Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি ও মোদিজির নোবেলপ্রাপ্তি  

Fourth Pillar | হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি ও মোদিজির নোবেলপ্রাপ্তি  

Follow Us :

আমার পিসেমশাই জানেন যে হিন্দু খতরে মে হ্যায়। মাঝে মধ্যেই এই রিটায়ার্ড মানুষটির এই খতরা চাগাড় দিয়ে ওঠে, জনে জনে বোঝাতে শুরু করেন হিন্দু খতরে মে হ্যায়। তো সারাদিন এই এক কথা শোনার পরে পিসিমাও সেদিন আমাকে ডেকে বললেন, জানিস তো হিন্দু খতরে মে হ্যায়। আমি বললাম সে কী, অমন জাহাঙ্গির থেকে আওরঙ্গজেব, মোগল সম্রাট, সুলতানদের সময় পার করে আসার এতদিন পরে হিন্দু সম্রাট নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিজির আমলে হিন্দুর খতরা মানে ভয় বা বিপদ বাড়ল কীভাবে? ৪৭-এ স্বাধীনতা, পিসের জন্ম ৫৯-এ, তখনও জওহরলাল, তারপর লালবাহাদুর, ইন্দিরা গান্ধী। পিসে তখন কলেজ ছেড়ে চাকরি জীবনে, বিয়ে-শাদি করলেন, হিন্দুর খতরার কথা তো তখন ছিল না, চাকরি থেকে রিটায়ারও হয়ে গেছে বেশ ক’টা বছর। এদিকে ২০১৪ থেকে দেশের মাথায় নরেন্দ্র মোদি, কিন্তু এখন হিন্দু খতরে মে হ্যায়? কী করে? 

এদেশে নয় নয় করে ৮০ শতাংশের একটু কম হল হিন্দু জনসংখ্যা, এর পরেও যদি হিন্দু খতরে মে হ্যায়, তাহলে তার কারণটা তো বের করা দরকার। তারও আগে জানা দরকার এই বিপদটা কেমন, কারা এই বিপদের কারণ? পিসিমা ফিসফিস করে বললেন, পিসে বলেছে ওই যে, যারা পশ্চিম দিকে মুখ করে পুজো করে, ওই মুসলমানরা এবার হিন্দুদের কাটবে। যাচ্চলে, এসব বলল কে? শুনলে কোথায়? পিসে মোবাইল খুলে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ দেখাল, লেখা আছে, হিন্দু খতরে মে হ্যায়, তারপরে একটা ত্রিশূলের ছবি। উরিব্বাস! মুসলমানরা এখন ত্রিশূল নিয়ে নামছে? পিসে জানাল ওটা হল হিন্দু জাগরণ সমিতি ব্রাকেটে বাঁধাবটতলার চিহ্ন। যদি যান সেই বাঁধাবটতলায়, তাহলেও এই হিন্দু জাগরণ সমিতিকে খুঁজে পাবেন না, কিন্তু আমরা সাংবাদিক, খুঁজে বার করলাম। একদা রাজ্য সরকারি কর্মচারী, ১৮ বছর হয়ে গেল রিটায়ার করেছেন, বিয়ে-শাদি করেননি, তিন কুলে কেউ নেই, তিনিই নাকি সেই হিন্দু জাগরণ সমিতির বাঁধাবটতলার প্রতিনিধি। চেপে ধরার পর তিনি জানালেন, এই মেসেজ তাঁকে পাঠানো হয়, তিনি কেবল ছড়িয়ে দেন, কে পাঠায়? তাঁকে কে পাঠায়? সেই তাঁকে আবার কে পাঠায়? খোঁজ করতে করতে হাওড়া, হুগলি, দিনাজপুর, মালদা, বীরভূম হয়ে আবার বালিগঞ্জে ফিরতে হল। এক ভার্চুয়াল প্রচার যন্ত্র। তারা কিছু খবর পান, তাকে ছড়িয়ে দেন, কিছু মানুষ বিশ্বাস করেই ছড়ান, কিছু মানুষ মেসেজ পিছু পয়সা পান। সোজা ব্যাপার। আর কোথাও একটা বসে কিছু মানুষ এই মেসেজগুলো তৈরি করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন, প্রতিঘণ্টায় এমন হাজারো মেসেজ তৈরি হচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাগেশ্বর বাবা বলেছেন দেশ এখন হিন্দুরাষ্ট্র। ব্যস, ছড়িয়ে দাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে মোল্লাদের লোক, ওদেরই সব সুযোগ সুবিধে দেয়। ব্যস ছড়িয়ে দাও। অভিষেকের আটটা মার্সিডিজ আছে, ছড়িয়ে দাও। সুজন চক্রবর্তীর বারুইপুরে ১৮ বিঘে জমি আছে, ছড়িয়ে দাও। মুসলমানরা এখনই প্রায় হিন্দুদের জনসংখ্যার সমান, আর ৫ বছর পরে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে, ছড়িয়ে দাও। কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও আলোচনা নেই, ছড়িয়ে দাও। শিবঠাকুর দুধ খাচ্ছে, ছড়িয়ে দাও। কোনও প্রশ্ন কোরো না। এটাই হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি। আপাতত যাদের কাজ হল দেশের প্রত্যেক নেতা যে দেশবিরোধী সেটা দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: আদানির মালিক কে, সেই মালিকের মাথায় কে?   

আমি গতকাল অফিসে আসছি, আবার সেই পিসেমশাইয়ের ফোন। রোজ এত কথা বলিস, ওই রাহুল গান্ধীকে বল না ক্ষমা চাইতে। স্বাভাবিক, জিজ্ঞেস করলাম, কেন পিসে, সাতসকালে রাহুল গান্ধী ক্ষমা চাইতে যাবে কেন? গলাখাঁকারি দিলেন, তারপর জবাব এল। ক্ষমা তো বিভিন্ন কারণেই চাওয়া উচিত, একটা মুসলমান বাড়ির ছেলে হয়ে সটান কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে ঢুকে পড়ে শিবের মাথায় জল ঢালা, এটা কী পেয়েছে কী? হিন্দু ধর্মের অপমান করেছে তার জন্যে ক্ষমা চাইবে না? সে কী গো পিসে, রাহুল গান্ধী মুসলমান হবে কেন? তারা তো কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ, নেহরু, মানে নহরের ধারে যে ব্রাহ্মণরা থাকত, নেহরু ব্রাহ্মণ। কেন? পিসের যুক্তি, ওর দাদু মানে রাজীবের বাবা, ইন্দিরা গান্ধীর বর মুসলমান ছিল না? ফিরোজ শাহ? আমি বললাম। ফিরোজ শাহ নয় পিসে ফিরোজ গান্ধী, মুসলমান নয় পার্সি। কিন্তু রীতিমতো হিন্দু রীতিনীতি মেনে ইন্দিরা-ফিরোজের বিয়ে হয়। পিসে বললেন, ওই একই হল, তাই বলে বিদেশের মাটিতে গিয়ে ভারতবর্ষের অপমান করবে? অপমান করেছে? তাই নাকি? কোন দেশের মাটিতে গিয়ে দেশের অপমান করেছে? বললাম তো বিদেশে। দেশে করলে তো কথা ছিল না, বিদেশে গিয়ে দেশের অপমান করেছে। বোঝো কাণ্ড, দেশের অপমান দেশে বসে করলে কিছু হয় না, বিদেশে করলেই সমস্যা। বেশ, তো অপমানটা কী করেছে? পিসে এবার মেজাজ হারালেন, অপমান করেছে বলছি মানে অপমান করেছে ব্যস। আরে বাবা বলেছেটা কী? সে আমি জানি না, এই যে বাঁধাবটতলা হিন্দু জাগরণ সমিতির মেসেজ, দেখে নাও অপমান করেছে কি করেনি। 

এই হল হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি, এবং দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই কথার মধ্যেই থাকছে তীব্র ধর্মীয় ভিত্তিতে ঘৃণা ছড়ানোর কুমন্ত্রণা, থাকছে জঙ্গি জাতীয়তাবাদের স্লোগান, থাকছে সংখ্যালঘুদের নিকেশ করার হুমকি। এই ইউনিভার্সিটি থেকে দেশের সব মানুষের জন্য একই রকম খবর ছড়ানো হচ্ছে তাও নয়। অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য এক ধরনের খবর, অর্ধশিক্ষিতদের জন্য আরেক সেট, এমনকী শিক্ষিত মানুষজনের জন্যেও নতুন নতুন তথ্য। এই সমস্ত প্রচারের বটম লাইনটা কী? দেশ এই প্রথম স্বাধীন হল। এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী এলেন যিনি দেশকে পথ দেখাচ্ছেন, এই প্রথম এক দল যারা দেশপ্রেমিক, তারাই এখন সরকারে, কাজেই সেই সরকারের বিরোধিতা করার মানে হল দেশদ্রোহিতা। আমাদের দেশ হিন্দুদের, মুসলমানদের দেশ পাকিস্তান। জওহরলাল থেকে মনমোহন পর্যন্ত যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাঁরা কোনও কাজ করেননি। এতদিন পরে বিদেশের মাটিতে আমাদের দেশ মর্যাদা পাচ্ছে, এর আগে পায়নি। ইত্যাদি ইত্যাদি। এই প্রচারের জন্য লক্ষ টাকা মাইনে দিয়ে বেশ কিছু মানুষকে রাখা হয়েছে, তাঁদের কাজ সারা দিন ধরে এই মিথ্যের পাহাড় তৈরি করা, ছড়িয়ে দেওয়া। ছোট, মেজো, সেজো, বড় মিথ্যে রোজ প্রতিদিন বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন মাধ্যমে। কখনও কাশ্মীর ফাইলস বা গুমনামি তৈরি করে, কখনও ফেসবুক বা টুইটারে পোস্ট করে, কখনও সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে। আমার পিসেমশাই, এক রিটায়ার্ড রাজ্য সরকারি কর্মচারী, প্রতিদিন সকালে এই মেসেজ পড়েন, শ’ খানেক মানুষকে ফরোয়ার্ড করেন। তিনি এই হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির একজন সৈনিক। 

আপনার ঘরে, মহল্লায়, অফিসে, দোকানে, বাজারে এরকম অসংখ্য সৈনিককে দেখতে পাবেন। অনেক সময় এই মিথ্যের পাহাড়ে ঢাকাই পড়ে যাচ্ছে সত্যের আলো। মাত্র গতকাল পিসেমশাই জানালেন, নে এবার সামলা, নরেন্দ্র মোদি নোবেল পাচ্ছে, এই দ্যাখ। এই যে সাহেব, নিজেই বলেছেন, এবার কী বলবি বল? কে বলেছে? নরওয়ে নোবেল কমিটির ডেপুটি লিডার আস্ল তোজে। যদিও এই ইনফরমেশন আমার জোগাড় করা, তিনি নাকি বলেছেন নরেন্দ্র মোদিই এবারে নোবেল পিস প্রাইজের অন্যতম নাম, এ খবর ছড়িয়ে গেছে সবখানে। আমার পিসেমশাই কেবল পেয়েছেন তা তো নয়। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে রাস্তায়, ভাইয়ো আউর বহনো, দিল থামকে বৈঠিয়ে, ৬ অক্টোবর নোবেল পিস প্রাইজ পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আপনি বলবেন লাভ কী? আরে বাবা লাভ তো আছেই, পরে পেল কি না পেল তাতে কী এসে যায়? এই ক’দিন আগে কেবল পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীই নয়, অনুপম খের, পল্লবী জোশি, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতারা বলেছিলেন, উল্লাস উল্লাস কাশ্মীর ফাইলস অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে। পরে দেখা গেল, অস্কারের ১০০ মাইলের মধ্যেও নেই কাশ্মীর ফাইলস। ঠিক সেইরকম মোদিজির নোবেল প্রাইজের ঘোষণা এবং হই হই ব্যাপার। তো ওই নোবেল পিস কমিটির ডেপুটি লিডারকে ধরা হল, তিনি সাফ জানালেন এটা ফেক নিউজ, এর সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্কই নেই, শুনুন কী বলছেন। এই হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভারসিটি, সারাদিন মিথ্যে তৈরির এক বিরাট কারখানা। কারণ হিটলার গোয়েবলস-এর উত্তরসূরি এই আরএসএস–বিজেপির ভিত্তিই হল মিথ্যে আর অপপ্রচার, নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে এরা যে কোনও মিথ্যে অনায়াসে বলতে পারে, যা খুশি বলতে পারে। এই মিথ্যের জাল আমাদের ভাঙতে হবে রোজ, প্রতিদিন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Stadium Bulletin | স্টার্ককে যদি হাবাসের হাতে ছাড়া যায়?
16:55
Video thumbnail
সেরা ১০ | দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে আরও ৩০ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে
21:56
Video thumbnail
নারদ নারদ (19.04.24) | জীবিত ভোটার 'মৃত', ভোট দেওয়া হল না একাধিক ভোটারের
18:26
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | ভোটে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে উত্তেজনা, গ্রেফতার বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়
05:06
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | ৫টা পর্যন্ত ৩ জেলায় ভোট ৭৭.৫৭%
13:10
Video thumbnail
Loksabha Election | কোচবিহারের অশান্তি নিয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে ফোন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের
10:11
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
18:24
Video thumbnail
Udayan Guha | ভেটাগুড়িতে উদয়নকে ঘিরে বিক্ষোভ বিজেপির মহিলা সমর্থকদের
08:47
Video thumbnail
Loksabha Election | বিজেপি সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও, মানুষ বুথমুখী হয়ে তার জবাব দিয়েছে
14:30
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | যত 'নালিশ' কোচবিহারে! পুরুষদের থেকে মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি
05:42