মাঝ আকাশে ইমার্জেন্সি। বিমানের একমাত্র পাইলট আচমকা অসুস্থ। ছোট বিমান। একটাই মাত্র ইঞ্জিন। ভিতরে দু’জন যাত্রী। আমেরিকার বাহামা থেকে উড়ান শুরু করার পর হঠাৎ করে এই পরিস্থিতি। অসুস্থ পাইলট হাল ছেড়ে দিয়েছেন। যাত্রীদের কেউই বিমান চালাতে পারেন না। কোনওরকম অভিজ্ঞতা নেই। ছোট বিমান ফ্লোরিডার আকাশে সমুদ্রের উপর নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে উড়ছে। তারপর?
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক যাত্রী। বার্তা পাঠান। ‘I have got a serious situation here, my pilot has gone incoherent, I have know idea how to fly the plane.’ বাংলা করলে যার অর্থ, ‘আমি এখানে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। পাইলট অসুস্থ, অসংলগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিমান উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মত কোনও অভিজ্ঞতা আমার নেই।’
এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের অফিসারের মাথায় হাত। বলছে কী? বিমানকে কি আদৌ নিরাপদে অবতরণ করানো যাবে? বিমানের ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
রজার তোমার পজিশন জানাও। এয়ার ট্র্যাফিক প্রশ্ন করে। উত্তর আসে ‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’ যাত্রী বলেন, ‘আমি শুধু সামনে ফ্লোরিডার সমুদ্রতট দেখতে পাচ্ছি।’
এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের অফিসার রবার্ট মরগান। একজন দক্ষ পেশাদার। কন্ট্রোলে যখন ইমার্জেন্সি ফোন আসে, মরগান ওয়ার্ক স্টেশনে ছিলেন না। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি কন্ট্রোল রুমে ফিরে গিয়ে দেখেন এই অবস্থা। কথায় কথায় জানতে পারেন ওই যাত্রী কখনও বিমান না উড়িয়ে থাকলেও পাইলটের পাশে বসে দেখেছেন।
মরগান ‘সেসনা ২০৮’ উড়ানে কখনও ফ্লাই করেননি। ড্যাশবোর্ডের ম্যানুয়াল খুলে একের পর এক নির্দেশ দিতে থাকেন বিমানের ওই যাত্রীকে। বিমানের ডানার ভারসাম্য ধরে রাখতে বলেন। ফ্লোরিডার উপকূল রেখা ধরে উত্তর অথবা দক্ষিণ দিকে উড়ানের মুখ রাখতে বলেন। কন্ট্রোল প্যানেল ধরে রেখে খুব ধীরে ধীরে উচ্চতা কমাতে বলেন।
এরই মধ্যে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বিমানটির অবস্থান বুঝে নেয়। মাঝ আকাশের এই টানটান নাটক, রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি শেষ হয় পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। মিরাকল সম্ভব হয়। একদিনও বিমান না চালিয়েও ওই যাত্রী বিমানটিকে নিরাপদে রানওয়েতে নামিয়ে আনেন। রবার্ট মরগানের টিম বলছে দশের মধ্যে দশ নম্বর পেয়েছেন ওই যাত্রী। সত্যিই মিরকলই বটে।