কলকাতা: কয়েকদিন আগেই ফেডারেশন এবং পরিচালক গিল্ডের দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল টলিপাড়ায়। দফায় দফায় বৈঠক, নানান আলাপ আলোচনার পর অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পাওয়া যায় সমাধান সূত্র। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নজরে একাধিক নাট্যদল। আচমকাই রাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের রেপার্টরি অনুদান বন্ধ করল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। তালিকায় রয়েছে মেঘনাদ ভট্টচার্য (Meghnad Bhattacharya), দেবেশ চট্টোপাধ্য়ায় (Debesh Chatterjee), পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় নাট্য ব্যক্তিত্বেরও।
জানা যাচ্ছে, সারা দেশের একাধিক নাট্যদলের উপরেই কোপ পড়েছে। তার মধ্যে কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে এ রাজ্যের প্রায় ৩০টি দল রয়েছে। অনুদান বাতিলের দলগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘সায়ক’, ‘প্রাচ্য’, ‘মুখোমুখি’-র মতো শহরের অতি পরিচিত নাট্যদল। তেমনই আবার রয়েছে, ‘কল্যানী নাট্যচর্চা’, ‘অশোকনগর নাট্যমুখ’, ‘গোবরডাঙা শিল্পায়ন’, ‘মহিষাদল শিল্পকৃতি’-র মতো জেলার দলও। অভিযোগ উঠেছে, এইসব দলের সদস্য বা কর্ণধারদের কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী অবস্থান দেখেই তাঁদের অনুদান সরিয়ে বঞ্চনার মুখে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার তাসনিয়ার সঙ্গে জুটি বাঁধছেন দেব
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন কারণে এরাজ্যের বেশ কয়েকটি নাট্যদলের অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। এর নেপথ্যে নাট্য ব্যক্তিত্বরা রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। রেপার্টরি অনুদান বন্ধ প্রসঙ্গে নাট্যদলের কর্ণধাররা আগামী ৫ অগাস্ট প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবি রেখেছেন। জানা যাচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে ঘটে চলা এই অবস্থার সমাধানের জন্য এদিন একত্রিত হতে চলেছেন বাংলার শিল্প সহায়ক ব্যক্তিত্বরাও।
অনুদান বন্ধ প্রসঙ্গে ‘সায়ক’ নাট্যদলের কর্ণধার মেঘনাদ ভট্টাচার্য কলকাতা টিভিকে জানিয়েছেন, ”১৮ বছর ধরে কেন্দ্রের অনুদান পাচ্ছিলাম। কিন্তু এবার তা বন্ধ হয়ে গেল। আমার চিন্তা হচ্ছে, যেসব ছেলে গুলো মাসে ছ’হাজার টাকা পেয়ে থিয়েটারটা মন দিয়ে যত্ন করে করতো তারা হয়তো ভরসা হারাবে। কেন্দ্রের থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে একেক জনকে একেকরকম কারণ দেখানো হয়েছে। আমার ধারণা, এখান থেকে কেউ একটা তালিকা বানিয়ে দিয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্র যাদের তৃণমূল বা বামপন্থী মনে করেছে তাদের বাদ দিয়েছে।” বিজেপি সরকারের পাঠানো স্ক্রিপ্টে নাটক না করাটাও অনুদান বন্ধের কারণ হতে পারে বলেও মনে করছেন মেঘনাদ বাবু।
অন্যদিকে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলের কর্ণধার তিনি এই প্রসঙ্গে কলকাতা টিভিকে জানিয়েছেন, “আমরা নাকি সেল্ফ রিলায়েন্ট আর সাসস্টেনেবল দল। বাড়ি ভাড়া করে রিহার্সাল দিতে হত। আমরা যে ১৫ জনের গ্রান্ট পেতাম, ১৫টা ছেলেকে কিছু দিয়ে চালাতাম। একটা কিছু প্রোভাইড করতে পারতাম। থিয়েটারের তো এমনিতেই টাকা নেই। সেটা এরা যদি হঠাৎ বন্ধ করে দেয়, আমরা তো অথৈ জলে পড়লাম। এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ করল। আমার কাছে বিষয়টা খুব অদ্ভুত লাগছে। বাবা চলে যাওয়ার পরেও আমরা কাজ বন্ধ করে দিইনি। একটার পর একটা ভালো কাজ করে গিয়েছি।” তবে এখনই হাল ছাড়ছেন না সৌমিত্র কন্যা। তিনি বলেছেন, “আমি কখনই থিয়েটার থামাব না। জীবনের সবথেকে কঠিন সময়েও আমি থিয়েটার করে গেছি, এখনও করে যাবো।”
দেখুন বিস্তারিত খবর