মেদিনীপুর : অতি বর্ষণের জেরে চরম সমস্যার সম্মুখীন পশ্চিম মেদিনীপুর। মেদিনীপুর পৌর এলাকাতেই জলবন্দি প্রায় আড়াইশো পরিবার। দু’দিন ধরে চেষ্টার পর জল বের করার জন্য বড় নিকাশি নালা কাটতে হয়েছে পৌরসভাকে। একটানা বৃষ্টির ফলে জেলা জুড়ে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ মানুষ বন্যা বিপর্যস্ত পরিস্থিতির শিকার।
মেদিনীপুর পৌরসভার অন্তর্গত ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গত ৫ দিন ধরে আড়াইশোর বেশি বাড়ির মানুষ জনবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। মহাতাবপুর, পালবাড়ি এবং সেই সংলগ্ন এলাকা এখনও জলমগ্ন রয়েছে। যার সব থেকে বড় কারণ নিকাশি সমস্যা। বেশ কিছু বাড়ির ভেতরে জল জমে রয়েছে। যে কারণে বাড়ির বাসিন্দারা আসবাবপত্র রক্ষা করতে পাম্প ভাড়া করে জল বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু জল বের করার পর গত ২ দিনের বৃষ্টির ফলে পুনরায় ঘরের ভেতর জল ঢুকে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন : টানা বৃষ্টির জের, সঙ্কটে পশ্চিম মেদিনীপুর
পৌরসভার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় দমকল বাহিনী দিয়ে পাম্পিং করে জল বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে দুদিন ধরে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। তারই বিকল্প হিসাবে পিচ রাস্তা কেটে গভীর নিকাশি নালা তৈরির জন্য খননকার্য শুরু হয়েছে বুধবার সকাল থেকে। মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন “এত প্রবল বৃষ্টি দীর্ঘ ৩০ বছরে হয়নি। উল্টে জনবসতির চাপে বহু নিকাশি নালা বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দমকল কর্মীদের সাহায্য নেওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত নিকাশির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সব রকম তৎপরতা রয়েছে। বহু মানুষকে উদ্ধার করে খাদ্য সামগ্রী ও ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন : প্রবল বৃষ্টিতে বাড়ি ধসে মেদিনীপুরে মৃত ৭
মেদিনীপুর পৌর এলাকা ছাড়াও ঘাটাল পৌরসভা, দাসপুর, কেশপুর, সবং, পিংলা ও অন্যান্য এলাকা এখনও জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জেলাতে ৬ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত। ৮৬ হাজার বাড়ি নষ্ট হয়েছে। যাদের বাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। এই বন্যা পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। জেলাতে প্রায় ৩০০টি ত্রাণ শিবিরে ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ৬৯ টি স্পিডবোট উদ্ধার ও ত্রাণ সরবরাহর কাজে নামানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলার সব আধিকারিক এবং স্বাস্থকর্মীদের জেলা ছাড়তে নিষেধ করেছেন জেলাশাসক।