ওয়েব ডেস্ক: নতুন রাজনীতি। রাজনৈতিক স্টার্টআপ। দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে নতুন যাত্রার সূচনা দেখে দেশ। বছর দশেক আগের ঘটনা। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে সরব দিল্লি। প্রধান মুখ সমাজকর্মী আন্না হাজারে (Anna Hazare) ও তাঁর অনুগামী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। দাবি, দুর্নীতি রোধে জন লোকপাল (Jan Lokpal)। কেন্দ্রশাসিত ইউপিএ সরকার (UPA Government) দিল্লিতে ওই আন্দোলন তুলে দিতে পুলিশকে ঠেলে দিল। হিতে বিপরীত হয়ে তা আরও ছড়িয়ে পড়ল। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আম আদমি পার্টির গঠন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের দীর্ঘকালের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে নয়াদিল্লি আসনে ২২ হাজার ভোটে হারালেন কেজরিওয়াল। ২৮টি আসন পেল আপ। ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে ৮টি আসন কম। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন। ৪৯ দিনের মধ্যে কেজরিওযাল ইস্তফা দিলেন। কারণ জোটসঙ্গী কংগ্রেসের বিরোধিতায় জনলোকপাল বিল পাশ হয়নি। অবশেষে ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি জনতার বিপুল সমর্থন নিয়ে ৬৭টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এল। আপ ৯০ শতাংশের বেশি আসন জিতল। বিহার, সিকিম ছাড়া এই উদাহরণ আর কোথাও নেই।
দিল্লিতে কী কাজ করল আপ সরকার?
গুরুত্ব দেওয়া হল জনকল্যাণমূলক কাজে। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হল। ২০,০০০ লিটার পর্যন্ত বিনামূল্যে জল দেওয়া হল দিল্লিবাসীকে। সরকারি স্কুলের অনুসরণযোগ্য শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটল। স্বাস্থ্য পরিষেবায় মহল্লা ক্লিনিক চালু হল। যার ফলে ২০২০ সালে ফের ৬২টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এল আপ।
আরও পড়ুন: কেজরিকে হারিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পরবেশ সিং বর্মা?
এরপরই আত্ম বিশ্বাসী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আপ সাম্রাজ্যের বিস্তারে মন দিলেন। দিল্লি দরবার থেকে ভূভারতে ছড়িয়ে পরলেন। পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনে লড়লেন। এছাড়া সারা দেশে সংগঠন গড়ার চেষ্টা করলেন। মায় পশ্চিমবঙ্গেও ছিঁটেফোঁটা কিছু কিছু জায়গায় ঝাড়ুর ছবি সহ আপের পোস্টার চোখে পড়ত। ক্লিক করে গেল পঞ্জাবে। সেখানে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় উত্থানে ক্ষমতা দখল করল আপ। কেজরিওযালের পার্টি ১১৭টির মধ্যে ৯২টি আসন পেল।
ততদিনে ঘুঘুর বাসা কুরে কুরে খেতে শুরু করেছে আপকে। আগেই দূরত্বা বাড়ান আন্না হাজারে। কালক্রমে একদা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বিদ্বজ্জন সমাজের অনেকেই ছেড়ে চলে যান। ততদিনে বিরোধীরা একের পর এক অভিযোগ বিদ্ধ করতে শুরু করেছে। আবগারি দুর্নীতিতে জেলে যেতে হয় অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছাড়াও তাঁর সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী সহ আপের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। নিজের বাসভবনে ৫০ কোটি টাকার বেশি খরচ করে বিলাসের আয়োজন করেছেন কেজরিওয়াল সেই অভিযোগ ওঠে। যা শিসমহল বিতর্ক নামে পরিচিত। এই বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে ইস্যু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে বিজেপি। কারণ জনমানসে কেজরিওয়ালের মূল গ্রহণযোগ্যতা ছিল আম পাবলিক ও স্বচ্ছতার উপর। দুর্নীতি ও নিজের বাসভভনের জন্য সরকারি টাকায় বিলাসের আয়োজনের প্রচারে ব্যাপক ধাক্কা খান আপ সুপ্রিমো। এক দশকের ক্ষমতায় সাধারণ নিয়মে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুযোগে দুর্নীতির প্রচারকে ছড়িয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। আপের অবশ্য অভিযোগ ছিল, বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে অপব্যবহার করে ফাঁসিয়েছে কেজরিওয়ালকে। যদিও তা ধোপে টিকল না। ফলস্বরূপ শনিবার বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লিতে বিজেপির ৪৮ আসনে জয়। আপ নেমে গেল ২২ আসনে। শুধু তাই নয়, নয়াদিল্লি আসনে বিজেপির পরবেশ ভার্মার কাছে ৪ হাজারের বেশি ভোটে কেজরিওয়ালের পরাজয়। এবার সবার প্রশ্ন একটাই অতঃকিম? আপ হাওয়ায় আসা রাজনৈতিক দল। তবু সাফল্যের কারণে কেজরিওয়ালের দলকে নিয়ে ‘আনব্রেকেবল’-এর মতো ডকুমেন্টারিও তৈরি হয়। এবার পরিণতি কী হবে? ক্যাডার ভিত্তিক দল সিপিএম দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনের পর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গে। বিজেপি ত্রিপুরাতেও গ্রাস করেছে সিপিএমকে। কেজরিওয়াল কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে? সেক্ষেত্রে কে হবেন তাঁর আন্না হাজারে?
দেখুন অন্য খবর: