Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | মোদিজির হনুমান ভক্তি এবং দু’ চারটে কথা   

Fourth Pillar | মোদিজির হনুমান ভক্তি এবং দু’ চারটে কথা   

Follow Us :

বিহারে আরজেডির সমর্থক-কর্মীরা জোর চিৎকার করছেন, ‘জয় বজরংবলী তোড় দিয়া দুশমন কি নলি’। বুঝতে অসুবিধে নেই যে কর্নাটকে বিজেপির হারের পর তাঁরা খুশি। তো এই নিয়ে কথা বলার আগে দেখে নিই সেই নির্বাচনী প্রচারের ছবি যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী গলার শির তুলে চিৎকার করছেন। এর আগে একটা নির্বাচনী প্রচার দেখাতে পারবেন, যেখানে মোদিজি জয় বজরংবলী বলে চ্যাঁচাচ্ছেন? একটাও? একটাও নেই, জয় শ্রীরাম বহুবার বলেছেন, কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের মাচা থেকে এই স্লোগান আমরা মোদিজির মুখে শুনিনি। তো হঠাৎ এই শাখামৃগ প্রীতি কেন? কোথা থেকে উদয় হল? কেনই বা হল? আসুন আজ সেটাই আলোচনা করা যাক। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, কংগ্রেস এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। নির্বাচনের আগে সাধারণত কংগ্রেস বা বিরোধী দল থেকে বিজেপিতে নেতারা যোগ দেন, আমাদের বাংলাতেও এ ছবি আমরা দেখেছি। পালে পালে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতারা গিয়েছিলেন বিজেপিতে, ভোটের পর নাকে খত দিয়ে কান মুলে অনেকের ঘর ওয়াপসি হয়েছে। কিন্তু কর্নাটকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক বিজেপি নেতার উইকেট ঝপাঝপ পড়ে গেল, তাঁরা যোগ দিলেন কংগ্রেসে। এরপর বিজেপির প্রার্থীতালিকা বের করার বহু বহু আগে বেরিয়ে গেল কংগ্রেস প্রার্থীর নাম, প্রায় কোনও ঘটনা ছাড়াই, মানে ধুতি ছেঁড়া, চেয়ার ভাঙা ইত্যাদি ছাড়াই প্রার্থীতালিকা বেরিয়ে গেল। ওদিকে বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিশাল গোলযোগ, রাজ্যের দায়িত্বে থাকা বি এল সন্তোষের মাথায় ছিল, ইয়েদুরিয়াপ্পা তো গেছেই, বোম্মাই ও টিকবে না, অতএব নিজের সমর্থক বাড়াচ্ছিলেন, ফাঁকতালে ওনার মুখ্যমন্ত্রী হবার সাধ জাগিয়াছিল। কাজেই বিরাট অসন্তোষ। 

এরপর কংগ্রেস ঘটা করে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো বার করল, সে এক ছবি বটে, ম্যানিফেস্টো মাথায় ঠেকিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে মানিফেস্টো বার হল। প্রথমেই ৫টা গ্যারান্টি। গৃহজ্যোতি, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি, গৃহলক্ষ্মী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কপিরাইট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে রাখলে এই ঘোষণা আটকে যেত। মহিলাদের মাসে ২০০০ টাকা। অন্ন ভাগ্য, বিপিএল-এর প্রত্যেককে ১০ কিলো করে আনাজ। যুব নিধি, প্রত্যেক বেকারকে দু’ বছর মাসে ৩০০০ টাকা আর শক্তি প্রকল্প, মহিলাদের বাসে চড়লে টিকিট ফ্রি। প্রত্যেকটা ঘোষণা বিজেপিকে হতবাক করে দিয়েছে, তাঁরা যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে পড়েছেন, তখন এই ম্যানিফেস্টোর আরেকটা ঘোষণা তাঁদের মনে ধরল। কংগ্রেস দল তাদের ম্যানিফেস্টোতে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হচ্ছে দেশজুড়ে, কর্নাটকেও। মুসলমান এবং হিন্দু টেররিস্টরা এই কাজ করছেন, এর ফলে দেশের সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট হচ্ছে তাই কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে পিএফআই এবং বজরং দলের মতো সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। ব্যস, আরএসএস–বিজেপি, মোদি–শাহ মনে করলেন কংগ্রেস লুজ বল খেলে ফেলেছে অতএব মার ছক্কা। ক্রিজ থেকে এগিয়ে এসে ব্যাট তো চালালেন কিন্তু সেটা যে সহজ ক্যাচ হয়ে যাবে, ওই বল যে তাঁদের ক্রিজ থেকে বাইরে আনার চেষ্টা করছে, তা না বুঝেই মিল গয়া মিল গয়া বলে মাঠে নেমে পড়লেন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিজেপির উল্টা গিনতি চালু? তাই নাকি?     

বজরং দলকে ব্যান করার কথাকে বজরংবলীর অপমান এমন ছেঁদো যুক্তি নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী মাঠে নেমে পড়লেন। মিডিয়াও বলতে শুরু করল কংগ্রেস প্লেড ফাউল, অর্ণবের চিৎকার, সুসুধির তিহাড়ির উত্তেজনা দেখে, কে আর দীপক চৌরাসিয়ার অঙ্গভঙ্গিতে প্রমাণই হল যে তিনিও ওই শাখামৃগের দলেই পড়েন। গোদি মিডিয়া তার সর্বশক্তি দিয়ে কংগ্রেস কে হিন্দুবিরোধী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, যাদের সম্পর্কে একটাই কথা বলা যায়। দলাল নে দলাল কো দলাল কহা, আউর অপনি দালালি কো কমাল কহা। কর্নাটকের গ্রামে গ্রামে তখন ছড়িয়ে পড়েছে ৫ গ্যারান্টি, রাহুল গান্ধী, সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমার বলছেন, মন্ত্রিসভা তৈরি হলে প্রথম দিনেই এই পাঁচ গ্যারান্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর মঞ্চে মঞ্চে শাখামৃগদের লম্ফঝম্প দেখে সংখ্যালঘু মানুষজন সিদ্ধান্ত নিলেন, ভোট নষ্ট নয়, কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে পারে, অতএব কংগ্রেসকেই ভোট দাও। তখনও নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদি চিৎকার করছেন জয় বজরংবলী। ফলাফল ১৩৫–৬৬, ৪৩ শতাংশ মানুষ কংগ্রেসের পক্ষে, ৩৬ শতাংশ বিজেপির দিকে। সবচেয়ে বড় কথা হল গরিব মানুষজনের সিংহভাগ বিজেপির বিরুদ্ধে। কিন্তু এরই মধ্যে উদুপি থেকে বিজেপির টিকিটে ৮ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন যশপাল সুবর্ণ। উদুপি হল কর্নাটকের সমূদ্র তীরবর্তী এলাকার জেলা। এই কোস্টাল কর্নাটক থেকেই বিজেপির উত্থান, এখানকার ১৯টা আসনের ১৬টা ছিল বিজেপির, ৩টে ছিল কংগ্রেসের। এবার কংগ্রেসের ঝোলায় ৬টা আসন এসেছে, বিজেপির আছে ১৩টা। এই একমাত্র অঞ্চল যেখানে বিজেপি কংগ্রেসের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। এখানে লিঙ্গায়েত বা ভোক্কালিগাদের ভোট খুব কম। আছে বিরাট ওবিসি, দলিত, মুসলমান আর খ্রিস্টানদের ভোট। এই অঞ্চলের উদুপি থেকে জিতেছেন যশপাল সুবর্ণ, যিনি কর্নাটক বজরং দলের মাথা। এই কোস্টাল কর্নাটকেই হিজাব বিতর্ক শুরু, এখানেই বাজারে বাজারে ঘুরেছে এই যশপাল সুবর্ণ এবং বজরং দলের কর্মীরা, জানিয়েছে হালাল মাংস বিক্রি করা যাবে না। হ্যাঁ গরুর মাংস নয়, হালাল মাংসও বিক্রি করা যাবে না, এখানেই এই যশপাল সুবর্ণ দু’জন সংখ্যালঘু মানুষকে, বাবা আর ছেলেকে উলঙ্গ করে বাজারে ঘুরিয়েছিলেন, কেন? কারণ তাঁরা নাকি অবৈধ মাংসের ব্যবসা করতেন। 

এই বজরং দল বেঙ্গালুরুতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে অসভ্যতা করেছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে। এই বজরং দল বিয়ার পাবে ঢুকে বারে ঢুকে ভাঙচুর করেছে, এরাই হুমকি দিয়েছে মল মালিকদের, হালাল সার্টিফিকেট দেওয়া প্রডাক্ট বন্ধ কর রে। এই বজরং দলই প্রকাশ্যে শপথ নিয়েছে হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনা করার। শিখ রাষ্ট্র স্থাপনা করার দায়ে অমৃতপাল সিংকে যদি এনআইএ ধরে জেলে পুরতে পারে তাহলে এই দেশের সংবিধান বিরোধীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে না কেন? আরএসএস-এর বহু শাখার মধ্যে এই বজরং দলও অন্যতম। ১৯৮৪তে এদের শুরুয়াত, প্রথমে নাম দেওয়ার সময়ে ভাবা হয়েছিল বজরং সেনা হবে পরে বজরং দল নাম রাখা হয়। আরএসএস প্রচারক বিনয় কাটিহারকে এই বজরং দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রামজন্মভূমীর উদ্ধারের জন্য এনারা মাঠে নামেন। সেই সময় আদবানির রথযাত্রার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, আর সঙ্গে ছিল বজরং দল। যেখানে যেখানে রথ গেছে সেখানেই দাঙ্গা হয়েছে, আক্ষরিক অর্থে রক্ত তিলক পরানো হয়েছিল আদবানিজিকে, পরিয়েছিল এই বজরং দল। বহু পরে আদবানিজিই জানিয়েছিলেন, এই বজরং দলের নীতিনিষ্ঠ সৈনিকরাই বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে এদেরকে কিছুদিনের জন্য ব্যান করা হয়েছিল। 

প্রতি বছর উত্তর ভারতে নিয়ম করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে পার্কে, পাবে, সিনেমা হলের সামনে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের একসঙ্গে দেখলেই লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে, তাদের মা বাবাকে ডেকে এনেছে, পাবলিক প্লেসে দাঁড় করিয়ে কানধরে ওঠবোস করিয়েছে, মরাল পুলিশিং এদের কাজ। এই বজরং দলকে ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ভাঙার অভিযোগে ব্যান করা হয়েছিল। ১৯৯৮-তে দক্ষিণ পূর্ব গুজরাতে ডজনখানেকেরও বেশি চার্চ পুড়িয়েছিল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই দাঙ্গার বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছে। ২০০৮-এ ওড়িশার কান্ধামালে সরকারি হিসেবেই ৩৯ জন ক্রিস্টানকে খুন করা হয়, অসংখ্য চার্চ ভাঙা হয়, সংখ্যাটা কমবেশি ৩০০ বলে সরকারের হিসেব। এই কান্ধামালের দাঙ্গার পুরোভাগে ছিল বজরং দল। এর আগে ২০০৩-এ ফাদার গ্রাহাম স্টেইন এবং তাঁর দুই শিশুসন্তানকে গাড়ির মধ্যে আটকে রেখে আগুন দিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। বজরং দলের নেতা দারা সিং এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধী। এই বজরং দল ২০০৮-এ কর্নাটকে নিউলাফ ক্রিস্টান চার্চগুলোকে পোড়ায়, ভাঙে, চার্চের ফাদারদের মারে। ২৪ জানুয়ারি ২০০৯-এ ম্যাঙ্গালোরে দু’জন নান ধর্ষিতা হন, এই ঘটনাতেও বজরং দল মূল অভিযুক্ত। উত্তর ভারতে যে পরপর গোহত্যা, গোমাংস বিক্রির অভিযোগে মানুষ পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে, সেই ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গে এই বজরং দলের কর্মীরা জড়িত। হাথরসে ধর্ষণ এবং খুনের পর এই বজরং দলের কর্মীরা বিজেপি কর্মীরা মিলে অভিযুক্তদের সমর্থনে মিছিল করেন। গুজরাত দাঙ্গার বহু রিপোর্টে বার বার এই বজরং দলের নাম উঠে এসেছে। বিলকিস বানো ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অপরাধী বলে ঘোষিত মানুষজনদের যখন গুজরাত আদালতের নির্দেশেই ছেড়ে দেওয়া হল তখন ওই অপরাধীদের মিষ্টি আর গাঁদাফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে এই বজরং দলের নেতাদের। এরাই গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের গলায় মালা দেয়। সেই বজরং দলের হয়ে স্বাভাবিক কারণেই মাঠে নেমেছিলেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। নেমেছিলেন, মুখ পুড়েছে, এরপর আরও পুড়বে, মানুষ পেটের টানের উপরে এসব ধ্যাষ্টামোকে জায়গা দিতে আর রাজি নন। সত্যিই মিথ্যের বাজারে ভালোবাসার একটা শো-রুম খুলেছে, এরপর সেই ভালোবাসা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক। 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | আরামবাগে কোন দল এগিয়ে?
06:42
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | রাম, রামায়ণ, রামের মাথায় সূর্য তিলক এবং আমাদের চওকিদার
18:34
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | লকেট, রচনা, দেব, হীরণ এবং রাম নবমী
11:32
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (18 April, 2024)
16:58
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | রেজিনগরের অশান্তির নেপথে বিজেপির চক্রান্ত, দাবি মমতার
56:07
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | Dharmajuddha Damama | উত্তরবঙ্গে দ্বিতীয় দফার ভোট প্রচারে মমতা
16:28
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | আমি ইন্ডিয়া জোট তৈরি করেছি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
04:59
Video thumbnail
Stadium Bulletin | কেন প্রার্থনা হবে হার্দিক আর স্টার্কের জন্য?
28:28
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | 'জেলে আম, মিষ্টি খেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি', দিল্লির আদালতে অভিযোগ ইডির
03:54
Video thumbnail
নারদ নারদ (18.04.24) | রামনবমীর মিছিলে বোমাবাজি রেজিনগরে, পরিকল্পিত অশান্তি, বিজেপিকে তোপ মমতার
14:48