
করোনার কবলে পড়ে রোজনামচার অনেক কিছুই বদলে গেছে। সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে সরকারী কোভিড নির্দেশ মেনে চলছে শ্যুটিং। গতবছর দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে যখন শ্যুটিং শুরু হয় তখন অভিনেতাদের মধ্যে ভয় ছিল কস্টিউম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে।কারণ পোশাকের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পরার সম্ভবনা রয়েছে। তখন শ্যুটিংয়ের ইউনিট থেকে ঠিক করা হয় , অভিনেতারা কস্টিউম নিজেদের বাড়ি থেকেই নিয়ে আসবে। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। কোভিড মোকাবিলায় যেমন বেশিরভাগ শিল্পীদের অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন , সঙ্গে স্যানিটাইজেশন এর উপর নজর দেওয়া হয়েছে। করোনার প্রভাব কস্টিউম ডিজাইনারদের কাজের উপরেও পড়েছে। এই বিষয়ে বেশকিছু কস্টিউম ডিজাইনার ও অভিনেতাদের সঙ্গে কথা বলে বর্তমান পরিস্থিতির সম্পর্কে জানা গেল।
কস্টিউম ডিজাইনার অভিষেক রায় এই মুহূর্তে ‘একান্নবর্তী’ ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। তিনি জানালেন, ” আমি টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ননফিকশন এর কাজ করছি । তবে যেকোন কাজের ব্যপারেই স্যানিটাইজেশন খুব ভাল করে করছি। কিছুক্ষেত্রে দুদিন ব্যবহারের পর তা ধুয়ে আনছি। আর ব্যবসার অবস্থা খুব ভাল নয়, টেলিভিশন সিরিয়ালের ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়েনি, তবে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ এর শ্যুটিং চললেও বাজেট অনেকটাই কমে গেছে, কারণ বহু ছবি এখনও মুক্তির অপেক্ষায়। তাই কম বাজেটের কাজ করতে হচ্ছে। এটা একটা সমস্যা,যেটা সহজে কাটবে বলে মনে হচ্ছেনা, এই কোভিড পরিস্থিতি একটু আয়ত্তে এলে হয়তো আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে”। আর একজন কস্টিউম ডিজাইনার সাবর্নী দাস জানান, আমি এখন অরিন্দম শীলের ‘মহানন্দা’ সিনেমার কাজ করছি। ‘রানি রাসমণি ‘ সিরিয়ালের লুকটা সেট করেছি। তবে সিনেমা হোক বা সিরিয়াল আমরা যথাসম্ভব স্যানিটাইজেশন করছি। এখনতো অনেক নতুন প্রযুক্তির স্যানিটাইজাল মেশিন এসেছে, স্টিম আয়রন থেকে স্যানিটাইজেশনের জন্য ফগ মেশিন দেওয়া হয়েছে প্রোডাকশনথেকে সেগুলো ব্যবহার করছি। আর এর পরও যদি কেউ চায় নিজেরাও স্যানিটাইজ করে নেন। করোনার প্রভাব প্রোডাকশন বাজেটে পড়েছে, তাই ডিজাইনারদের উপরও তার প্রভাব আছে। ”
আর একজন প্রোডাকশন কন্ট্রোলার পুলক দাস জানান শুধু কস্টিউম নয় স্টুডিও স্যানিটাইজেশনের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।এই প্রসঙ্গে কথা অভিনেতাদের মতামত জানাতে চাওয়া হলে মনামী ঘোষের বক্তব্য, “আপাতত আমি একটি ডান্স রিয়ালিটি শ্যোয়ের শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত, বেশিরভাগ আমি ডিজাইনার পোশাক পড়ছি, সেগুলি বেশিরভাগই হই নতুন হয় নাহলে প্রপার স্যানিটাইজেশন করা থাকে। আর শুধুমাত্র পোশাক নয় যেকোন জায়গা থেকে ভাইরাস আসতে পারে তাই শুধু শ্যুটিংয়ের সময় নয় যখনই বাইরে থেকে বাড়ি ফিরবেন সম পোশাক ধুয়ে নিজেও ভালো করে স্নান করে নেবেন। ”
আভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারদের কথায় ,”শ্যুটিংয়ের ড্রেসই পড়ছি, এখনতো প্রপার স্যানিটাইজ করেই পোশাক দিচ্ছে, তাই কোন সমস্যা এখনও হয়নি”।
অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়,” ষ্টিম আয়রন দিয়ে নিজের পোশাক স্যানিটাইজ করেই পড়ছি। একবার শ্যুট হলে সেটা পরতে হচ্ছেনা,কারণ এখন আমি একটি রিয়ালেটি স্যোয়ের সঞ্চালনার কাজ করছি।”
অভিনেতা শেখ রেজওয়ান রব্বানী জানালেন করোনার সমস্যা থেকে বাঁচতে স্টুডিও ফ্লোরেই ওয়াশিং মেশিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখন। রোজের পোশাক রোজ কেচে আয়রন করে পড়ছি, তাছাড়া আমি নিজে খেয়াল করি সঠিক ভাবে স্টুডিও স্যনিটাইজ করা হচ্ছে কিনা। “
শ্রুতি দাস জানালেন, কস্টিউমের ক্ষেত্রে দুটো পন্থাই অবলম্বন করে থাকি, প্রোডাকশনের পোশাক বাড়ি থেকে ধুয়ে আনি আবার শ্যুটিংয়ের আগে নিজেও ভাল করে স্যানিটাইজেশন করি। কস্টিউম ছাড়াও ব্যাগ, মেকআপ রুম সব সঠিক ভাবে স্যানিটাইজেশন করার দিকে নজর থাকে।”
আভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের মতে, এখন কোভিডবিধি মেনেই শ্যুটিংয়ের কাজ হচ্ছে, তাই কস্টিউম ও ভালভাবে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে, এছাড়া আমি নিজেও পোশাক পড়ার আগে স্যানিটাইজে করেনি। ”
সিনে ইন্ডাস্ট্রির বাজেটে টান পড়লেও ডিজাইনাররা আশাবাদী যে কাজ হচ্ছে। তবে পোশাক স্যানিটাইজেশনের ক্ষেত্রে সকলে সচেতন হয়েই শ্যুটিংয়ের কাজ করছে।