Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: সলতে পাকানোর কাজ চলছে সারা দেশজুড়ে, এটাই প্রস্তুতিপর্ব

Fourth Pillar: সলতে পাকানোর কাজ চলছে সারা দেশজুড়ে, এটাই প্রস্তুতিপর্ব

Follow Us :

বিরাট পর্ব শেষ, পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসও শেষ। উত্তরার সঙ্গে অভিমন্যুর বিয়ের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের রাজারাজড়ারা এসেছেন, সেখানেই পাণ্ডবরা জানাল, এবার তারা ফিরে পেতে চায় তাদের দেশ, দেশের মানুষ দুর্যোধন শকুনির সন্ত্রাসের অবসান চায়। কিন্তু রাজা দুর্যোধন সর্বসমক্ষেই জানিয়েছেন, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী। ভীম গদা নিয়ে রওনা হলেন, কৃষ্ণ আটকাচ্ছেন। ভীমের প্রশ্ন, তার মানে? আমরা দেশে ফিরব না? দুর্যোধনই রাজত্ব চালাবে? কৃষ্ণ হেসেছিলেন, বলেছিলেন, হবে, বিরাট যুদ্ধ হবে, পৃথিবী এমন যুদ্ধ দেখেনি, পৃথিবীর যত মানুষ, যত রাজা প্রত্যেকে এতে সামিল হবে, প্রত্যেকে। যে প্রান্তে যত সৎ মানুষ আছেন, রাজা আছেন তাদেরকে সঙ্গে নিতে হবে, এ তো কেবল যুদ্ধ নয়, এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ধর্মস্থাপনার জন্য যুদ্ধ। তার প্রস্তুতি দরকার, সেই প্রস্তুতির উদ্যোগ নিতে হবে। মহাভারতের এই পর্বের নাম, উদ্যোগ পর্ব। যেখান থেকে কৃষ্ণের কূটনীতি শুরু হচ্ছে, অস্ত্রশস্ত্র থেকে সৈন্য, যুদ্ধের উপকরণ, সব জোগাড় করা, আর মধ্যে মধ্যে কৌরবদের নীতি কথা শোনানো, পৃথিবীর মানুষকে বোঝানো, যে ভাইসকল দেখো, আমরা তো শান্তিই চাইছিলাম, এমনকী পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচটা গ্রাম চেয়েই এই যুদ্ধ শেষ করতে চাইছিলাম। কিন্তু দুর্যোধন তাতেও রাজি নয়, সে যুদ্ধ চায়। অতএব যুদ্ধ। তার আগে লম্বা উদ্যোগ পর্ব। আমাদের দেশেও, আজকের মহাভারতের রাজনীতিতেও কি তেমন কোনও উদ্যোগ পর্ব চলছে? বিভিন্ন ঘটনা ঘটে চলেছে, কিছু প্রকাশ্যে, কিছু অপ্রকাশ্যে, তাদেরকে জড়ো করলে পরিষ্কার হবে যে একটা বিরাট প্রস্তুতিপর্ব চলছে দুই দিকেই। আজ বিরোধীদের কথা বলি, কাল শাসকদলের উদ্যোগ পর্ব নিয়ে আলোচনা করা যাবে। মাত্র গতকাল কর্নাটকে বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী, বীরশৈব লিঙ্গায়েত নেতা ইউ বি বনকর রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমারের উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দিলেন। আর ক’মাস পরেই কর্নাটকের নির্বাচন। রাজ্যে বিজেপি, কেন্দ্রে বিজেপি, বেগড়বাই করলে ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সের ভয় আছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের এলাকার এই নেতা কংগ্রেসে যোগ দিলেন। পেছনে কে? ইয়েদুরিয়াপ্পা নয় তো? দলের সর্বোচ্চ কমিটির ললিপপ তাঁকে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তিনি দৃশ্যতই নাখুশ, তাঁর সমর্থকরা বলছেন খেলা হবে। তামিলনাড়ুতে স্তালিন ভাষার আন্দোলনকে সামনে তুলে আনছেন, দ্রাবিড় রাজনীতির এই অস্ত্র বারবার ব্যবহার হয়েছে দিল্লির বিরুদ্ধে, আর ঠিক সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে হাজির। আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম, আমি আমার দিদির সঙ্গে কথা বলেছি, এসব তো বলা হল, কিন্তু আর কী কী আলোচনা হল? দেশের অন্যতম দুই বিজেপি বিরোধী নেতা বসে কেবল চা-বিস্কুট খেলেন, তা তো নয়। চন্দ্রবাবু নাইডু আবার পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, বিজেপি জল মাপছে, কিন্তু তাদের এই নতুন সখ্যের খবর তো জগন রেড্ডির কাছে আছে। তিনি জানিয়েছেন, ওসব বুথ লেভেলের রাজনীতি আমাকে শেখাতে আসবেন না, আমি ওয়াই এস আর রেড্ডির ছেলে, তিনি মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে ফেলেছেন, বিজেপির কাছে এটা বাজে খবর। মেঘালয়-অসম সম্পর্ক কিছুতেই সামাল দিতে পারছেন না হিমন্ত বিশ্বশর্মা, উলটে গতকালের গুলিতে নিহত ৫ জন মেঘালয়ের যুবক। মেঘালয় রাখলে অসম যাবে, অসম রাখলে মেঘালয়। দেখে শুনে মনে হচ্ছে মেঘালয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রার সমর্থন তো করেননি কে চন্দ্রশেখর রাও, কিন্তু যাত্রাপথে সুরক্ষার ব্যবস্থা, পানীয় জল ইত্যাদির ব্যবস্থা ছিল দেখার মতো। কারণ? বিজেপি উঠে আসছে, কিন্তু টিআরএস বিরোধী ভোট যেন ভাগ হয়, তার জন্য কংগ্রেসের শক্তি থাকাটা দরকারি, ভোট ভাগাভাগি হলে টিআরএস আবার ক্ষমতায় আসবে শুধু নয়, বেশি আসন নিয়ে আসবে। মহারাষ্ট্র রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি নীতিন গডকরিকে এ যুগের ছত্রপতি শিবাজি বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে কেবল এই কারণেই রাজ্যপালের পদত্যাগ চাইছেন, ওদিকে উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন, তা আবার হয় নাকি? ওঁর কথা সমর্থন করছি না, তাই বলে রাজ্যপালের অপসারণ? দেবেন্দ্র ফড়নবিশের দফতরে, বাড়িতে শিবসেনা শিন্ডে গোষ্ঠীর বিধায়কদের আনাগোনা বাড়ছে, মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের কাছেও এই খবর আছে। তিনি গলা চড়াচ্ছেন। উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, শিন্ডে বিজেপির চাপের কাছে মাথা নোয়াচ্ছে। মানে মহারাষ্ট্রে খেল আভি বাকি হ্যায়, শরদ পাওয়ার চুপ করে বসে আছেন? তাই হয় নাকি? নীতিন গড়করি ক’দিন আগে মনমোহন সিংহের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন, যাকে নিকম্মা বলেই প্রচার চালিয়েছিলেন স্বয়ং মোদিজি। নীতিন গড়করি কি অবসরের কথা ভাবছেন? নাকি নতুন ইনিংস শুরু করতে যাচ্ছেন। চলুন বিহারে, সেখানেই সবথেকে ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনিতে গত নির্বাচনের পরেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল নীতীশকুমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্রমশ আবছা হয়ে পড়ছে, তিনি শক্তি হারাচ্ছেন, তাঁকে বিজেপির কথা মেনেই চলতে হবে। এই বিহারিবাবুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে মানুষের ধারণা খুবই কম, যতবার মনে হয়, ইনি শেষ, ততবার তিনি হাসতে হাসতে উঠে আসেন। কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে তিনি আবার লালুর হাত ধরবেন, আবার এটাও ভাবা যায়নি যে আপাতত বিহারের সবথেকে সবথেকে শক্তিশালী নেতা তেজস্বী যাদব নীতীশ কুমারের নীচে উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব পদ স্বীকার করবেন। কেউ না ভাবলেও নীতীশ ভেবেছিলেন, লালু ভেবেছিলেন, তেজস্বী মেনেও নিয়েছিলেন, তা কি কেবল ওই উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের জন্য? না, আরও বড় কোনও লক্ষ্য নিয়ে সেদিনই নীতীশ-লালু-তেজস্বী কথা হয়েছিল। নীতীশকুমার এখনও জানেন তাঁর দল ভাঙানোর চেষ্টা চলছে, বিজেপি ভাঙবেই তাঁর দল। কিছুটা আরজেডিতে যাবে, কিছু যাবে বিজেপিতে, তিনি একলা হয়ে পড়বেন, তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খতরে মে হ্যায়। কদিন আগেই তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর দল আর আরজেডি কি মিলে যাচ্ছে? মার্জার? নীতীশ স্বভাবসিদ্ধভাবেই উড়িয়ে দিয়েছেন, বিজেপির হাত ছাড়ার দুদিন আগে সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, জেডিইউ বিজেপি মিনিস্ট্রি আউর ১০ সাল চলেগা। একদিন পরে তিনি হাত ছেড়েছিলেন বিজেপির, হাত ধরেছিলেন লালু যাদবের। তো যাই হোক নীতীশ কুমার তো উড়িয়ে দিলেন এই প্রশ্ন, কিন্তু প্রশ্নটা কত গুরুত্বপূর্ণ? বিরাট। আজ বিহারে জেডিইউআর আর জেডিমিলে গেলে কেবল ভোট নয়, দু’ দলের যে কাস্ট বেস তা বিহারের ৭৫ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে। তার মানে দু’ দলের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা হলে, এবং তার সঙ্গে কং বাম জোট হলে বিহারের ৪২টা আসনের ২-৩ টেও বিজেপি ২০২৪-এ পাবে না। হ্যাঁ, আজ বলতে পারি আরজেডি আর জেডিইউ সেদিকেই এগোচ্ছে। আরজেডির জাতীয় সম্মেলন হয়ে গেল। এমনিতে আরজেডি তেমন কোনও দলই নয় যার জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু থাকে, কিন্তু এবার আছে, অধিবেশনের শেষদিনে এক প্রস্তাবে দলের নাম আর নির্বাচনী প্রতীক চিহ্ন নির্ধারণ করা বা এই নিয়ে সমস্ত সিদ্ধান্তের দায়িত্ব দেওয়া হল লালু যাদব এবং তেজস্বী যাদবের হাতে। মানে? মানে পরিষ্কার দলের আলাদা নাম হতে পারে, দলের আলাদা প্রতীক চিহ্ন হতেই পারে, কখন হবে? এটা তখনই হওয়া সম্ভব যখন দল অন্য কোনও দল বা দলগুলোর সঙ্গে মিশে নতুন কোনও সংগঠন তৈরি করে। বছর ৭/৮ আগে মুলায়ম সিং যাদব এরকম এক স্বপ্ন দেখেছিলেন, জনতা দলের বাকি সমস্ত গ্রুপকে একসঙ্গে এনে এক নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা যা গোবলয়ের রাজনীতিতে পিছড়ে বর্গের রাজনীতিকে তুলে ধরবে। লোহিয়াপন্থী মুলায়মের স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কিন্তু সেদিকেই কি চলেছেন নীতীশ কুমার, লালু যাদব, দেবেগৌড়া আর অখিলেশ যাদব? সেই জন্যেই কি তড়িঘড়ি দলের নাম বা প্রতীক চিহ্নের জটিলতা কাটাতে সে দায়িত্ব নিলেন লালু যাদব, তেজস্বী যাদব। অন্তত আরজেডি–জেডিইউ যে মিলে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা ১০০ শতাংশ শিওর, তাদের সঙ্গে অখিলেশ, দেবেগৌড়া মিলবে কি না, আরও কোন কোন দল সেখানে আসতে পারে, তা এখনও জানা নেই। তবে এটা পরিষ্কার যে কুছ তো পক রহা হ্যায়। গোবলয়ে কংগ্রেস কার্যত ধরাশায়ী, আর গোবলয় বাদ দিয়ে ভারতবর্ষের রাজনীতি সম্ভব নয় এটা দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক দল জানে, জানে বলেই নতুন সমীকরণের উঠে আসা, নতুন ইকুয়েশন তৈরি করা খুব স্বাভাবিক। তাহলে কি আগামী ২০২৪ এ গোবলয়ে কমল ছাপের বিরুদ্ধে চক্রের মধ্যে লাঙল কাঁধে কৃষক? প্রস্তুতিপর্বের শেষে এর উত্তর নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments