1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
Karnataka Vote Results 2023 | কর্নাটকে বিজেপি হারলেও হিন্দুত্ব ঝাড়েবংশে বাড়ছে, অশনি সংকেত
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published by:  শুভেন্দু ঘোষ
  • Update Time : 22-05-2023, 12:52 pm

বেঙ্গালুরু: হিটলারের উত্থান ও পতন, দুটোরই নেপথ্যে ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ, জাতিবিদ্বেষ ও পরধর্ম অসহিষ্ণুতা। গোটা জাতিকে তিনি জাতের গরিমার মাদক খাইয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন। ঠিক যেমনটা এখন চলছে এদেশে। ঘুমন্ত শিশুকেও দুধের মধ্যে হিন্দুত্বের ভিটামিন গিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কর্নাটক বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর যখন দেখা গেল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজেপিকে গোহারা করেছে, তখনও হিন্দুত্বের করালছায়া পুরোপুরি পাশ কাটাতে পারেনি গান্ধী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। বিজেপির ভোটের হার বলছে, লিঙ্গায়ত সম্প্রদায় আজও পদ্ম-প্রীতি ত্যাগ করে উঠতে পারেনি। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, লিঙ্গায়তরা বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করতে চলেছে। কিন্তু, ফলাফল বলছে বিজেপি যা হারিয়েছে, তার সিংহভাগই হচ্ছে দলিত ভোট।

জাতপাতের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত বিজেপি অনেক চেষ্টা করেও দলিতদের বুকে টানতে না-পারায় এই ফল হয়েছে। এমনকী জেতার পরেও কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ডিকে শিবকুমারকে (যিনি ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের) উপমুখ্যমন্ত্রী না করে, কোনও দলিতকে ওই আসন দেওয়ার দাবিও উঠেছে। এও হুঁশিয়ারি উঠে এসেছে যে, তেমনটা না-হলে কংগ্রেস পরবর্তীকালে সরকার চালাতে মুশকিলে পড়তে পারে। ফলে কর্নাট রাজনীতিতে দলিত ভোটের গুরুত্বপূর্ণ মহিমা বিজেপি নেতৃত্ব উপেক্ষা করার মাশুল গুনতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: Kedarnath | ৬০ কুইন্টাল ওজনের ব্রোঞ্জের ওম স্থাপন করা হচ্ছে কেদারনাথ ধামে

জাতপাতের ভোট বিভাজনে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মাদিগা, লাম্বানি ও নায়ক পদবিধারীদের সমর্থন হারিয়েছে তারা। প্রাচীনকালে মাদিগারা ছিল চর্মকার, এখন মূলত কৃষিই মুখ্য পেশা। লাম্বানি বা বানজারা শ্রেণির বহু মানুষ এরাজ্যেও থাকেন। বিজাপুরের রাজাদের কাছ থেকে নায়ক উপাধি পাওয়া ওই পদবিধারীরা মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান তিন ধর্মেরই হন। তা সত্ত্বেও লিঙ্গায়তদের সঙ্গে হিন্দুত্বের অচ্ছেদ্য বন্ধন যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা।

কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচন সেই অর্থে শুধুমাত্র রাজ্যের জন্য নয়, গোটা দেশের পক্ষেও ইঙ্গিতবাহী। চার বছর ক্ষমতায় থাকা বিজেপি যেভাবে হিন্দুত্বের ধুনোয় রাজ্যের মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আদতে তার কী ফল হল! মোদি-শাহ জুড়ির সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিতে অর্থশক্তি কি রাজধর্ম পালনে ব্যর্থ সরকার, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারি এবং জনজীবনের অন্যান্য সমস্যাকে হারাতে পারল? লিঙ্গায়ত ও অন্যান্য দলিত মানুষের সামনে কি বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হতে শুরু করল?

কংগ্রেস আগামী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এলেও তাতে কি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসান ঘটল? মনে হয় তা হয়নি। মনে রাখতে হবে, ২০১৮ সালের ভোটের পরও বিজেপি এক বছরের মধ্যে ক্ষমতা দখল করেছিল। যার নাম ছিল 'অপারেশ কমলা'। কংগ্রেস এবং জেডিএস থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করে বিজেপি। এ বছর কংগ্রেস পেয়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট। যা ২০১৮ সালের থেকে ৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, বিজেপি গতবারের তুলনায় ৪০ আসন হারিয়ে মাত্র ৬৬টি আসন পেলেও ভোটের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। গতবারের মতোই ৩৬ শতাংশ ভোট ধরে রেখেছে।

সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ভোটার বিজেপিকে বেছে নিয়েছিলেন। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। এবছর কংগ্রেস আর মাত্র ২৭ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছে। অথচ বিজেপির দিকে ৮ লক্ষ মানুষ অতিরিক্ত ঝুঁকেছেন। সুতরাং বিজেপি আগের বারের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে এবং প্রাপ্ত ভোটের হার একই রেখে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপির ভোটের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সে বছর বিজেপি পেয়েছিল ৪.১৪ শতাংশ। পরের বিধানসভায় বেড়ে হয়েছিল ১৬.৯৯ শতাংশ। ১৯৯৯ সালে ২০.৬৯, ২০০৪-এ ২৮.৩৩, ২০০৮-এ ৩৩.৮৬ এবং ২০১৮ সালে পেয়েছিল ৩৬ শতাংশ। এবারেও সেটাই পেয়েছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে কীভাবে কর্নাট রাজনীতিতে হিন্দুত্ব ধীরে ধীরে জাল বিস্তার করছে।

লিঙ্গায়ত ভোট কীভাবে বিজেপির দিকে ভিড়ল?

১৯৮৯ সালে জনতা দল সরকারকে হটিয়ে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। সেবার ১৭৮টি আসন এবং ৪৩.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের বীরেন্দ্র পাতিল। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাজীব গান্ধী তাঁকে গদিচ্যুত করেন। তাতে লিঙ্গায়তরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয় এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে। পরের ভোটেই সেই ধাক্কা খায় কংগ্রেস। কিন্তু, যেমনটা মনে করা হয়েছিল এবারের ভোটে লিঙ্গায়তরা সেভাবে বিজেপিকে নিরাশ করেনি। কারণ বিজেপির ভোটের হার একই রয়েছে। লিঙ্গায়তরা সঙ্গ ছাড়লে তা কমে যেত। দ্বিতীয়ত বেশিরভাগ ময়নাতদন্তই বলছে, গ্রামীণ, দরিদ্র, মহিলা, দলিত, আদিবাসী এবং মুসলিমরা কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি উচ্চবর্ণ এবং লিঙ্গায়তদের ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রেখেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ কর্নাটকের মতো জায়গায় ভোক্কালিগাদের ভোটও করায়ত্ত করেছে।

আসলে দলিত শিবিরে বিজেপির সংরক্ষণ তত্ত্বের জেরে বিমুখ হয়েছে লাম্বানি ও মাদিগা সম্প্রদায়ের লোকজন। লাম্বানিরা প্রায় ৬৩টি কেন্দ্রের ভাগ্য নির্ধারণ করে। ফল বলছে লিঙ্গায়তদের শীর্ষ নেতা জগদীশ শেট্টারের মতো দাপুটে বিজেপি নেতা ভোটের কয়েকদিন আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েও তাঁরই শিষ্য যুব বিজেপির লিঙ্গায়ত নেতার কাছে হেরে ভুট্টা হয়ে গিয়েছেন। যে অভিযোগে তিনি বিজেপি ছেড়েছিলেন, তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষকেই তা বোঝাতে পারেননি। অথচ, হিন্দুত্বায়নকে বিজেপি সুকৌশলে সামাজিক, আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক অভিজাত মহলে ছড়িয়ে দেওয়ায় তা জনগণের মধ্যেও জাল ফেলেছে।

মোটের উপর এটা নির্মম সত্য যে, কংগ্রেস সরকার চালানোর মতো বিপুল জয় পেলেও তাতে প্রমাণ হয় না, সাম্প্রদায়িক শক্তির পরাভব ঘটেছে। কারণ রাজ্যের মানুষ যদি সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্বের কর্মসূচির বিরাগভাজন হতো তাহলে ২০১৮ সালের তুলনায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক ফাঁকা হতো। এবার কিন্তু তা হয়নি। তার প্রমাণ গত পাঁচ বছরে রাজ্যে মোট ১৬৩টি সাম্প্রদায়িক মারামারি ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। সুতরাং, বিজেপির হারের মূল কারণ পূর্বতন সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। বিনামূল্যে চালের কোটা কমিয়ে দেওয়ায় দরিদ্র ও গ্রামীণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাশাপাশি মুসলিম এবং তফসিলিরা কৌশলগতভাবেই পদ্ম চিহ্নকে বয়কট করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পার্টি, হিন্দুত্ব নয়। যা আজও ভয়ঙ্কর বিপদের বার্তাবহ।

Tags : Siddaramaiah D K Shivakumar Sonia Gandhi Mallikarjun Kharge Karnataka Opposition unity BJP Congress Hindutva Dalit Vote Muslim Vote SCST

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.