ওয়েব ডেস্ক: বিজ্ঞানের বিষ্ময় বোধহয় একেই বলে। জিনগত প্রযুক্তির (Genetic Engineering) ব্যবহারে ফের জন্ম নিল পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া এক প্রাণী। ১২,০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ‘ডায়ার উলফ’ (Dire Wolf) বা সাদা নেকড়ে ফিরে এল ধরাধামে। যাঁরা ‘গেম অফ থ্রোনস’ (Game Of Thrones) ওয়েব সিরিজটি দেখেছেন, তাঁরা এই প্রাণীটিকে চেনেন। ছোট পর্দার সেই নেকড়েকে এবার দেখা যাবে বাস্তবেও। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এই অসাধ্যসাধন মার্কিন সংস্থা ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ (Colossal Biosciences)।
সংস্থার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর পর পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফ শাবকের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাঁদের মতে, এটি ‘ডি-এক্সটিঙ্কশন’ বা বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। আমেরিকার এই বিজ্ঞান সংস্থার দাবি, এটি জিনগত প্রযুক্তির একটি ঐতিহাসিক সাফল্য।
কিন্তু কীভাবে এই জিনগত গবেষণা সম্ভব হল? জানা গিয়েছে, ‘ডায়ার উলফ’-কে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষকরা প্রথমে এই প্রাচীন প্রাণীটির একটি ১৩,০০০ বছর পুরানো দাঁত এবং একটি ৭২,০০০ বছরের পুরানো খুলি থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেন। এরপর সেই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফ-এর একটি সম্পূর্ণ ‘জিনোম’ তৈরি করা হয়। এরপর বর্তমানে উপলব্ধ ধূসর নেকড়ের ডিএনএ-র সঙ্গে সেই জিনোমের মিল খুঁজে নিয়ে তৈরি করা হয় ডায়ার উলফের ‘জেনেটিক কোড’।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে মহাকাশের শয়তান ‘সিটি কিলার’! এবার কী হবে?
কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও ডায়ার উলফ-এর গর্ভে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়নি। এর পরিবর্তে ‘সারোগেট মাদার’ হিসাবে ব্যবহার করা হয় একটি গৃহপালিত কুকুরকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ডায়ার উলফ এবং ধূসর নেকড়ের মধ্যে এখনও অনেক জিনগত মিল রয়েছে। কারণ প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে দুই প্রজাতি আলাদা হলেও তাদের মধ্যে আত্মীয়তা অটুট রয়েছে। তাই শেষমেষ সারোগেট কুকুরের গর্ভে জন্ম নেয় ১২,০০০ বছরের প্রাচীন এই প্রাণী।
SOUND ON. You’re hearing the first howl of a dire wolf in over 10,000 years. Meet Romulus and Remus—the world’s first de-extinct animals, born on October 1, 2024.
The dire wolf has been extinct for over 10,000 years. These two wolves were brought back from extinction using… pic.twitter.com/wY4rdOVFRH
— Colossal Biosciences® (@colossal) April 7, 2025
জানা গিয়েছে, ‘ডায়ার উলফ’-এর তিন শাবকের নাম রাখা হয়েছে রোমুলাস, রেমুস এবং খালেসি। এই নামগুলি রোমান পুরাণ ও ‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত। ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’-এর সিইও বেন ল্যাম এই কৃতিত্বকে জিন প্রযুক্তির জগতে একটি ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে বিজ্ঞানীমহলের একটি অংশ এখনও এই প্রকল্পের দাবিকে পূর্ণ সত্য বলে মানতে নারাজ। তাঁরা আরও বিস্তারিত প্রমাণ দাবি করছেন। তবে, যদি এই দাবি সত্যি হয়, তাহলে ‘জুরাসিক পার্ক’-এর কল্পনার মতো বাস্তবেও ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরিয়ে আনার যুগে পা রাখল মানব সভ্যতা।
দেখুন আরও খবর: