1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
আনসার দ্য ডিফিকাল্ট কোয়েশ্চেনস ফার্স্ট
চতুর্থ স্তম্ভ: মোদিজীকে কোনও প্রশ্ন নয়, ওনার প্রশ্নফোবিয়া আছে
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published by: 
  • Update Time : 05-05-2022, 10:37 pm
নরেন্দ্র মোদি

পরীক্ষার আগে বড়রা ছোটদের নানান উপদেশ দেয়৷ আগে সবকটা প্রশ্ন ভালো করে পড়বি৷ মার্জিন দিয়ে তারপর লেখা শুরু করবি৷ শেষ করার পরেই খাতা দিয়ে দিবি না৷ ভালো করে রিভাইজ করবি, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার বাবা এই জ্ঞান শুনেছেন৷ আমিও শুনেছি৷ আমার পরবর্তী প্রজন্মও শুনবে নিশ্চই। কিন্তু এই কাহানি মে টুইস্ট হ্যায়৷ এখন কেবল তাদের বাবা বা মা বা মাস্টারমশায়ের জ্ঞান শুনলেই হবে না৷ দেশের প্রধানমন্ত্রীও জ্ঞান দেবেন৷ সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি এই দেশ, এই উপমহাদেশ, বলা ভালো এই পৃথিবীর একমাত্র এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স পাশ করা ছাত্র৷ কারা শিক্ষক ছিলেন? জানা নেই। সহপাঠী? একজনেরও নাম জানা যায়নি৷ তো তিনি জীবনের বড় পরীক্ষার আগে কী করিতে হইবে নিয়ে কয়েকটা কথা বললেন৷ বললেন শক্ত প্রশ্নগুলোর ‘সামনা’ আগে করতে হবে৷ আনসার দ্য ডিফিকাল্ট কোয়েশ্চেনস ফার্স্ট৷

পাঁচ, ছটা ক্যামেরা চলছে৷ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির ভেতরের উদ্যান৷ যেখানে উনি মাঝে মধ্যে ময়ূরকে খাওয়ান, ব্যায়াম করেন, সেইখানে দাঁড়িয়ে তিনি এই কথাই বললেন। বেশিরভাগ বিষয়েই ওনার কথা মানা যায় না৷ মানার প্রশ্নই নেই৷ ওনার অনর্গল প্যাথোলজিক্যাল মিথ্যের সঙ্গে একমত হবই বা কেন? কিন্তু ওনার এই কথার সঙ্গে আমি একমত৷ আনসার দ্য ডিফিকাল্ট কোয়েশ্চেনস ফার্স্ট৷ শক্ত বিষয় আগে ধরো, শক্ত প্রশ্নের উত্তর আগে দাও। তো এরকম এক শক্ত প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি৷ ২১ অক্টোবর ২০০৭৷ তাঁর দাড়ি তখন এত সফেদ আর লম্বা নয়৷ তিনি তখন এত ফর্সাও নন৷ তিনি তখন প্রধামন্ত্রীও নন৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখোমুখি হয়েছিলেন সাংবাদিক করণ থাপারের৷ অনুষ্ঠানের নাম ছিল ডেভিলস অ্যাডভোকেট৷ তখনও মিডিয়া কিনে উঠতে পারেননি মোদিজী৷ তখনও অনেক সাংবাদিকই ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেন৷ তো করণ থাপারও করেছিলেন৷ গোধরা রায়ট নিয়ে প্রশ্ন৷ সেই গণহত্যার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন অবজার্ভেশনকে সামনে রেখে কঠিন প্রশ্ন৷ নরেন্দ্র মোদি কাঁপছিলেন৷ তারপর একগ্লাস জল খেয়ে ইন্টারভিউ ছেড়ে, দোস্তি বনি রহে বলে কঠিন প্রশ্ন এড়িয়ে চলেই গেলেন৷

ইট ওয়াজ অ্যা ট্রমা৷ এক বিভীষিকা৷ এক দুঃস্বপ্ন৷ যা আজও তিনি ভুলতে পারেননি৷ আজও তিনি একজনও স্বাধীন নিরপেক্ষ সাংবাদিকের মুখোমুখি হননি৷ কোনও প্রেস কনফারেন্সের সামনে বসেননি৷ কে জানে বাবা, কে আবার কোন প্রশ্ন করে বসে৷ ২০১৪ থেকে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি কোনও সাংবাদিক বৈঠকে বসেননি৷ হয়তো বসলেই বা বসার কথা ভাবলেই তাঁর মাথায় করণ থাপারের মুখ ভেসে ওঠে৷ তিনি হিন্দি সিনেমার সেই লম্বা ডায়ালগ, নহিঁইইইইইইইইই বলে আঁতকে ওঠেন। ছোটদের কি অবলীলায় জ্ঞান দিচ্ছেন৷ আনসার দ্য ডিফিকাল্ট কোয়েশ্চেনস ফার্স্ট৷ কিন্তু নিজে সেই ডিফিকাল্ট প্রশ্নের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ প্রথমে এই সমস্যা এড়াতে সংবাদমাধ্যম কেনা শুরু করেছিলেন৷ প্রায় সব কেনাও হয়েছে৷ মোদির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের নাম হয়েছে গোদী মিডিয়াষ এ বাংলায় এক আগুনখেকো বাম সাংবাদিককে চোখের সামনে দেখলাম বিকিয়ে যেতে৷ তিনি আপাতত রিপাবলিক গোদীতে বসে দোল খাচ্ছেন৷ কিন্তু ওই যে সাংবাদিক নয় তো রক্তবীজের দল, গজিয়ে উঠছে চারধারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে নতুন নতুন চেহারা৷ তারা প্রশ্ন করে, ক্ষমতা কে প্রশ্ন করে৷ আম চুষে খায় না চেটে খায় না কামড়ে খায়ের মতো ভাট ও অবান্তর প্রশ্ন করে না৷ তারা জানতে চায় ঢপের প্রতিশ্রুতি গুলোর কী হল? ১৫ লাখের কী হল? সাল মে দো করোড় নোকরির কী হইল? তারা জানতে চায়, নোটবন্দি নিয়ে চুপ কেন? সেদিন বলেছিলেন ৫০ দিন সময় চাই৷ কত ৫০ দিন চলে গিয়েছে৷ এবার বলুন, নোটবন্দি করে দেশের কী হল? তারা প্রশ্ন করে মোদিজীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে৷ এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে৷ আর কে না জানে এ সব খুবই কঠিন প্রশ্ন৷ তাঁর কাছে এই সব প্রশ্নের একটারও জবাব নেই৷ নেই বলেই সাংবাদিক, স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম, প্রেস কনফারেন্সের কথা তিনি মাথাতেও আনেন না৷

স্বাধীনতার পর একলোতা প্রধানমন্ত্রী, যিনি কোনও প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি৷ এদেশে নয় বিদেশেও৷ গত ৩ তারিখ উনি জার্মানিতে ছিলেন৷ করোনা কাল কাটতেই আবার তাঁর পছন্দের বিদেশভ্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ এতদিন বড্ড মনোকষ্টে ছিলেন৷ খুব শিগগিরি আবার আমরা সেই হেডলাইন দেখতে পাব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতে ফিরলেন, তো জার্মানিতে গিয়ে ১৫/১৮ খানা চুক্তি সই করলেন, সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হাজির ছিলেন, সাধারণ প্রোটকল অনুযায়ী এসব সই সাবুদের পরে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন৷ তো জার্মান সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে, সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও প্রশ্ন নেওয়া যাবে না৷ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। জার্মান মিডিয়া, বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে৷ এরকম একতরফা ঘোষণায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ কিন্তু ওই যে, কেউ যদি প্রশ্ন করে বসে, আপনার দেশের আদিবাসী দু’জনকে গতকাল গোমাংস বিক্রির অভিযোগে পিটিয়ে মারা হল কেন? যদি প্রশ্ন করে সাংবাদিক গৌতম নাভলাখা বা ছাত্রনেতা উমর খালিদ এখনও জেলে কেন? বা যদি কেউ প্রশ্ন করে, রিপোর্ট উইদাউট বর্ডারসে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের তালিকায়, ভারতবর্ষ ১৮০ টা দেশের মধ্যে ১৫০ কেন? তাহলে তিনি কী জবাব দেবেন? এসব কঠিন প্রশ্নের উত্তর তো তেনার কাছে নেই, এবং সবচেয়ে বড় কথা হল, সাংবাদিকদের সামনে দেখলেই তাঁর সেই স্মৃতি ভেসে আসে, এক গ্লাস জল নেওয়ার ছুতোয়, সাক্ষাৎকার ছেড়ে পালাতে হয়েছিল, এবং কেউ নিশ্চই তাঁকে বলে দিয়েছিল যে ওই রিপোর্ট উইদাউট বর্ডারসের তালিকায়, জার্মানি ১২ নম্বরে৷ মানে জার্মানিতে কঠিন প্রশ্ন করনেওলা সাংবাদিকের সংখ্যা কম নয়৷ তাছাড়া দেশ বিদেশের সাংবাদিকরাও থাকবেন৷ অতএব মোদিজীর অনুরোধে প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল৷

জার্মানির সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের সংগঠন ও তাদের নেতারা, স্বাভাবিকভাবেই তীব্র নিন্দা করেছেন৷ এবার এখান থেকে তিনি যাবেন ডেনমার্ক গিয়েছেন৷ নিশ্চিন্তে থাকুন ওখানেও তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন না৷ স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের তালিকায় ডেনমার্ক ২ নম্বরে৷ মোদিজী আর যাই হন বোকা নন। একটু খেয়াল করে দেখুন, যুক্তিবাদের বিপরীতে সবকিছুওই প্রশ্নের ঊর্ধে হন, ভগবান আছেন, এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না৷ গুরুদেবকে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না৷ নরেন্দ্র মোদীকেও কোনও প্রশ্ন করা যাবে না৷ নিজেকে উনি ভগবানের স্তরে নিয়ে গিয়েছেন৷ নিজেকে তাই মনে করেন, এক মসীহা৷ দেশের মানুষকে বাঁচাতে এসেছেন৷ উনি কোনও ভুল করতেই পারেন না৷ তাই ওনাকে কোনও প্রশ্নই করা যাবে না৷

উল্টোদিকে সত্যিটা কী? প্রশ্ন হল সেই আগুন যা দিয়ে শুদ্ধ করা যায় তথ্য কে, প্রশ্নবাণে শুদ্ধ তথ্যই প্রকৃত জ্ঞান, মানুষ সভ্যতার সবকটা স্তর অতিক্রম করেছে, করছে, করবে, কারণ মানুষ প্রশ্ন করতে পারে৷ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই সভ্যতার অগ্রগতি৷ প্রশ্ন থেমে যাওয়া মানেই হল অগ্রগতি থমকে যাওয়া৷ যে কোনও সৎ মানুষ প্রশ্নকে ভয় করে না৷ কারণ তার কাছে উত্তর আছে৷ অন্যদিকে ক্রিমিনাল, খুনি, অপরাধীদের জেরা করতে হয়৷ সত্যিটা বের করে আনতে৷ তারা প্রশ্ন পছন্দ করে না। আমাদের দেশেই জন্ম নিয়েছিলেন বুদ্ধ৷ সেই পরম জ্ঞানী বুদ্ধ বলেছিলেন ডাউট এভরিথিং, ফাইন্ড ইওর ওন লাইট৷ সব কিছুকে সন্দেহ করো, প্রশ্ন করো, তারপর সিদ্ধান্তে উপনীত হও। একজন মঞ্চ থেকে দাঁড়ি নাড়িয়ে বলছেন, আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে, প্রশ্ন তো করতেই হবে, কখন? কবে? কিভাবে? সন্দেহ তো করতেই হবে তাদের, যাদের জন্ম ইস্তক আচ্ছে দিনের কোনও দিক নির্দেশ নেই৷ তাদের কাছে হঠাৎ এক আচ্ছে দিনের কথা বলা হচ্ছে কেন? এবং সাংবাদিকতা। আজ্ঞে আমি আররররণব গোস্বামী বা গোদী মিডিয়ার ঝোলঝালদের কথা বলছি না৷ সাংবাদিকতার পাঠের কথা বলছি৷ সাংবাদিক হবার প্রথম পাঠের কথা হল ৫ টা প্রশ্ন, হু? হোয়াট, হোয়েন? হোয়ার? হোয়াই? কে? কী? কখন? কোথায়? কেন? এই পাঁচটা প্রশ্ন অবিরাম করতে থাকা এক মানুষ হতে পারেন একজন প্রকৃত সাংবাদিক, যে কোনও ঘটনা, যে কোনও তথ্যের মূলে পৌঁছতে হলে, এক সাংবাদিক এই ৫ টা প্রশ্নকেই তার প্রধান অস্ত্র বলেই মনে করেন, তাঁর জীবিকার প্রথম শর্ত প্রশ্ন করা। আর সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না, দেশের প্রধানমন্ত্রী কাম চওকিদার, কাম চায়ওয়ালা, পরধান সেভক নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদী, তাই ক্যান্সেল, ক্যান্সেল প্রেস কনফারেন্স।

Tags : 4th pillar of democracy PM Modi India Journalism

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.