নয়াদিল্লি: একদিকে মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্তি, অন্যদিকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন-বিতর্ক নিয়ে লোকসভা ভোটের বছরখানেক আগেই রাজনৈতিক উত্তাপ চড়ল রাজধানী দিল্লিতে। 'অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ,' 'গণতন্ত্রের উপর আঘাত' এইসব চোখা চোখা শব্দচয়ন করে বুধবার দেশের ১৯টি বিরোধী দল এক যৌথ বিবৃতিতে সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা ঘোষণা করে। অন্যদিকে, এদিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
অমিত-বাক্য অনুযায়ী, নতুন সংসদ ভবনের নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া ৬০ হাজার কর্মীকে সংবর্ধনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই ভবন। এদিনই চোল রাজবংশের ঐতিহ্য ও পরম্পরার প্রতীক 'সেঙ্গল' বা আয়ূধ বা রাজদণ্ড স্থাপন করা হবে সংসদ ভবনে। যা জাতির স্বাধীনতার প্রতীকও বটে। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর হাতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তামিল ভাষায় এর অর্থ সম্পদে পরিপূর্ণ। এখন যে সংসদ ভবনে সভা বসে, তার উদ্বোধন হয়েছিল ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি। উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বড়লাট লর্ড আরউইন।
এত তোড়জোড়-জাঁকজমক সত্ত্বেও উদ্বোধনে ঘরের লোক ছাড়া বাইরের শিবিরের কেউ থাকবেন না বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস সহ ১৯টি বিরোধী দল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংবিধানের মূল সুর ও ধ্যানধারণা ভঙ্গ হয়েছে। সরকার গণতন্ত্রকে ভয় দেখাচ্ছে। কংগ্রেস ছাড়া যারা এই যৌথ বিবৃতিতে সই করেছে তারা হল, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, জনতা দল ইউনাইটেড, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠী, সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, মুসলিম লিগ, জেএমএম, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কেরালা কংগ্রেস, এমডিএমকে, ভিসিকে এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল।
যদিও অ-বিজেপি দলগুলির মধ্য়ে তেলুগু দেশম পার্টি, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভারত রাষ্ট্র সমিতি, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, বিজু জনতা দল বিরোধী শিবিরে নেই। শাসকদলের পক্ষ থেকে অবশ্য এখনও অনুষ্ঠান বয়কট করা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সিদ্ধান্ত বদল করা আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মিম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসিও জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা উদ্বোধন না করে যদি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন, তাহলে আমরাও অনুষ্ঠান বয়কট করব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান তাই শুধু নয়, তিনিই সংসদের অধিবেশন ডাকেন, ভাষণ দেন। সংক্ষেপে বলা যায়, রাষ্ট্রপতি ছাড়া সংসদ অচল। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে না ডেকে রাষ্ট্রপতির অমর্যাদা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এহেন অগণতান্ত্রিক কাজ নতুন কিছু নয়। বিরোধী দলের সদস্যদের সংসদপদ খারিজ হয়েছে। দেশের মানুষের হয়ে কথা বলতে গেলেই তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। শাসকদলের পক্ষ থেকে সংসদের সভা পণ্ড করা হচ্ছে। কৃষি আইন সহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইন বিতর্ক ছাড়াই পাশ করানো হয়েছে। সংসদীয় কমিটিগুলিকে পঙ্গু করে রাখার দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
সংসদ ভবন নিয়ে বিরোধী ঐক্য এককাট্টা হলেও তা নিয়ে একটুও বিচলিত নয় বিজেপি। মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্তি নিয়ে বিরাট কর্মসূচির ডালা সাজিয়ে পুরোদমে লোকসভা ভোট ও এ বছরে হতে চলা তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে নামছে গৈরিক বাহিনী। আগামী ৩০ থেকে ৩০ জুন একমাসব্যাপী মোদির সাফল্য তুলে ধরে প্রচার চলবে দেশজুড়ে। যার শুরুই করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ অথবা বিধানসভা ভোটের তাল ঠুকতে থাকা রাজস্থানের মাটিতে প্রথম জনসভা করে প্রচারের ফিতে কাটবেন মোদি। এরপর একমাস ধরে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, জেপি নাড্ডাসহ প্রবীণ নেতারা নিদেনপক্ষে ৫০টি জনসভা করবেন। বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ২৫০টি লোকসভা এলাকাকে এই জনসভার অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪২টি। আর ক্ষমতায় ফেরার ম্যাজিক ফিগার হচ্ছে ২৭২টি আসন। অতএব, ভোটের অন্তত এক বছর আগেই দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রেই প্রচারে নেমে পড়তে চলেছে শাসকদল।
শেয়ার করুন