Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভগরু আসিতেছে কোথা হইতে? যাইতেছে কোথায়?

গরু আসিতেছে কোথা হইতে? যাইতেছে কোথায়?

Follow Us :

কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক:  প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা গরু খেতেন, বেদ উপনিষদে তার উল্লেখ আছে, রামায়ণে আছে। অতিথির সমবাচিক শব্দ হল গোঘ্ন, গরু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় যাকে, তিনিই গোঘ্ন। তো এসব বহুবার বলা হয়েছে। পৃথিবীতে গোমাংস প্রচলিত খাবার, এদিকে মধ্য প্রাচ্য, ইসলামের জন্মস্থানে কিন্তু গরু ছিলই না, ওদিকে ব্রাহ্মণরা গরু খেত, এসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আপাতত আমরা বর্তমান কিছু তথ্য আর খবর নিয়ে বোঝার চেষ্টা করব, এই গরু পাচার বিষয়টা ঠিক কী? কেন পাচার হয়? কোথায় পাচার হয়? কিভাবে পাচার হয়? আসলে দেশের অনেক সমস্যার মধ্যে এই গরু পাচার কত বড় সমস্যা সেটাও বোঝা দরকার, সেটা নিয়েও খানিক আলোচনার অবকাশ আছে বৈকি। কারণ দেশের বেকারদের চাকরি নেই, মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে, নিত্যদিন মহিলাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে, তার অদলে মানুষ গরু পাচার নিয়েই আলোচনা করবে, সেটা কি খুব জরুরি? গরু দুধ, গোবর ইত্যাদি দেয়, এঁড়ে গরু গোবর ছাড়া কিছুই দেয় না। এদিকে বাচ্চা হলে তো বকন গরুই হবে তা তো নয়, এঁড়ে গরুও হবে, ওদিকে কিছু গরু একটা কি দুটো বাচ্চা দেবার পরে বাচ্চা দেওয়া বন্ধ করে, স্বাভাবিকভাবেই তার দুধও হয় না, আবার কিছু গরু বেশ কিছু বাচ্চা দিল, দুধ দিল, বয়স হল আর বাচ্চাও দেবে না, দুধও দেবে না।

সেই সব গরু বা এঁড়ে গরু চলে যেত, চলে যায় কসাই খানায়, তার মাংস কাজে লাগে, তার চামড়া কাজে লাগে, তার হাড় কাজে লাগে। মাংস রপ্তানী হয়, আমাদের দেশ এপ্রিল ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ এর মধ্যে ৩.১৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলার রোজগার করেছে গরুর মাংসের রপ্তানি থেকে। মোট ১০ টা জায়গা থেকে এই রপ্তানি হয়, তারমধ্যে সাত টা উত্তর প্রদেশ, ২ টো মহারাষ্ট্রে, একটা কেন্দ্র দিল্লিতে। খাতায় কলমে এই মাংস মোষের, ওদিকে দেশে অত মোষ নেই, সরকার জানে, সাংবাদিক জানে, বিজেপি ও জানে। কিন্তু টগ বোষ্টমীর মত বলা হয়, দেশ গোমাংস নয়, বাফেলো মিট, মোষের মাংস বিক্রি করে। লক্ষ্ণৌ এর টুন্ডই কাবাব এর দোকানে পরিস্কার লেখা আছে যা খাচ্ছেন তা মোষের মাংস, গরুর নয়। বায়োলজির ছাত্ররাই শুধু জানে তা তো নয়, সব্বাই জানে বায়োলজিকালি মোষ আর গরুর খুব একটা ফারাক তো নেই, দুধে যাও বা আছে, মাংসে সেই ফারাকও নেই। গরুর বৈজ্ঞানিক নাম বস টরাস, মোষের বৈজ্ঞানিক নাম বুবালাস বুবালিস, এই ফারাক তো আছে। মোষের কথা এখানেই থাক, আমরা বরং গরু নিয়ে চলা শুরু করি। দেশ জুড়ে বেশিরভাগ রাজ্যেই কিন্তু গরু হত্যা মানা, সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে গরুর মাংস বিক্রি করছে জানলে ৭ বছরের জেল অনিবার্য। তাহলে সেসব গরু যারা আর দুধ দেয়না, যাদের দুধ বন্ধ হয়ে গেছে বা এঁড়ে গরু, তারা যাবে কোথায়? খাবে কী? এমনিতেই দু চারটে গরু পুষে লাভ তো দুরের ব্যাপার, পকেট থেকে খরচই হয়, সেখানে বসিয়ে বসিয়ে গোমাতাদের খড়, বিচালি, খোল, আটা, গুড় খাওয়াবে, এমন গেরস্ত কজন আছেন? কাজেই তাদের বিক্রি করে দেওয়া হত কসাই এর কাছে, এখন ক্ষমতায় গোবৎসদের দল, কাজেই বিক্রি বন্ধ।

এবার আইন অনুযায়ী বিক্রি বন্ধ হলে তা বে আইনীভাবেই পাচার হবে, স্বাভাবিক। কাজেই এই যে গরু পাচার, তার মূল কারণ হল গরু বিক্রি আইনত বন্ধ করা। কারা করেছে? কাঁথির খোকাবাবুদের বাবা জ্যাঠারা, বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা। তারাই আজ সবচেয়ে জোরে চিল্লানোসোরাসের মত চেল্লাচ্ছে গরু পাচার, গরু পাচার। পকেট মার যেমন পকেট মেরে দৌড়তে থাকে পকেটমার পকেটমার বলে, খানিকটা সেইরকম আর কি। তো এই পাচার করার গরু আসছে কোথা হইতে? উত্তর সোজা, যেখানে বিক্রি বন্ধ সেখান থেকে, বিক্রি করলে যেখানে গণধোলাই এ মারা যাবার চান্স আছে, সেখান থেকে। মানে ঐ গৌরক্ষকদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অসম, বিহার, গুজরাট থেকে। এই কদিন হল বিহার গৌরক্ষকদের হাত ছাড়া হয়েছে, তা না হলে এই সবকটা রাজ্যে বিজেপির শাসন ছিল, কিন্তু গরু পাচার হয়েছে, তাদের রাজ্যের পুলিশ কী করছিল? সেখানে কারা মেরেছে নেপোর দই? সে ভাগ বাটোয়ারা কতদুর পর্যন্ত গেছে? প্রশাসনের কোন মাথা কত টাকা খেয়েছে তা জানা দরকার। সি বি আই বা ইডি সেসবের খোঁজ নিয়েছে? তারপর গরু এল এই রাজ্যে, মেনে নিলাম অনুব্রত মন্ডল, এনামুল হকেরা লুঙ্গি পরে হাতে লাঠি নিয়ে গরুকে নিয়ে গেলেন বর্ডারে। তো আপাতত নতুন নিয়ম অনুযায়ী বর্ডার থেকে ৫০ কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত বি এস এফ এর রাজ, আজ্ঞে হ্যাঁ, সেই জন্যই তো ওঁরা অনায়াসে ধর্ষণ করতে পারেন, গুলি করে ঝুলিয়ে দিতেই পারেন ফেলানির লাশ। এই ৫০ কিলোমিটার গরুদের কি পাখা গজাইল? বি এস এফ এর আধুনিকতম অস্ত্র এ কে ফর্টি সেভেন, একে ফিফটি সেভেনের নলের ডগায় কি নিরোধ লাগানো ছিল? তারা গুলি চালালো না কেন? যদি নাই চালিয়ে থাকে তাহলে তার বিনিময় মূল্য কত? সেই বিনিময় মূল্যের থলে কতদুর গেছে তা তো বলতে পারবেন, দেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রী ছোটা মোটাভাই অমিত শাহ। জেলে তো আগে ওনাকে পোরা উচিত, জেরা তো আগে ওনাকে করা উচিত, এনামুল হক, অনুব্রত মন্ডলের সঙ্গে অমিত শাহকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক। সত্যিটা বেরিয়ে আসুক। ওপরে আসামের বর্ডার, সেই রাজ্যের মাথায় সারদা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হিমন্ত বিশ্বশর্মা, তো সেই বর্ডার দিয়ে কত গরু পাচার হয়েছে? উত্তরবঙ্গ নাকি বিজেপিরই দখলে, সেখানেও তো বিরাট বর্ডার, তো স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক কী করিতেছিলেন, উত্তর বঙ্গে কোচবিহার থেকে মালদা পর্যন্ত এই বিরাট সীমান্ত এলাকায় গরু পাচার হল তিন বছর ধরে, ৮০ লক্ষ গরু পাচার হল, উত্তর বঙ্গের বিজেপি সাংসদরা টের পেলেন না, নিশীথ প্রামানিক টের পেলেন না, এনাদেরও ওই মুখোমুখি জেরায় বসানো হোক, তারপর দুধ কা দুধ, পানি কা পানি করে নেওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও গরু বিক্রি নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, কেবল গর্ভবতি গরু বা অসুস্থ গরু কাটা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে, তার মানে এ রাজ্যের গরু পাচারের চেয়ে এই রাজ্যেই বিক্রি করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম তারও একটা অংশ পাচার হয়েছে, সব মিলিয়ে হিসেবমত তিন বছরে ৮০ লক্ষ গরু পাচার তো এক বিরাট ব্যাপার, এবার আসুন কনজামশনের দিক থেকেও, মানে ক্রেতাদের দিক থেকেও দেখে নেওয়া যাক।

একটা গরুর মাংস, কম বেশি গড়ে ৫০ কেজি, ৮০ লক্ষ মানে ৪০০০ লক্ষ কেজি মাংস? তিন বছরে বাংলাদেশে গ্যালো। বাংলাদেশের হিসেব বলছে তাদের বছরে ৩০ লক্ষ গরুর মাংস দরকার, আনে সেটাই যথেষ্ট, তাদের নিজেদের আছে ১০ লক্ষ, তাহলে আর কত হলে সব্বাই খেতে পাবে? ২০ লক্ষ। কিন্তু হিসেব বলছে কেবল এই পশ্চিম বঙ্গ থেকেই বাংলাদেশে গেছে ২৬/২৭ লক্ষ গরু। কোথায় গেল? তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষ কেবল গরুই তো খায় না, তারা মাছ খায়, মুরগি খায়, ইন ফ্যাক্ট গরুর মাংস খাওয়া কমাচ্ছেন স্বাস্থ সচেতন মানুষজন। দেশের এখনকার হিসেব অনুযায়ী কমবেশি ১৭/১৮ লক্ষ গরু মাংসের জন্য কাটা হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকার জানাচ্ছেন, তাঁরা খুব দ্রুতগতিতে গরুর মাংসের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন, এবং সেইকারণেই গরুর মাংস আমদানী একেবারেই বন্ধ করার কথা ভাবছেন, এরফলে ওনাদের ভাল পরিমাণ বিদেশী মুদ্রার সাশ্রয় হবে। তাহলে? ঐ গরু কি বাংলাদেশ থেকে আবার বার্মাতে পাচার হচ্ছে? আবার নতুন গল্প চাই। এবং খেয়াল করে দেখুন, কয়লা পাচার, বালু পাচার, পাথর পাচার ইত্যাদির কথা তেমন করে আসছে না, যেটা বিরাট করে আসছে তা হল, গরু পাচার। গরু ভগবতী, গরু আপনার মা, সেই গরু পাচার হচ্ছে, এটাই খবর। কে করছে অনুব্রত মন্ডল, তৃণমূল দল। এক রাজনৈতিক আক্রমণ কে গরু পাচার বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। আচ্ছা এর মানে কি এমন যে দূর্নীতি নেই? আলবত আছে, কয়লা, বালু, পাথর, ওভারলোডেড ট্রাক, টোল ট্যাক্স নিয়ে চলুক না তদন্ত, কিন্তু এই গরু পাচারের ঢপবাজিটা বন্ধ করুন, গল্প টা বড্ড কাঁচা, বড্ড নড়বড়ে স্ক্রিপ্ট। আর এই পাচার যদি বি এস এফ এর নাকের ডগা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পার করেই হয়ে থাকে, তাহলে সবচেয় আগে গ্রেপ্তার করা হোক দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক কে, ওনাদের থেকে বেশি আর কেই বা বলতে পারবেন?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Mamata Banerjee | 'নন্দীগ্রামে ছিল পিতা-পুত্র...?' তমলুকে মমতার নিশানায় শুভেন্দু!
48:07
Video thumbnail
৪টেয় চারদিক | 'কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে ভোট করাবে'-ফের বিজেপিকে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়
29:47
Video thumbnail
পায়ে পায়ে ধর্মযুদ্ধে | জনসংযোগ করে প্রচার সারলেন অগ্নিমিত্রা
06:34
Video thumbnail
TMC | ‘অভিজিৎকে দেখার পর কে বিচারপতি আর কে নেতা, তা নিয়ে দেশবাসী বিভ্রান্ত’, মন্তব্য ব্রাত্যের
06:14
Video thumbnail
Bikash Ranjan Bhattacharya | SSC মামলার রায় নিয়ে আদালতে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য
04:36
Video thumbnail
Loksabha Election | জুনকে পাশে নিয়ে নাম না করে দিলীপকে কটাক্ষ, দাঁতন থেকে এবার মেদিনীপুর চান মমতা
28:09
Video thumbnail
Lok Sabha Election | বিধায়কের শিক্ষা নিয়ে কটাক্ষ তৃণমূলের
02:19
Video thumbnail
Murshidabad | বড়ঞা বোমা বিস্ফোরণে রিপোর্ট তলব কমিশনের
02:13
Video thumbnail
SSC Chairman | 'আমরা ধরে নিতে পারি, বাকি ১৯ হাজার যোগ্য', কলকাতা টিভিকে বললেন এসএসসি চেয়ারম্যান
09:14
Video thumbnail
ধমযুদ্ধের দামামা | আরও ৫৯ হাজার চাকরি যাবে: অমরনাথ শাখার
17:00