিলেন, এখন পুকুরে মগরমচ্ছ তো জ্যান্তই ছিল, সেই মগরমচ্ছ মানে কুমিরের কাছ থেকেই সম্ভবত তিনি প্রেরণা পান, তারপর থেকেই তিনি আনন্দ পেলেই তাঁর চোখ দিয়ে জল পড়ে। এবং এই প্রথম নয়, বহুবার বহুক্ষেত্রে তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে, তাকে এতবার কাঁদতে দেখে বহু মানুষজন যারা আগে “অ্যাই ছিঁচকাদুনির মত কাঁদছিস কেন? বা অ্যা মোলো যা মেয়েদের মত কান্না জুড়ে বসল বলতেন, তাঁরা এখন বলছেন, অ্যাই মোদীর মত কাঁদছিস কেন? আচ্ছা তিনি কতবার কেঁদেছেন? আর কতবার, যখন সত্যিই কান্না পাওয়ার কথা তখন কতবার কাঁদেননি? আসুন দেখে নেওয়া যাক। তাঁর ইতিহাস বড্ড কম দিনের, মানে তাঁর স্কুলে পড়ার খবর উনি বলেছেন, কিন্তু মাস্টারমশাইদের খবর আমরা পাইনি, তিনি চা বিক্রি করেছেন ট্রেনের প্যাসেঞ্জারদের চা খাইয়েছেন, কিন্তু সেই স্টেশনের খবর মেলেনি, এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন করেছেন কিন্তু সেই এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্সটা কী তা জানা যায়নি। এই করতে করতে যখন তাঁর খবর পাওয়া গেলো, তখন তিনি গুজরাটের আরএসএস প্রচারক, গুজরাটে বিজেপির নেতা। আর কিছু দিনের মধ্যেই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবছেন গুজরাট হিংসার সময় কেঁদেছিলেন? না, এক মূহূর্তের জন্যও নয়, তাঁকে কাঁদতে দেখা গেলো ১৪ জানুয়ারি ২০০৪ এ, ভুজে, ২০০১ এ ভূমিকম্পের সময় জি কে হাসপাতাল ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল, সেই হাসপাতাল আবার তৈরি করা হল, তার উদ্বোধনের সময়, সভায় হাজির অটল বিহারী বাজপেয়ী, মাথায় রাখুন, গুজরাট হিংসার পর প্রকাশ্যেই অটল বিহারী বাজপেয়ী হিংসার নিন্দা করে রাজধর্ম পালনের কথা বলেছিলেন, কাজেই সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়েছিল, সেদিন সভায় প্রচুর সাংবাদিক এসেছিল, প্রধানমন্ত্রী বলার আগেই মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই ভূজ ভূমিকম্পের মৃত্যু ধ্বংসের কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কাঁদলেন, পরদিন গুজরাটের সমস্ত কাগজে অটলজি নয়, মোদীজির ফ্রন্ট পেজ ছবি, মিশন সাকসেশফুল।
এরপর আবার তাঁকে কাঁদতে দেখা গেলো ২০১৪ তে, নির্বাচনের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং এনডিএ’র বিপুল জয়। বিজেপি পার্লিয়ামেন্টারি দলের সভা, প্রথম পার্লামেন্টে ঢুকলেন মোদীজি, সাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে। তারপর ভাষণ দিতে গিয়ে ঝরঝর করে কাঁদলেন, গলা বসে এল, বিজেপি দল আমার মা, ইত্যাদি এবং কান্না। পরদিন ফ্রন্ট পেজ ছবি, দেশ দেখল এক কান্নায় ভেঙে পড়া রাষ্ট্রনায়ককে, আহা আহা উহু উহু।
এরপর ফেসবুক টাউন হল ইভেন্ট, মেনলো পার্ক, ক্যালিফোর্নিয়া। সামনে বসে মার্ক জুকেরবার্গ, মোদীজি তাঁর ছোটবেলার কথা বলছেন, হঠাৎ ঝরঝর করে কাঁদলেন, তাঁর মা র কথা বলতে গিয়ে, তাঁর মা অন্যদের বাড়িতে বাসন মেজে, কাজ করে তাঁকে বড় করেছে, সেই মায়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি কাঁদলেন। কিন্তু সমস্যা হল, এই ঘটনার বহু আগে সাংবাদিক, নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের, তাঁর বই, মোদী, দ্য ম্যান লিখে ফেলেছেন, মোদীজির সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা বলার পরেই লিখেছেন, তিনি জানালেন এরকম কিছু তিনি এর আগে শোনেননি, তাঁর বইতেও এই ঘটনা নেই। মানে ওই ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০টার আগে তাঁর মা যে অন্যদের বাড়িতে কাজ করে তাঁকে মানুষ করেছেন, তা কেউ জানত না।
এরপর আগস্ট ২০১৬ তে স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু প্রমুখ স্বামীর মৃত্যুর পরে শোকসভায়, আবার তাঁর দারিদ্রের গল্প, যা আগে কেউ শোনেনি। দিল্লিতে অক্ষরধাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ে এই প্রমুখ স্বামী নাকি তাঁর শিষ্যকে দিয়ে ওনার কাছে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন, যাতে ওই অনুষ্ঠানে তাঁকে খালি হাতে না যেতে হয়। তিনি কাঁদলেন।
এরপর বেশিদিনের গ্যাপ নয়, ১৩ নভেম্বর গোয়াতে গিয়ে ভাষণ দিলেন, তার আগেই ডিমনিটাইজেশনের ভাষণ দিলেন, মাথায় রাখুন সারা দেশ এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে, দোকান বন্ধ ব্যবসা বন্ধ, ছোট শিল্প বন্ধ, বিশ্বের অর্থনীতিবিদরা বলছেন উইথড্র করুন, ফিরিয়ে নিন এই সাংঘাতিক সিদ্ধান্ত। তিনি ভাষন দিলেন। তিনি নাকি ঘর পরিবার সব দেশের জন্য ত্যাগ করেছেন, কবে করলেন? কেনই বা দেশের জন্য তাঁকে ঘর পরিবার ছাড়তে হল, তাও তো কেউ জানে না। কিন্তু তিনি কাঁদলেন, এবং বললেন, পঁচাশ দিন সময় দিজিয়ে, কেনরে ভাই? ৫১ বা ৬০ নয় কেন? যাই হোক পঁচাশ দিন সময় দিজিয়ে, যদি সিদ্ধান্ত ভুল হয় তাহলে যে শাস্তি দেবেন, মাথা পেতে নেবো। ৫০ কেন? ৫ বছর হতে চললো, তিনি ডিমনিটাইজেশন নিয়ে আর কোনও কথাই বলেন না, না একটা কথাও নয়। আর সেই ডিমনিটাইজেশনের পর থেকে আমাদের অর্থনীতি নীচে নামতে শুরু করেছে, এখনও নামছে, তাতে কী? উনি তো কেঁদেছেন, ছবিও উঠেছে।
বছরে একবার করে তো কান্নার ছবি ছাপাতেই হবে, এরপরের কান্না ২০১৭, ডিসেম্বরে, টেনেটুনে গুজরাটে জয় এল বিজেপির, তারপর, দলের সাংসদদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে এবার একবার নয়, তিন তিনবার কাঁদলেন। কত লড়াই করে তিনি গুজরাটের এক অখ্যাত গ্রাম থেকে আজ এই জায়গায়, আবার স্মৃতিচারণ, আবার কান্না। সেই ভাষণেই তিনি মনে করিয়ে দিলেন, এর আগে বিজেপির কোনও নেতা বিজেপির এতগুলো জয় এনে দেয় নি। আবার কান্না। আবার বাৎসরিক কান্না শোনা গেলো ২০১৮ ২১ শে অক্টোবর, দিল্লিতে ন্যাশন্যাল পোলিস মেমোরিয়াল উদ্বোধনের সময়ে তিনি কেঁদে আকুল হলেন, আহা, এর আগে পুলিশদের কথা কেউ ভাবে নি, তা না হলে এই মেমোরিয়াল তো কবেই হবার কথা, পুলিশ শহিদদের কথা বলতে গিয়ে তিনি সেই বছরের কান্নার কাজটা সেরে নিলেন।
এরপর ২০১৯ এ আবার বিরাট জয়, এবার বিজেপিই ৩০৩। না কোনও কান্না নয়, এ শুধু গানের দিন। কাশ্মীর অবরুদ্ধ হল, মাসের পর মাস, না তিনি কাঁদেননি, দিল্লির হিংসা, না তিনি কাঁদেননি, পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটেছে হাজার মাইল বাড়ি ফিরতে, না তিনি কাঁদেননি, ট্রেনে টুকরো টুকরো হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ, না তিনি কাঁদেননি, ভয়াবহ বেকারত্ব নেমে এসেছে, চাকরি চলে গেছে মানুষের, না তিনি কাঁদেননি। তিনি কাঁদেননি ভয়ঙ্কর এই দ্বিতীয় ওয়েভের ফিরে আসায়, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মরছে, তিনি কাঁদেননি, লাশ ভাসছে গঙ্গার জলে, তিনি কাঁদেননি। বাংলায় হেরে ভূত, তিনি কাঁদেননি। কিন্তু চাকা ঘুরছে, ২০১৯ এর জয় ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে, বিসর্জনের বাজনা বাজছে। কুমির কাঁদতে থাকে আয় আমাকে নাম নামা বলে, তিনি আবার কাঁদলেন। এবার মন কি বাত বলতে গিয়েও নয়, বেনারসের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে তিনি কাঁদলেন, কত স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছে বলে। সে কান্না বড্ড মেকি, বড্ড বাজে অভিনয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Video thumbnail
Amarnath Temple | অমরনাথ যাত্রার আগে ঝাঁঝরা পর্যটকরা, ভ/য়াবহ হামলা, দেখুন কী অবস্থা
01:28:54
Video thumbnail
Mamata Banerjee | বড় ঘোষণা কবে মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী? দেখুন এই ভিডিও
01:43:26
Video thumbnail
Narendra Modi | মোদির সৌদি আরব যাওয়া নিয়ে বি/স্ফো/রক ওয়াইসি, কী বললেন দেখুন
01:10:35
Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'কীভাবে ধুলিয়ানে চক্রান্ত করেছে ফাঁ/স করে দেব'
01:03:35
Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'এই গরমে কেন বসে আছেন? স্কুলে যানমাইনে পাবেন!' চাকরিহারাদের আর কী বললেন মমতা?
01:20:45
Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'স্কুলে ফিরুন' চাকরিহারাদের মমতার বার্তা
34:45
Video thumbnail
Gold Price Today | Gold Price Hike | সোনার দাম ১ লাখ টাকার বেশি, আর কত বাড়বে?
01:55:07
Video thumbnail
Mamata Banerjee | চাকরিহারাদের কী বার্তা মমতার?
40:46
Video thumbnail
Sharad Pawar | Ajit Pawar | শরদ ও অজিত পাওয়ারের একান্ত বৈঠক, কোন সমীকরণে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি?
01:03:32
Video thumbnail
Mamata Banerjee Speech | মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক, দেখুন সরাসরি
03:55:15