Wednesday, October 9, 2024
HomeBig newsনবীনতম অ্যাম্ফিথিয়েটারে গুলিহীন মহাযুদ্ধ

নবীনতম অ্যাম্ফিথিয়েটারে গুলিহীন মহাযুদ্ধ

Follow Us :

আমেদাবাদ থেকে গৌতম ভট্টাচার্যের সুইচ হিট

সবরমতি আশ্রম। শুক্রবার সকাল এগারোটা।

স্কুলছাত্রদের এক ঝাঁক তাদের দিদিমনিকে নিয়ে গান্ধীজির ব্রোঞ্জ মূর্তির সঙ্গে ছবি তুলছে। ঘুরছে। এদের ছবি তোলা দেখতে দেখতে হঠাৎ সামনের দেওয়ালে চোখ পড়ল। দেশি-বিদেশি কোন কোন বিশিষ্ট মানুষ এখানে ঘুরে গিয়েছেন তার সাম্মানিক বোর্ড। সেখানে বিল ক্লিনটন থেকে নাসা-র নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস। নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিতাভ বচ্চন। রাজীব গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা। কত সব নামের মতো নাম! ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের ছবিও রয়েছে। হঠাৎই মনে হল পাকিস্তানের জেলে না পচে যদিও আজও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তিনি থাকতেন, হয়তো বাবর আজমের দলকে গান্ধী আশ্রমে দেখতাম। খটকা লাগলে নেট খুলে দেখে নিন গত পাঁচ- দশ বছরে মহাত্মা গান্ধীর ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ইমরান খানের মুগ্ধতা।

আমেদাবাদের রাস্তাঘাট দু’তিন দিন ঘুরলেই অবশ্য বোঝা সম্ভব আমরা যা পড়ি বা চ্যানেলে শুনি সেটা সত্যি। শাসক দলের নব্য, আক্রমণাত্মক জাতীয়তাবাদের প্রতীক তিনি মহাত্মা গান্ধী মোটেও নন। এর পোস্টার বয় যদি স্বয়ং মোদি হন। খুব কাছাকাছি তিনি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। এয়ারপোর্ট থেকে বার হলেই বিরাট স্ট্যাচু তাঁর। এমনকী ভারত-পাক মহাযুদ্ধ যে মাঠে ঘটছে তার হল অফ ফেম লাউঞ্জে যদি শাহিন আফ্রিদিরা ঘুরতে যান,সর্দার প্যাটেলের স্ট্যাচু আবিষ্কার করবেন। দূর থেকে আমি ভেবেছিলাম ওটা ভারতের প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন সি কে নাইডুর। পরে বুঝলাম কী ভুলই না ভেবেছি।

আরও পড়ুন:হলুদ সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নীলের রাজপাট

বিশ্বকাপ ম্যাচ প্রিভিউতে সাধারণভাবে এত সব রাজনৈতিক নাম আসার কথা নয়। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট বিচিত্র লড়াই। যা ধর্ম-সীমান্ত-কাঁটা তার-কাশ্মীর-পুলবামা সব মিশে এমন বাঁদুরে রং ধারণ করে যে মাঠের সবুজ ঘাস শুধু সবুজ থাকে না। কখনও তাতে গেরুয়া মেশে। কখনও সবুজ। শুভমন গিল খেলতে পারেন বলে রোহিত যা ইঙ্গিত দিলেন যা শোনা মাত্র যেমন গোটা ভারতবর্ষ উৎফুল্ল হয়ে পড়ল। আমেদাবাদের অনতিদূরে জুহাপুরা কি তার শরিক? শহরের নিন্মবিত্ত মুসলিম সম্প্রদায় বিশিষ্ট গলিঘুঁজি আর মসজিদে ভরা সেই মহল্লা ঘুরে শুভমনের কোনও পোস্টার কিন্তু চোখে পড়েনি। রোহিতেরও না। বাবর আজম এদিন হায়দারাবাদে সমর্থন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, “পাক ফ্যানেরা হয়তো এখনও আসার ভিসা পাননি। কিন্তু হায়দ্রাবাদে আমরা সমর্থন তো পেয়েছি।” আমেদাবাদ স্টেডিয়াম কীভাবে পাকিস্তানকে বরণ করে সেটা খুব ইন্টারেস্টিং সামাজিক ও রাজনৈতিক বীক্ষণ হবে। জুহাপুরা নিয়ে তেমন কৌতূহল নেই।

বাতাবরণের দিক থেকে মেগা অলিম্পিক স্টেডিয়ামের মতো এক লক্ষ পঁচিশ হাজার দর্শক সমন্বিত মাঠে এত চিৎকার হবে যে ফাস্ট স্লিপ থার্ড স্লিপের বা কিপার সেকেন্ড স্লিপের কথা শুনতে পাবে কি না সন্দেহ। দ্রাবিড়ের মতো অভিজ্ঞ কোচ নিশ্চয়ই সিগন্যালিং সিস্টেমে কমিউনিকেট করার ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছেন। জানাই ছিল এই বিশেষ দিনটা আসবে। যে দিন দু’দেশের মধ্যে বিশ্বকাপের ব্যবধানকে বাড়িয়ে ৮-০ করার জন্য তাঁর টিমের ওপর অন্যায্য চাপ আসবে এবং তখন অনন্ত মানসিক শৃঙ্খলা দিয়ে সেটার সামাল দিতে হবে।

বাবর আজম আর রোহিত শর্মা দুজনেই প্রেস কনফারেন্স-এ বিতর্কিত হতে পারে এমন ডেলিভারিগুলো যেভাবে অফ স্টাম্পের বাইরে ছেড়েছেন ,তাতে বোঝা গেল বিশ্বকাপের সবচেয়ে আগুনভরা ম্যাচের আগে মানসিক স্থিতি কেউ হারাননি। দুজনেই জানেন, যতই ওঁরা বোঝাবার চেষ্টা করুন যে নিছক বিশ্বকাপের একটা ম্যাচ ,পৃথিবী অন্য প্রিজমে দেখে। কিন্তু মুখে বলা ছাড়া উপায় কী? ম্যাচের আগে ৪৫ মিনিটের বিচিত্রানুষ্ঠান রয়েছে। ক্রিকেটপ্রেমী বিশুদ্ধ বাঙ্গালির কাছে অন্যরকম দিন। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমর মন্ত্রোচ্চারণ দিয়ে শুরু। তারপর ঘণ্টাখানেক বাদে সে টিভিতে আমেদাবাদ স্টেডিয়াম থেকে লাইভ সুখবিন্দর সিং-এর ‘ছাইয়া ছাইয়া’ দেখার সুযোগ পাবে। শঙ্কর মহাদেবনের ইন্ডিয়ান টিম নিয়ে পুরোনো জনপ্রিয় গান শুনবে-দে ঘুমাকে। অমিতাভ বচ্চন -শচীন তেন্ডুলকরেরা থাকবেন হাই ভোল্টেজ গ্ল্যামার আরও বৃদ্ধির জন্য। সৌরভ? তাঁরও থাকা উচিত। স্টেডিয়ামের মূল গেটের ফুটপাথে যাঁর জার্সি কোহলির চেয়েও বেশি বিক্রি হচ্ছে তিনি আসবেন কিনা কেউ বলতে পারলেন না। যদিও টিমের কারো চেয়ে এক্স প্লেয়ারের জার্সি বেশি বিক্রি হওয়া অকল্পনীয়। কিন্তু তিনি মাহেন্দ্র সিং ধোনি তো নিজেই অকল্পনীয়। প্রেস নোট দেখলাম উসেইন বোল্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কোহলিকে যে ভারত-পাক ম্যাচ তিনি দেখবেন। কিন্তু তিনি কি ল্যাপ টপে বসে দেখবেন না মাঠে? পার্থিব প্যাটেলের কাকা গুজরাট ক্রিকেট আসোসিয়েশনের মিডিয়া ম্যানেজার জগৎ প্যাটেলকে জিজ্ঞেস করায় তিনি আকাশ থেকে পড়লেন, “বোল্ট-ধোনি কোনওটাই কিছু জানি না।”

কিন্তু বহিরঙ্গ যত চমকপ্রদ এবং যুগপৎ অগ্নিগর্ভ থাক। আমজনতা দিনের শেষে ক্যাপ্টেনকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করবে-পেরেছ না পারোনি? জিতেছে না হেরেছে ? বাবরকে এদিন বলতে শোনা গেল,”একটা ইন্ডিয়া ম্যাচ জেতার জন্য ক্যাপ্টেন হইনি। একটা ম্যাচ হারার জন্যও ক্যাপ্টেন্সি যাবে না। তিনি ইতিহাস জানেন না মনে হল। পুরনো পাতাগুলো ওল্টালে দেখতেন, আগের বিশ্বকাপের সরফরাজ সহ অন্তত তিন পাক অধিনায়ক বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া ম্যাচ হারের কিছুদিনের মধ্যে নেতৃত্ব খুইয়েছেন।

কে কে হতে পারেন শনিবারের ম্যাচের মলাট? পাকিস্তানের দিক থেকে শাহিন আফ্রিদির চেয়ে বেশি মারাত্মক দেখাচ্ছে রিজওয়ানকে। কালো কাপড়ে ঢাকা নেটের মধ্যে থেকে কে খবর আনল যে ক্রমাগত তিনি সুইপ আর রিভার্স সুইপ অভ্যেস করছেন। নিশ্চয়ই কুলদীপের জন্য। বুমরার মহড়া নেওয়ার জন্য থাকলেন বাবর নিজে। আর আবদুল্লা শফিক। শিয়ালকোটের এই তরুণ ১৪ টেস্টে ৪ সেঞ্চুরি করে বসে আছেন।ওয়ানডে তে ৩৮ এভারেজ। কিন্তু নিজের দিনে কী করতে পারেন শ্রীলঙ্কা অন্তত জানে। শাহরুখ ভক্ত পাক সাংবাদিকদের মনে হচ্ছে কে বলতে পারে দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলে তিনি বলবেন না যে নাম তো শুনা হোগা। আবদুল্লা শফিক।

কিন্তু তাঁরা কি বুমরার স্ট্যাটস দেখেছেন। ওই একশন নিয়ে ধারাবাহিক খেললে চোট লাগতে বাধ্য। তা বলে স্ট্যাট তো বদলাচ্ছে না। যা দুবার চেক করলাম। ৩০ টেস্টে ১২৮ শিকার। গড় ২২। টি টোয়েন্টিতে ৬২ ম্যাচে ৭৪ উইকেট। গড় ১৯.৭। ওয়ানডে-তে ৮০ ম্যাচে ১৩৫ উইকেট। গড় ২৩.৮। ভারতের কোনো বোলারের সে জীবিত হোক কী মৃত এমন পরিসংখ্যান নেই। মনে হয় গুপী বাঘার জুতো পরে বল করেন এমনি রূপকথা !

মেলবোর্নে দু’ দেশের শেষ কুড়ি ওভার বিশ্বকাপ সাক্ষাতে বুমরা ছিলেন না। এবার তাঁর সঙ্গে অনেক ফিট থাকা হার্দিক। বুমরা যেমন জন রাইটের আবিস্কার। তেমনি হার্দিককে খুঁজে বার করেন কিরণ মোরে। মাত্র পাঁচ বছর বয়েসে তিনি বরোদায় মোরের ক্যাম্পে এসেছিলেন। আর সেদিন থেকে ধারাবাহিক কিরণ স্যরের সঙ্গে। মুম্বই ইন্ডিয়ানসের সাপোর্ট স্টাফ হিসাবে গত বারো বছর যুক্ত থাকা মোরে খুব আশাবাদী যে বোলিংয়ে ইনসুইঙ্গার যেভাবে উন্নতি করেছেন হার্দিক। তাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ভারতকে উইকেট এনে দেবেন। আর ব্যাটিংয়ে সেই পাঁচ বছর বয়েস থেকেই শটের অস্বাভাবিক জোর দেখে নাম দিয়েছিলেন রকেট।

কোহলি -অশ্বিন-রাহুল-রোহিত এঁদের কথা তুললামই না। দু ম্যাচ বিচারের খুবই অল্প সময়। কিন্তু স্বল্পকালীন পরীক্ষায় ঐশর্যশালী দেখাচ্ছে ভারতকে। বিশ্বকাপের প্রকৃত বোধন শুরু হবে দেবীপক্ষের প্রথম দিন আহমেদাবাদের আম্ফি থিয়েটারে তারা জিতলে। কিন্তু এই ম্যাচ মানে তো গুলিহীন মহাযুদ্ধ। যে কোনো দিকে টলে পড়তে পারে।

ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপ এদেশে দেখে গিয়ে বিখ্যাত আমেরিকান লেখক একটা বই লেখেন । নাম ছিল ‘ওয়ার মাইনাস দ্য শুটিং ‘। গোলাগুলি বাদ দিয়ে মহাযুদ্ধ।

এর চেয়ে ভালো ভাবে শনিবারের থিমকে ব্যাখ্যা করতে কলকাতার কোন থিমপুজো পেরেছে ?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Hariyana | 'বাজি পল্টেগি' সমর্থকদের বিরাট বার্তা কংগ্রেস নেতা ভূপিন্দর হুডার
02:46:35
Video thumbnail
Jammu-Kashmir | জম্মু ও কাশ্মীরে ভোটের ফল নিয়েকী জানাল বিজেপি?দেখুন Live
46:00
Video thumbnail
Hariyana | 'হরিয়ানা এক হরিয়ানভি এক'
41:40
Video thumbnail
J&K Election Result LIVE | জম্মু ও কাশ্মীরে ভোটের ফল নিয়ে কী জানাল বিজেপি? দেখুন Live
55:39
Video thumbnail
Jammu & Kashmir | জম্মু ও কাশ্মীরে কোন অঙ্কে ইন্ডিয়া জোটের বাজিমাত? দেখুন এই ভিডিও
03:38:18
Video thumbnail
RG Kar | আরজি করে গণ ইস্তফা চিকিৎসকদের! কী করবে সরকার?
03:27:09
Video thumbnail
Weather | পঞ্চমীতেই শহর জুড়ে তুমুল বৃষ্টি, কী হবে ষষ্ঠীর সকালে?
03:46:25
Video thumbnail
Selja Kumari | হরিয়ানাতে সরকার গড়বে কংগ্রেস, জানিয়ে দিলেন কুমারী শেলজা
02:46:00
Video thumbnail
Cyclone | ৯৫ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মিলটন কী হবে এবার?
01:39:46
Video thumbnail
Vinesh Phogat | অলিম্পিক্সে স্বপ্নভঙ্গ, ভোটে স্বপ্নপূরণ ভিনেশ ফোগাটের
02:23:50