Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeআন্তর্জাতিকRussia | Belarus | বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মজুতের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাশিয়া,...

Russia | Belarus | বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মজুতের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাশিয়া, চিন্তায় পশ্চিমী দুনিয়া

Follow Us :

মস্কো: প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে (Belarus) পারমাণবিক অস্ত্র রাখার প্রস্তুতি শুরু করেছে রাশিয়া (Russia)। গত শনিবার (২৬ মার্চ) এই কথা বলেছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin, President of Russia)। আমেরিকা (United States of America – USA) এবং ন্যাটো (NATO) নিয়ে রাশিয়া শুরু থেকেই বিরোধী। এই জোট তৈরিই হয়েছিল রাশিয়ার প্রভাব খর্ব করার উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন (Ukraine) ন্যাটো সদস্যতা পদ নিতে চাওয়ার কারণেই সামরিক আগ্রাসনের (Military Invasion) পথে হেঁটেছে রাশিয়া। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে মস্কো (Moscow)। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন ১৩ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনকে পরাস্ত করতে বিফল রাশিয়া। ওদিকে, মার্কিন প্রশাসন ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছে ইউক্রেনের সঙ্গে। এই অবস্থায় প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে পারমাণবিক হাতিয়ার (Nuclear Weapon) রাখার সিদ্ধান্ত, ভবিষ্যতে পারমাণবিক লড়াইয়ের সম্ভাবনা ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের বক্তব্য। যদিও পুতিন বলেছেন, বেলারুশে পারমাণবিক হাতিয়ার রাখলে পরমাণু অ-প্রসার সমাঝোতা (Nuclear Non-Proliferation Agreements) উল্লঙ্ঘন (Violation) করা হবে না।    

আরও পড়ুন: Rahul Gandhi Twitter | টুইটারে পরিচয় বদল রাহুলের, কী লিখলেন কংগ্রেস নেতা? 

বেলারুশ স্থলবেষ্টিত দেশ (Landlocked Country)। পূর্ব ও উত্তরপূর্বে রয়েছে রাশিয়া (Russia), দক্ষিণে আছে ইউক্রেন (Ukraine), পশ্চিমে পোল্যান্ড (Poland) আর উত্তরপশ্চিমে লিথুয়ানিয়া ও ল্যাটভিয়া (Lithuania and Latvia)। বেলারুশের বাদবাকি প্রতিবেশী দেশগুলি ন্যাটো কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union – EU) সদস্য। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বেলারুশের উপর রুশ নিয়ন্ত্রণ (Russian Control) রয়েছে। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে সামরিক পারমাণবিক হাতিয়ার (Tactical Nuclear Weapons – TNW) রাখার জন্য মজুদ কেন্দ্র বা স্টোরেজ ইউনিট (Storage Units) তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হবে। রাশিয়ার তাদের এই পদক্ষেপের স্বপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গে টেনে এনেছে। মস্কোর বক্তব্য, আমেরিকাও ইউরোপে তাদের সামরিক পারমাণবিক হাতিয়ার মোতায়েন (Deploy) করেছে। সেই সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র এতটাই শক্তিশালী, যে চোখের নিমেষে যে কোনও শহর ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।   

এপ্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বলছে? মার্কিন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, পারমাণবিক অস্ত্র রাখা নিয়ে রাশিয়া এবং বেলারুশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কথা চলছিল। এই পদক্ষেপ তারই ফলশ্রুতি। রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই নিয়ে আমেরিকা কিছুই জানত না। এমনকি এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত কৌশল পরিবর্তন করার কোনও বিষয়ও দেখতে পাচ্ছে না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো সহযোগী দেশগুলির সম্মিলিত প্রতিরক্ষার (Collective Defence) জন্য বদ্ধপরিকর। 

রাশিয়ার হাতে বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক পারমাণবিক হাতিয়ার রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে পুতিনের হাতে ৫,৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে ৫,৪২৮টি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, রাশিয়ার হাতে যে ৫,৯৭৭টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে, তার মধ্যে ১,৫০০টি বর্তমানে অবসর (Retired) দেওয়া হলেও, তা এখনও সমানভাবে আক্রমণ চালানোর জন্য যোগ্য। এছাড়া, ২,৮৮৯টি পারমাণবিক অস্ত্র রিজার্ভ (Reserve) রাখা হয়েছে এবং ১,৫৮৮টি সামরিক হাতিয়ার হিসেবে মোতায়েন রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ৮১২টি বসানো হয়েছে ল্যান্ড-বেসড ব্যালিস্টিক মিসাইলে (Land-based Ballistic Missile) আর ৫৭৬টি বসানো হয়েছে সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইলে (Submarine-launched Ballistic Missile)। ২০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রাখা হয়েছে বোমারু ঘাঁটিতে (Bomber Base)। প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ার হাতে ১০টি পারমাণবিক-অস্ত্রযুক্ত পরমাণু ডুবোজাহাজ (Nuclear Armed Nuclear Submarines) রয়েছে, তাতে ৮০০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড (Nuclear Warheads) এবং ৬০-৭০টি নিউক্লিয়ার বোমা (Nuclear Bomb) বহন করা যায়। 

আরও পড়ুন: Priyanka Gandhi | মোদি ভীরু-কাপুরুষ, দাম্ভিক রাজার পতন অনিবার্য: প্রিয়াঙ্কা 

ঠান্ডা লড়াই অর্থাৎ কোল্ড ওয়ারের (Cold War) সময় থেকেই রাশিয়ার হাতে আমেরিকার থেকে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেই সময় রাশিয়ার হাতে ছিল ৪০,০০০টি ওয়ারহেড, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চিল ৩০,০০০টি। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকা ১,৬৪৪টি সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে, চীন (China), ফ্রান্স (France) ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের (United Kingdom – UK) হাতে রয়েছে যথাক্রমে ৩৫০, ২৯০ এবং ২২৫টি ওয়ারহেড। 

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক আগ্রাসন শুরু করার পর আমেরিকা তরফে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালে কিউবা মিসাইল সঙ্কটের (1962 Cuban Missile Crisis) পর দ্বিতীয়বার বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ভুগছে। যদিও মস্কোর দাবি, তাদের অভিপ্রায়কে ভুলভাবে ব্যক্ত করছে পশ্চিমী দুনিয়া (Western World)।

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের হাতিয়ারের ভাঁড়ারকে ঢেলে সাজাচ্ছে, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও হাতিয়ার (Modern Weapons and Arms) তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডারকে অত্যাধুনিক করে তোলার দিতে নজর দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের (Soviet Union) পতন পর থেকে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ১৯৯২ সালে, চীন ও ফ্রান্স (China and France) ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান (India and Pakistan) ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া (North Korea) ২০১৭ সালে। রাশিয়ার শেষবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিছিল প্রায় ৩৩ বছর আগে ১৯৯০ সালে। 

সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র কী? 

সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র অর্থাৎ ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন (Tactical Nuclear Weapons – TNW) হলো পরমাণু হাতিয়ার, কিন্তু তা বড় শহর ধূলিসাৎ করার পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সামরিক ফায়দা ওঠানোর জন্য ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি। রাশিয়ার হাতে এই ধরনের অস্ত্র প্রচুর মজুদ রয়েছে। ওয়াশিংটনের মতে, তাদের তুলনায় রাশিয়ার হাতে এই ধরনের পারমাণবিক হাতিয়ার দশগুণ বেশি রয়েছে।  

ওয়ারহেড হলো এমন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র, যা মিসাইল (Missiles), টরপেডোর (Torpedoes) সাহায্যে বহন করা হয়। গ্র্যাভিটি বোমা (Gravity Bombs) নিক্ষেপ করা যায় নৌ বহর, বিমান ও ভূমিতে রাখা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যে। এই দুই ধরনের হাতিয়ারই সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যে (Target) নিক্ষেপ করা হয় এবং ডিটোনেট (Detonate) করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০টির মতো ওয়ারহেড ইউরোপে তাদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন করে রেখেছে। ইতালি (Italy), জার্মানি (Germany), তুরস্ক (Turkey), বেলজিয়াম (Belgium) ও নেদারল্যান্ডসে (Netherlands) ১২ ফুটের বি৬১ নিউক্লিয়ার বোমা (12-ft B61 nuclear bombs) মোতায়েন করে রেখেছে আমেরিকা।  

প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমাতে (Hiroshima, Japan) আমেরিকা যে অ্যাটমিক বোমা ( Atomic Bomb) ফেলেছিল, তা প্রায় ১৫ কিলোটন (Kilotons) ছিল। 

রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?

স্ট্র্যাটেজিক হোক কিংবা নন-স্ট্র্যাটেজিক (Strategic or Non-Strategic), রাশিয়ার যে কোনও ধরনের পরমাণু বোমার নিয়্ন্ত্রণ রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনিই এবিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেনে। তবে পরমাণু বোমা ব্যবহারের আগে প্রেসিডেন্ট অবশ্যই রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের (Russian Security Council) উচ্চপদস্থ সহযোগীদের পরামর্শ নেবেন। তারপরই ওয়ারহেড সংশ্লিষ্ট স্থানে পাঠানো হয় এবং নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হয়। 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments